চুল সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যার সমাধান – ঘরোয়া পদ্ধতিতে!

(লেখা কপি করার কারণে এই লেখক কে বাংলা ভাইব থেকে ব্যান করা হয়েছে। আর এই লেখার মূল সোর্স এই ভিডিও (https://www.youtube.com/watch?v=OKctsv6S84I&t=123s)। আমাদের অগোচরে প্লাগারাইজড কন্টেন্ট সাইটে পাবলিশ হয়ে যাওয়াতে আমরা অডিয়েন্সের কাছে আন্তরিক ভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।)

বর্তমানে আমাদের সবার চুলেই কম-বেশি নানা রকমের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বেশিরভাগেরই খুব তাড়াতাড়ি চুল উঠে যাচ্ছে এবং খুব অল্প বয়সে টাক হয়ে যাচ্ছে। আবার কারোর অল্প বয়সেই চুল পেঁকে যাচ্ছে। তো আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে চুলের এই সমস্যাগুলোর কিছু ঘরোয়া সমাধান আপনার সঙ্গে শেয়ার করবো, যাতে আপনি খুব সহজেই কম খরচে সেগুলো ঘরে বানিয়ে ইউজ করতে পারেন। তো চলুন শুরু করা যাক-

effective-home-remedies-for-common-hair-pr

প্রায় সমস্ত হেয়ার প্রবলেমের মূল উৎস হলো ড্যানড্রাফ বা খুশকি।

ড্যানড্রাফ কমানোর জন্য সব থেকে বেস্ট রেমেডি হলো- তুলসী পাতা আর নিমপাতা

 

আপনি তুলসী পাতা আর নিমপাতা নিয়ে সেগুলোকে ভালো করে ধুয়ে নিন। এরপর সেগুলোতে পানিতে দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিন। তারপর সেটা ঠান্ডা হওয়ার জন্য কিছুক্ষণ রেখে দিন। এরপর ঠাণ্ডা হয়ে গেলে ভালো করে স্ক্যাল্পে সারা মাথায় নিমপাতা আর তুলসী পাতার পানিটা কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখুন। তারপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এটা আপনাকে খুশকির হাত থেকে বাঁচতে সব থেকে বেশি সাহায্য করবে। আপনি চাইলে শুধু নিমপাতা বাটা বা তুলসী পাতা বাটা স্ক্যাল্পে চুলের গোড়ায় লাগাতে পারেন।

 

এরপর হলো- নিয়মিত তেল দেওয়া

 

তবে বেশি তেল দেওয়া খুশকির জন্য ভালো না। তাই সব সময় শ্যাম্পু করার ঠিক আগের দিন রাতে বা শ্যাম্পু করার তিন-চার ঘণ্টা আগে তেল দিন। ছেলে মেয়ে সবার ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য। শ্যাম্পু করার আগের দিন রাতে তেল দিলে সব থেকে বেশি ভালো হয়। তাছাড়া আর কখনো তেল দেবেন না। তাই সপ্তাহে দুই-তিন দিন শ্যাম্পু করার ঠিক আগের দিন রাতে শুধু তেল দিন।

তেল হলো চুলের খাদ্য। তাই একদম তেল না দেওয়াটা যেমন ভালো না, ঠিক তেমনি বেশি তেল দেওয়াটাও ভালো না। তেল না দেওয়াতেই চুলের আগা ফেটে যায় যেগুলোকে স্পিলিটেন্স বলা হয়। আর কখনোই চুলে তেল দিয়ে বাইরে যাবেন না। রাস্তাঘাটে ধুলোবালি চুলে ঢুকতে থাকে আর তেল থাকায় সেগুলো চুলে আটকে যায়। ফলে, চুল নোংরা হয় আর তারপর চুল আচঁড়ালে অনেক চুল উঠতে থাকে।

 

আমাদের এরপরের রেমিডি হলো- মুলতানি মাটি হেয়ার মাস্ক

 

এককাপ টক দই নিয়ে তাতে দু’চামচ আমলকির পাউডার বা পাউডার না হলে আমলা তেল আর দু’তিন চামচ মুলতানি মাটি আর আধা পাতিলেবু নিয়ে তার রস দিয়ে ভালো করে মিক্স করে পেস্ট বানিয়ে নিন। এই প্যাকটাকে ব্যবহার করার আগে চুলের স্ক্যাল্পে ভালো করে তেল দিন। তারপর এই মাস্কটা মাখুন। পুরো চুলে, চুলের গোড়ায়, চুলের লেন্থ আর চুলের আগায় সব জায়গায় ভালো করে লাগান। আর লাগিয়ে ত্রিশ থেকে চল্লিশ মিনিট রাখুন। তারপর এমনি নরমাল পানিতে ধুয়ে ফেলুন। আর তারপর আপনার রেগুলার স্যাম্পু দিয়ে ফাইনালি চুলটা ধুয়ে ফেলুন। এটা আপনি সপ্তাহে এক থেকে দু’দিন ইউজ করুন।

