ঢাকার কাছেই মিনিকক্সবাজার:ঘুরে আসুন মৈনট ঘাট

ধূধূ বালুচরে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বাদাম খেত,বাতাসের দোলায় দুলছে অবিরত। পাশদিয়ে বয়ে চলেছে প্রমত্তা পদ্মা। ভরা বর্ষায় ফুলে ফেপে উঠেছে পূর্ণ যুবতী পদ্মার পেট।কোন কবি যেনো বর্ষার নদীকে তুলনা করেছিলেন ভরা মাসের পোয়াতি নারীর সাথে।পূর্ণ  যৌবনা এ পদ্মার রূপ দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে ঢাকার দোহারে।

ঢাকা থেকে চল্লিশ পঞ্চাশ  কিলোমিটার দূরে ঢাকার দোহার ও নবাবগন্জ উপজেলা। ঐতিহাসিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ঢাকার নবাবগন্জ উপজেলায় আছে দেখার মতো অনেক নিদর্শন। সে ব্যাপারে কলম ধরবো আরেকদিন।তবে এখন আপনাকে নিয়ে যাবো দোহারের মৈনটঘাটে,যেটা মিনি কক্সবাজার নামেই বেশি পরিচিত।

ওপারে ফরিদপুরের চর ভদ্রাসন আর এপারে দোহারের কার্তিকপুর। একসময় ফেরীঘাট তৈরীর জন্য জায়গাটাকে মেরামত করা হলেও এখন তা পরিত্যক্ত।তবে মৈনট ঘাটের সৌন্দর্য এখন আকৃষ্ট করছে পর্যটকদের।

কার্তিকপুরের এখানটায় পদ্মা বেশ বড় আর প্রমত্তা।বর্ষাকালে তা হয়ে ওঠে আরো আকর্ষনীয়।পদ্মার এপারে দাড়ালে ওপারের কোনো কিছুই চোখে পড়বেনা,প্রশস্ততা এতই ব্যপক। আর প্রবল ঢেউ ও বাতাসের গর্জন আপনাকে মনে করিয়ে দেবে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কথা।

পদ্মার তীরে পর্যটকদের বসার জন্য আছে ছোট ছোট তাবু।পদ্মায় ঘুরে বেড়ানোর জন্য আছে স্পিডবোট,ট্রলার,এমনকি পাল তোলা খেয়া নৌকা পর্যন্ত।ট্রলারে করে প্রতি আধঘন্টা পদ্মার বুকে ঘোরার জন্য আপনাকে গুনতে হবে একশ থেকে দেড়শ টাকা।ওপারে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন যাওয়ার জন্য আপনার ভাড়া লাগবে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা।

পদ্মার তীরের বালুচরে পা ভেজানোর জন্য আপনি দাড়াতে পারেন নাঙ্গা পায়ে। আপনার নাঙ্গা পায়ে ঘোলাটে পদ্মার ঢেউয়ের আঘাত আপনাকে মনে করিয়ে দেবে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের অনুভূতি। অল্প পানিতে নেমে আপনি গোসলও সেরে ফেলতে পারেন।তবে সেক্ষেএে গার্ড সাথে রাখবেন এবং তার কথা মেনে চলবেন। কারন গত কয়েক বছরে পদ্মার শক্তিশালি স্রোতে ও চোরাবালীতে প্রাণ হারিয়েছেন অনেকেই। তাই গোসলের ব্যাপারে সাবধান।

দুপুরের ভুরিভোজ সারতে পারেন টাটকা ইলিশ ভাজা দিয়ে। ২০ টাকা এক প্লেট ভাত আর ৮০ টাকার ইলিশের দোপেয়াজা আপনাকে মনে করিয়ে দেবে যে আপনি মাছে ভাতে বাঙালি। আছে স্পেশাল ফুচকা আর ঝাল মুড়ি।

গুলিস্তান থেকে আপনি তিন ধরনের বাসে মৈনটঘাট পর্যন্ত যেতে পারবেন। যমুনা ডিলাক্স ও দ্রুত পরিবহন সরাসরি আপনাকে নিয়ে যাবে মিনি কক্সবাজার,ভাড়া ৯০ টাকা। সময় লাগবে দেড় থেকে দুই ঘন্টা। এই  বাসগুলো যাবে বাবুবাজার হয়ে কেরানীগন্জ ও নবাবগন্জের উপর দিয়ে। তবে আপনি যে বাসে চড়বেন না সেটা হলো নগর পরিবহনের বাস। এরাও মৈনট ঘাট অবধি যায়,তবে এদের ভাড়াও বেশি আর সময় ও লাগবে ডবল। কারন এরা যায় আব্দুল্লাহপুর-শ্রীনগর-দোহার হয়ে। এন মল্লিক পরিবহনেও যেতে পারেন,তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে মাঝির কান্দা নেমে আবার অটোতে চাপতে হবে। বর্ষার মৈনটের রূপ যেমন একরকম তেমনি শীতকালে তা আবার অন্যরকম। শীতকালে আপনি মৈনট গেলে টাটকা শীতের সব্জি নিয়ে আসতে পারেন আবার বর্ষায় টাটকা ইলিশ সহ পদ্মার পাবদা,বোয়াল,ঘাওরা মাছ চোখে পড়বে ঘাটের বাজারে। যেহেতু অঞ্চল টা ঢাকার মধ্যেই।আর যেতে আসতে সময়ও কম লাগে তাই দিন গিয়েদিন আসাই ভালো। কারন থাকার মতো ভালো কোনো ব্যবস্থা এখনও আশপাশে গড়ে ওঠেনি। জানলেন তো মিনি কক্সবাজার সম্পর্কে। তাহলে হাতে সময় করে অথবা সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন মিনি কক্সবাজারে।

 

Similar Posts