মাহবুবা হক / জুন 22, 2020
প্রায় প্রতিদিন রাতে ঘুম না হলে সকালে চোখ খোলার পর থেকে ক্লান্তি ভর করে শরীরে। সারাদিন ঝিমায় শরীর। আর দ্রুত ওজন বেড়ে যাবার জন্য এটি অনেক বড় একটি কারণ। অনেকে একে ইনসমনিয়া বলে থাকেন। আসলে ঘুম ঠিকমতো না হলে তাকেই আমরা অনিদ্রা বা ইনসমনিয়া বলি। ল্যাটিন শব্দ ‘সমনাস’-এর অর্থ ‘স্লিপ’ বা ঘুম। আর ‘ইন’-এর অর্থ ‘নট’ বা না। এই দুই মিলিয়ে ‘ইনসমনিয়া’ শব্দটি এসেছে।
চলুন জেনে নেই কি সেই কারণ যা রুপকথার দত্যের মতো আপনার ঘুম কেড়ে নিচ্ছে প্রতিদিন।
রুমে যেন বাতাস চলাচল করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখুন।গুমোট করে রাখবেন না।
তাপমাত্রা সহনীয় রাখুন।
ওয়ার্ক আউট আমাদের নার্ভাস সিস্টেমকে উজ্জীবিত করে তুলে। তাই ব্যায়াম করার পর ঘুমানো কঠিন। ঘুমানোর অন্তত দুই ঘন্টা আগে যা ব্যায়াম করে নিবেন।
প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস করা উচিৎ রাত ১০টা থেকে ১ টার মধ্যে। আপনি যদি আগেই অতিরিক্ত ঘুমিয়ে নেন বিকাল কিংবা দুপুরে তাহলে রাতে ঘুম আসা সহজ হবেনা।
খুব ছোট কোন আলোর উৎস আপনার কাঙ্ক্ষিত ঘুম নষ্ট করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। হতে পারে তা সুইচবোর্ড কিংবা কোন ইলেক্ট্রিক যন্ত্র থেকে আসা আলো। ঘুমানোর সময় সব আলোর উৎস বন্ধ করুন অথবা স্লিপিং মাস্ক পরে ঘুমান।
কোন ধরনের শব্দ তা হতে পারে রাস্তার কোন গাড়ির হর্ন কিংবা প্রতিবেশীর বাড়িতে চিৎকার, চেঁচামেচি আপনার শরীরকে রিলাক্স হতে বাধা দেয়। কানে ইয়ারপ্লাগ দিয়ে ঘুমাতে পারেন যদি এমনটা হবার চান্স থাকে।
অথবা হাল্কা মিউজিক চালিয়ে রাখতে পারেন যাকে “হোয়াইট নয়েজ” বলা হয়। এটা বাইরের বিরক্তিকর শব্দ থেকে আপনাকে মুক্তি দিবে আর আপনি হারিয়ে যাবেন সুরের অতল গভীরে।
আমাদের অনেকেই তাদের বিছানাকে কাজ করার জায়গায় পরিনত করেন। যা আমদের ঘুমের মানকে কমিয়ে দেয়। বিছানা শুধুমাত্র ঘুমের জন্যই বরাদ্ধ রাখা উচিৎ। । ক্লান্ত শ্রান্ত আপনি যাতে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়েই ঘুমের রাজ্যে চলে যেতে পারেন। আপনার কাজকে বেড রুমের বাইরে ছেঁড়ে আসুন।
এটা কোন সিক্রেট না যে ক্যাফেইন আপনাকে সহজে ঘুমিয়ে পড়তে বাধা দেয়। ভুলে যাবেননা ক্যাফেইন শুধুমাত্র কফিতেই থাকেনা । চা, চকলেট বা অন্যান্য খাবারেও থাকতে পারে। তাই দুপুরের পর থেকে এইসব খাওয়া কমিয়ে আনুন।
ঘুমাতে যান অনেকে ঘুমানোর পুরোপুরি ইচ্ছা না নিয়ে। ভাবেন নিজ থেকে ঘুম আসবে। কিন্তু বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তা আসেনা। সমাধান হলো বিছানায় যাবার ২০ মিনিটের ভিতর যদি আপনার ঘুম না আসে উঠে পড়ুন।
এদিক ওদিক মোচড়ামুচড়ি করবেননা। উঠে একটা বই পড়ুন, অবশ্যই ই-বুক পড়বেন না। কারণ তা পরিস্থিতি আরও খারাপ করে দিবে। অথবা রিলাক্সিং কিছু করুন যা আপনার মনে শান্তি এনে দিবে। নামাজ পরতে পারেন।
এলকোহল পান করবেন না। যদিও এলকোহল আপনাকে দ্রুত ঘুম পাড়িয়ে দেয় কিন্তু এটি ঘুমের মধ্যে রেপিড আই মুভমেন্ট ঘটায়। তাই আপনি যখন ঘুম থেকে জাগেন ফ্রেশ লাগার পরিবর্তে ক্লান্ত থাকেন।
আমরা আমাদের ব্রেইন কে প্রতিদিনের হাজারো সমস্যা থেকে নিস্তার দেইনা ঘুমানোর আগে। বিছানায় শুয়ে শুয়েও ব্রেইন কাজ করতে থাকে নানান জটিলতা নিয়ে। যা ভাল ঘুমের সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দেয়।
তাই নিজেকে সরিয়ে আনুন দৈনন্দিন এসব চিন্তা থেকে ঘুমানোর আগে। অন্যকিছু করুন যা আপনার পুরো মনোযোগ নিয়ে নেয়। যেমন একই শব্দ দিয়ে শুরু এমন দেশের নাম মনে করা অথবা মনে মনে ভেড়া গুনুন।
আপনার দেহ ঘড়িকে একটা ছন্দে নিয়ে আসুন। শুধুমাত্র অভ্যাসের কারণে আপনি একটা ভালো ঘুম থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। যার ফলে পরদিন সকালেও আপনার ঘুম ঘুম ভাব থেকে যায়। নিজের শরীরকে ট্রেইন করুন নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট ব্যাপারে রেসপন্স করতে। ঘুমানোর আগে হাল্কা উষ্ণ পানিতে গোসল করুন। অবশ্যই গরম পানিতে না। হিতে বিপরীত হতে পারে।
আপনি কোন পজিশনে ঘুমান তা আপনার ঘুম হবার পরিমান নির্ধারণ করে। আপনি একা ঘুমান বা পার্টনারের সাথে, আপনার শরীর যদি স্ট্রেসে থাকে ভালো ঘুম হবেনা।এমন একটা পজিশনে ঘুমান জেটায় আপনি সবচেয়ে বেশী কমফোর্টেবল। এবং ঘুম আসার আগ পর্যন্ত তা পরিবর্তন না করার চেষ্টা করবেন।
FILED UNDER :পাঁচ মিশালী , লাইফস্টাইল , স্বাস্থ্য কথন
সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