প্রিয়জনকে নিয়ে হারিয়ে যান গোলাপের রাজ্যে
এই ইট পাথরের শহরে একটু প্রশান্তির ছোঁয়া পেতে ঘুরে আসতে পারেন গোলাপ গ্রাম থেকে। ফুলপ্রেমীদের জন্য এটি একটি সুখবর বটে। কারণ এখানে গেলে যতদূর চোখ যাবে শুধু পাবেন গোলাপ আর গোলাপ। আঁকাবাঁকা সরু পথের এই জায়গাটি আপনাকে নিয়ে যাবে যান্ত্রিক জীবন থেকে দূরে এক প্রশান্তির নগরে।
ব্যস্ততার ভারে ঢাকার বাইরে কোথায় যাওয়ার কথা চিন্তাই করা যায় না। সেখানে যদি সাশ্রয়ের মধ্যে ঢাকার ভিতরেই পাওয়া যায় গ্রামের আমেজ সাথে গোলাপের ম-ম গন্ধ, তাহলে তো আর কোনো কথায় নেই। আজকে আমি জানাবো আমার গোলাপ গ্রাম ভ্রমণের সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতাটি।
গোলাপ গ্রামের পূর্বকথা
সাদুল্লাহপুর গ্রামের ৯৭ ভাগ মানুষের জীবিকার উৎস হচ্ছে গোলাপের চাষ। এই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে কেউ হয়তো গোলাপের জমির মালিক, কেউ গোলাপের জমিতে চাষাবাদে জড়িত আবার কেউবা গোলাপ কেনাবেচার কাজে নিয়োজিত।
এই গ্রামে গোলাপের চাষ শুরু হয় প্রায় ৩০ থেকে ৮০ বছর আগে থেকে। গোলাপের জনপ্রিয়তা লোকপ্রতি সবসময়ই ছিল। আর সেই থেকেই গোলাপ গ্রামের চাষিদের ব্যবসাও ধীরে ধীরে জমজমাট আকার ধারণ করে। গোলাপ চাষ বাবদ খরচ বাদে প্রতি একর জমিতে গোলাপ চাষ করে জমির মালিকেরা প্রতি মাসে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করতে পারে।
এখানে চাষ করা গোলাপ ফুল প্রায় পুরো বাংলাদেশেই সরবরাহ হয়। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকার সবচেয়ে বড় ফুলের বাজার শাহবাগ, যশোর, ঝিনাইদহ ও খুলনা। আস্তে আস্তে জনমুখে এই গ্রামটি গোলাপ গ্রাম নামে প্রসিদ্ধতা পেয়েছে।
কোথায় অবস্থিত?
ঢাকার অদূরে সাভার জেলার বিরুলিয়া ইউনিয়নে সাদুল্লাহপুরে অবস্থান আমাদের গোলাপ গ্রামের। যেদিকে চোখ যাবে শুধু গোলাপ আর গোলাপ। যদিও সাদুল্লাহপুর গ্রামকেই গোলাপ গ্রাম বলা হয়, তবে সাদুল্লাহপুর বাদেও আশেপাশের শ্যামপুর, কমলাপুর, বাগ্মীবাড়ি জুড়ে দেখতে পাবেন গোলাপের রাজত্ব।
মূলত এই গ্রামটি গোলাপের জন্য প্রসিদ্ধ হলেও, গোলাপের সাথে এখানে দেখা মিলবে নাম না জানা গোলাপি – হলুদ ফুলের বাহার। তার মধ্যে জারভারা, গ্লাডিওলাস এবং রজনীগন্ধা উল্লেখ্ যোগ্য। গোলাপ গ্রামই মূলত পুরো ঢাকা শহরের গোলাপ ফুলের যোগানদাতা। আর তাই তো শাহবাগের মোড়ে কিংবা কোনো জ্যামের মুখে যদি ছোট্ট ফুল বিক্রেতার কাছ থেকে ফুল কিনে থাকেন তাহলে আপনাকে বলতেই হয় সেগুলো গোলাপ গ্রামের বাগানেই ফোটানো গোলাপ ফুল।
এখানে প্রতি সন্ধ্যায় কাশেম মার্কেটের সামনে বসে গোলাপ ফুলের আসর। দূরদূরান্ত থেকে ফুল ব্যবসায়ীরা আসে চাষিদের কাছ থেকে পাইকারী দরে গোলাপ ফুল কিনতে।
গোলাপ গ্রামে বেশিরভাগ গোলাপ ফুলই মিরান্ডি জাতের। গ্রামের বুকের উপর দিয়ে চলে যাই সরু রাস্তা আর তার দু-পাশে বিস্তীর্ণ গোলাপের বাগান। । একজনের বেশি মানুষ এই রাস্তা একসাথে পার হতে পারবে না, সাথে আছে মাঝখানে মাঝখানে জমিতে পানি দেওয়ার ব্যবস্থা।