টক দই-এ ভিটামিন বি-5 আর ডি থাকে। এতে চুলের গ্রন্থি কোষগুলোকে নারিশ করে। এটা স্ক্যাল্পের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল আর ফাংগাল ইনফেকশনকে প্রতিরোধ করে। আর স্ক্যাল্পে যে ডেট-সেলসগুলো জমা হয় সেগুলোকে স্তরে স্তরে তুলে ফেলে। তাই টক দই ড্যানড্রাফ রিমুভ করার জন্য খুবই ভালো একটা হোম রেমেডি।

আমলকিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে আর ভিটামিন সি থাকে। যেটা খুশকিকে স্ক্যাল্প থেকে ভালো করে রিমুভ করতে সাহায্য করে, আর স্ক্যাল্পটাকে হেলদি বানায়। এছাড়া এতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, এন্টিমাইক্রোবিয়াল আর স্টিজেন প্রোপার্টিজ আছে যেটা স্ক্যাল্পে যে চুলকানি মতো হয় বা ড্যানড্রাফের জন্য স্ক্যাল্প লাল হয়ে পড়ে সেগুলোকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। আর সর্বোপরি, হেয়ার ফল রোধ করে।

মুলতানি মাটি খুব ভালো একটা মাইল্ড ক্লিনজারস স্ক্যাল্প আর চুলের জন্য। এটা ড্যানড্রাফ রিমুভ করে হেয়ার ফল বন্ধ করে। আর ডাল, ড্যামেজ আর পিজি চুলকে নরম আর শাইনি বানাতে সাহায্য করে। এটা স্ক্যাল্পে যে এক্সট্রা অয়েল আছে আর হার্মফুল টক্সিনস আছে যেগুলোর জন্য মূলত খুশকি হয় সেগুলোকে রিমুভ করে ব্লাড সার্কুলেশন বাড়াতে সাহায্য করে। তাই এটা ড্রাই অয়েলি সবরকম চুলের জন্য খুবই ভালো।

আর পাতিলেবুতে- ভিটামিন সি আর সাইট্রিক এসিড থাকে। যেটা ড্যানড্রাফকে রিমুভ করে স্ক্যাল্পকে নারিশ করে। আর ডেড-সেলসগুলোকে রিমুভ করে স্ক্যাল্পের পিএইচ লেভেলকে মেইনটেইন রাখে। আর এতে এন্টিফাঙ্গাল প্রপার্টিজ থাকে যেটা ফাঙ্গাস ইনফেকশনকে স্ক্যাল্প থেকে দূরে রাখে। আর এতে হিলিং প্রপার্টিজ থাকে যেটা স্ক্যাল্পে যে চুলকানি সেটাকে রিমুভ করে।

 

এরপরের রেমেডি হলো- অ্যালোভেরা

 

অ্যালোভেরার ভেতরে যে জেলি থাকে সেটা স্কিন ও চুল দু’টোর জন্যই উপকারী। অ্যালোভেরাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন আর নিউট্রিয়েন্টস পাওয়া যায় যেটা চুলের জন্য খুবই উপকারী। এতে হিলিং প্রপার্টিজ আছে যেটা সানবার্ন থেকে আপনার স্ক্রিনের সাথে সাথে চুলকেও বাঁচায়। এতে প্রোটিউলাইটিক এনজাইমস থাকে যেটা স্ক্যাল্পে ডেড স্কিন সেলসগুলোকে রিপেয়ার করে। আর এটা ভালো কন্ডিশনারেরও কাজ করে। এটা ড্রাই, পিজি হেয়ারকে স্মুথ আর শাইনি বানায়। এটা চুল পড়া বন্ধ করে আর তার সাথে সাথে নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে। আর ড্যানড্রাফও কমিয়ে আনে । আর স্ক্যাল্পের যে চুলকানি হয় সেটাকেও দূর করে। তাই অ্যালোভেরা খুবই কার্যকর একটি হোম রেমেডি।

