মানসিকভাবে শক্তিশালী লোকেরা যে কাজগুলো করেন না! – শেষ পর্ব

চলুন, আজ শেষ পর্বে অ্যামি মরিন এর লেখা- 13 Things Mentally Strong People Don’t Do এই বইটি থেকে আরো কয়েকটি স্মার্ট আইডিয়া দেখে নেওয়া যাক, যা আমাদেরকে মানসিকভাবে শক্তিশালী হতে সাহায্য করবে –

৪. মানসিকভাবে শক্তিশালী লোকেরা- তাদের পাওয়ার ছেড়ে দেন না

আমাদের শরীরে সবথেকে পাওয়ারফুল যদি কিছু থেকে থাকে তো সেটা হলো আমাদের ব্রেইন। আর সেই ব্রেইনকে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী কন্ট্রোল করতে পারাটা আমাদের সবথেকে বড় পাওয়ার। কিন্তু কিছু কিছু পরিস্থিতিতে যেমন যখন কেউ আমাদের রাগিয়ে তোলে বা অপমান করে এমন কিছু করে বা বলে যেটা আমাদের একেবারেই পছন্দ না। তখন আমরা রেগে গিয়ে নিজের ব্রেনের উপর থেকে নিজের কান্ট্রোল হারাতে শুরু করি। আর সেই কন্ট্রোলটা দিয়ে দিই সামনের লোকের হাতে। যার কথা বা কাজ একদমই পছন্দ হচ্ছে না। সে উল্টোপাল্টা বলতে থাকে বা করতে থাকে। আর আমরাও সেই মতো আরও রাগতে থাকি। অর্থাৎ, ইনডাইরেক্টলি আমরা আমাদের সবথেকে বড় পাওয়ারটাকে অন্য কারোর হাতে দিয়ে দিই।

things-that-mentally-strong-people-dont-do

মানসিকভাবে শক্তিশালী লোকেরা এটা কখনো হতে দেন না। পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন, তারা কখনো নিজের ব্রেইনের উপর থেকে নিজের কান্ট্রোল হারিয়ে যেতে দেন না। এর মানে এই না যে তারা কখনো রাগেনই না। লাইফে কিছু পরিস্থিতি এরকম থাকে যেখানে বাইরে রাগ দেখানোটা দরকার। সেখানে তারা অবশ্যই বাইরে রাগ দেখান। কিন্তু ভিতরে তারা কখনো নিজের ব্রেইনের উপর থেকে নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে যেতে দেন না।

 

৫. মানসিকভাবে শক্তিশালী লোকেরা- সবাইকে সন্তুষ্ট করার বিষয়ে চিন্তা করেন না

সবথেকে বড় রোগ- লোকেরা কি বলবে? মানসিকভাবে শক্তিশালী লোকেরা যদি কোনো কাজ মন থেকে করতে চান এবং সেটা যদি তার নিজের এবং তার আশেপাশের লোকেদের ভালোর জন্য হয় তবে তারা কখনো এটা নিয়ে চিন্তা করেন না যে যদি আমি এই কাজটা করি তাহলে লোকে কি ভাববে? একই ভাবে হয়তো কোনো একটা ভুল কাজ আশেপাশের সবাই করছে তাই তাদের সাথে মানিয়ে চলতে বা তাদেরকে ইমপ্রেস বা সন্তুষ্ট করার জন্য মানসিকভাবে শক্তিশালী লোকেরা সেই ভুল কাজটা করতে শুরু করে দেন না। যেমন- ধরুন, একটা গ্রুপে পাঁচজন বন্ধু দাঁড়িয়ে গল্প করছে। তার মধ্যে চারজনই সিগারেট টানতে টানতে গল্প করছে। এবার বাকি যে একজন সে এমনিতে সিগারেট খায় না। এবার সে যদি মানসিকভাবে দুর্বল হয় তাহলে সে কি করবে বাকি চারজনের সাথে মানিয়ে নিতে অর্থাৎ তাদের সন্তুষ্ট করার জন্য নিজেও এক’দু টান দিতে শুরু করবে। কারণ, না হলে যদি সে বাকিদের মধ্যে আনস্মার্ট বা ব্যাকডেটেড দেখতে লাগে। কিন্তু সে যদি মানসিকভাবে শক্তিশালী হয় তবে সে কখনোই বাকি চার জনকে সন্তুষ্ট করার জন্য সিগারেটটা হাতে তুলে নেবে না। কারণ, মানসিকভাবে শক্তিশালী লোকেদের অন্যদের স্বীকৃতির দরকার পড়ে না।

 

৬. মানসিকভাবে শক্তিশালী লোকেরা- ঝুঁকি নিতে ভয় পান না

সাবধান থাকা ভালো কিন্তু অতিরিক্ত অবাঞ্ছিত সাবধানতা আমাদের জীবনে এগিয়ে চলার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় কোনো কিছুতে ইমোশনালি ভয় পেয়ে, আমরা লজিককে ছেড়ে দিই। যেমন- অনেকে অ্যারোপ্লেনে চড়তে ভয় পান। এটা ভেবে- যদি প্লেন ক্র‍্যাশ হয়ে যায়। কিন্তু আসলে, অ্যারোপ্লেনের থেকে গাড়িতে অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। গাড়ির ক্ষেত্রে অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা ৫ হাজার ভাগের ১ ভাগ। সেখানে প্লেন ক্রাশ হয়ে মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা ১১০ লক্ষ ভাগের ১ ভাগ। এ রকমই জীবনের অনেক ক্ষেত্রে মানসিকভাবে দুর্বল লোকেরা লজিককে ছেড়ে দিয়ে ইল্লজিক্যাল সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেন। কিন্তু মানসিকভাবে শক্তিশালী লোকেরা ক্যালকুলেটেড রিস্ক নিতে কখনো ভয় করেন না। যদি তারা ক্যালকুলেশন করে বোঝেন যে রিস্কটা তাদের ক্ষমতার মধ্যেই আছে, মানে- রিস্কটা নিলে যে সবচেয়ে খারাপ সম্ভাব্য ফলাফল হতে পারে সেটা থেকে তারা নিজেকে রিকভার করে তুলে আনতে পারবেন, আর রিস্কটার যেটা সেরা সম্ভাব্য ফলাফল সেটার জন্য এইটুকু রিস্ক নেওয়াই যায় তাহলে তারা সেই রিস্কটা নেওয়া থেকে কখনো পিছপা হন না।

