সাদ ইবনে রহমান / জানুয়ারী 17, 2021
মস্তিষ্ক আমাদের একটি অতিগুরুত্বপূর্ণ অংশ । আমরা আমাদের মস্তিষ্ক জীবনের প্রতিটি পদ্ধক্ষেপেই ব্যাবহার করি । তাই মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । শারীরিক স্বাস্থ্য রক্ষা করতে আমরা যেমন জিমে যাই , হাঁটাহাঁটি করি এবং বিভিন্ন শারীরিক কসরত করি । কিন্তু আমরা কি কখনো আমাদের ব্রেনের উন্নতির জন্য এরকম কিছু করি? ব্রেনের শক্তি বৃদ্ধি করতে আমাদের প্রয়োজন কিছু মানসিক কসরত যা ধিরে ধিরে মানসিক স্বাস্থ্য ধরে রাখবে ।
আমাদের ব্রেন ধারালো ছুরির মতো , যতো ব্যাবহার করা যাবে ততোই ধারালো ও তীক্ষ্ণ হয়ে উঠবে। যতই নতুন নতুন কাজে লাগাবেন ততোই ক্ষমতা বাড়তে থাকবে । এক সময় অভিজ্ঞাতা লাভ করতে করতে অনেকটাই দ্রুত কাজ করতে শুরু করবে । ব্রেন কে উপযুক্ত ট্রেইন করলে বৃদ্ধ বয়সে মস্তিষ্কের নানান রোগ যেমন ডিমেনশিয়া , আলঝাইমার থেকে মুক্তি লাভ করা যায় । দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া, দ্রুত কোন কিছু শেখা, সব কিছুই আরও কার্যকারী ভাবে করতে পারবেন কিছু নিয়ম মেনে চললে ।
কোন কিছু মস্তিষ্কে ধরে রাখতে হলে তা বারবার মনে করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিছু সময় পরপর মনে করার চেষ্টা করলে তা আপনার মস্তিষ্কে নতুন নতুন সংযোগ তৈরি করবে । ফলে মনে রাখার জন্য তা আরও সহজ হয়ে উঠবে । এটাই আসলে মনে রাখার সবচেয়ে কার্যকারী ব্যায়াম । যতো বার আপনি মনে করার জন্য আপনার মস্তিষ্কে ব্যাবহার করবেন ততোই আপনার ব্রেন মনে রাখার নতুন নতুন উপায় বের করতে থাকবে । তাই পুনরাবৃত্তি করা একটি ভালো অভ্যাস ।
অনেকই আছেন একবার নতুন কিছু শিখে গেলে সেটা আর পুনরাবৃত্তি করতে চান না । কিন্তু ৩ থেকে ৪ দিন পরে সেটা আবার পুনরাবৃত্তি করলে আপনি একই জিনিস কিছুটা ভিন্ন ভাবে আবিষ্কার করবেন । এভাবেই আমাদের মস্তিষ্ক কাজ করে কোন কিছু নতুন উপায়ে ভিন্ন দৃষ্টিকোনে মনে রাখার জন্য । তাই যা কিছু মনে রাখতে চাইবেন তা কিছু বিরতি দিয়ে বারবার পুনরাবৃত্তি করুন । একসময় এটি আপনার স্থায়ী মেমোরিতে চলে যাবে ।
ধরুন আপনি কারো সাথে প্রথম পরিচিত হতে যাচ্ছেন ।
“ হাই ! আমি জাবেদ”
প্রথম সাক্ষাতে কেমন আছেন না বলে বলুন “হ্যালো ! জাবেদ ( তার নাম উল্লেখ করুন ) , কেমন আছেন ?” কথার মাঝে মাঝে তার নাম বারবার উল্লেখ করতে থাকুন “ আমারও ওই মুভিটি ভালো লেগেছে ,জাবেদ” অথাবা “জাবেদ এখন কি করছেন?” । দেখবেন পরবর্তীতে কোন সময় তার সাথে দেখা হলে সহজেই তার নাম মনে করতে পারছেন ।
মস্তিষ্ক কে আরও ধারালো করতে প্রয়োজন নতুন নতুন কিছু বারবার চেষ্টা করা । এতে মস্তিষ্কে নতুন নতুন সংযোগ তৈরি হয় । ফলে নতুন কাজগুলো আরও দ্রুত ও ভালোভাবে সম্পাদন করা যায় । আমরা সবাই যখন ছোট ছিলাম তখন নিজের হাত দিয়ে খাওয়া , চামচ ধরা অনেকটাই কষ্টকর ছিল । হয়তো ঠিকভাবে চামচ ধরে খেতেও পারা যেত না । কিন্তু আস্তে আস্তে তা বারবার করার ফলে এখন এগুলো সহজ হয়ে গেছে । আসলে এই বারবার করার প্রচেষ্টা আমাদের মস্তিষ্ক কে আরও ডেভেলপ করছে। ফলে আমরা এগুলো এখন আরও যাথাযথ ও সূক্ষ্ম ভাবে করতে পারি ।
ধরুন আপনার কোন কাজ করতে অনেক সময় লেগে যায় অথবা সিধান্ত নিতে দেরি হয় । আপনি যতই দ্রুত কাজ করতে কিংবা দ্রুত সিধান্ত নেয়ার চেষ্টা করবেন আপনার মস্তিষ্ক কে ততোই কোন কিছুতে দেরি না করার জন্য ট্রেইন করবেন । আপনার মস্তিষ্ক আস্তে আস্তে দ্রুত কাজ করা শিখে যাবে , শিখে যাবে যে কোথায় সময় নষ্ট করা যাবে না ।
একবারে বড় করে নতুন কোন কিছু করার চেষ্টা করবেন না। সেটিকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে চেষ্টা করুন । এবং নিয়মিত চেষ্টা করতে থাকুন। ছোট চেষ্টাকে নিয়মিত আস্তে আস্তে বড় করতে থাকুন । দেখবেন একসময় সেটা খুবই তাড়াতাড়ি করতে পরছেন। আপনার টেবিল যদি অগোছালো কাগজে ভর্তি থাকে তাহলে আস্তে আস্তে সেটাকে গুছাতে শুরু করুন । কোন কাগজ কোথায় রাখবেন , সেটা টেবিলে রাখবেন না , ট্রাশে ফেলে দিবেন , নাকি অন্যরুমে রাখবেন এগুলোর সিধান্ত নিতে থাকুন । আপনাকে সবগুলো একসাথে পরিস্কার করতে হবে না। শুধু সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কোন কাগজ দিয়ে কি করবেন অথবা কোথায় রাখবেন ।
এভাবে প্রতিদিন এইরকম অন্য কাজ করতে থাকলেও আপনার দ্রুত সিধান্ত নেয়ার স্নায়ুবিক পথ তৈরি হবে । ফলে একসময় আপনি খুবই দ্রুত সিধান্ত নিতে এবং খুব দ্রুত কাজ সম্পাদন করতে পারবেন ।
এটা সত্যি যে মস্তিষ্ক কে যতই কাজে লাগাবেন ততোই কার্যকারী হয়ে উঠবে । তবে এটাকে আরও কার্যকারী করতে প্রয়োজন ভিন্ন কিছু করা । যেমন সাইকেল চালাতে শেখা, গিটার অথবা হারমোনিয়াম বাজাতে শেখা অথাবা নতুন কোন ভাষা শেখা । এসব কিছুই আপনার মস্তিষ্ক কে নতুন নতুন ভাবে গড়ে তুলছে। মস্তিষ্ক কে নতুন ভাবে চিন্তা করতে শেখাচ্ছে । যেটা আসলে খুবই গুরুত্বপূর্ণ । মস্তিষ্ক কে শক্তিশালী করে তুলতে আপনাকে ভিন্ন ভাবে ভাবতে হবে। নতুন কিছু উদ্ভাবনে চেষ্টা করতে হবে। হয়তো প্রথমে করতে বাঁধার সম্মুখীন হবেন । কিন্তু একবার শিখে নিলে দেখবেন অনেকের থেকে সেটি দ্রুত কাজ করছে ।
অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে আপনি সহজেই নিজের ব্রেন কে ঝালিয়ে নিতে পারবেন । এরকম একটি ওয়েসাইট হল https://www.brainhq.com/। এছারা প্লে স্টরে আরও অনেক অ্যাপ পাবেন । অনেক ধরণের পাজেল সল্ভ করে মস্তিষ্ক কে ধারালো করে নিতে পারবেন। এগুলো এক দিনে সম্ভব নয় । প্রতিদিন রুটিন মেনে করলে ফল পাওয়া যাবে।
মাছ, ফলমূল এবং শাকসবজি মস্তিষ্ক কে দীর্ঘস্থায়ী ভাবে সর্বোচ্চ কার্যকারী করে রাখতে সাহায্য করে । সাথে সাথে আরেকটি মজার বিষয় হলো ডার্ক চকলেট মস্তিষ্কে ভালো বুস্ট দিতে সক্ষম । যখন আপনি ডার্ক চকলেট গ্রহন করেন তখন আপনার মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসৃত হয় । এই ডোপামিন আপনাকে কোন কিছু দ্রুত শিখতে এবং ভালোভাবে মনে রাখতে সাহায্য করে ।
এছারা চকলেটে ফ্লেভানল রয়েছে যার অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ফাংশন আপনার ব্রেনকে আরও কার্যকারী করতে সক্ষম । তাই যখনই কঠিন কিছুতে আটকে যাবেন চকলেট খেতে ভুলবেন না ।
পানি আমাদের মস্তিষ্কের জন্য সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ । নিয়মিত পানি পান করলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বহুগুনে বেড়ে যায় । পর্যাপ্ত পানি পেলে আমাদের মস্তিষ্ক ১৪% দ্রুত কাজ করতে পারে । ইস্ট লন্ডন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা বের করেছেন যে যখনি তৃষ্ণার প্রয়োজন মিটে যায় তখন আমাদের মস্তিষ্ক কোন কাজে গভীরভাবে মনোনিবেশ করেত পারে । ফলে তা দ্রুতই সম্পাদন হয়ে যায় ।
সকালে ঘুম থেকে উঠে আমাদের কয়েক গ্লাস খালিপেটে পানি পান করা উচিত । এতে আপনার শরীরবৃত্তীয় কাজ পুনরায় পুরো দমে চালু হয়ে যাবে । মস্তিষ্ক ভালোভাবে কাজ করা শুরু করবে। একবারে বেশি পানি পান না করে কিছু সময় পরপর অল্প অল্প পানি পান করুন । এতে আপনি আপনার কাজে মনোনিবেশ অনেক ভালো ভাবে করতে পারবেন ।
https://www.lifehack.org/articles/productivity/8-ways-train-your-brain-learn-faster-and-remember-more.html
https://www.dailymail.co.uk/health/article-2366353/How-drinking-glass-water-make-brain-14-faster.html
FILED UNDER :লাইফস্টাইল , স্বাস্থ্য কথন
সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