ধূমপান ছাড়তে চান ? এই পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করে দেখতে পারেন।

প্রকৃতপক্ষে আমরা সবাই ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানি। তারপরেও বেশির ভাগ ধূমপায়ী মানুষের জন্যই ধূমপান ছাড়া কষ্টকর। ধূমপান করা শুরু করলে এটি যেমন মানসিক আসক্তিতে রূপান্তরিত হয় তেমনি এটি শারীরিক আসক্তিও তৈরী করে। ধূমপানের মাধ্যমে আমরা নিজেদের মধ্যে যেই নিকোটিন নিতে থাকি তা আমাদের মস্তিষ্কের মধ্যে এক ক্ষণস্থায়ী ভালো লাগার অনুভূতি তৈরী করে। যার কারণে আপনার মস্তিক এর প্রতি আসক্ত হয়ে যায় আর বার বার ধূমপানের জন্য আপনাকে প্রভাবিত করতে থাকে। একই কারণে আপনি যখন হতাশ থাকেন অথবা কোনো সমস্যাতে পরেন তখন আপনি ধূমপানকে বেছে নেন সাময়িক মুক্তির জন্য। আর অল্প সময়ের ভিতরেই এই প্রক্রিয়াটি আপনার অভ্যাস এ পরিণত হয়ে যায়।

ধূমপান ছাড়তে হলে আপনাকে আপনার অভ্যাস ও শারীরিক আসক্তি এই দুইটি থেকেই বের হয়ে আসতে হবে। আপনি পূর্বে অনেকবার ছাড়ার চেষ্টা করে বিফল হলেও সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী চেষ্টা করে এই আসক্তি থেকে আসলেই মুক্তি পেতে পারেন। চলুন তাহলে কিছু পরিকল্পনা দেখে নেয়া যাক:

No smoking

প্রথমেই নিজের আসক্তিকে বুঝতে চেষ্টা করুন: 

কিছুটা সময় নিয়ে আপনার আসক্তি কি রকম তা বুঝার চেষ্টা করুন। কি কি কারণে আপনি ধূমপানের প্রতি আসক্ত তা বুঝার চেষ্টা করুন। এর জন্য আপনি নিজেকে কিছু প্রশ্ন করতে পারেন। যেমন:

      • আপনি কি অনেক বেশিভাবে ধূমপানে আসক্ত? নাকি অল্প?
      • কোনো নির্দিষ্ট জায়গা কিংবা মানুষ কি আপনার ধূমপানের সাথে জড়িত?
      • ধূমপানে আসক্ত হওয়ার সাথে কি আপনার অন্য কোনো আসক্তির সম্পর্ক আছে?

নিজের আসক্তি সম্পর্কে বুঝার পর এখন আপনার কাজ নিয়ন্ত্রণ শুরু করা:

ধূমপান ছাড়ার প্রক্রিয়াকে শুরু করার জন্য আপনি ‘START’ নামক একটি প্রক্রিয়া ব্যবহার করতে পারেন।

S= Set a quit date(একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক করুন শুরু করার জন্য )

মানসিক ভাবে প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য নিজেকে একটু সময়দিয়ে একটা নির্দিষ্ট দিন ঠিক করে ফেলুন যেদিন থেকে আপনি ধূমপান ছেড়ে দিবেন। তবে প্রস্তুতি গ্রহণের সময় যেন এক সপ্তাহ থেকে বেশি না হয়। না হলে আপনি আপনার অনুপ্রেরণা হারিয়ে ফেলতে পারেন।

T= Tell family,friends and co-workers about your plan(আপনার পরিবার , বন্ধু এবং সহকর্মী সবাইকে এ ব্যাপারে জানিয়ে দিন )

আপনার আশেপাশে যারা থাকে সকলকে আপনার ধূমপান ছেড়ে দেয়ার কথা জানিয়ে দিন। তাহলে আপনি কখনো ভুলে গেলেও আপনাকে মনে করিয়ে দিবে একই সাথে আপনাকে অনুপ্রেরণা জোগাতে পারবে।

