Abdul Kader / এপ্রিল 22, 2020
সাধারণত কিছু স্টুডেন্ট আছে, যারা সারাদিন খুব কম সময় পড়াশোনা করে।কিন্তু তারা যেটুকু সময় পড়ে, তা সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে একদম সলিড পড়া পড়ে। অন্যদিকে কিছু স্টুডেন্ট এমনও আছে, যারা সারাদিন বইয়ে মুখ দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে তো থাকেই এবং তাদের মন এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়ায় আর পড়তে পড়তে তারা বিছানায় একদম লুটিয়ে পড়ে। অর্থাৎ তাদের পড়াশোনা করার পদ্ধতিতেই ভুল থাকে। কেউ দিনের মধ্যে কতটুকু পড়ছেন তার চেয়ে অনেক বেশি ইম্পর্টেন্ট হচ্ছে সে কিভাবে পড়ছে?
পড়তে বসে আমরা সাধারণত যে ভুল গুলো করে থাকি, সেগুলোকে আইডেন্টিফাই করতে নিচে দেওয়া ৫ টি স্মার্ট আইডিয়া আপনাকে অনেকখানি সাহায্য করবে।
অনেকেই আছে পরীক্ষার আগের দিন টানা ৫-৬ ঘন্টা নিজেকে একটা ঘরের মধ্যে বন্দি করে নিয়ে বসে পরে, পড়া তৈরি করতে। এতে আপনার হয়তো মনে হতে পারে, এভাবে আপনার অনেকখানি পড়া এগিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু রিচার্জ অন্য কিছুই বলছে।
২০১১ সালে ARIGA & LLERAS এর করা একটি রিসার্চ থেকে জানা যায়, যে একটানা পড়ার বদলে কিছু সময় পর পর বিরতি নিয়ে পড়লে সেটা আমাদের ওভারঅল প্রোডাক্টিভিটি এবং মনোযোগ করার ক্ষমতা ধরে রাখতে অনেকখানি সাহায্য করে। তাই কিছুক্ষণ পর পর ছোট ছোট বিরতি নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক এক থেকে দেড় ঘণ্টা পড়ার পর ১৫ মিনিট করে বিরতি নিন। একটানা ৯০ মিনিট কোনো কিছুতে মনোযোগ করার পর আমাদের ব্রেনে ১৫ মিনিটের রেস্ট দরকার হয়। এবার এই ৯০ মিনিট-টা সকলের জন্য একই না। কারো জন্য সেটা ৫০ মিনিট বা তার কমও হতে পারে। এটা আপনাকে নিজেকে পরিক্ষা করে দেখতে হবে, যে আপনার জন্য এই সময়টা কত খানি।
এছাড়া কতখানি সময় বিরতি নেওয়া উচিৎ সেটা সময়ের উপর নির্ভর করে। তবে ১৫ মিনিট-টাকে আদর্শ মানের বিরতির সময় বলে ধরা হয়। তবে বিরতির সময় কখনো ১০ মিনিটের কম অথবা ২৫ মিনিটের বেশি হওয়া উচিৎ না। আর হ্যাঁ, বিরতির সময়ে নিজের ল্যাপটপ অথবা মোবাইল থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। কারণ বিরতি মানে নিজের মাইন্ডটাকে রিল্যাক্স হতে দেওয়া। এই সময়ে মোবাইল বা ল্যাপটপ ঘাটতে শুরু করলে, সেটা মাইন্ডকে রিল্যাক্সের বদলে বরং আরো একটিভ করে তুলবে।
সামনেই যদি কোনো পরিক্ষা থাকে, তবে সম্ভবত আপনাকে তার জন্য অনেক কিছু মুখস্থ মনে ধরে রাখতে হচ্ছে। আর এই মুখস্থ করার কাজটা অভাবনীয়ভাবে সোজা হয়ে উঠবে, যখন আপনি যা পড়ছেন, সেটা সামারি করে মনে রাখার চেষ্টা করতে শুরু করবেন। যদি মুখস্থ করার সময় পড়াটাকে আপনি আলাদা কোনো জায়গায় লিখে সামারি মতো করে মনে রাখার টেকনিকটা এখনো না জানেন, তাহলে আজ থেকেই আপনাকে সেটা করে দেখা উচিৎ।
ROBERT J MARZANO এর করা একটা রিচার্জ থেকে জানা গেছে, সামারাইজ করে মনে রাখার চেষ্টা করলে, গড়ে কোনো স্টুডেন্ট সেই কনসেপ্টটা বুঝে মনে রাখার ক্ষমতা প্রায় ১৯% বৃদ্ধি পায়। ফলে, আপনি যদি ‘সি’ গ্রেডের স্টুডেন্ট হন, তবে এই সিঙ্গেল টেকনিকটা আপনাকে একজন ‘এ’ গ্রেড স্টুডেন্ট-এ পরিণত করে তুলতে পারে। যখন আপনি যেটা পড়ছেন সেটা মাথা কাটিয়ে সামারাইজ করার চেষ্টা করবেন ফলে সেই টপিকটার সাথে, আপনার একটিভ এনগেজমেন্ট তৈরি হবে। যেটা আন্ডারলাইন বা হাইলাইট করার মতো যে পপুলার মেথডগুলো রয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে হয় না।
সামারাইজ করলে কি হবে?
