নবরত্ন মন্দির || সিরাজগঞ্জ

উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলাধীন হাটিকুমরুল ইউনিয়নের নবরত্নপাড়া গ্রামের ” নবরত্ন মন্দির ” অবস্থিত । নবরত্ন মন্দির মধ্যযুগীয় একটি প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন। স্থানীয়ভাবে এটি দোলমঞ্চ নামেও পরিচিত।জনশ্রুতি অনুসারে ১৬৬৪ সালে নায়েবে দেওয়ান রামনাথ ভাদুরী দিনাজপুরের কান্তজির মন্দিরের অনুকরণে এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন। প্রায় পাঁচশ বছরের পুরনো এই মন্দির অত্র এলাকার ঐতিহ্য ও জনপদের না বলা ইতিহাস বুকে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। উল্লেখ্য এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নবরত্ন মন্দির  হিসেবে পরিচিত।

নবরত্ন মন্দির
মন্দিরের ভেতরের অংশ
মন্দিরের ভেতরের অংশ

নবরত্ন মন্দিরটি ৩ তলা বিশিষ্ট এবং কারুকার্যমন্ডিত। এ মন্দিরে  পোড়ামাটির ফলক সমৃদ্ধ ৯টি চূড়া লক্ষ্য করা যায় । এখান থেকেই এর নাম হয় নবরত্ন মন্দির।বর্তমানে এর সবগুলো চূড়াই  ধ্বংসপ্রায়। এই মন্দির আয়তন প্রায় ১৬ বর্গমিটার।মন্দিরের মূল স্তম্ভগুলো দৈর্ঘ্যে ১৫.৪ মিটার এবং প্রস্থে ১৩.২৫ মিটার এবং স্তম্ভগুলো মধ্যযুগীয় শিল্পকর্মে পরিপূর্ণ চিত্র ফলকে সজ্জিত। নবরত্ন মন্দিরটি ৭টি বারান্দা ও ৫টি দরজার সমন্বয়ে গঠিত। পূর্ব দিকে রয়েছে মন্দিরের প্রবেশ পথ ,ভবনের  উওর দিকে উপরে ওঠার সিঁড়ি রয়েছে । মূল ভবনের ছাদ গোলাকার গম্বুজে আচ্ছাদিত।এখানে কেন্দ্রিয় কক্ষের উপরে ছোট আকারের আরো একটি কক্ষ আছে । মন্দিরের পাশেই  একটি পুকুর রয়েছে। এছাড়াও মন্দিরের পাশাপাশি আরও তিনটি মন্দির রয়েছে। এর মধ্যে কারুকার্যময় একটি শিব মন্দির ও একটি পূজা অর্চনার চন্ডি মন্দির অন্যতম।

অনেকের ধারনা এই মন্দির খাজনা আদায়ের জন্য নির্মিত হয়েছিল কেননা এখানে  পূর্বে কেউ পূজা অর্চনা হতে দেখে নি । পরবর্তীতে সরকার হতে এ মন্দিরের পূজা আয়োজনের নির্দেশনা আসলেও স্থানীয় হিন্দুরা  জমিদারী সম্পত্তি ও স্থানীয় হিন্দুদের আর্থিক অবস্থা ভাল না হওয়ার দরূণ পূজা আয়োজন করতে রাজি হয় নি। এছাড়াও এখানে  মন্দিরের আশেপাশে দু তিন মাইল জায়গা জুড়ে ২০-৩০ ফুট মাটি খুড়লেই লক্ষ্য করা যায় সাড়ি সাড়ি পুরু ইটের দেয়াল। এ থেকেও বোঝা যায় মন্দিরটি তুলনামূলক উচু জায়গায় নির্মান করা হয়েছিল বিধায় আজও মধ্যযুগীয় অব্যক্ত ইতিহাসে সাক্ষী হয়ে ঠাই দাঁড়িয়ে আছে ।

কারুকার্যখচিত চিত্রফলক
কারুকার্যখচিত চিত্রফলক

যেভাবে যাবেনঃ

নবরত্ন মন্দির সিরাগঞ্জ জেলার জেলার উল্লাপাড়া উপজেলাধীন হাটিকুমরুলে হওয়াতে যাতায়াত তুলনামূলক সহজ । ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী যেকোনো বাসে করে যেতে পারবেন । এক্ষেত্রে বাসের মাধ্যমে গেলেই সুবিধা হবে।বাসের মধ্যে দেশ ট্রাভেলস,ন্যাশনাল ট্রাভেলস,গ্রামীন ট্রাভেলস, আলহামরা , পাবনা এক্সপ্রেস, হানিফ,এস আই এন্টারপপ্রাইজ – ভাল সার্ভিস পাবেন। এরপর হাটিকুমরুলে নামতে হবে । জায়গাটি স্থানীয় ভাবে সিরাজগঞ্জ রোড / সিরাজগঞ্জ চৌরাস্তা নামে পরিচিত। এখানে বাস ভাড়া ৩০০-৩৫০ টাকা।

কেউ চাইলে ট্রেনের মাধ্যমেও যেতে পারবেন । এক্ষেত্রে আপনাকে উত্তরবঙ্গগামী যেকোনো ট্রেনের মাধ্যমে শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন এ নামতে হবে। তারপর স্টেশন থেকে সি এন জি করে সিরাজগঞ্জ রোডে আসতে হবে । ট্রেন ভাড়া ২৩০-২৫০ টাকা ।

সিরাজগঞ্জ চৌরাস্তা থেকে রিক্সা বা ভ্যানে করে উত্তর দিকে ২ কিলোমিটার গেলেই  হাটিকুমরুল ইউনিয়নের নবরত্নপাড়া গ্রাম।এরপর মেঠোপথ ধরে  ১ কিলোমিটার গেলেই চোখে পড়বে নবরত্ন মন্দির।

যেখানে থাকবেনঃ

হাটিকুমরুল গ্রামে আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় আপনাকে সিরাজগঞ্জ শহরে আসতে হবে । এখানে ২০০-৮০০ টাকার মধ্যেই আবাসিক হোটেল পেয়ে যাবেন ।

আবাসিক হোটেল গুলো তালিকা নিচে দেয়া হলঃ

  • হোটেল আল-হামরা
  • হোটেল অনিক
  • হোটেল সোনিয়া

হোটেল খুঁজে পেতে সমস্যা হলে  শহরের স্থানীয় যে কাউকে বললেই দেখিয়ে দিবে ।এছাড়া খাবারের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক স্থানীয় হোটল আছে । এছাড়াও সিরাজগঞ্জ চৌরাস্তায় অবস্থিত ফুড ভিলেজ থেকে পেয়ে যাবেন বাঘাবাড়ী থেকে তৈরী খাটি ঘি , উত্তরবঙ্গের বিখ্যাত মিষ্টান্ন জাতীয় খাবার।

Similar Posts