নেপাল ভ্রমণ গাইড (২য় পর্ব)
গত পর্বে আমরা দেখেছি কিভাবে ভিসা জন্য এপ্লাই করতে হয় এবং বিমান টিকেট করার কিছু টিপস। আজকের নেপাল ভ্রমণ গাইড সিরিজ পর্বে আমরা আলোচনা করব কিভাবে বিমানে বা সড়কপথে নেপাল কাঠমান্ডু বা নেপালের ট্যুরিস্ট হাব এরিয়া থামেলে অবস্থান করবেন এবং প্রথম দিন কিভাবে থামেলে কাটাবেন।
আপনি যে বিমানে যাবেন না কেন বেশি ভাগ বিমান বাংলাদেশ বিমানবন্দর থেকে সকাল ১০-১১.৩০ মধ্যে নেপালের ত্রিভূবন এয়ারপোর্ট উদ্দ্যেশে আর পৌঁছাতে সময় লাগে ১.৩০ থেকে ২.০০ ঘন্টা।

ইমিগ্রেশন শেষ করতে প্রায় দুপুর ৩ টা হয়ে যাবে এরপর পালা এয়ারপোর্ট থেকে থামেল যাওয়া। থামেল হচ্ছে নেপাল টুরিস্ট হাব। এয়ারপোর্ট থেকে থামেল যেতে সময় লাগে ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা। এয়ারপোর্ট থেকে বেশ কয়েকভাবে থামেলে যাওয়ার যায়।
- এয়ারপোর্ট থেকে নিজস্ব সার্ভিস আছে যেটা ফিক্সড করা থামেল পর্যন্ত ৭০০ রূপি।
- পাঠাও মত নেপালও “এডি ক্যাব”, “কাওয়া রাইডস” রয়েছে (প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করে নিন)।
- হোটেল ব্রোকার যাদের খুঁজতে হবে না ওরা আপনাকে খুঁজে নিবে।(অবশ্যই শর্ত জেনে নিবেন, যদি হোটেল পছন্দ না হয় কত দিতে হবে থামেল পর্যন্ত আসা গাড়ী ভাড়া বাবত)
- এয়ারপোর্ট টার্মিনাল থেকে হেঁটে একটু বেড়িয়ে আসবেন। একটু ডানদিকে ঘুরলে অনেক ট্রাক্সি পাবেন ৪০০-৫০০ রূপি নিবে।

থামেল পৌঁছে আপনার প্রথম কাজ হলো থাকার জন্য একটি হোটেল নেওয়া। প্রথমে বলছি এটি একটি ট্যুরিস্ট হাব এড়িয়া নেপাল আসা সকল ট্যুরিস্ট এখানে অবস্থান করে। আর চারপাশে যতেষ্ট পরিমান হোটেল-মোটেল রয়েছে। উদাহারণ স্বরূপ, যারা কক্সবাজার বা কুয়াকাটা ঘুরতে গিয়েছেন তারা বলতে পারবেন, আমরা যখন বাস/গাড়ী থেকে নামতেই প্রচুর পরিমাণ হোটেল ব্রোকার আমাদের চারদিকে ঘিরে ধরে থামেলে অনেকটা এমন। আর দেখতে মনে হবে যেন পূরণ ঢাকা একটা অংশ থামেল।

