মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির কিছু সহজ উপায়

মস্তিষ্ক আমাদের একটি অতিগুরুত্বপূর্ণ অংশ । আমরা আমাদের মস্তিষ্ক জীবনের প্রতিটি পদ্ধক্ষেপেই ব্যাবহার করি । তাই মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । শারীরিক স্বাস্থ্য রক্ষা করতে আমরা যেমন জিমে যাই , হাঁটাহাঁটি করি এবং বিভিন্ন শারীরিক কসরত করি । কিন্তু আমরা কি কখনো আমাদের ব্রেনের উন্নতির জন্য এরকম কিছু করি? ব্রেনের শক্তি বৃদ্ধি করতে আমাদের প্রয়োজন কিছু মানসিক কসরত যা ধিরে ধিরে মানসিক স্বাস্থ্য ধরে রাখবে ।

47 Easy Ways to Increase Brain Function

আমাদের ব্রেন ধারালো ছুরির মতো , যতো ব্যাবহার করা যাবে ততোই ধারালো ও তীক্ষ্ণ হয়ে উঠবে। যতই নতুন নতুন কাজে লাগাবেন ততোই ক্ষমতা বাড়তে থাকবে । এক সময় অভিজ্ঞাতা লাভ করতে করতে অনেকটাই দ্রুত কাজ করতে শুরু করবে । ব্রেন কে উপযুক্ত ট্রেইন করলে বৃদ্ধ বয়সে মস্তিষ্কের নানান রোগ যেমন ডিমেনশিয়া , আলঝাইমার থেকে মুক্তি লাভ করা যায় । দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া, দ্রুত কোন কিছু শেখা, সব কিছুই আরও কার্যকারী ভাবে করতে পারবেন কিছু নিয়ম মেনে চললে ।

মস্তিষ্ক এর স্মৃতিকে কাজে লাগানঃ

কোন কিছু মস্তিষ্কে ধরে রাখতে হলে তা বারবার মনে করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিছু সময় পরপর মনে করার চেষ্টা করলে তা আপনার মস্তিষ্কে নতুন নতুন সংযোগ তৈরি করবে । ফলে মনে রাখার জন্য তা আরও সহজ হয়ে উঠবে । এটাই আসলে মনে রাখার সবচেয়ে কার্যকারী ব্যায়াম । যতো বার আপনি মনে করার জন্য আপনার মস্তিষ্কে ব্যাবহার করবেন ততোই আপনার ব্রেন মনে রাখার নতুন নতুন উপায় বের করতে থাকবে । তাই পুনরাবৃত্তি করা একটি ভালো অভ্যাস ।

অনেকই আছেন একবার নতুন কিছু শিখে গেলে সেটা আর পুনরাবৃত্তি করতে চান না । কিন্তু ৩ থেকে ৪ দিন পরে সেটা আবার পুনরাবৃত্তি করলে আপনি একই জিনিস কিছুটা ভিন্ন ভাবে আবিষ্কার করবেন । এভাবেই আমাদের মস্তিষ্ক কাজ করে কোন কিছু নতুন উপায়ে ভিন্ন দৃষ্টিকোনে মনে রাখার জন্য । তাই যা কিছু মনে রাখতে চাইবেন তা কিছু বিরতি দিয়ে বারবার পুনরাবৃত্তি করুন । একসময় এটি আপনার স্থায়ী মেমোরিতে চলে যাবে ।

ধরুন আপনি কারো সাথে প্রথম পরিচিত হতে যাচ্ছেন ।

“ হাই ! আমি জাবেদ”

প্রথম সাক্ষাতে কেমন আছেন না বলে বলুন  “হ্যালো ! জাবেদ ( তার নাম উল্লেখ করুন ) , কেমন আছেন ?” কথার মাঝে মাঝে তার নাম বারবার উল্লেখ করতে থাকুন “ আমারও ওই মুভিটি ভালো লেগেছে ,জাবেদ” অথাবা “জাবেদ এখন কি করছেন?” । দেখবেন পরবর্তীতে কোন সময় তার সাথে দেখা হলে সহজেই তার নাম মনে করতে পারছেন ।

