এই ৫টি রুটিন ফলো করে- সকালটাকে পারফেক্টভাবে স্টার্ট দিন!

প্রতিদিন সকালে যখন অ্যালার্মের আওয়াজটা বেজে ওঠে তখন রোজ আমাদের একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। অ্যালার্মটাকে স্নোজ করে বিছানার সেই কম্ফোর্ট-জোনেই আরো কিছুক্ষণ কাটাবো নাকি নিজের সাথে লড়াই করে আনকম্ফোর্টেবল সেই জীবন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বো। তাই আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ লোকের কাছেই দিনের মধ্যে সবথেকে কষ্টের সময় হয়ে দাঁড়িয়েছে সকাল বেলায় ঘুম থেকে ওঠার সময়টা। তো কিভাবে প্রতিদিন সকালের এই কষ্টের আনকম্ফোর্টেবল সিচুয়েশনটাকে কম্ফোর্টেবল সিচুয়েশনে বদলে ফেলে এই জীবন সমস্যার সমাধান করা সম্ভব? সেটাই আজ আপনাদের সঙ্গে Jordan Gross এর লেখা Getting COMFY  বইটি থেকে শেয়ার করবো। এই বইতে রাইটার আমাদের সাথে একটা ফাইভ স্টেপ সিম্পল মর্নিং রুটিন শেয়ার করেছেন। যেটা ফলো করলেই- আপনিও নিজের সকালটাকে কম্ফি করে তুলতে পারবেন। তো চলুন দেরি না করে দেখে নিই- কি সেই ফাইভ স্টেপ ‘C O M F Y’ মর্নিং রুটিন।

5-morning-habits-to-start-the-day-in-perfect-way

১ম স্টেপ- ‘C’ স্ট্যান্ড ফর ‘CALM’

কোনো ইন্টারভিউ , কোনো এক্সাম বা কোনো রেইস এরকম স্ট্রেসফুল কোনো অ্যাক্টিভিটি করার আগে নিজেকে CALM এবং COOL রাখাটা যে অত্যন্ত জরুরী সেটা আমরা সবাই জানি। একইভাবে, সারাদিনে আপনি যে জীবন যুদ্ধে নামতে চলেছেন সেটাতে নিজেকে কম্ফোর্টেবল ফিল করানোর জন্য যাতে সেটাকে আপনি সঠিকভাবে হ্যান্ডেল করতে পারেন, তার জন্য সকালে উঠে আপনার প্রথম কাজ হলো কোনো CALMING অ্যাক্টিভিটি করা। যাতে আপনার মন শান্ত হয়ে যায়। সেটা নামাজ, মেডিটেশন, ইয়োগা বা চুপচাপ ব্যালকনিতে বা ছাঁদে দাঁড়িয়ে ৫ মিনিটের জন্য প্রকৃতির সৌন্দর্যটাকে উপভোগ করাও হতে পারে। এগুলোর মধ্যে- কোন অ্যাক্টিভিটিটা আপনার জন্য বেস্ট সেটা একমাত্র আপনিই ‘trial and error’ পদ্ধতির মাধ্যমে টেস্ট করে ডিসাইড করতে পারবেন। অথবা রোজ একটাই জিনিস করার বদলে সপ্তাহে সাতদিন আপনি সাত রকমের অ্যাক্টিভিটি করতে পারেন। এতে রুটিন ফলো করাও হবে আর আপনার কখনও একঘেয়েমিও লাগবেনা।

২য় স্টেপ- ‘O’ স্ট্যান্ড ফর ‘OPENNESS’

প্রতিদিন না জানি আমরা কত দুঃখ, ভয়, লজ্জা, অভিমান নিজের মনের মধ্যে চেপে রেখে দিই। শরীরটাকে সুস্থ রাখতে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আমাদের শরীরের বর্জ্য পদার্থগুলোকে যেমন আমরা বাথরুমে ঢুকে শরীর থেকে বের করে দিই, তেমনি মনটাকে সুস্থ রাখতে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মনের বর্জ্য পদার্থগুলোকেও মন থেকে বাইরে বের করে দেওয়াটা সমানভাবে জরুরী। আর তার জন্য নিজের মনটাকে আগে ওপেন করা দরকার। নিজের মনটাকে আপনি দু’ভাবে ওপেন করতে পারবেন- হয় নিজের সাথে নিজে কথা বলে যেমন- ধরুন, ডায়েরি লিখে অথবা অন্য কারো সাথে কথা বলে।

