নেপালে সাইটসিয়িং এবং বাস ভ্রমণ টিপস

আমাদের ধারাবাহিক পর্ব গুলো পাবলিশ হাওয়ার পর অনেকের কমন কিছু প্রশ্ন ছিল কোথায় ডলার ভাঙ্গালে ভাল রেট পাওয়া যায়, সিম কার্ড কিনার নিয়মাবলি, আর কাঠামান্ডু/পোখারা থেকে পোখারা/কাঠামান্ডু বাসে যাওয়ার কিছু টিপস, আর কাঠমান্ডু/পোখারা সাইটসিয়িং কিভাবে করবেন।

নেপালের অন্যতম প্রধান আয়ের উৎস হলো পর্যটন। নেপালিরা হিন্দী বুঝে তাই আপনার হিন্দী, ইংরেজি জানা থাকলে খুব ভালো ভাবে কমিনিকেশন করে নিতে পারবেন। স্থানীদের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম নেপালে ভ্রমণ সিজন অক্টোবর-ফেব্রুয়ারী/মার্চ পর্যন্ত।

এই সময়ে প্রচুর ভীড় থাকে এবং নেপাল অনেকটা ট্যুরিস্ট নির্ভর দেশ হওয়ায় এ সময়টাতে জিনিসপত্রের দামও বেশি থাকে। গুগল রিসার্চ করে জেনেছি সেপ্টেম্বর ১৫ থেকে ৩০ এই সময়টা নেপাল ভ্রমণের আদর্শ সময়। কারণ এই সময়ে বৃষ্টির পরিমাণ কমতে থাকে এবং অনেকটা অফসিজনই থাকে। তাই সবকিছু মোটামুটি কমে পাওয়া যায় এবং ভীড়ও কম থাকে।

ডলার এক্সচেঞ্জ ভাল রেট যেখানে দিবেঃ

যাত্রার দিন বাসা থেকে নের হাওয়ার আগে অবশ্যই “Nepal Rasta Bank” এর ওয়েবসাইট থেকে ডলার এক্সচেঞ্জ রেট দেখে বের হবেন। ডলার এক্সচেঞ্জ ৩ জায়গা করতে পারেন।

  • এয়ারপোর্ট (এখানে কিছু করে নিবেন যদি আপনার কাছে নেপালি বা ইন্ডিয়ান রূপি না থাকে)।
  • থামেলে প্রচুর এক্সচেঞ্জ দোকান আছে, অভাব বোধ মনে হবে না, যেটাতে মন চাই করে নিবেন (ভালো রেট পাবেন এবং বেস্ট জায়গা)।
  • নিউ বাস পার্ক বা নেপালের অন্য যেকোনো স্থানে (রেট একটু বেশি)

dollar exchange pic

নোটঃ থামেল ঘুরাঘুরি করে বেশি দাম ওয়ালা দোকানে ডুকে মূলাবেন, ডলার এক্সচেঞ্জ রেট দোকানে যা লেখা থাকবে দামদামি করলে তা থেকে ১ থেকে ১.৫ রূপি বাড়ানো যায়।

সিম কার্ড প্রসঙ্গেঃ

নেপাল টেলিকম আর এনসেল দুটি সার্ভিস প্রোভাইডার আছে। NTell শহরে এবং NCell পাহাড়ে-শহরে দুই জায়গাই ভাল কাজ করে। এনসেল আমাদের রবির মূল কোম্পানী Axiata এর।

  • দাম নিবে মাত্র ১০০-১৫০ রূপি।
  • পাসপোর্ট ফটোকপি এবং ১ কপি ছবি লাগবে।
  • প্রয়োজনমত ইন্টারনেট প্যাকেজ বা টকটাইম প্যাকেজ নিয়ে নিতে পারেন।
Nepal Ncell SIM
ছবিঃ Nepal Ncell SIM

নোটঃ যারা মনে করেন হোটেল wifi আছেই বা সিম কিনতে না চাইলে তাদের একটু ঝামেলা পড়তে হয়। যেমন ড্রাইভার সাথে যোগাযোগ, ট্যুর ম্যানেজার সাথে যোগাযোগ, দলের অন্য সদস্যদের সাথে যোগাযোগ ইত্যাদি।

থামেল থেকে পোখারা বা পোখারা থেকে থামেল বাসভাড়া এবং কিছু টিপসঃ

থামেল থেকে পোখারা বাস বুকিং জন্য আপনি অনেক এজেন্ট পাবেন, থামেলের ওলিতেগলিতে সব এজেন্ট। বিকল্প হোটেল মেনেজার হেল্প নিতে পারেন প্রায় সব হোটেল এই সার্ভিস দিয়ে থাকে।

  • সকাল ৭ টা থেকে ৭.৩০ মধ্যে সকল বাস একসাথে ছেড়ে যায় কাঠমান্ডু বাস স্টপ থেকে মিস করলে, প্রাইভেট গাড়ীতে যেতে হবে।
  • জোর পূর্বক চেষ্টা করুন কাঠমান্ডু থেকে যাওয়ার সময় বাসের ডান পাশে আসার সময় বাসের বাম পাশের বসার না হলে আপনার জার্নি অনেকটা বৃথা হতে পারে।
  • এসি, ননএসি, ওয়াইফাই, ভালো সিট সহ অনেক গাড়ীতে লান্স ব্যবস্থা দিয়ে থাকে আপনার প্রয়োজন মত দেখে নিবেন। বাসভাড়ার তালিকা পানির বোতল ছাড়া জনপ্রতি ৬০০ রুপি; পানির বোতল সহ জনপ্রতি ৭০০ রুপি; পানি ও খাওয়া সহ জনপ্রতি ১২-১৪০০ রুপি।