তারপর আপনার সুবিধা জন্য থামেলে হোটেল ভাড়া সাথে কিছু টিপস জানিয়ে দিচ্ছি।
- যদি কোন ঝামেলা বা বার্কেটিং যেতে না চান আগে থেকে বুকিং ডট কম বা গুগুল সার্চ করে রিভিউ দেখে পছন্দমত হোটেল বুকিং দিয়ে রাখতে পারেন।
- থামেল ৬০০ রূপি থেকে শুরু করে ৩ বা ৫ স্টার মানেরও হোটেল পাবেন তবে বেস্ট হচ্ছে ৭০০-৮০০ মধ্যে ভাল মনের ডাবল বেডের রুম পাওয়া সম্ভব। স্থানীয়দের থেকে জানা মতে, সব থেকে বেশি ৮০০-১০০০ মধ্যে ডাবল রুম ভাড়া দিয়ে থাকে।
- যদি নিউ বাস স্টপ থাকেন বা হোস্টেল টাইপের কোন হোটেলে থাকতে চাইলে সেইক্ষেত্রে জনপ্রতি ২৫০-৩০০ রূপি থাকা সম্ভব।
থামেল হোটেলে চেকিং করে ফ্রেস হয়ে বেড়িয়ে পড়ুন দুপুরের খাবার জন্য আর তখন গড়িতে আনুমানিক ৪-৫ টা।
***হালাল খাবার খুঁজছেন চলে যান “আল-মদিনা” হোটেল যে কাউকে বললে দেখিয়ে দিবে। গুগল ম্যাপ কো-অর্ডিনেট এখানে দিয়ে দিলাম (https://goo.gl/KvWdDA)। এখানের খাবার খরচ নিম্নরূপঃ- ভাত ফুল ১৬০ রুপি; হাফ ৮০ রুপি (১টি ফুল এবং ১টি হাফ নিলে দুজন খেতে পারবেন); মুরগী / মহিষ কারি ফুল ২৬০ রুপি; হাফ ১৩০ রুপি (প্রত্যেক হাফ এ ২টি বড় মুরগীর পিস থাকে); ডাল ফুল ১৪০ রুপি; হাফ ৭০ রুপি (১টি হাফ ২ জনের জন্য যথেষ্ট); আলু-ফুলকপি সবজি ফুল ১৬০ রুপি; হাফ ৮০ রুপি (১টি হাফ ২/৩ জনের জন্য যথেষ্ট। অন্যথায় অনেক হোটেল পাবেন রাস্তার আশেপাশে মাঝে মাঝে মনে হবে নেপাল এক একটি বাড়ি আবার সেই বাড়ি এক একটি দোকান/হোটেল।


খাওয়া দাওয়া শেষ করে ৩ টা কাজ করে নিন। এই সব নিয়ে আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন। নেপাল ভ্রমণ টিপস।
- ডালার ভাঙ্গিয়ে নিন।
- সিমকার্ড কিনে নিন।
- আগামীকালের পোখারা যাওয়ার বাসের টিকেট বুকিং করুন অথবা কাঠমান্ডু সাইটসিয়িং প্লানিং করুণ।
আপনি চাইলে থামেল হোটেলে ব্যাগ রেখে ১০-১২ পর্যন্ত ঘুরতে পারেন। এক বারে নিরাপদ। মেইল রোডের যে পাশেই হোটেলেই উঠেন না কেনো দুই পাশেই ট্যুরিস্টদের জন্য অনেক আকর্ষীয় দোকান রয়েছে। নেপালি লোকাল দোকানপাট রাত আট টার মধ্যে বন্ধ হয়ে গেলেও থামেল ১২-১ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে আজকে কিনা-কাটার দরকার নাই।
যেহেতু রাতের খাবার দাবার করতে হবে সেই সাথে মুসলিম হোটেলে খাওয়া বাধ্যতামূলক হলে “আল মদিনা” হোটেলে চলে যান। অথবা যাচাই-বাচাই করে কোন একটি হোটেলেও খেয়ে নিতে পারেন।
এভাবে কাটিয়ে দিন হিমালয় কন্যা নেপালের বুকে একটি রাত।
এবার আসি বাংলাদেশ থেকে সড়কপথে কিভাবে নেপালে যাবেনঃ
আপনি চেংড়াবান্দা বর্ডার দিয়ে ভারতে প্রবেশ করলেন তারপর আপনি নিউ জলপাইগুড়ি ট্রেন স্টেশনে চলে আসুন।
NJP station এর একটু সামনেই কিছু ব্লু কালারের বাস দেখতে পাবেন যা শিলিগুড়ি পর্যন্ত যেয়ে থাকে যা সময় অনেক বেশি লাগে আর প্রচুর থামে বিভিন্ন যায়গাতে। কিন্তু আপনি ওই Bus এ না গিয়ে কার Parking এর একটু সামনে গিয়ে সরাসরি বাস পাবেন যা Panitank পর্যন্ত গিয়ে থাকে। NJP স্টেশন থেকে পানিট্যাংকি পর্যন্ত মাত্র ৩৫ কি.মি. পথ এবং যেতে সময় লাগবে ১ ঘন্টা। আর ভাড়া নিবে মাত্র ২০/২৫ রুপি প্রতিজন।
বাস থেকে নেমে পানিরটাংকি থেকে বাম দিক দিয়ে একটা রাস্তা চলে গেছে ওই রাস্তা দিয়ে ৫-৭ মিনিট হেঁটে গেলে আপনি ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন পাবেন। ওখান থেকে ইন্ডিয়ার ডিপাচার নিয়ে আবার ৬-৮ মিনিট হেঁটে গেলে পেয়ে যাবেন নেপাল ইমিগ্রেশন। (তবে আপনি চাইলে এই পথ রিক্সা দিয়ে ও যেতে পারবেন ভাড়া লাগবে ২০+২০ রুপি)।ওখানে গিয়ে আপনার পাসপোর্ট দেখাবেন অফিসারকে তারপর অফিসার আপনার পাসপোর্ট এ স্টাম্প বা সিল মেরে দিবে এন্ট্রি করার জন্য।


