Farabi / এপ্রিল 12, 2020
নদী সব সময় সর্বনাশা নয়। তার রয়েছে অনেক রূপ। কখনো শান্ত, সুস্থির, কখনোবা প্রমত্তা। বাংলাদেশের হাজারো মানুষের দৈনন্দিন জীবিকা নির্বাহ হয় এই নদীকে ঘিরেই। নদীর বুকে পাল তুলে চলা নৌকার পানে চেয়ে থেকে লিখা হয়ে থাকে অনেক গান, কবিতা কিংবা হাজারো প্রেমের কাব্য।
বাংলাদেশের ছোট একটি মফস্বল শহর ফরিদপুর। এই ফরিদপুর শহরকে ঘেষে চলে গিয়েছে পদ্মা নদী। কিন্তু পূর্বে পদ্মা নদী ফরিদপুর শহরের এত কাছে ছিল না। ছিল ৭/৮ কিঃ মিঃ দূরে। কিন্তু হঠাৎই নদী ভাঙ্গন দেখা দেয় কয়েক বছর আগে। পদ্মার ভাঙ্গন শুরু হয়ে একদম শহরের কাছে চলে আসে। তখন এই ভাংঙ্গন রোধে স্থানীয় প্রশাসনের প্রচেষ্টায় ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি প্রকল্প গ্রহন করে । যে প্রকল্পের মাধ্যমে ভাঙ্গন রোধে দীর্ঘ ভাঙ্গন প্রতিরোধ বাধঁ নির্মান করা হয়। সেই থেকে পদ্মায় আর ভাঙ্গন দেখা যায়নি। নদী ভাঙ্গন ঠেকাতে তৈরি করা সেই বাধ আজ মানুষের বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় মানুষের কাছে যা পরিচিত ধলার মোড় নামে।সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার ছাড়াও প্রতিদিন শতশত মানুষ আসে একটু আনন্দ ও খোলা আকাশের নিচে বসে উন্মুক্ত বাতাসে বসে পদ্মার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করার নিমিত্তে।এছাড়া নৌকায় চড়ে ঘুড়ে বেড়ানো,বাঁধের উপর বসে বাদাম,ঝাল মুড়ি ,ফুসকা,চটপটি খাওয়া তো রয়েছেই আর রয়েছে ফিরে যাওয়া সেই দূরন্ত শৈশব-কৈশোরের দিন গুলোয়। শহরের যান্ত্রিক জীবন থেকে একটু মুক্তির আশায় মানুষ ভীড় জমায় এই ধলার মোড়ে।
গত কয়েক বছরের মধ্যে ফরিদপুর শহরের মানুষের অন্যতম বিনােদন স্পটে পরিনত হয়েছে এই ধলার মোড়। কারণ এখানে রয়েছে পদ্মার পাড়ে বসে পদ্মার মোহনীয় সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ । চাইলে ট্রলার ভাড়া করে ঘুরে আসতে পারবেন পদ্মার বুকে। দেখা মিলবে পদ্মার বুকে জেগে ওঠা চরে ঘাস আর কিছু বুনো লতাপাতা। আর যদি কপাল খুব ভালো থাকে তাহলে দেখা পেয়ে যেতে পারেন মেছোবাঘের । ও হ্যাঁ এখানে পদ্মা নদীতে গোসল করার সুযোগ আছে।
পড়ন্ত সন্ধ্যায় পদ্মার বুকে পাল তুলে চলা নৌকা কিংবা আসে পাশের দিন মজুর মানুষের ঘরে ফেরা দেখলে জীবন কে খুব কাছ থেকে অনুভব করা যায়। বাধের উপর বসে পদ্মার সূর্যাস্ত না দেখলে হয়তো অনেক বড় এক সৌন্দর্য অবলোকন দেখা থেকে বঞ্চিত হতে হবে। খুব সাধারন আর ছিমছাম পরিবেশে নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীর সৌন্দর্য উপভোগের এই বড় সুযোগ এই ধলার মোড়।
যাওয়ার উপযুক্ত সময়ঃ সারা বছরই যেকোন সময়ই যাওয়ার উপযুক্ত সময়। কিন্তু সন্ধের ঠিক পরপর আলো আধারি মিশে এক অদ্ভূত সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হয় যা আপনার মনকে করে তুলবে আন্দোলিত।
কিভাবে যাবেনঃ ঢাকার গাবতলী থেকে গোল্ডেন লাইন, সাউথ লাইন কিংবা সূর্যমুখী যেকোন একটি বাসে উঠে বসতে পারেন। বাসের ভাড়া নন এ/সিঃ ৩০০ টাকা, এ/সঃ ৭০০ টাকা এবং ভি আই পি আর এম টূ গাড়িঃ ১০০০ টাকা। ভোর ৬.৩০ থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত কিছুক্ষন পরপরই গাড়ি পাবেন। যে গাড়ি গুলোর কথা বললাম সেগুলো সবই ফেরী পারপার।
আপনি চাইলে লঞ্চ পাড়াপাড়েও যেতে পারেন। বিকাশ, সূবর্ণ, জাকের এমন আরো কিছু লঞ্চ পাড়াপাড়ের গাড়িতেও আপনি চাইলে উঠতে পারেন। তবে পরিবার নিয়ে গেলে ফেরী পাড়াপাড়েই যাওয়া ভালো। ঈদ ছাড়া সচরাচর রাস্তায় জ্যাম থাকে না। ফেরীতে উঠার সময় একটু সিরিয়ালের জ্যাম থাকতে পারে। তাও বেশীক্ষন না সেটা। সো খুব বেশী হলে ৩.৩০/৩.৪৫ ঘন্টার মধ্যেই আপনি পৌছে যাবেন ফরিদপুরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড অর্থাৎ গোয়ালচামট বাসস্ট্যান্ডে। সেখান থেকে অটোতে ৩০/৪০ টাকায় পৌছে যাবেন ধলার মোড়ে। যদি দিনে গিয়ে দিনে চলে আসার ইচ্ছা থেকে তাহলে সকাল ৭.০০/৭.৩০ এর গাড়ীতে উঠলে ১২.০০ টার মধে ফরিদপুর পৌছে যাবেন।আর সেখান থেকে আরো ২০/২৫ মিনিট এই পৌছে যাবেন ধলার মোড়। আর বিকালের গাড়ীতে করে রাতের মধ্যেই ফিরে আসতে পারবেন ঢাকায়। তবে যদি পদ্মার সন্ধ্যের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান তাহলে একটা রাত ফরিদপুর শহরে থেকে আসলে মন্দ না। ফরিদপুর শহরেই অনেক ভাল মানের হোটেল আছে। উল্লেখযোগ্য হচ্ছে হোটেল পদ্মা, হোটেল মেঘনা, হোটেল পার্ক প্যালেস ইত্যাদি।
FILED UNDER :ভ্রমণ
Comments are closed.
Comments
Kader says
প্লেসটা অনেক সুন্দর লাগলো।
ইনশাআল্লাহ হয়তো একদিন যাবো।
তবে হ্যাঁ ইচ্ছা আছে, যে খোলা আকাশের নিচে ফরিদপুরে পদ্মার কিনারে বসে বই পড়ার!
Mehedi Hasan Khan says
রাজশাহীর কথা মনে পড়ে গেলো। পদ্মা গার্ডেন, মুক্তমঞ্চ, আই বাঁধ, টি- বাঁধ, ফুলতলা। কবে যে লকডাউন তুলে নিবে আবার রাজশাহী যেতে পারবো!