আপনি প্রতিটি লাইন এবং প্যারাগ্রাফ থেকে সোনা খোঁজে বের করার মতো। জাস্ট মেইন পয়েন্ট এবং মূল বিবরণগুলোকে খোঁজে বের করে আলাদা করে ফেলবেন। এর ফলে মনে রাখার লোডটা অনেকখানি কমে যাওয়ায়, সেটা অনেক সহজে মুখস্থ হয়ে যাবে।
২০০৮ সালে JUDY WILLIS এর একটা রিচার্জ থেকে এটা জানা যায়, যে ডেফিনিট মিডিয়া আমাদের ব্রেনের ডিফেরেন্ট পার্টসগুলোকে উত্তেজিত করে। এবার কোনো কিছু মুখস্থ করার সময় আপনার ব্রেনের যত বেশি পার্টস একটিভ থাকবে তত সহজে আপনি সেই বিষয়টি বুঝতে পারবেন এবং দীর্ঘদিন মনে রাখতে পারবেন।
তো কোনো একটা নির্দিষ্ট চ্যাপ্টার বা টপিক পরীক্ষার জন্য তৈরি করতে আপনি এই জিনিসগুলো করতে পারেন।
অবশ্যই এর সবকটা জিনিস প্রতিটা টপিকের জন্য করা হয়তো সম্ভব হবে না। কিন্তু চেষ্টা করবেন, যতগুলো করা যায়। এতে পড়াটা আরও ইন্টারেস্টিং হয়ে উঠবে এবং একদম পাকাপোক্তভাবে টপিকটা আপনার পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে।
২০১২ সালে DOUG ROHRER এর করা একটা স্টাডি থেকে জানা গেছে, যে একদিনে একটাই সাবজেক্ট অনেকখানি পড়ার থেকে একদিনে প্রতিটা সাবজেক্টস অল্প অল্প করে পড়াটা বেশি ইফেক্টিভ। তাই, যদি আপনি সামনে কোনো বোর্ড পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাহলে আপনার সিলেবাসের যে কটা সাবজেক্টস আছে তার প্রতিটা রোজ অল্প অল্প করে পড়ার রুটিন তৈরি করুন। কারণ সোমবার হিসাববিজ্ঞান, মঙ্গলবার ম্যাথস এবং বুধবার ফিজিক্স এভাবে পড়ার থেকে রোজ প্রতিটা সাবজেক্ট অল্প অল্প করে পড়াটা বেশি ইফেক্টিভ।
কেন?
কারণ সারাদিন একটাই সাবজেক্ট পড়তে থাকলে প্রচুর পরিমাণে একই ইনফরমেশন একসাথে মুখস্থ করতে গিয়ে সেগুলো গুলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। তাই, সেখানে অল্প অল্প করে আলাদা আলাদা ধরনের সাবজেক্ট পড়লে ইনফরমেশন গুলো সম্পূর্ণ আলাদা আলাদা ধরনের হওয়াই ব্রেনে সেটাকে ধরে রাখতে অনেক সুবিধা হয়।
২০০৮ সালে NICHOLAS CEPEDA এর করা একটা রিচার্জ থেকে এটা জানা গেছে, যে দীর্ঘ দিনের জন্য যদি আপনি মাথায় কিছু ধরে রাখতে চান, তাহলে তার জন্য সেটাকে একটা উপযুক্ত রুটিন মেনটেন করে পর্যায়ক্রমে রিভাইস করা একমাত্র উপায়। এবার ঠিক কতদিন পর পর একটা টপিক রিভিশন দেওয়া উচিৎ, একটা স্ট্যান্ডার্ড রুটিন হিসেবে আপনি এই রুটিন টা ফলো করে রিভিশন দিতে পারেন:
উদাহরণস্বরূপ: প্রথম রিভিউ দিবেন নতুন কোনো কিছু শেখার পরে। দ্বিতীয় রিভিউ দিবেন ৩ দিন পর। তৃতীয় রিভিউ দিবেন ৭ দিন পর। চতুর্থ রিভিউ দিবেন ২১ দিন পর। পঞ্চম রিভিউ দিবেন ৩০ দিন পর। ষষ্ঠ রিভিউ দিবেন ৪৫ দিন পর। সপ্তম রিভিউ দিবেন ৬০ দিন পর।
তো নিজের স্টাডি গুলোকে একটিভনেস বাড়ানোর জন্য আজ থেকেই আপনার এই ৫টি স্মার্ট আইডিয়া ফলো করা উচিৎ।
FILED UNDER :লাইফস্টাইল
Comments are closed.
Comments
MD.Raju says
খুব সুন্দর, গোছানো এবং তথ্য বহুল পোস্ট,ভাইয়া। ছাত্রছাত্রীদের ও অবিভাবকদের উপকারে আসবে বলে মনে করি।ধন্যবাদ।
Kader says
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ!
Rana says
সমস্যা হচ্ছে, এই সবগুলো নিয়ম একসাথে ফলো করা সম্ভব হয় না।
Kader says
ভাই, আপনাকে যদি স্ট্রংলি স্টাডি করতে হয় তাহলে অবশ্যই এই আইডিয়াগুলো ফলো করা উচিত।