জেনে নিন চোখে ছানি পড়ার কারণ

আপনার পরিবারের কোনো বয়স্ক সদস্যদের ইতিমধ্যে ছানি পড়তে দেখেছেন নিশ্চয়ই । তাই কম বেশি একটু হলেও ছানি নিয়ে ধারণা আছে সকলেরই।বুঝতেই পারছেন ছানি পড়ার ব্যাপারটা সাধারণত বার্ধক্যজনিত। তবে জানেন কি, আপনার বয়স যতই হোক না কেনো ছানি আপনারও পড়তে পারে।
প্রশ্ন হচ্ছে ছানি পড়া কি কোনো রোগ যে এটা যেকোনো সময় যেকোনো বয়সেই হতে পারে? না ছানি পড়া কোনো রোগ নয়। চোখের লেন্স সাধারণত ঘোলাটে বা অসচ্ছ হয়ে যাওয়াকে ছানি পড়া বলে।

জেনে নিন চোখে ছানি পড়ার কারণ

ছানি চোখে কেন পড়ে?

মানুষের শরীর বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনেক কিছু হারাতে থাকে। বিভিন্ন জটিল জৈব রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলেও চোখের লেন্স ঘোলা হয়ে যায়। সহজ ভাষায় বললে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে চোখের লেন্সের উপাদানের যে প্রোটিন থাকে সেটা কমে যায়। এজন্য চোখের লেন্সও ধীরে ধীরে অসচ্ছ হয়ে যায়।

তবে বার্ধক্যজনিত কারণ ছাড়াও অন্য অনেক কারণে চোখে ছানি পড়ে থাকে। এগুলো হলো-

চোখ ছাড়া শরীরের অন্য কোনো অসুখ।
কিংবা চোখেরই অন্য কোনো জটিলতার কারণে।
চোখে আঘাত জনিত কারণে।
চোখের দীর্ঘমেয়াদি ইনফেকশন।
অনেক ক্ষেত্রে বংশগত কারণেও চোখে ছানি পড়ে।
দীর্ঘসময় ধরে মায়োপিয়া থাকলে।
ধূমপান।
দীর্ঘদিন ধরে স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ সেবন।
প্রায়ই রোদে কাজ করার ফলে, সূর্যের তাপেও ছানি পড়ে থাকে বলে বলা হয়।

*বড় যেসকল রোগের জন্য ছানি পড়া স্বাভাবিক-

ডায়াবেটিস
মায়োটনিক ডিসট্রকি যা একটি মাংস পেশির অসুখ
চর্মরোগ

শুধুমাত্র এক চোখে ছানি কি পড়তে পারে?

বার্ধক্য জনিত কারণে সাধারণত দুই চোখেই ছানি পড়তে পারে। তবে এক চোখে ছানি পড়ার ঘটনাও সচরাচর দেখা যায়। যেমন চোখে আঘাত পেলে, চোখে কিছু ঢুকলে, ভারী কোনো বস্তু দ্বারা চোখে আঘাত পেলে, আলোহিত রশ্নি বা অন্য কোনো বিকিরণের (এক্স-রে) ফলে।

ছানির পরিপক্কতার উপর নির্ভর করে ছানিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়

১) ধূসর রঙা ছানি
২) মুক্তোর মতো সাদা
৩) অন্যটি দুধের ন্যায় হয়ে থাকে

চোখে ছানি পড়ার লক্ষণ-

১)প্রথমত চোখে ঝাপসা দেখা
২) চোখের লেন্সের রঙ ঘোলা ঘোলা হয়ে যাওয়া। অর্থাৎ কালো রঙ ধীরে ধীরে ধূসর হয়ে যাওয়া
৩) একটা জিনিস দুইটা দেখা
৪)অন্ধকারে কম দেখা
৫) রঙের বোধ ধীরে ধীরে কমে যাওয়া

চিকিৎসা পদ্ধতি

ছানি অপসারণ করতে দু’ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। একটি পদ্ধতিতে ঔষধ সেবনেই ছানি চলে যায়। অন্যটিতে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়।

অস্ত্রোপচার ও আবার তিন ধরনের হয়।

প্রথমটিকে বলা হয় “ফ্যাকো”। এই অস্ত্রোপচার পদ্ধতি সবচেয়ে আধুনিক এবং ব্যায়বহুল। খুব কায়দা করে চোখের একটি অংশে ছোট ছিদ্র করে ছানিটিকে টেনে বের করে নেওয়া হয়। এরপর কৃত্রিম লেন্স বসিয়ে দেওয়া হয়। ছিদ্র ছোট হওয়ায় কোনো ধরণের সেলাই করা লাগে না। নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায়।

দ্বিতীয়টিকে বলা হয় “SICS”। এতে চোখের সাদা অংশ বিশেষ ভাবে কেটে ছানিটিকে বের করে কৃত্রিম লেন্স লাগিয়ে ফেলা হয়। এতেও সাধারণত কোনো ধরনের সেলাই লাগে না।

তৃতীয়টি হলো ECCF. স্বচ্ছ কর্নিয়া ও চোখের সাদা অংশের মাঝ বরাবর কেটে ছানি বের করে কৃত্রিম লেন্স লাগিয়ে দেয়া হয়। এতে সাধারণত সেলাই এর প্রয়োজন হয়।

দিন শেষে এটাই বলবো যে, চোখ সৃষ্টিকর্তার দেওয়া একটি অন্যতম উপহার। তাই যেকোনো মূল্যে চোখকে রক্ষা করা উচিৎ। এই দুটি জিনিস দিয়েই আমরা দুনিয়া দেখি। চোখ যে কত গুরুত্বপূর্ণ সেটা আর বলার বাকি থাকে না। যে অন্ধ একমাত্র সেই বুঝে চোখ না থাকার কষ্ট।
আজ চোখে ছানি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছ। আগামী দিন হয়তো চোখেরই অন্য কিছু নিয়ে আলোচনা করা যাবে।
ততোদিন পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।

Similar Posts