হুয়াং লুও : পৃথিবীর সবথেকে লম্বা চুলের রমণীদের গ্রাম

লম্বা, ঘন, স্বাস্থ্যজ্জ্বল চুল সকল নারীর পছন্দ। তবে ক্ষেত্রবিশেষে কিছু কিছু নারী তাদের চুল ছোট রাখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কিন্তু এটাও ঠিক যে প্রাচীনকাল থেকেই লম্বা চুলের প্রতি নারীদের অন্যরকম একটা টান রয়েছে। লম্বা চুল শুধু একজন নারীর সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করে তা নয়। বরং চুলের কিছুটা প্রভাব নারীর ব্যক্তিত্বের উপরেও পড়ে থাকে। তাই চুলের যত্নে কোন রকমের অবহেলা তারা করেন না। বলা যায় যে, একজন নারীর জীবনের অন্যতম প্রিয় বস্তু হচ্ছে তার নিজের চুল।

huangluo-yao-village-of-the-longest-haired-women-in-the-world

চুল লম্বা করার জন্য নারীরা কত কিছুই না করে থাকেন।  বিশাল লম্বা চুলের জন্য তাদের শখের কোনো কমতি নেই। কিন্তু চুল বড় করতে চাইলেও কোন না কোন প্রয়োজনে দেখা যায় যে চুল কেটে ছোট করে রাখতে হয়। যার ফলে পরবর্তীতে আর বড় চুলের স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব হয় না।
আজকের আর্টিকেল  এর মাধ্যমে আমরা এই বিশ্বের এক স্থানের এমন কিছু নারীদের সম্পর্কে জানবো যাদের কাছে বিশাল লম্বা চুল স্বপ্ন নয় বরং বাস্তবতা এবং যারা কেবল মাত্র জীবনে একবার চুল কেটে থাকে! তাহলে চলুন আর দেরি না করে আমরা এই অদ্ভুত সুন্দর বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেই।

কারা এই নারী যারা মাত্র জীবনে একবার চুল কেটে থাকে?

চায়নার হুয়াং লুও গ্রামটি বেইজিং থেকে প্রায় এক হাজার মাইল দূরে এক পাহাড়ে অবস্থিত। এই গ্রামের নারীদের একটা অদ্ভুত সংস্কৃতি রয়েছে যে তারা তাদের চুল অনেক ভালোবাসে এবং এই চুল কখনো জীবনে একবারের বেশি কাটে না। এই গ্রামের নারীরা তাদের চুলের প্রতি ভালোবাসাকে একদম নেক্সট লেভেলে নিয়ে গিয়েছে। তারা তাদের চুল অনেক বেশি লম্বা হতে দেয় এবং চুলের যত্নে বিন্দুমাত্র অবহেলা করে না। পৃথিবীর সবথেকে লম্বা এবং ভারী চুলের অধিকারীণী হয় এই গ্রামের নারীরাই।

সাধারণত তাদের চুল কত বড় হয়ে থাকে?

যেহেতু এই গ্রামের নারীরা তাদের জীবনে মাত্র একবার চুল কেটে থাকেন তাই তাদের চুল বড় হওয়াতে কোনো রকমের বাধা থাকে না। চুল যত বড় হতে পারে ততো বড় হতে থাকে। তবে সাধারণত এই চুলের উচ্চতা 1.5 মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে এবং ওজন প্রায় 1 কেজির সমান হয়ে থাকে। ক্ষেত্রবিশেষে এমন কিছু বৃদ্ধ নারী আছেন যাদের চুল 2.1 মিটারও ছুঁয়েছে। সে নারীদের চুলের ওজন আবার একটু বেশিই হয়। তবে চুল লম্বা করার ক্ষেত্রে চুলের ওজন নিয়ে তারা বিন্দুমাত্র মাথা ঘামায় না।

কেন এই নারীরা চুল কাটে না?

