যে সকল বিষয় মাথায় রেখে খাদ্য ও সুষম খাদ্য তালিকা তৈরি করবেন
প্রত্যেক জীবের খাদ্য প্রয়োজন। সেই হোক উদ্ভিদ অথবা প্রাণী। আর মানব জাতির প্রাণী জগতের শ্রেষ্ঠ জীব ,সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। সুতরাং সব ধরনের জীব এর তুলনায় মানুষের খাদ্য তালিকা অনেক আলাদা।
দৈনিন্দিন জীবনে খাদ্য দেহের পুষ্টি সাধন, দেহের ক্ষয়পূরণ, দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি কর্মশক্তি এবং তাপ উৎপাদনের সহায়তা করে। সুতরাং খাদ্য ছাড়া একটি দিনের কথা পরিকল্পনা করা যায় না।
তবে নিত্যদিনে এক নির্দিষ্ট পরিমাণে খাদ্য খাওয়া প্রয়োজন ।কম পরিমাণে খাদ্য খেলে দেহ দুর্বল হয়ে পড়ে তার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারায় । অপরদিকে বেশি পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ করলে স্থূলতা শিকার হওয়ার সম্ভাবনা বেশ যথেষ্ট। এবং তার পাশাপাশি দেহের বিভিন্ন ধরনের রোগ বাসা বাঁধতে পারে । এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকিও রয়েছে!
তাহলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের খাদ্য তালিকা কিসের উপর নির্ভর করে ?
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের খাদ্য তালিকা নির্ভর করে ক্যালোরি চাহিদার ওপর।
ক্যালরি কি?
ক্যালোরি হচ্ছে আমাদের দেহে খাদ্য শক্তি পরিমাপের একক । ১০০০ ক্যালরিতে এক কিলো ক্যালরি হয় । পুষ্টি বিজ্ঞানে শক্তি বোঝানোর জন্য ক্যালোরি শব্দটির পরিবর্তে কিলোক্যালরি ব্যবহার করা হয়।
আমাদের দেহে ক্যালরি চাহিদা নির্ভর করে বয়স, দেহের উচ্চতা ,শারীরিক পরিশ্রম এবং লিঙ্গের উপর ভিত্তি করে।
আপনার দেহের ক্যালরি চাহিদা কিভাবে নির্ণয় করবেন?
মূলত ক্যালরি চাহিদা নির্ণয় করার একটি দারুন পদ্ধতি রয়েছে এবং সেটিকে বলা হয় বি এম আর।
১.ছেলেদের ক্ষেত্রে এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে বিএমআর নির্ণয় করার সূত্র টা একটু আলাদা।
২.ছেলেদের ক্ষেত্রে : ৬৫৫+(৯.৬× ওজন কেজি ) + (১.৮ × উচ্চতা সেমি ) – (৪.৭× বয়স বছর)
মেয়েদের ক্ষেত্রে : ৬৬+(১৩.৭ ওজন কেজি )+(৫×উচ্চতা সেমি)-(৬.৮×বয়স বছর)
ক্যালরি মূল্য নির্ণয় হল । কিন্তু তার সাথে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে সেটি হচ্ছে শারীরিক অবস্থা বা পরিশ্রম ।
এটির মাধ্যমে সঠিকভাবে ক্যালরি মূল্য নির্ণয় করা যায়:
পরিশ্রমী না হলে বিএমআর মান ×১.১২
হালকা পরিশ্রমী হলে বি এম আর মান × ১.৩৭৫
পরিশ্রমী হলে বিএম আর মান × ১.৫৫
খুব পরিশ্রমী হলে বিএম আর মান ×১.৯
ক্যালরি মূল্য নির্ণয় করার পর আপনাকে জানতে হবে কোন খাদ্য উপাদানে কতখানি ক্যালোরি থাকে।
মূলত খাদ্য উপাদান কে তিন ভাগে ভাগ করা হয়।
আমিষ, শর্করা এবং স্নেহ ।
প্রতি ১ গ্রাম শর্করা ৪ ক্যালরি ।
প্রতি 1 গ্রাম আমিষ এ ৪ ক্যালরি এবং।
প্রতি 1 গ্রাম চর্বিতে ৯ ক্যালরি উৎপন্ন হয়।
তো এখন আপনার দৈনন্দিন চাহিদা এবং পছন্দ অনুযায়ী খাদ্য তালিকা তৈরি করতে কোন সমস্যা নেই । তবে ক্ষেত্রবিশেষে ব্যতিক্রম হতে পারে সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া ভালো। বিশেষ করে বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে।
সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ২০০০ থেকে ২৫০০ খাদ্য ক্যালরি প্রয়োজন হয়।
কিভাবে সুষম খাদ্য তালিকা তৈরি করবেন?
যে খাদ্য সকল খাদ্য উপাদান পর্যাপ্ত পরিমাণে বিদ্যমান থাকে তাকে সুষম খাদ্য বলা হয়। সুষম খাদ্য আমাদের দেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয়।
তবে সুষম খাদ্য নির্বাচনে বেশ কিছু দিক লক্ষ্য রাখতে হবে সেগুলি হল :
১.ব্যক্তিবিশেষের বয়স, লিঙ্গ এবং শারীরিক অবস্থা।
২.পারিবারিক সচ্ছলতা অথবা আর্থিক অবস্থা।
৩. ঋতু ,আবহাওয়া সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান।
৪. পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ লবণ এবং পানির উপস্থিতি
৫. দেহের ক্ষয়পূরণ কারী উপাদান আমিষের প্রাধান্য।
৬.খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, রাফেজ অথবা সেলুলোজের সরবরাহ থাকতে হবে।
৭. নির্দিষ্ট পরিমাণের শর্করা, আমিষ এবং চর্বিজাতীয় থাকতে হবে ।
৮.একজন মানুষের বিপাকীয় কাজে প্রয়োজনীয় শক্তি মেটাতে হবে।
৯.তালিকায় ফল এবং টাটকা শাক-সবজি প্রাধান্য আবশ্যক।
১০.সুষম খাদ্য অবশ্যই সহজপাচ্য হতে হবে।
১১.কমদামি খাবারের মাধ্যমে সমান পুষ্টিমানের মেনু পরিকল্পনা করা যেতে পারে। তাই সমমান উপাদান সংবলিত বেশি দামের খাদ্যের তুলনায় কম দামে খাদ্য নির্বাচন করার মানসিকতা থাকাটাই ভালো ।
আজ এ পর্যন্তই। ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন ।