অকারণে দুশ্চিন্তা করা বন্ধ করুন
আমার মনে আছে ছোটবেলায় যখন আমি স্কুলে পড়তাম, তখন আমার সবথেকে বড় চিন্তা থাকতো আজকে বিকেলে ফুটবল খেলায় যেন আমি ভালো খেলতে পারি ও গোল করতে পারি এবং সবার থেকে যেন ভালো খেলতে পারি। এখন সেই কান্ডগুলো মনে পড়লে যতখানি হাসি পায় তখন কিন্তু ব্যাপারটা আমার কাছে ঠিক ততটাই সিরিয়াস ছিল। আমি নিশ্চিত আপনিও ছোটবেলায় এরকম কিছু করতেন যেটা তখন আপনার কাছে ভীষণ সিরিয়াস একটা ব্যাপার ছিল। কিন্তু যেটার কথা এখন মনে পড়লে আপনার ঠিক ততটাই হাসি পায়। এবার মজার বিষয়টা হলো, বর্তমানে যে সমস্যাটি নিয়ে আপনি যতখানি চিন্তা করছেন, এই কথাটা আজ থেকে দশ কি বিশ বছর পর যখন আপনি ভাববেন, তখন আবার আপনার নিজের কান্ডর কথা ভেবে নিজের উপরই হাসি পাবে।
উদাহরণস্বরূপ- কোন বোর্ড পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে বাড়ির বাবা-মা, টিচাররা, বন্ধুবান্ধবরা, মানে সবাই মিলে এমন একটা করে যেন জীবন-মরণ ব্যাপার। রেজাল্ট যদি কোনোভাবে বাই চান্স খারাপ হয়ে যায় তাহলে বোধহয় পুরো জীবনই শেষ হয়ে যাবে এমন একটা অবস্থা। যেটাকে অবশ্য সত্যি বলে মেনে নিয়ে বহু স্টুডেন্টস ইভেন সুসাইডও করে ফেলে। কিন্তু একবার যখন স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে আমরা চাকরি জীবনে ঢুকে যাই তখন সেই বোর্ড পরীক্ষাটার আসল ইম্পর্টেন্স কতটুকু সেটা প্র্যাকটিক্যালি বুঝতে পারার পর, ওই সময়ে করা পাগলামির কথা ভেবে সবারই নিজের উপর হাসি পায়। তাই কেন জীবনে সমস্যাগুলোকে অত্যাধিক সিরিয়াসলি নেওয়াটা বোকামি করা এবং জীবনের সমস্যা গুলোর সাথে ডিল করার সঠিক অ্যাটিটিউডটা কি? সেটাই আজ আপনি জানতে চলেছেন..
১. নিজেকে বারবার মনে করান জীবন কোনো এমার্জেন্সি না
জীবনটাকে আমরা এতখানি এমার্জেন্সি বলে মেনে নিই যে সামান্য নিজের পরিবারের সাথে সময় কাটানোর অবসর টুকুও আমাদের কাছে থাকেনা। কোনো একটা সামান্য কাজকে অকারণে অত্যাধিক গুরুত্ব দিয়ে বড়োসড়ো এমার্জেন্সি বানিয়ে নিই।
উদাহরণস্বরূপ- একজন হাউসওয়াইফ ঘর গুছিয়ে রাখতে পারাটাকে এতটা গুরুত্ব দিয়ে ফেলেন যে তার খুশি থাকতে পারা সে কাজটা তিনি কতটা পারফেক্টভাবে করতে পারছেন তার ওপর নির্ভর হয়ে যায়। যদি তার হাসবেন্ড কোনোভাবে ঘর এলোমেলো করে ফেলেন এতে তিনি রীতিমতো পাগলের মতো চিৎকার করে তার সাথে ঝামেলা করতে শুরু করে দেন। তিনি এটা ভুলে যান যে ঘর গুছিয়ে রাখতে পারার থেকে প্রিয়জনদের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখতে পারাটা অনেক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক সময় আমাদের টু ডু লিস্টে যদি সারাদিনে ছয়টি কাজ কমপ্লিট করার প্ল্যান থাকে সেখানে যদি আমরা মাত্র চারটা কাজ কমপ্লিট করি, তাহলে ওই সামান্য দুটো কাজ না করতে পারার জন্য সেদিন আমরা খুশিকে জলাঞ্জলি দিয়ে দুঃখী হয়ে যাই। এমন একটা বিহেভ করি মানে কেউ কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে রেখে বলেছে যে ছয়টি কাজই কমপ্লিট করতে হবে, না হলেই শেষ। অর্থাৎ নিজে নিজের জন্য একটা ডেটলাইন সেট করে সেটাকে এমার্জেন্সি বানিয়ে নিই আর তারপর সেটাকে আমাদের খুশি থাকতে পারার শর্ত হিসেবে জুড়ে দিই। তাই বারবার নিজেকে মনে করান জীবন কোন এমার্জেন্সি না। জীবনটাকে এমারজেন্সি বলে মেনে নিয়ে তাড়াহুড়ো করে আপনি যতই কিছু জোগাড় করার চেষ্টা করুন না কেন, মৃত্যুর সাথে সাথে সেগুলো সব আবার আপনার জন্য ব্যাক টু জিরোতে চলে যাবে।