কাল হয়তো কারোর কোনো ব্যবহারে আপনি দুঃখ পেয়েছিলেন কিন্তু সেটা মনের ভিতরে চেপে রেখে দিয়েছিলেন। তো আজকে সকালে উঠে সেটাকে বের করে দেওয়াটা অত্যন্ত দরকার। আপনি নিজের সাথে নিজে কথা বলে সেই মানুষটাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। অথবা, তাকে একটা ছোট্ট টেক্সট করে নিজের খারাপ লাগাটা বলে দিয়ে বিষয়টাকে মন থেকে বাইরে বের করে দিতে পারেন। অথবা হয়তো আজ দুপুরে আপনার ইন্টারভিউ রয়েছে আপনি খুব নার্ভাস ফিল করছেন তো সেক্ষেত্রে কাছের কারোর কাছে নিজের নার্ভাসনেসের ব্যাপারে ওপেনলি কথা বলে- সেটাকে আপনি মন থেকে বাইরে বের করে দিতে পারেন। অন্যের কাছে নিজে থেকে সাহায্য চাওয়াটা কোনো দূর্বলতা প্রকাশ না বরং সেটা এক ধরনের শক্তির প্রদর্শন। কারণ, অন্যের কাছে সাহায্য চেয়ে আপনি আপনার দূর্বলতাটাকে ওপেনলি অন্যের কাছে স্বীকার করার সাহস দেখাচ্ছেন। নিজের দূর্বলতাগুলোকে ওপেনলি স্বীকার করার সাহস সবার মধ্যে থাকে না।

৩য় স্টেপ- ‘M’ স্টান্ড ফর ‘MOVEMENT’

পার্সোনাল ডেভেলপমেন্টের উপর প্রতিটা বইতে যদি একটা কোনো কমন এডভাইস থেকে থাকে তাহলে সেটা হলো- রেগুলার কিছু না কিছু এক্সারসাইজ করা। কারণ, এক্সারসাইজ জিনিসটাই এরকম। ৫ মিনিটের জন্য ওয়ার্ক বা জগিং অথবা কয়েকটা স্যাম্পল ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ যেমন- পুশ-আপ, সিট-আপ এইটুকু রেগুলার করলেই সেটা আপনাকে সারাদিনের ধকল সামলানোর জন্য অনেকখানি প্রস্তুত করে তুলবে।

৪র্থ স্টেপ- ‘F’ স্ট্যান্ড ফর ‘FUNNY’

কথায় আছে, ‘হাসি সর্বোৎকৃষ্ট ঔষধ’ কিন্তু জীবনের থাপ্পর খেতে খেতে আস্তে আস্তে আমরা মন খুলে হাসতেও ভুলে যাই। জীবনের কঠিন থেকে কঠিন সময়কেও সহজ করে দিতে পারে ছোট্ট একটা হাসি। তাই জীবন যুদ্ধে নামার আগে সকালে উঠে আয়নায় প্রথমবার যখন আপনি নিজের মুখটাকে দেখবেন, তখন আপনার কাজ হলো- নিজেকে দেখে নিজে একটা স্মাইল করা এবং সবার সাথেই যখন দিনের মধ্যে প্রথমবার দেখা হবে তাদেরকে দেখেও একটা স্মাইল পাস করা। এই ছোট্ট একটা কাজ অন্যের সাথে এমনকি আপনার নিজের সাথেও নিজের সম্পর্ককে বহুগুণে ভালো করে তুলবে। আমাদের মুখের হাসির যে রহস্যময় একটা পজিটিভ শক্তি রয়েছে, সে ব্যাপারে আপনিও নিশ্চয়ই একমত হবেন। তাই সেই শক্তিটাকে কাজে লাগান। সকালে উঠে সবার আগে নিজেকে এবং তারপর অন্যদেরকেও চেষ্টা করুন- স্মাইল করানোর।