প্রথমত সকল দেশের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে নিজেদের ভিন্ন রকমের সংস্কৃতি রয়েছে। তেমনি চায়নার এই ছোট্ট গ্রামটির নারীদের ট্রেডিশন এবং কালচার এর মধ্যে চুল বড় করার বিষয়টি অনেক আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। বলা হয়ে থাকে এই গ্রামের নারীরা গত একশো বছর ধরে ধর্মানুষ্ঠানের মাধ্যমে এই নিয়ম মেনে চলে আসছে। তাদের এই চুল না কাটার পেছনের কারণ স্পষ্ট ভাবে জানা না গেলেও তাদের মতে চুল শুধু চুল নয় বরং এটা একটা যোগসূত্র তাদের পূর্ব পুরুষের সাথে। আর এ কারণেই তারা ভক্তি শ্রদ্ধা করে তাদের এত পুরানো ও বেশ প্রচলিত সংস্কৃতিকে তাদের মধ্য থেকে হারিয়ে যেতে দেয়নি।

 

জীবনের কোন সময়টায় তারা চুল কাটে?

এই গ্রামের নারীরা শুধু মাত্র তাদের জীবনে একবার মাত্র চুল কেটে থাকে এবং সেই সময়টা হচ্ছে তাদের বয়স যখন ১৭ হয়। ১৭ বছর বয়সে পা দিলেই সেই গ্রামের নারীদের জীবনে প্রথম এবং শেষবার চুল কাটার অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। অতঃপর আঠারো বছর বয়স থেকে আজীবন তারা আর চুল কাটে না।

huangluo-yao-village-of-the-longest-haired-women-in-the-world
তাদের চুলের যত্নের পিছনে রহস্য কি?

ভালোবাসা ও যত্নআত্তি দিয়ে যে কোন জিনিসকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়। এই নারীরা তাদের চুলের পেছনে যত শ্রম ও সময় দিয়ে থাকে তা কোনটাই ব্যর্থ হয় না। তাদের রয়েছে সবথেকে সুন্দর চুল। শুধুমাত্র চুল পরিষ্কার করতে এবং চিরুনি দিয়ে আঁচড়াতেই তাদের ঘন্টার পর ঘন্টা সময় লেগে যায়। তবুও তারা ক্ষান্ত হয় না। শুধু তাই না, তাদের চুলকে অসাধারণ ও সুন্দর করার জন্য এই গ্রামের মানুষেরা নিজেদের তৈরি একটি শ্যাম্পু আবিষ্কার করেছে। এই শ্যাম্পু সাধারণত ভাতের মাড়, হার্বস, ফল-ফলাদি এবং চা মিশিয়ে তৈরি করা হয়। এই সিক্রেট ফর্মুলা সাধারণত তারা কারো সাথে শেয়ার করতে চায় না এবং তারা বলে থাকে এই শ্যাম্পু ব্যবহার করলে আপনার বয়স ৮০ বছর হলেও চুলে পাক ধরবে না।

ব্যতিক্রম কিছু নারী-

যদিও এই গ্রামের ট্রেডিশন ও কালচার অনুযায়ী নারীরা তাদের চুল সর্বোচ্চ উচ্চতা পর্যন্ত লম্বা করে থাকে, তবু এখানে কিছু কিছু নারীর দেখা মেলে যারা তাদের চুল কেটে ছোটো করে ফেলে। তাদের চুল কেটে ফেলার অন্যতম মূল কারণ হচ্ছে শহরে কাজের জন্য যাওয়া এবং সেখানকার জীবনযাপনের সাথে নিজেদের মানিয়ে নেওয়া বা অভ্যস্ত করে ফেলা।

চায়নার এই ছোট্ট গ্রামের নারীদের চুলের প্রতি ভালোবাসার বিষয়টি কিন্তু পৃথিবী থেকে মোটেও লুকিয়ে থাকে নি। খুব শীঘ্রই তারা সারাবিশ্বের দৃষ্টিগোচরে এসে পড়ে এবং গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে যুক্ত হয়ে যান। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০ এর বেশি টুরিস্ট মাইলের পর মাইল ভ্রমণ করে এই গ্রামে গিয়ে তাদের সাথে দেখা করে এবং জেনে নেয় চুল এত সুন্দর রাখার রহস্য কি? মজার কথা হচ্ছে, এই ট্যুরিস্টদের নিজেদের চুলের সৌন্দর্যের পেছনের রহস্য তারা একেবারে ফ্রীতেই বলে দেয়।

সুপ্রিয় পাঠক মন্ডলী, আশা করা যায় আপনাদের কাছে আর্টিকেলটি উপভোগ্য ছিল। আজ এখানেই ইতি টানছি, ধন্যবাদ।

Similar Posts