স্বার্থপর পৃথিবীর নিঃস্বার্থ ভালোবাসা

রাতের অন্ধকারে ঘেরা চারপাশ। আশেপাশে কাউকেই দেখতে পাচ্ছিনা। আপন মনে হেটে যাচ্ছি। হাতে চকোলেট আর একটা গোলাপের তোড়া নিয়ে। অবশেষে গন্তব্যে পৌছালাম। আমার আগেই দেখছি পরীটা এসে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সে বলতে শুরু করলো,দেখো আমি আর এই সম্পর্ক রাখতে পারবোনা। অবাক হয়ে নিজেকে সামলে জিজ্ঞেস করলাম কেনো..? সে বললো তোমার মতো থার্ড ক্লাস ছেলেদের সাথে কিছুদিন প্রেম করা যায়। এর বেশি কিছুনা। সো, গুড বাই।বলেই সে চলে গেলো।

আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিছু বলতে পারিনি। চারপাশটা যেন নিশ্চুপ হয়ে বোবাকান্না করছে। এই পৃথিবীতে সবাই স্বার্থপর।কেউ কাউকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসেনা। যে যার মতো নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। হঠাৎই পকেটে থাকা মোবাইলটা বেজে উঠল।হাতে নিয়ে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মা বলে উঠল বাবা কই তুই? তোর জন্য আজকে তোর পছন্দের রান্না করে বসে আছি।তুই আসলে একসাথে খাবো। তুই তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আয়।শুনেই ফোনটা কেটে দিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ১০:৩০ বাজে। মা এখনো আমার জন্য না খেয়ে বসে আছে। নিজের অজান্তেই চোখের কোনে পানি চলে আসলো।

যাকে ভালোবাসলাম তার কাছে আমি থার্ড ক্লাস। কিন্তু আমার মায়ের কাছে আমি কখনোই থার্ড ক্লাস ছিলাম না। যার কথা ভাবতে গিয়ে মাকে মিথ্যে বলেছি হাজারবার সেই মা ই এখনো পর্যন্ত আমার কথা ভাবছে কিন্তু যার জন্য এতো কিছু করলাম সেই ছেড়ে চলে গেলো। যার খুশির কথা আমি ভেবেছি সেই আমার খুশির কথা ভাবলোনা। কিন্তু সবকিছুর ভিড়ে যার কথা মনে করার সময়ই পাইনি সেই মা ই ছোটবেলা থেকে হাতে করে আমার খুশিগুলো এনে দিয়েছিলো আমার কাছে। আমার ভালো,খারাপ,বিপদ-আপদ সবসময় আমার পাশে ছিলো। সবকিছু থেকে আমাকে আগলে রেখেছিলো। বিনিময়ে দেয়া হয়নি কিছুই। তবুও নিঃস্বার্থভাবে আমাকে নিয়েই ভেবেছে। আর আমার কথা ভাবতে গিয়ে নিজেকে নিয়ে ভাবার সময়টুকুও তার কখনো হয়নি।

হ্যাঁ,তুমিই তো মা। ছোটবেলায় একবার পড়ে গিয়ে পা কেটে গিয়ছিলো,সেদিন আমার থেকে বেশি তুমি কেঁদেছিলে মা।তোমার চোখে আমি আমার খুশিতে সুখ আর আমার দুঃখে কষ্ট দেখি,মা।আমি এতোদিন সত্যিকারের ভালোবাসা রেখে মিথ্যে মরীচিকার পিছনে ছুটেছি।সরি মা।তুমিইতো মা,যে আমার মুখে হাসি ফুটানোর জন্য হাজারো কষ্ট হাসিমুখে মেনে নিয়েছো।কখনো নিজের কথাটা ভাবোনি আমার কথাটা ভাবতে গিয়ে।আচ্ছা,একটা মানুষ কিভাবে এতোটা নিঃস্বার্থ হতে পারে..?তোমাকে না দেখলে হয়তো তা বুঝতেই পারতাম না।

তুমিই তো মা,যে আমার খুশিগুলো আমার কাছে এনে দিয়েছো। আর আমি সেই খুশিগুলো নিয়ে হাসিমুখে চলেও যেতাম।তোমাকে ধন্যবাদটুকু ও দেওয়া হয়নি কখনো। তবুও কোনো অভিযোগ না করে আমার খুশিতেই তুমি হাসতে। আমার খুশিগুলো তুমি নিয়ে আসলেও কখনো তোমাকে জড়িয়ে ধরে বলতে পারিনি ধন্যবাদ মা। কখনো বলতে পারিনি আমার ভালোবাসাটা তুমিই মা। তোমাকে সত্যিই বড্ড বেশি ভালোবাসি “মা”। সবাই স্বার্থপর না। সবাই নিজের কথা ভাবেনা। এই স্বার্থপর দুনিয়ায় আজো মায়েদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা বেচে আছে।

হঠাৎ ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই দেখি ১১ টা বাজে। নাহ,আর দেরি করলে চলবেনা। এখনই বাসায় ফিরতে হবে। ওদিকে মা না খেয়ে বসে আছে। হাটতে যাবো এমন সময় দেখি রাস্তার পাশে একটা পথশিশু বসে আছে। হাতে থাকা চকোলেট আর ফুলের তোড়া থেকে একটা ফুল মায়ের জন্য রেখে বাকিটা ওই শিশুটার হাতে দিয়ে বললাম, এটা তোমার জন্য। বাচ্চাটা একনাগাড়ে আামার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আমার দেওয়া উপহারগুলো দেখতে লাগলো। কিছুক্ষন পর একটা মিষ্টি হাসি দিলো। তার চোখেমুখে আনন্দের ছাপ স্পষ্ট। আমিও মেয়েটার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলাম। তারপর আবার হাটতে শুরু করলাম।ল্যাম্পপোস্টের মৃদু আলোতে হাটছি হঠাৎই ঠান্ডা বাতাস বইতে শুরু করলো। প্রকৃতিও যেন আজ আমার সাথে আনন্দে মেতে উঠেছে।

ভালো থাকুক সকল নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।

Similar Posts

2 Comments

  1. মা রা যেন কেরকম! একদম রহস্যময়ী! কিভাবে তাদের ভালোবাসা যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকে এই প্রশ্নের জবাব কোথায় পাওয়া যায় না।

Comments are closed.