Tahsin Al JaME / মার্চ 27, 2020
হ্যাকিং শব্দটির সাথে প্রায় সবাই কম-বেশি পরিচিত। শব্দটা শুনতে কেমন যেন অদ্ভুত লাগে। অদ্ভুদ লাগারই কথা, বেশ রোমাঞকর একটি শব্দ। বিশেষ করে তরুণদের কাছে। তাই প্রযুক্তির এ যুগে হ্যাকিংয়ের সাথে পরিচিত হওয়া জরুরি। চলুন জেনে আসি।
হ্যাকিং কি?
হ্যাকিং একটি প্রক্রিয়া যেখানে কেউ কোন অনুমতি ছাড়া কোন নেটওয়ার্ক কিংবা সিস্টেমে প্রবেশ করে। যারা এ হ্যাকিংয়ের সাথে জড়িত তাদের হ্যাকার বলে ।এসব কথা আমরা প্রায় সবাই জানি।কিন্তু হ্যাকিং বলতে যে শুধু কম্পিউটার হ্যাকিং বোঝায় তা কিন্তু না, হ্যাকিং বিভিন্ন কিছুর হতে পারে। সেটি হতে পারে আমাদের মোবাইল ফোন, ল্যান্ড ফোন, গাড়ির ট্রাকিং ব্যবস্থা, বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স ও ডিজিটাল যন্ত্র, বৈধ অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে তা ও হ্যাকিং এর আওতায় পড়ে।
যে ব্যাক্তি হ্যাকিং অনুশীলন কিংবা প্র্যাক্টিস করে তাদের হ্যাকার বলে। হ্যাকররা যেকোনো সিস্টেম হ্যাক করার পূর্বেই সে সিস্টেম নিয়ে বিশেষভাবে অবগত থাকে। কারণ হ্যাকার হওয়া মোটেও সহজ ব্যাপার নয়। এর জন্য অনেক দক্ষতা ও জ্ঞানের প্রয়োজন রয়েছে।
হ্যাকারের প্রকারভেদঃ
হ্যাকার তিন প্রকারের। এ তিন প্রকারের আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট আছে। তাদের আলাদা করা যায় তাদের হ্যাট বা টুপি দিয়ে।এ হ্যাট বা টুপি তিন ধরণের যথাঃ
১. হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার
২. গ্রে হেট হ্যাকার
৩. ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার
হোয়াইট হ্যাট হ্যাকারঃ অনেকেই মনে করে হ্যাকিং খুবই খারাপ কাজ।কিন্তু এ কথাটা ১০০% সত্যি নয়। হ্যাকিং কতটুকু খারাপ বা ভালো হবে সেটি নির্ভর করে আপনি কি কারণে হ্যাকিং করছেন বা হ্যাকিংকে আপনি কিভাবে গ্রহণ করছেন তার উপর । White Hat Hacker হ্যাকাররাই একমাত্র হ্যাকার যারা প্রমান করে যে হ্যাকিং খারাপ কাজ না।যেমন একজন White Hat Hacker একটি সিকিউরিটি সিস্টেমের ত্রুটিগুলো বের করে এবং ঐ সিকিউরিটি সিস্টেমের মালিককে ত্রুটি দ্রুত জানায়।সে সেটি না করে সিস্টেমের ক্ষতি করতে পারতো। কিন্তু হোয়াইট হ্যাট হ্যাকাররা কারো কোনো ক্ষতি করেনা বলেই তাদের হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার বলে। অন্যভাবে বলা যায় হোয়াইট হ্যাট হ্যাকাররাই হলো সবচেয়ে বিবেকবান হ্যাকার। যারা তাদের বিবেক দিয়ে কাজ করে।
