ঘুরে আসুন রংপুর

রঙ্গ রসে ভরপুর এই রংপুর। সুপ্রাচীন কাল থেকে এই জেলা বাংলার উত্তরবঙ্গকে সমৃদ্ধ করেছে। ১৭৭২ সালে জেলা হিসেবে স্বীকৃতি পায় এই রংপুর। এই রংপুরে আছে অনেক ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থাপনা, মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যপূর্ণ স্থান যা বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে নিয়ে গিয়েছে এক অনন্য ধারায়। আজ সেই স্থান গুলোকে নিয়েই লিখব।

ঐতিহাসিক স্থানসমূহ

তাজহাট জমিদার বাড়িঃ এটি রংপুরের অন্যতম প্রধান পর্যটনীয় আকর্ষণ। এটি বর্তমানে একটি জাদুঘর। রংপুর শহরের অদুরেই তাজহাটে অবস্থিত। রাজা কুমার গোপাল রায় এটি নির্মাণ করেন৷ মার্বেল পাথরের তৈরি এই প্রাসাদে রয়েছে টেরাকোটার নিদর্শন। এখানে অনেক পুরাতন পান্ডুলিপি রয়েছে যাতে প্রাচীন সংস্কৃত ও আরবী ভাষার নিদর্শন পাওয়া যায়। চার তলার সমান উঁচু এই প্রাসাদ যেন ইতিহাস সাক্ষী আর তা দেখতেই ভীড় করে শত শত পর্যটক।

যেভাবে যাবেনঃ ঢাকা থেকে কুড়িগ্রামের বাসে উঠলে একেবারে এই জাদুঘরের সামনে নামা যায়। এছাড়া রংপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে অটোরিকশায় করে এই জাদুঘর গেটে নামা যায়।


পীরগাছা রাজবাড়িঃ
১৭০৩ খ্রীঃ এই রাজবাড়ির গোড়াপত্তন হয়। প্রায় ৮ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে এই রাজবাড়ি। স্থানীয়রা একে মন্থনা জমিদার বাড়ি হিসেবেও জানে। এখানে অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে যার মধ্যে অন্যতম হলো ত্রিবিগ্রহ( অন্নপূর্ণা, বিশ্বেশ্বর, হরিহর শিব) যা বাংলা স্থাপত্যের একটি অনন্য নিদর্শন।

যেভাবে যাওয়া যায়ঃ রংপুর শহর থেকে বাসে করে পীরগাছা গিয়ে বাসস্ট্যান্ড থেকে অটোরিকশা করে পীরগাছা রাজবাড়ি।


টাউনহলঃ
চমৎকার ব্রিটিশ স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন হলো এই টাউনহল। ১৮৮৫ সালে নির্মিত এই স্থাপনাটি তখন ব্যবহৃত হতো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য। সে সময়ের মুক্তবুদ্ধির চর্চা হতো এখানেই। স্বাধীনতা যুদ্ধে অনেক মুক্তিকামী মানুষকে এখানে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়।

যেভাবে যাওয়া যায়- ঢাকা থেকে রংপুর বাসে করে এসে বাসস্ট্যান্ড থেকে মাত্র বিশ মিনিটে অটোরিকশায় পৌঁছে যাওয়া যায়।


পায়রাবন্দ জমিদার বাড়িঃ
বাঙ্গালী নারী জাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের বাড়ি এটি। এখানে বেগম রোকেয়ার স্মৃতিকেন্দ্র রয়েছে। ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে এই স্মৃতিকেন্দ্র একটি আকর্ষণীয় স্থান। প্রতিবছর ৯ই ডিসেম্বর থেকে ১৫ দিনব্যাপী মেলা বসে এখানে।

যেভাবে যাবেনঃ রংপুর শহর থেকে ১২ কিঃমিঃ দক্ষিণে অবস্থিত। তাই শহর থেকে একটি প্রাইভেট কার ভাড়া করে যেতে হবে।

 

 

ধর্মীয়স্থান সমূহ-
কেরামতিয়া মসজিদ ও মাজারঃ মোগল ও বঙ্গ স্থাপত্যরীতির এক ঐতিহাসিক নিদর্শন এই কেরামতিয়া মসজিদ ও মাজার। আঠারো শতকে তৈরি এই মসজিদ এদেশের প্রাচীন একটি ইসলামিক নিদর্শন।

যেভাবে যাবেনঃ রংপুর ডিসি অফিস থেকে ৫ মিনিটের পথ।

 

 

লালদিঘি নয় গম্বুজ মসজিদঃ ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনামলে সর্বপ্রথম আবিস্কৃত মসজিদ। অনেকে মনে করেন এটি মোগল আমলে স্থাপিত। এই মসজিদটি রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত।

 

ফুলচৌকি মসজিদঃ রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলায় অবস্থিত ফুলচৌকি মসজিদ এদেশের সবচেয়ে পুরাতন মসজিদগুলোর মধ্যে একটি। এটি বর্তমানে বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত।

যেভাবে যাওয়া যায়ঃ রংপুর থেকে মিঠাপুকুর বাসে করে গিয়ে,বাসস্ট্যান্ড থেকে অটোরিকশায় পৌঁছে যাওয়া যায়।


ইকো-ট্যুরিজম

ভিন্নজগত পার্কঃ এটি একটি বিনোদন কেন্দ্র যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমারোহতে প্রায় একশ একর জমির উপর তৈরি করা হয়েছে। এটি একটি পিকনিক স্পট ও বটে। রংপুর শহর থেকে ১১ কি.মি. দূরে অবস্থিত।

যেভাবে যাবেনঃ ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে করে রংপুর শহরে আসবেন। এরপর রংপুর শহর থেকে সরাসরি ভিন্নজগত যাওয়ার বাস রয়েছে।


চিকলির বিলঃ
রংপুর শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া এই বিলটি একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নিদর্শন। এখানে রয়েছে হরেক রকমের দেশি বিদেশি পাখির সমারেহ। এখানে একটি পার্ক ও আছে বিনোদনের জন্য।

 


রংপুর চিড়িয়াখানাঃ
বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় চিড়িয়াখানা হলো যা ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি অন্যতম সেরা বিনোদন কেন্দ্র যাতে প্রায় ২৬ প্রজাতির প্রাণী রয়েছে।

যেভাবে যাবেনঃ রংপুর শহর থেকে বাস, প্রাইভেট কার অথবা অটোরিকশায় খুব সহজেই যাওয়া যায় সেখানে।


বিখ্যাত খাবার

ঘোষভান্ডার ও জলযোগ রংপুর জেলার দুটি পুরাতন দোকান। ঘোষভান্ডারের হরেকরকম মিষ্টি সারাদেশে সুপরিচিত। এছাড়া জলযোগের সন্দেশ খুব সুস্বাদু।

Similar Posts

2 Comments

Comments are closed.