নেপাল ভ্রমণ গাইড (৪র্থ পর্ব)

আমরা গত পর্বে আলোচনা করেছি কিভাবে কাঠমান্ডু শহরে সাইটসিয়িং করবেন, নাগরকোট ঘুরাঘুরি নিয়ে কিছু পরমার্শ আর কাঠমান্ডু থেকে পোখারা যাত্রা পথে কিভাবে র‍্যাফটিং করতে পারেন। আজকের নেপাল ভ্রমণ গাইড সিরিজ পর্বে আলোচনা করব কিভাবে পোখারা শহরের আশেপাশে সাইটসিয়িং করবেন, সারাংকোট ঘুরা নিয়ে কিছু পরমার্শ এবং এডভেঞ্চার একটিভিটি নিয়ে ধারণা।

সকালে আপনার জন্য দুইটি রাস্তা খোলা।

পোখারা সূর্যোদয়
  1. পোখারা সাইটসিয়িং।
  2. পোখারা এডভেঞ্চার (প্যারাগ্লাডিং, বাঞ্জি জাম্প, স্পা’র ইত্যাদি)।

আপনাকে ২ দিন বা তারও অধিক সময় থাকতে হবে পোখারা কারণ একদিন রিজার্ভ করা লাগবে সাইটসিয়িং জন্য আর সাইটসিয়িং কিভাবে করবেন তা তা নিয়ে জানতে এখানে ক্লিক করুন। আপনি কাঠমান্ডু সাইটসিয়িং করেন বা পোখারা করেন সব জায়গায় সিস্টাম প্রায় একই।

আর আপনি যে এডভেঞ্চার করেনা কেন প্রতিটি এডভেঞ্চার জন্য এক এক দিন করে রিজার্ভ করা লাগবে। পোখারা সব জায়গায় সকল এডভেঞ্চারগুলো বুকিং দেয়া যায়। অলিতে গলিতে সব জায়গাই এডভেঞ্চার শপ আছে।এমনকি প্রত্যেকটি হোটেলের রিসেপশনেও বুকিং করা যায়। নানা জায়গায় দাম নানা রকম, সার্ভিস নানা রকম, দরদাম করে নেবেন। আপনাকে হোটেল থেকে পিক করে নেবে এবং হোটেলে আবার নামিয়ে দিয়ে যাবে। অবশ্যই টাইমের ব্যাপারে সচেতন থাকবেন।

পোখারা এডভেঞ্চার প্যারাগ্লাডিংঃ

এডভেঞ্চার মধ্যে প্যারাগ্লাডিং খুবই জনপ্রিয় একটি একটিভিটি। প্যারাগ্লাডিং সাধারণত সারাংকোটেই করতে হয়, আর পোখারা শহর থেকে সারাংকোট যেতে সময় লাগে ৪৫ মিনিট ১ ঘন্টা মত। যার জন্য আপনাকে গুনতে হবে ৬০০০-৭০০০ রূপি। প্যারাসুট নিয়ে পাহাড় থেকে লাফ দিয়ে নিচে নেমে পড়ুন আর ক্ষণিকের জন্য হলেও পাখির মত উড়তে থাকুন আর উপভোগ করুন পোখারা শহর সাথে ফেউয়া লেকের বার্ড ভিউ। মাথার উপর নীল আকাশ, পায়ের নিচে পাহাড়।

প্যারাগ্লাইডিং ওফ পোখারা
ছবিঃ প্যারাগ্লাইডিং, পোখারা

পোখারা এডভেঞ্চার প্যারাগ্লাডিং কিছু টিপসঃ

আপনি যদি প্যারাগ্লাডিং করবেন ভেবে থাকেন সেইক্ষেত্রে সাজেস্ট করি আপনি কাঠমান্ডু থেকে পোখারা এসে ঐদিন পুনারায় পোখারা শহর থেকে সারাংকোটেই চলে যান কারণ সারানকোট এ যদি আপনি নাও থাকেন তবুও এদিন আপনাকে সারাংকোট এর ভিউ পয়েন্ট আসতেই হবে। ভিউ পয়েন্ট থেকে সূর্যোদয় দেখার জন্য। সেই এক সবর্গীয় দৃশ্য। অন্নপূর্নার উপর যখন সূর্যের লাল আভা পরে তখন আর কি বলবো। আর পোখারা শহর এবং ফেউয়া লেকের বার্ড ভিউ দেখতে পাবেন। সারাংকোটে থাকার সুবিধা এটাই যে, এই ভিউ দেখার জন্য সূর্য উঠার ১৫ মিনিট আগে ঘুম থেকে উঠলে হবে সাথে একটি নতুন জায়গা থাকার অভিজ্ঞতা কথা নাই বললাম। আর যদি পোখারা থাকেন, তবে আপনাকে উঠতে হবে রাত ৩-৪ টায়। উঠে গাড়ি করে রাওনা দিতে হবে। যদি ৩-৪ টার আগে রাওনা দিতে না পারেন সূর্যোদয় দৃশ্য মিস করবেন। প্যারাগ্লাডিং সারাংকোটেই হাওয়ায় আপনার গন্তব্য যেতে ১০ মিনিত লাগবে। সব কিছু মিলিয়ে প্যারাগ্লাডিং করে থাকলে একদিন সারাংকোট থাকা উচিত।

