ভাইরাস থেকে দুর্ভিক্ষ

চীনের উহান শহর থেকে উদ্ভূত করোনা ভাইরাস ইতোমধ্যে সারাবিশ্বে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পরেছে  । প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে  । ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনে এই ভাইরাস ধরা পড়ে এবং মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে সারা বিশ্বের প্রায় সব দেশে মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ে ।

ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, এইরকম ভাইরাস ঘটিত অনেক রোগের প্রভাব শেষ পর্যন্ত মহামারী হয়ে দুর্ভিক্ষ পর্যন্ত গিয়েছে । এরকম কয়েকটা মহামারী নিয়ে ই আজকের লেখা  ।

ভাইরাসের আণুবীক্ষণিক চিত্র

১. ফ্লু (Flu)-৬৮
সালঃ ১৯৬৮
মোট মৃত্যুঃ প্রায় ১০ লক্ষ
রোগঃ ইনফ্লুয়েঞ্জা

এই ফ্লু কে “হংকং ফ্লু” ও বলা হয় । ইনফ্লুয়েঞ্জা-A ভাইরাসের সাবটাইপ  H3N2 এর জন্য ঐ ফ্লু হয়েছিলো ।  ১৯৬৮ সালের ১৩ ই জুলাই হংকং এ সর্বপ্রথম এই রোগটি ধরা পড়ে । ধরা পরার মাত্র ১৭ দিনের মাঝে সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম এবং তিন মাসের মাঝে ফিলিপিন, অস্ট্রেলিয়া, ভারতসহ পুরো ইউরোপে ছড়িয়ে যায় ।

কিন্তু হংকং এর অবস্থা ছিলো খুবই শোচনীয়। কোনোভাবেই তারা ফ্লু নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলো না । ঐ ফ্লু –তে প্রায় ১০ লক্ষ লোক মারা যায় যার মাঝে ৫ লক্ষ ই ছিলো হংকং এর অধিবাসী ।

২. ফ্লু (Flu)–১8
সালঃ১৯১৮
মোট মৃত্যুঃ প্রায় ২০০ থেকে ৫০০ লাখ
রোগঃ ইনফ্লুয়েঞ্জা

১৯১৮ থেকে ১৯২০ সালের মাঝে সারা পৃথিবীজুড়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ে । এই রোগে সারা পৃথিবীর প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হয় এবং প্রথম ছয় মাসে প্রায় ২৫ মিলিয়ন মানুষ মারা যায় ।

এই ফ্লু ছিলো রহস্যজনক । সাধারণত বয়স্ক,শিশু বা যাদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল তারা ই ফ্লু তে আক্রান্ত হয় । কিন্তু ১৯১৮ সালের ফ্লু তে অধিকাংশ মারা যায় স্বাস্থ্যবান যুবকরা  ।

৩. কলেরা
মৃত্যুঃ প্রায় ১০ লক্ষ

বিংশ শতাব্দীতে এবং এর আগে মহামারি বলতে বুঝানো হতো কলেরা কে । কলেরার ভ্যাক্সিন আবিষ্কারের আগে প্রায় ছয়বারের মতো বড়ভাবে কলেরা আক্রমণ করেছিলো । এর মাঝে মারাত্মক ছিলো ১৮৫২ থেকে ১৮৬০ সালের  এবং ১৯১০ সালের কলেরা ।

কলেরার শুরু হতো ভারতের গঙ্গা নদী থেকে । এরপর ধীরে ধীরে ছড়িয়ে যেতো পুরো এশিয়া, ইউরোপ, দক্ষিণ আমেরিকা , আফ্রিকা তে এবং লাখ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিতো ।

১৮৫৪ সালে ব্রিটিশ ফিজিশিয়ান জন স্নো, লন্ডনে কলেরা নিয়ে কাজ করার সময় গবেষণা করে বের করেন যে, কলেরা গণহারে ছড়ানোর কারণ হলো দূষিত পানি । কিন্ত সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হল , ঐ বছরই গ্রেট ব্রিটেনে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় ।

 

Virus
ভাইরাসের আণুবীক্ষণিক চিত্র

 

৪. ব্ল্যাক ডেথ (১৩৪৬-১৩৫৩)
মৃত্যুঃ প্রায় ৭৫-২০০ মিলিয়ন
রোগঃ Bubonic Plague

১৩৪৬ থেকে ১৩৫৩ পর্যন্ত এই প্লাগে ইউরোপ, আফ্রিকা, এশিয়ায় অসংখ্য মানুষের মৃত্যু ঘটেছে । এর উৎপত্তি ভারতে হলেও ছড়িয়ে পরতে বেশি সময় লাগে নি । এর বাহক ছিলো ইঁদুর আর মাছি । ঐ সময়ে সারাবিশ্বের বাণিজ্যের কেন্দ্র ছিলো ভারত পোর্ট । ভারতে সব দেশের বণিকের ই আসা যাওয়া ছিলো ।এভাবেই এটি সারা বিশ্বে হয়ে ছড়িয়ে পড়ে ।

এই রোগগুলো মহামারি রূপে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে অর্থনৈতিক অবস্থাকে মারাত্মক হুমকির মাঝে ফেলে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটি দুর্ভিক্ষের দিকে যায়  ।

আমাদেরকে এইসব রোগ সম্পর্কে জেনে সতর্ক থাকা উচিত ।

ধন্যবাদ

Similar Posts

4 Comments

  1. কিন্তু, যে বর্তমানে COVID-19 করোনা-এর শেষ কোথায়, কেউ এখনো বলতে পারছেন না। দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার।

    1. জি । এ ভাইরাসটি প্রতিনিয়ত এর এন্টিজেনিক ক্যারেক্টার পরিবর্তন করছে । আর এ জন্যই এর ভ্যাক্সিন তৈরি দুরূহ হয়ে যাচ্ছে ।

  2. ব্ল্যাক ডেথে ইতালিতে এত বেশি মানুষ মারা গিয়েছিলো যে লাশ দাফনের জায়গা পাওয়া যাচ্ছিলোনা। এরপর নদীতে ভাসিয়ে দিতে হয়েছিলো। তারপর এমন এক অবস্থা হয়ে গেছিলো যে ভেনিসের নদীতে নৌকা চালানোর সময় বৈঠা দিয়ে ঠেলে ঠেলে লাশ সরিয়ে নৌকা আগাতে হতো। ড্যান ব্রাউনের ইনফার্নো বইয়ে পড়েছিলাম।

Comments are closed.