আপনার ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন এর কাজ শেষ হওয়ার পর আপনি গেট দিয়ে নেপালের বর্ডার এ প্রবেশ করবেন তারপর চাইলে কিছু দূর হেটে যেতে পারেন অথবা প্রচুর রিকসা পাবেন। আপনি চাইলে রিকসা ভাড়া করে সামনে এগিয়ে যেতে পারেন। কারণ একটা ব্রীজ পার হতে হবে। ভারত ও নেপালের মধ্যে কোন ল্যান্ড নেই শুধু ব্রীজ ই বর্ডার কে দুভাগ করা হয়েছে অর্থাৎ ব্রীজ পার হয়ে গেলেই #কাকরভিটা বর্ডার এ পা দিবেন যা নেপালের বর্ডার।

ব্রীজ পার হওয়ার পর একটু সামনে এসে দেখবেন বাস কাউন্টার। বাস কাউন্টার থেকে কাঠমান্ডুর এসি বাসের টিকিট কেটে উঠবেন। সেখানে থেকে এসি ডিলাক্স বাস #Bihani AC Bus আছে যা সকাল ৬ টায়, ৭ টায়, আর বিকেল ৩ টায়, ৫ টায় ছাড়ে। প্রতিজন ভাড়া ১৬৩০ রুপি নিবে আর সময় লাগবে ১৬/১৭ ঘণ্টা অর্থাৎ লং জার্নি হবে এটা নিশ্চিত থাকুন। তবে মাঝে ২/৩ যায়গা বিরতী দিবে যাতে ক্লান্তি দূর হয় আর রিফ্রেশ হয়ে নিতে পারেন।

নোটঃ নেপালে সড়কপথ দিয়ে যেতে চাইলে ভারতের ভিতরে যে বর্ডার আছে সেই বর্ডার এর নাম হচ্ছে পানি Panitanki border (পানিট্যাংকি বর্ডার)। পানিট্যাংকি বর্ডার পার হয়ে ওই পারে গেলেই কাকরভিটা (নেপালের বর্ডার নাম) বর্ডার শুরু যা নেপাল এর রাস্তা শুরু। সকাল ৬ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। হালাল খাবার সমস্যা থাকলে বর্ডার পার হওয়ার পর খাবার হোটেল Soinik Hotel যা নিট আ্যন্ড ক্লিন পাবেন যেটাতে সাদা ভাত, ডাল আর তরকারি পাবেন।
ছবি গুলো এই ওয়েবসাইট (https://goo.gl/LpHuuC) থেকে নেওয়া।
নোটঃ ঢাকা থেকে নেপালের কাঠমান্ডুতে ‘শ্যামলী এন আর ট্রাভেলস’-এর বাস বাস সার্ভিস চালু হলেও এর কার্যকর এখন পর্যন্ত হাওয়াই বিস্তারিত জানাতে পারলাম না। নিউজ কবারঃ https://www.bbc.com/bengali/news-43861491
আগামী পর্বে আমরা আলোচনা করব কাঠমান্ডু শহরে সাইটসিয়িং কিভাবে করবেন, নাগরকোট নিয়ে কিছু কথা এবং কাঠামান্ডু থেকে পোখারা বাস জার্নি সাথে র্যাফটিং একটিভিটি কিভাবে করতে পারেন।
অবশ্যই এই পর্ব আপনাদের কেমন লেগেছে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। আর হ্যাঁ, আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকলে জানাবেন।
আমাদের নেপাল ভ্রমণ গাইড সিরিজ পোস্ট এর এটা ২য় পোস্ট। এর পরের পোষ্ট পোস্ট এর লিঙ্কঃ
4 Comments
Comments are closed.