নোটঃ প্রায় সব বাসে WIFI লিখা থাকে কিন্তু অনেক গুলো দেখলাম WIFI কি তারে ভাল করে বুঝেই না। যেসব জায়গা বাস বিরতি দিয়ে থাকে সাধারণত ওই সব দোকান/হোটেল গুলোতে খাবার দাম একটু বেশি হয়ে থাকে।

সাইটসিয়িং কিভাবে করবেন আর টিপস সূমহঃ

নেপালের অন্যতম প্রধান আয়ের উৎস হলো পর্যটন। ফলে থাকা-খাওয়া, ঘুরা এই সব জন্য বিভিন্ন রকম ব্যবস্থা করে রেখেছেন নেপালবাসী। তেমনি সাইটসিয়িং জন্য বেশ কিছু মাধ্যেম রয়েছে।

  • টুরিস্ট বাস সার্ভিস। সেই বাস আপনাকে সকাল ১০ টাই হোটেল থেকে ড্রপ করে নিয়ে যাবে আর বিকাল ৫ টা হোটেলের সামনে নামিয়ে দিবে। আর বিভিন্ন প্যাকেজ থাকবে আপনার পছন্দ মত প্যাকেজ নিয়ে ঘুরতে পারবেন। মানবেধে ৬০০-৮০০ রূপি মধ্যে প্যাকেজ পাবেন। তবে এন্ট্রি টিকেট আর খাওয়া-দাওয়া খরচ নিজের।
  • সাইকেলিং বা বাইকিং। আপনি যদি সাইকেলিং বা বাইকিং করে ঘুরতে চান থাহলে সারাদিন জন্য সাইকেল বা বাইক ভাড়া নিয়ে যে দিক খুশি ঘুরতে পারেন। ভাড়া নেওয়ার সময় আপনার পাসপোর্ট জমা দেওয়া লাগতে পারে অনেক সময় ফটোকপি জমা দিলেও হয় তবে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই, আপনার আগে অনেকেই পাসপোর্ট জমা ভাড়া নিয়েছে দেখতে পারবে। সাইকেল সাধারণ ঘন্টাপ্রতি ১০০-১৫০-২০০ রূপি দামের পাওয়া যায় আপনার যেটা প্রয়োজন নিয়ে নিবেন। আর বাইকের ক্ষেত্রে ৪০০-৫০০ রূপি কিন্তু ওয়েল নিজের। সাইকেল বা বাইক চাইলে সারাদিনের জন্য নিতে পারেন এতে অনেক কমিয়ে রাখে।
  • রিজার্ভ ট্যাক্সি। ৪ বা ৬ জন হলে সারাদিনের জন্য ভাড়া করে নিতে পারেন।তবে এইক্ষেত্রে অনেক গুলো জায়গা নাম বলে মোটা অংক টাকা চেয়ে বসে কিন্তু দেখা যায় অনেকগুলো স্পট পাশাপাশি একটিতে গেলে অন্যগুলো ঘুরা হয়ে যায় এই দিকটা একটু সর্তকতা সাথে দেখবেন। সারাদিন ঘুরতে ৪০০০-৫০০০ রূপি চার্জ করবে যদিও সেটা নির্ভর করবে আপনি কোন কোন স্পট যেতে চান তার উপর।
  • লোকাল ট্রান্সফোট বা নিদিষ্ট শুধু একটি স্থানে যেতে চাইলে বা বাজেট ট্রাভেলার হয়ে থাকলে এটা বেস্ট। সাধারণত কম দূরত্ব হলে ১০-২০ রূপি নিয়ে থাকে।

কাঠমান্ডুতে যা যা দেখতে পারেনঃ

  • নাগরকোট
  • ছোট বড় মন্দির
  • পুরাতন স্থাপনা
  • দরবার স্কয়ার
  • বুদ্ধুনাথ
  • গ্রাডেন অব ড্রিম
  • লুমবিনি

পোখারা যা যা দেখতে পারেনঃ

  • সারাংকোট
  • বিন্দুবাসিনি টেম্পেল
  • মাহেন্দ্র কেভ
  • ব্যাট কেভ
  • ফিশিং লেক
  • ডেভিড’স ফল
  • ফেওয়া লেক

উপরের জায়গা গুলো ছাড়াও আর কিছু বিশ্বঐতিহ্য আছে। যেগুলো এখন ভূমিকম্পে ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রায়। বুকিং দেয়ার সময় ডলার হিসাবে বুকিং দেয়া হয়। পেমেন্টও ডলার হিসাবে ওরা কনভার্ট করিয়ে নেয়, ডলারের রেট যদি কমে যায় তাহলে আপনার লাভ হবে  আর যদি রেট বেড়ে যায় তাহলে একটু বেশি লাগবে।

অবশ্যই এই পর্ব আপনাদের কেমন লেগেছে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। আর হ্যাঁ, আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকলে জানাবেন।

আমাদের নেপাল ভ্রমণ গাইড সিরিজ পোস্ট এর লিঙ্কঃ

 

Similar Posts