৫ম স্টেপ- ‘Y’ স্ট্যান্ড ফর ‘YOU’

আপনার জীবনে কি এরকম কোনো কাজ আছে যেটা আপনি মন থেকে করতে চান কিন্তু সময়ের অভাবে করতে পারছেন না। তাহলে আপনার জন্য সুখবর আছে। কারণ, প্রতিদিন সকালে অ্যালার্মের আওয়াজটা শুনে ঘুম থেকে ওঠার সময়, নিজের সাথে নিজেকে যে লড়াই করে আপনাকে উঠতে হয় সেই লড়াইটা আপনাকে আর করতে হবে না। আপনার লাইফে সব থেকে প্রিয় কাজ যেটা সেটা কোনো খেলা, ছবি আঁকা, রান্না করা, বা গার্ডেনিং করার মতো কোনো খোশখেয়াল হোক, সেই কাজটাকে আপনি সকালে উঠে, দিনের প্রথম কাজ হিসেবে- একটা ফিক্সট টাইম লিমিট দিয়ে সেট করে দিন। উদাহরণস্বরূপ- আপনার জন্য সেই কাজটা হলো ছবি আঁকা। এবার আপনি টাইম সেট করে দিন- সকাল ৭ টা থেকে ৮ টা। অর্থাৎ, সারাদিনে শুধুমাত্র সকাল ৭ টা থেকে ৮ টা- এই সময়টাতেই আপনি ছবি আঁকবেন। অন্য আর কোনো সময় না। তাই যাতে আপনার প্রিয় কাজটা আজকে মিস না হয়ে যায়, সেই জন্য আপনার মনই আপনাকে হয়তো অ্যালার্ম বাজার ৫ মিনিট আগেই জাগিয়ে দেবে। এভাবে যে সকাল বেলাটা আপনার কাছে দিনের মধ্যে সবথেকে কষ্টের সময় হয়ে উঠেছে, সেটাকে আপনি চাইলে দিনের মধ্যে সবথেকে আনন্দের সময়ে বদলে ফেলতে পারেন।

 

সকালটাকে পারফেক্টভাবে স্টার্ট করতে যে কাজগুলো করতে হবে তা এক নজরে দেখে নেওয়া যাক-

  • সকালে অ্যালার্মের আওয়াজটা বাজলো। আপনি উঠে অ্যালার্মটাকে বন্ধ করে, সকালে প্রাতঃকর্মগুলো সেরে, সবার প্রথমে নামাজ, অথবা ৫ মিনিটের জন্য মেডিটেশন, ইয়োগা, ব্যালকনি বা ছাঁদে দাঁড়িয়ে একদম চুপচাপ হয়ে- প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করলেন।
  • তারপর- একটা ডাইরি হাতে নিয়ে, বা কোনো প্রিয়জনের সাথে কথা বলে মনটাকে ওপেন করে- মনের ভিতর থেকে সমস্ত বর্জ্য পদার্থগুলোকে বের করে দিলেন।
  • এরপর- ৫ মিনিটের জন্য হাঁটতে বেরিয়ে পড়লেন অথবা, ঘরেই কয়েকটা সিম্পল ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ করে নিলেন।
  • এক্সারসাইজ করে ওঠে যখন বেসিনে হাতে মুখে পানি দিতে গেলেন তখন আয়নায় নিজের মুখটা দেখে একটা ছোট্ট স্মাইল করলেন এবং কোনো জোকস বা হাসির কিছু বলে অন্যদেরকেও তাদের দিনটা হাসির সাথে শুরু করতে সাহায্য করলেন।
  • এবং ফাইনালি, আপনার সবথেকে প্রিয় কাজ- যেটার জন্য আপনি টাইম ফিক্সড করে রেখেছেন, সেটা করতে বসে পড়লেন। এভাবে- আপনি আপনার দিনটাকে একটা পারফেক্ট স্টার্ট দিলেন।

Similar Posts