এবার চলুন দেখা যাক কি করে এটা ইউজ করবেন।

প্রথমত- অ্যালোভেরা জেলি অ্যান্টি ড্যানড্রাফ হিসেবে ইউজ

আপনার চুলের পরিমাণ অনুযায়ী অ্যালোভেরার পাতা নিন। বড় চুল হলে তিন চারটা কি তার বেশি। এভাবে আপনার চুলের লেন্থ অনুযায়ী নিন। নিয়ে পাতার ভেতর দিয়ে জেলিগুলোকে বের করে নিন। তারপর জেলিগুলোর মধ্যে এক চামচ নারকেল তেল বা যদি জেলি বেশি হয় তো একটু বেশি নারকেল তেল দিয়ে তার মধ্যে আধা চামচ পাতিলেবুর রস দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে একটা হেয়ার মাস্ক বানিয়ে নিন। এবার আপনি এটা সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার শ্যাম্পু করার আগে লাগান। লাগিয়ে ত্রিশ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এটা খুবই উপকারী একটা জিনিস। নিয়মিত লাগালে ড্যানড্রাফের প্রবলেম থেকে আপনি অবশ্যই মুক্তি পাবেন।

এরপর – অ্যালোভেরা ডিপ কন্ডিশনার হিসেবে ইউজ

অ্যালোভেরা খুব ভালোভাবে ডিপ কন্ডিশনারের কাজ করে। এক চামচ মতো অ্যালোভেরা জেলি নিন। তারপর এক চামচ অলিভ অয়েল দিয়ে কন্ডিশনার বানিয়ে নিন। এরপর এটাকে চুলে ভালো মতো লাগিয়ে ত্রিশ মিনিট মতো রেখে দিন। তারপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এটা আপনার ড্রাই পিজি হেয়ারস স্মুথ আর শাইনি হবে। এছাড়া হেয়ার স্টাইলিং হিসেবেও অ্যালোভেরা জেল ইউজ করা যায়। কোথাও বেরোনোর আগে এটা লাগান। এটা সব রকমের হিট থেকে আপনার চুলকে রক্ষা করবে। মার্কেটে যেসব কেমিক্যাল জেল পাওয়া যায় সেটার বদলে অ্যালোভেরা জেল ইউজ করা যেতে পারে। এতে চুল একদমই ঝরবে না উপরন্ত আপনার উপকার হবে। আর আপনার যদি পিওর অ্যালোভেরা পেতে সমস্যা হয় তাহলে আপনি রেডিমেড অ্যালোভেরা জেল যেটা মার্কেটে সব সময় পাওয়া যায় সেটাও ইউজ করতে পারেন। সেটাও খুব ভালো। আর এগুলো নিয়মিত লাগালে আপনি চুল পড়ার সমস্যা থেকে অনেক রিলিফ পাবেন।

 

এরপর যে হোম রেমেডি সেটা হল- হোমমেড হেয়ার অয়েল

 

সবার প্রথমে এক বাটি সরষের তেল নিন। এরপর একটা মিডিয়াম সাইজের পেঁয়াজ নিন। আর দু’বাটি যদি তেল নেন তাহলে দু’টি মিডিয়াম সাইজের পেঁয়াজ নিবেন। আর পেঁয়াজগুলোকে মোটা করে কুচি করে কেটে নিবেন। এরপর একটা পাত্রে সরষের তেলটাকে গরম করে তাতে পেঁয়াজগুলো দিয়ে দিবেন। এবার পেঁয়াজগুলো হালকা গোল্ডেন ব্রাউন হয়ে এলে তাতে এক চামচ মতো কালোজিরা দিবেন। কালোজিরা চুলের জন্য ভীষণ উপকারী। কালোজিরা দিয়ে ভালো করে নাড়ুন আর পেঁয়াজগুলো একটু লাল হওয়া অবধি নাড়ুন পাঁচ মিনিট মতো। কিন্তু আবার যেন বেশী পুড়ে না যায়। এবার পাঁচ মিনিট পর এটাকে নামিয়ে ঠান্ডা হওয়ার জন্য রেখে দিন। একদম ঠান্ডা হয়ে গেলে ছাকনি বা পরিষ্কার সুতির কাপড় দিয়ে তেলটাকে ছেঁকে নিন। আর ছেঁকে নিয়ে একটা কৌটাতে স্টোর করে রাখুন। এটি আপনি দুই-তিন মাস স্টোর করে রাখতে পারেন।

