নেপাল ভ্রমণ গাইড (৩য় পর্ব)
গত পর্বে আমরা আলোচনা করেছি কিভাবে বিমানে বা সড়কপথে নেপাল কাঠমান্ডু বা থামেলে অবস্থান করবেন এবং প্রথম দিন কিভাবে থাকবেন। আজকের নেপাল ভ্রমণ গাইড সিরিজ পর্বে আলোচনা করব কিভাবে কাঠমান্ডু শহরে সাইটসিয়িং করবেন, নাগরকোট ঘুরা নিয়ে কিছু পরমার্শ আর কাঠমান্ডু থেকে পোখারা যাওয়ার পথে কিভাবে র্যাফটিং করতে পারেন।
সকালে আপনার জন্য দুইটি রাস্তা খোলা।
- কাঠমান্ডু+নাগরকোট সাইটসিয়িং।
- কাঠমান্ডু থেকে পোখারা যাওয়া।
যদি আপনার আজকের সারাদিন কাঠমান্ডু জন্য রিজার্ভ থাকে যেমন আজকে রাতেও থামেল থাকবেন, সাথে কাঠমান্ডু + নাগরকোটা সাইটসিয়িং করবেন তাহলে পোখারা যেতে পারবেন না অথবা যদি মনে করেন আমি সকাল সকাল নাগরকোট থেকে ঘুরে এসে পোখারা উদ্দ্যেশে রাওনা দিবেন তাহলেও পারবেন না। কারণ
সকল বাস একসাথে ৭ থেকে ৭ঃ৩০ মধ্যে পোখারা উদ্দ্যেশে ছেড়ে যায়। যদি পোখারায় গাড়ী রিজার্ভ করে যেতে চান সেইক্ষেত্রে অন্য কথা।
নাগারকোট নিয়ে কিছু কথাঃ
কাঠমান্ডু পূর্ব দিকে ৩২ কিমি দূরে নাগারকোট আর পশ্চিম দিকে ২০৪ কিমি দূরে পোখারা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭ হাজার ফুট উপরে নাগারকোটের অবস্থান। হিমালয়ের ১৩টি পর্বতশৃঙ্গের মধ্যে ৮টি নাগারকোট থেকে দেখা যায় তবে যেহেতু আপনি সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ৭ হাজার ফুট মেঘের উপরে থাকবেন তাই মেঘ বেশি থাকলে নাও দেখতে পারেন আর সূর্যদয়ের দৃশ্য দেখার জন্য নাগারকোট প্রসিদ্ধ। নাগারকোট থেকে কাঠমান্ডু শহরটিও দারুণ ভাবে দেখা যায়। নাগারকোটে যাবেন তারা অবশ্যই গরম কাপড় নিয়ে যাবেন। আর সম্ভব হলে গুগলে নাগারকোটের আবহাওয়া কেমন আছে সেটি দেখে যাবেন। তাহলে কি পরিমাণ গরম কাপড় সঙ্গে নিতে হবে সেটি সম্পর্কে আইডিয়া হবে।
- কাঠমান্ডু থেকে নাগারকোট বাস ভাড়া ২০০ থেকে ৫০০ রূপি। আর রিজার্ভ ট্যাক্সি ভাড়া ২০০০ রূপি (দরদাম করে নিবেন)।
- নাগারকোট এন্ট্রি ফ্রি জনপ্রতি ২০০ টাকা (সার্কভুক্ত দেশের জন্য)।
- সিংগেল রুমের ভাড়া ৫০০-৬০০ এবং ডাবল রুম ৮০০ থেকে ১২০০ মধ্যে পাবেন আর থ্রি স্টার মানের হোটেল ২০০০-২৫০০ রূপি।
নাগারকোট নিয়ে কিছু টিপসঃ
নাগারকোট যাওয়ার প্লান থাকলে সাজেস্ট করি এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি নিউ বাস স্টপ (কাঠমান্ডু) চলে যান। এখান থেকে আপনার পছন্দমত বাস বা ট্যাক্সি নিয়ে সরাসরি নাগারকোটে রাওনা দিন। বিকাল ৪ টা থেকে ৫ টার মধ্যে রাওনা দিলে সন্ধ্যা আগে পৌছাতে পারবেন। নাগারকোট যেতে সময় লাগবে ২ ঘন্টা মত। এতে করে আপনার একদিন সেভ হবে এবং সূর্যদয় উপভোগ করতে পারবেন। আর সকাল ৯-১০ টার মধ্যে নাগারকোট থেকে রাওনা দিয়ে দুপুরের দিকে থামেল এসে পছন্দমত হোটেলে উঠে খাওয়া-দাওয়া করে নিন। আপনি চাইলে দিনের হাফ-ডে কাঠমান্ডু ঘুরে সাইটসিয়িংও করে নিতে পারেন। কাঠমান্ডু সাইটসিয়িং সময় ভালো ভিউ পেতে চাইলে বাসের বাম দিকে সিট বুক করুন। সাইটসিয়িং সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুনঃ নেপালে সাইটসিয়িং এবং বাস ভ্রমণ টিপস।
কাঠমান্ডু থেকে পোখারা বাস ভ্রমণঃ
