Abdul Kader / নভেম্বর 18, 2020
আপনি কি জানেন পৃথিবীতে কত সংখ্যক মানুষের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার কারণে চশমা অথবা কন্টাক্ট লেন্সের ব্যবহার করতে হয়? এর উত্তরটি হলো প্রায় ৭৫ ভাগ মানুষই কোনো না কোনো সময়ে এসে এই সমস্যার কারণে চশমা অথবা কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করে থাকে। আর দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে সঠিকভাবে চোখের যত্ন না নেওয়া। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন চোখের সঠিক খাবার, হোম রেমেডি, এবং চোখের এক্সারসাইজ। মাত্র দুই সপ্তাহের ভেতরেই দূর করতে পারবেন আপনার চোখের ক্লান্তি। তাহলে চলুন শুরু করা যাক-
প্রথমেই আপনার চোখকে পর্যাপ্ত খাবার দিন। কারণ আমাদের প্রত্যেকটি অঙ্গের খাবারের প্রয়োজন হয়। ঠিক তেমনি চোখেরও সঠিকভাবে কাজ করার জন্য নির্দিষ্ট কিছু খাবারের পুষ্টিগুণ দরকার হয়। আপনার চোখের জন্য যেসব খাবার দরকারি সেসব খাবার আপনার পুরো শরীরের জন্যও দরকারি।
লাল আঙ্গুর এবং কালো আঙ্গুরে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি প্রোপার্টিজ। যা চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। গাঢ় সবুজ শাকসবজি, মিষ্টি আলু, গাজর, মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদিতে আছে বেটা ক্যারোটিন। যা আপনার চোখকে সূর্যের ক্ষতিকর অতি বেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও ভিটামিন এ সি এবং ই সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- এসটোবেরি, ডিম, সামুদ্রিক মাছ, কমলালেবু, বাদাম ইত্যাদি খাবার আপনার চোখের রাতের ভিশন, দূর দৃষ্টি এবং কাছের বস্তু স্পষ্ট দেখার ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এই ধরনের খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
এবার একটি হোম রেমেডি সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
অ্যালোভেরার সাথে তো সবাই কমবেশি পরিচিত। এটিকে বলা হয় জাদুকরী গাছ। প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে এটিকে নানা কাজে ব্যবহার করা হয়। চোখের পাওয়ার বৃদ্ধিতেও এর ব্যবহার হয়ে থাকে। এটি হোয়াইট ব্লাড সেল উৎপাদনে এবং টিস্যু রিকভারে ব্যবহার হয়ে থাকে। এছাড়াও অ্যালোভেরা রক্তের সুগার লেভেলকে নামিয়ে রাখে। যা চোখের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথমে বাছাই করে ফ্রেশ অ্যালোভেরা নিয়ে তার ভেতরের জেলগুলো বের করে নিন। তরল জেলে পরিণত করার জন্য এটিকে ব্লেন্ডার করে নিতে পারেন। এভাবে ১০০ মিলিমিটার পরিমাণ অ্যালোভেরা জেল নিয়ে ফ্রিজে এক সপ্তাহ ধরে রেখে দিন। এরপর এর সাথে ৩০০ মিলিমিটার মধু এবং চারটি লেবুর রস একসাথে মিক্স করে নিন। এবার রেমেডিটির এক চামচ পরিমাণ খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে করে খাবেন আর এভাবে তিন বেলা খাবেন। আর এভাবে ১ মাস চালিয়ে যাবেন। আপনি চাইলে ২ সপ্তাহ ব্রেক নিয়ে আবারো ১ মাস চালিয়ে যেতে পারেন। এর ফলাফলটা বিস্ময়কর! বিশেষ করে যাদের দৃষ্টিশক্তি দুর্বল তারা খু্বই উপকৃত হবেন।
এবার আসুন কয়েকটা কার্যকর চোখের এক্সারসাইজ সম্পর্কে জেনে নিই। আমাদের শরীরের মতো চোখেরও এক্সারসাইজ আছে। এই এক্সারসাইজ নিয়মিত করলে চোখের ক্লান্তি ভাব এবং দৃষ্টিশক্তি দুটোরই উপকার পাওয়া যায়।
প্রথমেই আছে আই রোলিং (EYE ROLLING)
আপনি বসা অথবা দাঁড়ানো যে অবস্থাতেই আছেন, শুধুমাত্র একটু রিলাক্স করুন নিজেকে। এরপর চোখের মনিকে বাম দিকে নিয়ে যান। তারপর ধীরে ধীরে উপরের দিকে নিন। এভাবে ডানদিকে এবং নিচে। সবশেষে আবার বাম দিকে। এভাবে ধীরে ধীরে ঘোরাতে থাকুন। এভাবে ঘড়ির কাঁটার মতো পাঁচ বার করুন। তারপর বিপরীত দিকে আরো পাঁচ বার করুন। এই সেটটি তিনবার করে করুন। এরপর কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ রাখুন।
এরপরে আছে আই ফ্লেক্সিং (EYE FLEXING)
এটি আপনার চোখের মাসেলকে সুরক্ষিত রাখবে। প্রথমে চোখের মনিকে যতটা উপরে সম্ভব নিয়ে যান। এবার একইভাবে নিচে। এভাবে ১০ বার করুন। তারপর ডানে ও বামে ১০ বার করুন। এই সেটটি মোট ৪ বার করবেন।
তিন নাম্বারে আছে ব্লিনকিং (BLINKING)
যারা দীর্ঘ সময় কম্পিউটারের সামনে বসে থাকেন অথবা মোবাইল ব্যবহার করেন এটি তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক্সারসাইজ। এটি আপনার চোখের ভিতর রক্ত সঞ্চালনের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করবে। যখনই চোখের ক্লান্তি ভাব চলে আসবে তখন এক মিনিট ধরে চোখের পলক ফেলতে থাকুন। যেকোনো কাজে অমনোযোগী হয়ে গেলেও এই এক্সারসাইজটি করতে পারেন। এতে আবার আপনার মনোযোগ ফিরে আসবে।
চোখ একটি অমূল্য সম্পদ। চোখ খুলেই আমরা দিন শুরু করি এবং চোখ বন্ধ করে ঘুমের জগতে চলে যাই। চোখের যত্ন নেওয়া আমাদের খুবই প্রয়োজন। চোখের সঠিক খাবার, হোম রেমেডি এবং চোখের এক্সারসাইজ করে, আজ এখন থেকেই চোখের যত্ন নেওয়া শুরু করে দিন।
References:
FILED UNDER :লাইফস্টাইল , স্বাস্থ্য কথন
সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