২. নিজেকে সঠিক এবং অন্যকে ভুল প্রমান করার চেষ্টা করা বন্ধ করুন
আমাদের সবার মধ্যেই এই প্রবণতাটা রয়েছে কিন্তু আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন যে নিজেকে সঠিক আর অন্যকে ভুল প্রমাণ করে আপনি আসলে কি পান? আপনি কি সামনের জনকে ভুল প্রমাণ করে দেওয়ার পর সে আপনার প্রতি খুব খুশি হয়ে আপনাকে প্রিয় বন্ধু বানিয়ে নেয়, নাকি বরং তার আপনার প্রতি শত্রুতা অনুভব বেড়ে গিয়ে সম্পর্কটা আরো খারাপ হয়ে যায়। আপনাকে এটা বুঝতে হবে যে ঠিক যেমন আপনার EGO, আপনি নিজে ভুল সেটা কখনোই খুশি হয়ে মেনে নিতে চায় না, ঠিক তেমনই সামনের জনের EGO, সে নিজে ভুল এটা কখনোই মেনে নিতে চায় না। তাই বুদ্ধিমানের কাজ হলো তর্ক করে শুধু শুধু সম্পর্ক খারাপ করার বদলে একবার জাস্ট নিজের মতামতটা তাকে জানানো। তারপর যদি সে সেটা না মানতে চায় তাহলে জাস্ট সিম্পলি চুপ থাকা। অর্থাৎ নিজের মতামতটা তার উপর জোর করে চাপানোর চেষ্টা করার প্রবণতাটাকে বন্ধ করা। আর নিজেকে মনে মনে বলা, তুমি যেটা ঠিক মনে করো তুমি সেটা করো আর আমি যেটা ঠিক মনে করি আমি সেটা করি। তর্ক চালিয়ে গিয়ে শুধু শুধু সম্পর্ক খারাপ করে তো লাভ নেই। কারণ, কেউই খুশি মনে নিজেকে ভুল বলে মেনে নেয় না।
৩. সমস্যা মানেই নতুন কিছু শেখার সুযোগ
করোনা শুরু হবার আগেও আমরা সবাই এটা জানতাম যে খাবার খাওয়ার আগে ভালো করে হাত ধুয়ে তারপর খাবার খাওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের মধ্যে খুব কম লোকই সেটা সতর্কভাবে মেনে চলতো। এখন করোনা সমস্যা আমাদের শিখিয়ে দিল যে কিভাবে সব সময় কিছু খাওয়ার আগে হাত ধুয়ে খেতে হয়। বা হয়তো আপনি এখন যে বস-এর আন্ডারে কাজ করছেন তিনি ভীষনই ওভার ডিমান্ডিং। এবার এই করোনার সময় লোকে এমনিতে চাকরি পাচ্ছে না তাও ভালো যে আপনার কাছে অন্তত একটা চাকরি তো আছে। তো বস ওভার ডিমান্ডিং বলে চাকরি ছেড়ে দেওয়াটা আপনার কাছে এই মুহূর্তে কোনো অপশনই না। তো আপনি এখন এই সমস্যাটাকে শুধুমাত্র একটা অসহ্যকর সমস্যা হিসেবে দেখে দুঃখী হতে পারেন অথবা একজন ওভার ডিমান্ডিং বস-এর আন্ডারেও কিভাবে খুশি থেকে কাজ করা সম্ভব সেটা শেখার একটা সুযোগ হিসেবে দেখতে পারেন। যাতে করে আপনি নতুন কিছু শিখে নিজেকে আরো বেশি ষ্ট্রং ও ইম্প্রুভ করে তোলার আনন্দটুকু অন্তত উপভোগ করতে পারেন।
সব সময় মনে রাখবেন,
জীবনে খুশি থাকতে পারার জন্য আপনি যত বেশি শর্ত যোগ করতে থাকবেন জীবনে খুশির পরিমান ততবেশি কমতে থাকবে। আর শর্তের পরিমাণ যত কমাতে থাকবেন জীবনে খুশির পরিমাণ ততবেশি বাড়তে থাকবে।