সবসময় নতুন নতুন কিছু করতে থাকুনঃ

মস্তিষ্ক কে আরও ধারালো করতে প্রয়োজন নতুন নতুন কিছু বারবার চেষ্টা করা । এতে মস্তিষ্কে নতুন নতুন সংযোগ তৈরি হয় । ফলে নতুন কাজগুলো আরও দ্রুত ও ভালোভাবে সম্পাদন করা যায় । আমরা সবাই যখন ছোট ছিলাম তখন নিজের হাত দিয়ে খাওয়া , চামচ ধরা অনেকটাই কষ্টকর ছিল । হয়তো ঠিকভাবে চামচ ধরে খেতেও পারা যেত না । কিন্তু আস্তে আস্তে তা বারবার করার ফলে এখন এগুলো সহজ হয়ে গেছে । আসলে এই বারবার করার প্রচেষ্টা আমাদের মস্তিষ্ক কে আরও ডেভেলপ করছে। ফলে আমরা এগুলো এখন আরও যাথাযথ ও সূক্ষ্ম ভাবে করতে পারি ।

ধরুন আপনার কোন কাজ করতে অনেক সময় লেগে যায় অথবা সিধান্ত নিতে দেরি হয় । আপনি যতই দ্রুত কাজ করতে কিংবা দ্রুত সিধান্ত নেয়ার চেষ্টা করবেন আপনার মস্তিষ্ক কে ততোই কোন কিছুতে দেরি না করার জন্য ট্রেইন করবেন । আপনার মস্তিষ্ক আস্তে আস্তে দ্রুত কাজ করা শিখে যাবে , শিখে যাবে যে কোথায় সময় নষ্ট করা যাবে না ।

একবারে বড় করে নতুন কোন কিছু করার চেষ্টা করবেন না। সেটিকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে চেষ্টা করুন । এবং নিয়মিত চেষ্টা করতে থাকুন। ছোট চেষ্টাকে নিয়মিত আস্তে আস্তে বড় করতে থাকুন । দেখবেন একসময় সেটা খুবই তাড়াতাড়ি করতে পরছেন।  আপনার টেবিল যদি অগোছালো কাগজে ভর্তি থাকে তাহলে আস্তে আস্তে সেটাকে গুছাতে শুরু করুন । কোন কাগজ কোথায় রাখবেন , সেটা টেবিলে রাখবেন না , ট্রাশে ফেলে দিবেন , নাকি অন্যরুমে রাখবেন এগুলোর সিধান্ত নিতে থাকুন । আপনাকে সবগুলো একসাথে পরিস্কার করতে হবে না। শুধু সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কোন কাগজ দিয়ে কি করবেন অথবা কোথায় রাখবেন ।

এভাবে প্রতিদিন এইরকম অন্য কাজ করতে থাকলেও আপনার দ্রুত সিধান্ত নেয়ার স্নায়ুবিক পথ তৈরি হবে । ফলে একসময় আপনি খুবই দ্রুত সিধান্ত নিতে এবং খুব দ্রুত কাজ সম্পাদন করতে পারবেন ।