A= Anticipate and plan for the challenges you’ll face while quitting(এটি কার্যকর করতে যেয়ে আপনি যে ধরনের সমস্যায় পরতে পারেন সেগুলোর জন্য আগে থেকেই মানসিক ভাবে তৈরী হয়ে নিন।)

অনেকদিন এর অভ্যাস ছাড়ার ফলে আপনি কিছু সাময়িক শারীরিক এবং মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হবেন। তাই এগুলার জন্য আগে থেকেই তৈরী হয়ে নিন যাতে করে এইগুলার কাছে আপনাকে হেরে যেতে না হয়।

R= Remove cigarettes from your home and workspace.(নিজের চারপাশ থেকে সিগারেট সরিয়ে ফেলুন )

নিজের চারপাশ থেকে সিগেরেট সহ এমন সবকিছু সরিয়ে ফেলুন যা দেখলে আপনার ধূমপানের ইচ্ছা জগতে পারে।

T= Talk to a person who has done this before.(পূর্বে সফলভাবে ধুমপান ছেড়েছে এমন কারো সাথে কথা বলুন )

চেষ্টা করুন এমন একজনের সাথে কথা বলতে যে কিনা আগে ধূমপান ছেড়েছে। তাহলে এই প্রক্রিয়া তে আপনি কি কি সাময়িক সমস্যাতে পরতে পারেন আর সেগুলো থেকে কিভাবে বের হবেন তা সম্পর্কে ধারণা পেতে পারবেন।

কি কি জিনিস আপনাকে ধূমপানে আগ্রহী করে তুলে তা সম্পর্কে জানুন: 

ধূমপান ছাড়ার জন্য সবচেয়ে উপকারী হচ্ছে ঐ সব জিনিস , সময় এমনকি মানুষ সম্পর্কে জানা যা/যারা আপনাকে ধূমপানে আগ্রহী করে তুলে। সবচেয়ে কার্যকরী হবে আপনি যদি একটি কাগজে লিখে নিন তাহলে। যা যা আপনাকে আগ্রহী করে তুলে সবকিছুর একটি তালিকা তৈরী করে ফেলুন এবং চেষ্টা করুন এ সবকিছু থেকে সম্পূর্ণ রূপে দূরে থাকতে। এর জন্য আপনি নিজেকে কিছু প্রশ্ন করতে পারেন। যেমন:

      • কোন সময়টাতে ধূমপানের ইচ্ছা সবচেয়ে বেশি থাকে?
      • সময়ভেদে আপনার এই ইচ্ছা কিভাবে পরিবর্তিত হয়?
      • কি কাজ করার সময় আপনার সবচেয়ে বেশি ধূমপানের ইচ্ছা হয়?
      • কে কে আপনাকে ধূমপানে অনুপ্রাণিত/আগ্রহী করে তুলে?
      • আপনি ধূমপানের পরে কিরকম অনুভব করেন?

আপনি কি কোনো অপ্রীতিকর অনুভতি থেকে মুক্তির জন্য ধূমপান করেন? 

অনেকের কাছেই ধূমপান নানা অপ্রীতিকর অনুভতি যেমন: হতাশা, একাকিত্ব, ভয়, চিন্তা এগুলো থেকে সাময়িক মুক্তির উপায়। সিগারেটে এমন উপাদান থাকে যা কিনা আমাদের মস্তিষ্ককে ত্বরান্বিত করে এক ভালো লাগার অনুভতি তৈরী করে। কিন্তু আপনাকে বুঝতে হবে এটি আপনার যতটুকু না উপকার করছে তার থেকে অনেক বেশি ক্ষতি করছে। এটি ধীরে ধীরে আপনাকে এতটাই আসক্ত করে তুলবে যে একসময় সবকাজেই আপনার ধূমপানের প্রয়োজন পরবে। তাই আপনার এধরনের অপ্রীতিকর অনুভতির কারণে যখনি আপনি ধূমপানের ইচ্ছা অনুভব করবেন তখন চেষ্টা করুন অন্য কোনো কাজ যা করতে আপনি পছন্দ করেন তাতে নিজেকে ব্যস্ত করে ফেলতে।