 

৭. মানসিকভাবে শক্তিশালী লোকেরা- অতীত মোটেও আঁকড়ে ধরে রাখেন না

যদি আপনি অতীতের যেকোনো স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে শুরু করেন, তবে আপনি দুঃখী হতে বাধ্য। অনেকে মনে করেন- শুধু অতীতের বাজে কোনো স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরলেই আমরা দুঃখী হয়ে পড়ি। কিন্তু আসলে সত্যিটা হলো শুধু বাজে কোনো স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরলেই দুঃখী হইনা। অতীতের ভালো কোনো স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরলেও আমরা অ্যাকচুয়ালি দুঃখী হতে শুরু করি। যেমন ধরুন, আপনি এখন বসে ভাবছেন- ছোটবেলায় স্কুলে বন্ধুদের সাথে কত মজা হতো। এটা অতীতের ভালো স্মৃতি। কিন্তু সমস্যাটা হলো এটা অতীত। সেই সুখের দিনগুলো এখন আর আপনার কাছে নেই। এখন আপনাকে রোজ অফিসে রোবটের মতো শুধু কাজ করে যেতে হয়। তো ছোটবেলায় স্কুলের কথা মনে করে আপনার মনে হবে আপনি খুশি অনুভব করছেন। কিন্তু অ্যাকচুয়ালি আপনি সেই দিনগুলোকে মিস করছেন। মানে দুঃখী হচ্ছেন। মানসিকভাবে শক্তিশালী লোকেরা কখনো অতীতের স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা করেন না। তাই সেটা ভালো স্মৃতি হোক কি খারাপ। তারা সবসময় অ্যাকসেপ্ট, লার্ন এন্ড মুভ-অন এই ৩টি স্টেপ ফলো করে অতীত থেকে নিজেকে বার করে বর্তমানে নিয়ে আসেন।

 

৮. মানসিকভাবে শক্তিশালী লোকেরা- বারবার একই ভুল করেন না

অনেকেই একই ভুল বারবার করে। কিন্তু মানসিকভাবে শক্তিশালী লোকেরা এমন হয় না। তারা একবার যদি কোনো ভুল করে, তবে সেটা থেকে লেসনটা শিখে পরের বারে সেই একই ভুলটাকে রিপিট হতে দেন না। এর জন্য কোনো একটা ভুল একবার হয়ে যাওয়ার পর সেটার পোস্টমর্টেম করতে হয়। যে আমি ঠিক কি ভুল করেছিলাম আর এরপরের বার এই একই সিচুয়েশনটা আসলে আমি কিভাবে নিজের সেই ভুলটাকে শুধরে নেবো বা রিপিট হওয়া থেকে আটকাবো। তার একটা প্ল্যান তৈরি করে তারা সেখান থেকে মুভ-অন করে যান। এই যে ভুলটার পোস্টমর্টেম করা, সেটাকে নেক্সট-বার যাতে রিপিট না হয় তার জন্য প্ল্যান তৈরি করা- এগুলো করতে অনেকটা মেন্টাল অ্যাপোর্টের দরকার পড়ে। যেটা একমাত্র মানসিকভাবে শক্তিশালী লোকেরাই যোগাতে পারে। মানসিকভাবে দুর্বল লোকেরা এসব কিছুই করেন না। তারা ভুল হওয়ার পর আফসোস করেন এবং আবার সেই একই ভুল করেন এবং আবার আফসোস করেন যে দ্বিতীয়বার সেই একই ভুলটা কি করে করলেন এবং সব থেকে মজার ব্যাপার আবারও সেই একই ভুল করে তৃতীয়বার আফসোস করেন এবং এবার নিজের ভাগ্যের উপর সম্পূর্ণ দোষটা চাপিয়ে দেন।

 

ফিজিক্যালি ফিট এবং স্ট্রং থাকার জন্য যেমন শুধু এক্সারসাইজ করা যথেষ্ট না, তার সাথে জাঙ্কফুড খাওয়া বন্ধ করাটাও যেমন সমানভাবে জরুরী, ঠিক তেমনই মেন্টালি ফিট এবং স্ট্রং থাকার জন্য অল্প কয়েকটা গুড হ্যাবিট থাকা যথেষ্ট না, তার সাথে ব্যাড হ্যাবিটগুলোকেও বদলে ফেলাটা সমানভাবে জরুরী। আসুন আমরা সকলেই এই অভ্যাসগুলো থেকে বেচেঁ থাকতে চেষ্টা করি এবং নিজেদেরকে মানসিক ভাবে আরো শক্তিশালী রুপে গড়ে তুলি।

আজ এ পর্যন্তই। ভাল থাকুন, সুস্থ্য থাকুন এই কামনায় এখানেই শেষ করছি।

Similar Posts