গ্রে হ্যাট হ্যাকারঃ কখনো কি দুমুখো সাপ দেখেছেন? মানে এমন সাপ যার দুটি মুখ আছে। এখন আপনি বলতে পারেন হ্যাকিংয়ের টপিকে দুমুখো সাপ আবার কোত্থেকে এলো। কেন বলছি এবার তা ব্যাখ্যা করি। হ্যাকারদের মধ্যে এক প্রকার হ্যাকার আছে যাদেরকে দুমুখো সাপের সাথে তুলনা করা হয়। এরা যখন একটি একটি সিকিউরিটি সিস্টেমের ত্রুটি গুলো বের করে তখন সে তার মন মত কাজ করবে। । সে ইচ্ছে করলে সিকিউরিটি সিস্টেমের কর্তৃপক্ষ অবহিত করতে পারে অথবা ইনফরমেশন গুলো নিজের স্বার্থের জন্যও ব্যবহার করতে পারে। বেশিরভাগ হ্যাকাররাই এ ক্যাটাগরির মধ্যে পড়ে।
ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারঃ সবচেয়ে ভয়ংকর হ্যাকার হচ্ছে এরা।এরা কোন একটি সিকিউরিটি সিস্টেমের ত্রুটি গুলো বের করলে দ্রুত ঐ ত্রুটি কে নিজের স্বার্থে কাজে লাগায়। ঐ সিস্টেম নষ্ট করে।এমনকি বিভিন্ন ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়। সর্বোপরি ঐ সিস্টেমের অধিনে যে সকল সাব-সিস্টেম রয়েছে সেগুলোতেও ঢুকতে চেষ্টা করে।এদেরকে ডিজিটাল প্রতারকও বলা চলে।এরা নিজের স্বার্থের জন্য মানুষের সাথে প্রতারণা করে।
আরো কয়েক ধরণের হ্যাকার রয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম হলো Anarchists, Crackers, Script kiddies ইত্যাদি।
হ্যাকিং কেন প্রয়োজনঃ
যেকোনো ডিজিটাল মাধ্যমে সিকিউরিটির জন্য হ্যাকিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেননা, হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কোনো সিকিউরিটি সিস্টেমের সক্ষমতা পরিক্ষা করা যায়। এছাড়াও অনেকক্ষেএে হ্যাকিং ডিজিটাল দারোয়ানের মতো কাজ করে। বর্তমানে অনেক নামী-দামী কোম্পানী তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে দক্ষ হ্যাকারদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। এর মাধ্যমে কোম্পানীগুলোর তথ্য নিরাপদে থাকে। এবং এ কাজের জন্য কোম্পানীগুলো ভালো দাম দিয়ে থাকে।
হ্যাকাররা অনেক বুদ্ধিমান হয়। কিন্তু সবকিছু আবেগ দিয়ে করলে বিপদে পড়তে হয়। হ্যাকিংও তার ব্যতিক্রম নয়। তাই হ্যাকিংয়ে কারো যাতে ক্ষতি না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তাই আবেগের সাথে বিবেকের ব্যবহার অপরিহার্য। আপনার মনে হতে পারে আপনাকে কেউ দেখছে না। কিন্তু, সর্বশক্তিমান আল্লাহ কিন্তু আপনাকে ভালোই দেখতে। তাই, হ্যাকিং করার ক্ষেত্রে এটি মনে রাখতে হবে আপনার আবেগ যাতে অন্য কারো বিপদ না হয়। আপনার দ্বারা অন্য কেউ যেন প্রতারিত না হয়। হ্যাকিং নিশ্চয়ই একটি মজার বিষয় কিন্তু, প্রায় সব বিষয়েরই কিছু কিছু ভালো গুণ আবার কিছু খারাপ গুণ আছে। তাই হ্যাকিংকে ভালো কাজেই ব্যবহার করা উচিত।
FILED UNDER :অন্যান্য , তথ্যপ্রযুক্তি , লাইফস্টাইল
Comments are closed.
Comments
tasnim says
বেশ দরকারী তথ্য ছিল।
Mehedi Hasan Khan says
ইনফরমেটিভ পোস্ট। হ্যাকিংয়ে আগে বেশ আগ্রহ ছিলো। ইথিক্যাল হ্যাকিংয়ের উপর কিছু কোর্স করবো জাস্ট কৌতুহল মেটানোর জন্য।