এতে যে সরষের তেল আছে সেটার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন- সেলেনিয়াম চুলের সেলগুলোকে প্রটেক্ট করে। চুলপড়াকে কন্ট্রোল করে। আর ড্যামেজ ড্রাই হেয়ারকে ঠিক করে চুলে একটা ন্যাচারাল শাইন এনে দেয়। আর এটা ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি এসিডস আছে যেটা চুলকে বাড়াতে তো হেল্প করেই তার সাথে চুলকে স্ট্রং বানায় তার সাথে সাথে একটা চমক এনে দেয়। আর যে পেঁয়াজ আছে সেটাই অনেক সালফার আছে যেটা চুলের জন্য খুবই উপকারী। এটাও চুলপড়াকে বন্ধ তো করেই তার সাথে ব্লাড সার্কুলেশনকে বাড়ায়। আর চুলকে নারিশ করে। পিঁয়াজে এন্টিব্যাক্টেরিয়াল প্রপার্টিজও থাকে যেটা স্ক্যাল্পের ইনফেকশনগুলোকে সারিয়ে তোলে।

 

এরপর হলো- কালোজিরা

 

কালোজিরাতে পাওয়ারফুল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন আর মিনারেলস থাকে যেটা চুলের গ্রোথটাকে বাড়াতে সাহায্য করে। আর তার সাথে সাথে মাথায় যে টাক পড়ে যাওয়া সেটাকেও ঠিক করে। এটাই ফ্যাটি এসিড আছে যেটা চুলটাকে সফট আর স্মুথ বানায় আর তার সাথে সাথে কম বয়সে যে চুল পেঁকে যাচ্ছে সেটাকেও ঠিক করে। অর্থাৎ, সাদা চুলকে কালো বানাতে সাহায্য করে। তাই অবশ্যই কালোজিরা দিবেন। তেলটাকে সপ্তাহে দুই-তিনদিন মেখে সারারাত বা ছয়-সাত ঘণ্টা রেখে তারপর যদি শ্যাম্পু করেন তবেই সেটা কার্যকরী হবে।

কালোজিরা হেয়ার মাস্ক

আপনি এক চামচ কালোজিরা, এক চামচ কালো সরষে আর এক চামচ মেথি  নিয়ে এক কাপ পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন ব্লেন্ডারে সব দিয়ে পরিমাণমতো পানি সহকারে ঘন পেস্ট বানিয়ে নিন। খেয়াল রাখবেন, পানি যেন বেশি না হয়ে যায় তাহলে পেস্ট-টা খুব পাতলা হয়ে যাবে। পেস্ট-টা যেন ঘন হয় এরপর পেস্ট-টাই দুই বড় চামচ টক দই দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে সেটাকে মাথার স্ক্যাল্প থেকে শুরু করে চুলের গোড়ায়, চুলের আগায় ভালো করে লাগান। আর লাগিয়ে ত্রিশ থেকে চল্লিশ মিনিট রেখে দিন। আর শুকিয়ে গেলে এমনি পানিতে ধুয়ে ফেলুন। তারপর ভালো করে রেগুলার শ্যাম্পু দিয়ে শ্যাম্পু করে নিন। আর এই মাস্কটাকে লাগানোর আগে অবশ্যই চুলে ভালো করে তেল দিয়ে নিন।

 

এতক্ষণ যে হোম রেমেডিগুলো নিয়ে আলোচনা সেগুলো যদি নিয়মিত ইউজ করেন তাহলে আশা করি আপনি আপনার চুলের যাবতীয় সমস্যার সমাধান পাবেন। আর এগুলো 100% ন্যাচারাল। কোনো কেমিক্যালও নেই আর কম খরচে আপনি খুব সহজেই এটা ব্যবহার করতে পারবেন। আর এগুলো অবশ্যই ছেলে মেয়ে মহিলা পুরুষ সবাই ইউজ করতে পারেন। আপনি আপনার পছন্দ মতো যেকোনো একটা চয়েজ করে নিয়মিত ইউজ করুন তাহলে কিছুদিনের মধ্যেই আপনি উপকার দেখতে পাবেন।

সর্বোপরি, সব সময় চুল পরিষ্কার রাখুন ও প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্টস সরবরাহ করুন। তাহলেই দেখবেন, আপনার সব রকম চুলের সমস্যা থেকে আপনি রেহাই পাবেন।

 

References:

চুলের জন্য আলোচিত  উপাদানসমূহ:

আরো পড়তে পারেন: চুল কেন পড়ে?

Similar Posts