ভিন্ন ভিন্ন জিনিস করার চেষ্টা করুনঃ

এটা সত্যি যে মস্তিষ্ক কে যতই কাজে লাগাবেন ততোই কার্যকারী হয়ে উঠবে । তবে এটাকে আরও কার্যকারী করতে প্রয়োজন ভিন্ন কিছু করা । যেমন সাইকেল চালাতে শেখা, গিটার অথবা হারমোনিয়াম বাজাতে শেখা অথাবা নতুন কোন ভাষা শেখা । এসব কিছুই আপনার মস্তিষ্ক কে নতুন নতুন ভাবে গড়ে তুলছে। মস্তিষ্ক কে নতুন ভাবে চিন্তা করতে শেখাচ্ছে । যেটা আসলে খুবই গুরুত্বপূর্ণ । মস্তিষ্ক কে শক্তিশালী করে তুলতে আপনাকে ভিন্ন ভাবে ভাবতে হবে। নতুন কিছু উদ্ভাবনে চেষ্টা করতে হবে। হয়তো প্রথমে করতে বাঁধার সম্মুখীন হবেন । কিন্তু একবার শিখে নিলে দেখবেন অনেকের থেকে সেটি দ্রুত কাজ করছে ।

মস্তিষ্ক এর বিভিন্ন ট্রেনিং প্রোগ্রাম অনুসরণ করুনঃ

অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে আপনি সহজেই নিজের ব্রেন কে ঝালিয়ে নিতে পারবেন । এরকম একটি ওয়েসাইট হল https://www.brainhq.com/। এছারা প্লে স্টরে আরও অনেক অ্যাপ পাবেন । অনেক ধরণের পাজেল সল্ভ করে মস্তিষ্ক কে ধারালো করে নিতে পারবেন। এগুলো এক দিনে সম্ভব নয় । প্রতিদিন রুটিন মেনে করলে ফল পাওয়া যাবে।

মস্তিষ্ক গঠনে সঠিক খাদ্য গ্রহনঃ

মাছ, ফলমূল এবং শাকসবজি মস্তিষ্ক কে দীর্ঘস্থায়ী ভাবে সর্বোচ্চ কার্যকারী করে রাখতে সাহায্য করে । সাথে সাথে আরেকটি মজার বিষয় হলো ডার্ক চকলেট মস্তিষ্কে ভালো বুস্ট দিতে সক্ষম । যখন আপনি ডার্ক চকলেট গ্রহন করেন তখন আপনার মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসৃত হয় । এই ডোপামিন আপনাকে কোন কিছু দ্রুত শিখতে এবং ভালোভাবে মনে রাখতে সাহায্য করে ।

এছারা চকলেটে ফ্লেভানল রয়েছে যার অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ফাংশন আপনার ব্রেনকে আরও কার্যকারী করতে সক্ষম । তাই যখনই কঠিন কিছুতে আটকে যাবেন চকলেট খেতে ভুলবেন না ।

পর্যাপ্ত পানি পান করাঃ

পানি আমাদের মস্তিষ্কের জন্য সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ । নিয়মিত পানি পান করলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বহুগুনে বেড়ে যায় । পর্যাপ্ত পানি পেলে আমাদের মস্তিষ্ক ১৪% দ্রুত কাজ করতে পারে । ইস্ট লন্ডন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা বের করেছেন যে যখনি তৃষ্ণার প্রয়োজন মিটে যায় তখন আমাদের মস্তিষ্ক কোন কাজে গভীরভাবে মনোনিবেশ করেত পারে । ফলে তা দ্রুতই সম্পাদন হয়ে যায় ।

সকালে ঘুম থেকে উঠে আমাদের কয়েক গ্লাস খালিপেটে পানি পান করা উচিত । এতে আপনার শরীরবৃত্তীয় কাজ পুনরায় পুরো দমে চালু হয়ে যাবে । মস্তিষ্ক ভালোভাবে কাজ করা শুরু করবে। একবারে বেশি পানি পান না করে কিছু সময় পরপর অল্প অল্প পানি পান করুন । এতে আপনি আপনার কাজে মনোনিবেশ অনেক ভালো ভাবে করতে পারবেন ।

 

তথ্যসুত্রঃ

https://www.lifehack.org/articles/productivity/8-ways-train-your-brain-learn-faster-and-remember-more.html

https://www.dailymail.co.uk/health/article-2366353/How-drinking-glass-water-make-brain-14-faster.html

Similar Posts