ধুমপান ছাড়ার ফলে আপনি যে ধরণের সমস্যায় পরতে পারেন তা থেকে বের হয়ে আসুন :

ধূমপান শুধুমাত্র কোনো মানসিক আসক্তি না এটি একটি শারীরিক আসক্তিও বটে। যার কারণে আপনি অনেক ধরণের মানসিক ও শারীরিক সমস্যার মধ্যে পরতে পারেন। যেমন: সিগারেটের প্রবল ইচ্ছা , হতাশা , রাগ , মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা , মাথাব্যথা , ঘুম না আসা , অবসাদ লাগা , রক্তচাপ কমে যাওয়া ইত্যাদি। এই সমস্যা গুলো যতটাই অপ্রীতিকর হোক না কেন আপনাকে মাথায় রাখতে হবে এই সবগুলো সমস্যাই ক্ষণস্থায়ী। সাধারণত এক থেকে দুই সপ্তহের মধ্যে সবগুলো সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে। তাই এই সময় টুকু আপনাকে ধৈর্য ধরে ধূমপান থেকে দূরে থাকতে হবে।

ধূমপানের প্রবল ইচ্ছাকে জয় করুন

ধুমপানের প্রতি আপনি শারীরিক ও মানসিক ভাবে আসক্ত থাকার কারণে আপনি যখন এটি ছেড়ে দিবেন তখন ধূমপানের ইচ্ছা আপনার আরো বেড়ে যাবে। তাই যখনি ধূমপানের ইচ্ছা করবে তখন নিজেকে ৫-১০ মিনিট নিয়ন্ত্রণ করুন তাহলে নিজে থেকেই এই ইচ্ছা আস্তে আস্তে কমে আসবে। এর জন্য আপনি কিচ্ছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন। যেমন:

মনোযোগকে অন্য কোনোদিকে নিয়ে যান।

যখনি ধূমপানের ইচ্ছা করবে তখন চেষ্টা করুন সাথে সাথে অন্য কোনো কাজ করতে যাতে করে আপনার মনোযোগ ধূমপানের ইচ্ছা থেকে অন্যদিকে চোলে যায়।

নিজেকে মনে করিয়ে দিন

যখনি আপনার ধূমপানের ইচ্ছা জাগবে তখন নিজেকে বার বার মনে করিয়ে দিন যে আপনি এটি ছাড়ার প্রক্রিয়ার ভিতরে আছেন। আপনাকে সাহায্য করার জন্য আপনার চারপাশে যারা থেকে তাদেরকেও বলুন আপনাকে এই ব্যাপারটি মনে করিয়ে দিতে।

বিকল্প কিছু ব্যবহার করুন। 

যখনি আপনার ধূমপানের ইচ্ছা জাগবে তখন বিকল্প কিচ্ছু যেমন চুইংগাম, মিন্ট জাতীয় চকলেট ইত্যাদি ব্যবহার করে নিজেকে ধূমপান থেকে বিরত রাখুন।

ধূমপান এমন একটি জিনিস যাতে একবার আসক্ত হয়ে গেলে এটি ছাড়া কষ্টকর হয়ে পরে। তবে এমন না যে অসম্ভব। আপনার নিজের একটু ইচ্ছা থেকেই আপনি চাইলে এই বিষাক্ত অভ্যাস থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারেন। ধুমপান আপনার এবং আপনার সাথে যারা থাকে যেমন আপনার পরিবার এর মানুষ সবার জন্যই ক্ষতিকর। আপনি কি জানেন আপনার এই অভ্যাসের কারণে আপনি আপনার পরিবারের মানুষকেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছেন? এই ব্যাপার গুলো বুঝতে শুরু করুন আর আজথেকেই ধূমপান ছাড়ার জন্য নিজেকে তৈরী করে নিন। 

 

Similar Posts

2 Comments

  1. সিগারেট কেনার খরচের দিকটাও যদি পর্যবেক্ষণ করা হয়, তাহলে একজন ধূমপায়ী বুঝতে পারবেন যে তিনি নিজেকে ক্ষতি করার জন্য কি পরিমান অর্থ অপচয় করছেন।

Comments are closed.