যদি আপনি নেপালের ত্রিভূবন এয়ারপোর্ট থেকে নাগারকোট চলে যান সেইক্ষেত্রে আপনার জন্য আজ ৩য় দিন, আবার যদি আপনি এয়ারপোর্ট থেকে থামেল আসেন থাহলে আপনার জন্য আজ ২য় দিন। ২য় দিন হোক বা ৩য় দিন হোক এটা বড় কথা না। আজকের দিনে আমাদের কাজ হচ্ছে নেপাল রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে নেপালের রানী নামে খ্যাত নেপালের শহর পোখারা যাওয়া। আজ খুব ভোরে উঠুন কারণ থামেল মেইন পয়েন্ট থেকে নিউ বাস স্টপ হেঁটে যেতে ১০-১৫ মিনিট মত লাগে, আর বিকল্প হোটেল পাশে অনেক কার দাঁড়ানো থাকতে দেখবেন, যারা মোটা অংকের টাকা চেয়ে বসে। যদি হেঁটে যেতে না চান হোটেল ম্যানেজারকে বলে রাখুন ওনি ঠিক করে রাখবে।
কাঠমান্ডু থেকে পশ্চিমে ২০৪ কিমি দূরে পোখারা অবস্থান। সকল বাস ৭ থেকে ৭.৩০ মধ্যে একযোগে পোখারা উদ্দ্যেশে ছেড়ে যায় আর জ্যাম না থাকলে পোখারা পৌছাতে ৩-৪ টা বাজবে। যাত্রাপথে বেশ কয়েকবার বিরতি দিবে নাস্তা, লান্স এবং রিপ্রেমেন্ট জন্য। সর্বশেষ বাস গিয়ে থামবে পোখারা বাস স্টপে।
কাঠমান্ডু থেকে পোখারা যাওয়ার পথে র্যাফটিংঃ
অনেকেই এডভেঞ্চার একটিভিটি সাথে নেপালের ট্যুরিস্ট স্পট ঘুরার জন্য নেপাল গিয়ে থাকে, আবার অল্প সময় নিয়ে যান। তারা একি দিনে কাঠমান্ডু থেকে পোখারা যাত্রা পথে ত্রিশূলি নদীতে প্রায় ২-৩ ঘন্টা মত র্যাফটিং একটিভিটি সেরে নিতে পারেন। বিভিন্ন প্যাকেজ বিভিন্ন সার্ভিসে পাবেন। কাঠমান্ডু থেকে পোখারা বাস ভাড়া, লান্স সহ র্যাফটিং বাবত তারা চার্জ করবে ১২০০ মত যার সব কিছু ব্যবস্থা এজেন্সি করবে।
পোখারা রাত্রি যাপন ও টিপসঃ
কাঠমান্ডু থেকে পোখারা শহর পৌঁছাতে সাধারণত ৭-৮ ঘন্টা লাগে তবে গাড়ী বেধে ভিন্নও হতে পারে। অনেক সময় জ্যাম থাকলে আরও বেশি লাগতে পারে। পোখারা বাসস্টপ থেকে পোখারা শহর কিছুটা দূর আছে। ট্যাক্সি বা কারে ১৫-২০ মিনিট লাগে ভাড়া ৩০০-৪০০ রূপি।
- পোখারা শহরে প্রথমে ফেওয়া লেক সাইডের হোটেল নেওয়ার চেষ্টা করেন, জানালা দিয়ে দারুণ ভিউ পাবেন।
- কাঠমান্ডু তুলনায় কিছুটা কম দামে রুম পাবেন যা ৬০০-৮০০ মধ্যে ভাল ডাবল রুম পাওয়া যায়। আর আপনি চাইলে থ্রি বা ফাইভ স্টার হোটেলেও থাকতে পারেন। আশা করি আগের রাত কাঠমান্ডু হোটেল ঠিক করতে গিয়ে অনেক আইডিয়া পেলেন তাই নতুন করে বলার কিছু দেখছি না।
- যেহেতু সারাদিন জার্নি হলো হোটেল ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিতে পারেন আর বিকাল বা সন্ধ্যা দিকে পোখারা শহরে চারপাশে হেঁটে ঘুরে দেখতে পারেন সাথে বিশেষ করে ফেওয়া লেক সাইডটা।
পোখারা খাওয়া-দাওয়া ব্যাপারেঃ
পোখারাতে মুসলিম হোটেল বা হালাল খাবার বলেতে “পোখারা হালাল ফুড ল্যান্ড” খেতে পারেন পাকিস্থানি একটা হোটেল যদিও দাম একটু বেশি। গুগল ম্যাপ কো-অর্ডিনেট এখানে দিয়ে দিলাম (https://goo.gl/maps/xVNHdda4poz)। দোকানটি মার্কেটের ভিতরে। এখানের খাবার খরচ নিম্নরূপঃ মুরগী/মহিষ, ডাল ও ভাত প্যাকেজ জনপ্রতি ৩০০ রুপি (এক্সট্রা ভাত নিতে পারবেন)। সাজেস্ট করি লেক সাইড রোডে “তাল বিস্ট্রো” (রেস্টুরেন্ট), এক বারে লেকের পানি পাশে ফিল হবে অন্য রকম। পোখরা তে “রাইসবোল” নামে একটা রেস্টুরেন্ট খুব ভাল ফ্রাইড রাইস পাওয়া যায় আর দামও অনেক কম। এখানের খাবার খরচ নিম্নরূপঃ চিকেন ফ্রাইড রাইস ২৬৫ রুপি; চিকেন বিরিয়ানি ৩০০ রুপি।
আগামী পর্বে আলোচনা করব কিভাবে পোখারা শহরের আশেপাশে সাইটসিয়িং করবেন, এডভেঞ্চার একটিভিটি সারাংকোট ঘুরাঘুরি নিয়ে কিছু পরমার্শ এবং এডভেঞ্চার একটিভিটি নিয়ে ধারণা।
অবশ্যই এই পর্ব আপনাদের কেমন লেগেছে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। আর হ্যা, আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকলে জানাবেন।
আমাদের নেপাল ভ্রমণ গাইড সিরিজ পোস্ট এর এটা ৩য় পোস্ট। আগের এবং পরের পোষ্ট পোস্ট এর লিঙ্কঃ
5 Comments
Comments are closed.