পোখারা এডভেঞ্চার র‍্যাফটিংঃ

র‍্যাফটিং করতে সম্পন্ন একদিন যাবে। যার জন্য আপনাকে গুণতে হবে ৩০০০-৫০০০ রূপি। যদি আপনার হাতে সময় কম থাকে বা আলাদা একটা দিন শুধু মাত্র রাফটিং জন্য ব্যয় করতে না চান সেই ক্ষেত্রে কাঠমান্ডু থেকে পোখারা আসার পথে করে নিতে পারেন প্যাকেজের সাথে দুপুরের খাওয়া এবং বাস ভাড়া এড করা থাকবে। সব থেকে ভাল কাঠমান্ডু থেকে পোখারা আসার পথে র‍্যাফটিং করে নেওয়া।  এই নিয়ে আগের পর্বের বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

পোখারা এডভেঞ্চার বাঞ্জি জাম্পঃ

প্রায় ৩৩০ ফিট উপর থেকে পায়ে শুধু স্প্রিং এর দড়ি বেধে লাফ দেয়ার অভিজ্ঞতা আসলে লিখে প্রকাশ করা সম্ভব নয় । যার জন্য আপনাকে গুণতে হবে ৮০০০-১০০০০ রূপি। অবশ্যই নেপাল যাওয়ার পূর্বে Google গিয়ে “The Last Resort” লিখে সার্চ দিয়ে দেখে যাবেন। তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট লিংকঃ https://www.thelastresort.com.np

বাঞ্জি জাম্প ইন পোখারা
ছবিঃ বাঞ্জি জাম্প, পোখারা

বিঃদ্রঃ নেপালকে অনেকেই আ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের স্বর্গ বলে থাকে। উপরের যে সব এডভেঞ্চার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এর বাইরের নেপালে অনেক এডভেঞ্চার আছে। যেমন ওয়াল ক্লাইম্বিং ও রোপওয়ে, বটিকশি নদীর ধারে ক্যাম্পিং , অন্নপূর্ণা বেইজ ক্যাম্পে হেলিকপ্টা করে ঘুরে আসা, বান্দিপুরে ট্রেকিং ও সিদ্ধাহ গুহা দর্শন করা। আপনি যে এডভেঞ্চার করেন না কেন আপনাকে আগে বুকিং করতে হবে, আর বুকিং জন্য হেল্প নিতে পারেন এডভেঞ্চার শপের, বিভিন্ন শপ দাম ভিন্ন কারণ সুযোগ-সুবিধাও ভিন্ন থাকে। বাকি সব দায়িত্ব এডভেঞ্চার শপের অধীনে থাকে, আপনাকে হোটেল থেকে ড্রপ করে নিয়ে যাওয়া এবং এডভেঞ্চার একটিভিটি শেষ করে হোটেলে নামিয়ে দেওয়া পর্যন্ত।

পোখারা সাইটসিয়িং একদিনঃ

সাইটসিয়িং ব্যাপারে নতুন করে কিছু বলার নেই। ট্যুরিস্ট বাসে সাইটসিয়িং করলে জনপ্রতি ৬০০ রূপি নিবে সকাল ১০ টা হোটেল থেকে নিয়ে যাবে আর ৫ টায় হোটেলে সামনে নামিয়ে দিব। কী কী স্পট ঘুরাবে তার একটা তালিকা আছে। সাধারণত পোখারা যে সব স্পটের নাম শুনে থাকেন তার প্রায় সবই দেখায়। যদি প্যারাগ্লাডিং করেও না থাকেন কিন্তু সারাংকোট ভিউ পয়েন্ট যেতে চান এইক্ষেত্রে অনেক গুলো ট্যুরিস্ট বাস সাথে সারাংকোট যাওয়ার প্যাকেজ এড থাকে, এই প্যাকেজ নিয়ে সারাংকোট ঘুরে আসতে পারেন।

পোখারা সূর্যোদয়
ছবিঃ পোখারা সূর্যোদয়

শেষ পর্বে আমরা আলোচনা করব কিভাবে পোখারা শহর থেকে কাঠমান্ডু আসবেন, মানাকামানা ক্যাবল কার নিয়ে কিছু পরমার্শ এবং পোখারা থেকে কিভাবে সরাসরি কাকরভিটা বর্ডার হয়ে বাংলাদেশ আসবেন

অবশ্যই এই পর্ব আপনাদের কেমন লেগেছে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। আর হ্যাঁ, আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকলে জানাবেন।

আমাদের নেপাল  ভ্রমণ গাইড সিরিজ পোস্ট এর এটা ৪র্থ পোস্ট। এর আগে বা পরের পোস্ট এর লিঙ্কঃ

Similar Posts