আগে যদিও বাগানের ভিতরে প্রবেশ করা যেতো কিন্তু এখন আর সেই সুযোগ নেই। তবে যদি চাষিদের কাছ থেকে আগেই কিছু গোলাপ ফুল কিনেন আর গোলাপের চারা নষ্ট না করেন, তাহলে বাগানে প্রবেশ করতে পারেন কিছু সময়ের জন্য। চাষীরা সাধারণত ১টা ২টা করে খুচরা ফুল বিক্রি করতে চাই না। ফুল কিনতে হলে ১০০ টার বেশি নিতে হবে। গোলাপ ফুলের পাশাপাশি আপনি চাইলে অন্য ফুলও নিতে পারেন।
দর্শনীয় স্থানঃ
গোলাপ গ্রামের পাশাপাশি এখানে চাষ হয় নাম না জানা আরও নানা রকম ফুলের। হাঁটতে হাঁটতে সামনে এগোলেই দেখতে পাবেন লাল-হলুদ-গোলাপি ফুলের বাগান। এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে যে কারোই চোখ জুড়িয়ে যাবে নিশ্চিত।
এখানে আরও পাবেন বিরুলিয়া ব্রিজের কাছেই মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো প্রাচীন বটগাছ। আর হাতে সময় থাকলে ঘুরে আসতে পারেন জমিদার রজনীকান্ত ঘোষের বাড়ি থেকে।
গোলাপ গ্রামে যাওয়ার উপযুক্ত সময়ঃ
প্রতি বছরই এখানে গোলাপের চাষ হয়। তো আপনি বছরের যেকোন সময়েই এসে ঘুরে যেতে পারেন। তবে আমার মতে যাওয়ার উপযুক্ত সময় হলো শীতকাল। এই ঋতুতেই গোলাপ ফুল বেশ ভালো ভাবে ফোটে । শীতকালে গেলে আপনি সতেজ এবং আকারে বড় গোলাপ ফুল দেখতে পাবেন। আর সেইসাথে ভালোমতো পুরো জায়গা ঘুরেও দেখতে পারবেন, গরমের তীব্রতা সহ্য করতে হবে না।
কিভাবে যাবেনঃ
আমরা গিয়েছিলাম প্রাইভেট কারে চড়ে উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এর পাশ দিয়ে। যেতে আমাদের জ্যামসহ সময় লেগেছিল ৩ ঘণ্টার মতো। আপনি চাইলে একটা প্রাইভেট কার ভাড়া করে অথবা সি-এন-জি করে চলে আসতে পারেন।
উত্তরা হাউজ-বিল্ডিং, টঙ্গী স্টেশন অথবা মিরপুর বেড়িবাঁধ – যে রুট দিয়েই আসেন না কেনো আমার সাজেশন থাকবে বিরুলিয়া ব্রীজ হয়ে যাওয়ার। কারণ যাওয়ার পথে গোলাপ ফুলের বাগান দেখে দেখে আসতে পারবেন।
ভ্রমণের আনন্দ আরো উপভোগ করতে যেতে পারেন নৌকা দিয়ে। দিয়াবাড়ির বটতলা ঘাট থেকে শ্যালো নৌকা, কোষা নৌকা, স্পীড বোট কিংবা লোকাল ইঞ্জিনের নৌকায় চড়ে যেতে পারেন বিরুলিয়া ব্রীজে। সময় লাগতে পারে ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের মতো। নৌকা ভেদে জনপ্রতি খরচ পরবে ক্রমান্বয়ে ২৫০ টাকা, ৩০০ টাকা, ৫০০ টাকা এবং ২৫ টাকা।
নৌকায় যদি যাতায়াত করার ইচ্ছা থাকে তবে একটা ব্যাপার মাথায় রাখবেন, সন্ধ্যা ৬ টার পর নৌকা চলাচল বন্ধ থাকে।
কি খাবেনঃ
সাদুল্লাহপুর ঘাটে সাধারণ মানের একটি হোটেল আছে। চাইলে সেখানে হালকা চা-নাস্তা খেয়ে নিতে পারেন। তবে আমার সাজেশন থাকবে খাবার প্যাক করে অথবা বাইরে থেকে কিনে নিয়ে আসা।
পরিশেষে এটাই বলবো একদিনের ট্যুরের জন্য গোলাপ গ্রাম পারফেক্ট। শহর থেকে একটু দূরে প্রিয়জনের সাথে এক চিলতে বিকেল কাটিয়ে যেতে পারেন গোলাপের রাজত্বে। তবে পরামর্শ থাকবে অযথায় গ্রামের মানুষদের বিরক্ত করবেন না, বাগানের ফুল ছিঁড়ে নষ্ট করবেন না।
আপনারা যদি গোলাপ গ্রামে ভ্রমণ করে থাকেন, নিচে কমেন্ট বক্সে আপনার এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করতে ভুলবেন না।
এক দিনের ভ্রমনের জন্য আমার কাছে খুব বেশি ভালো লাগছে ???? অনেক সুন্দর করে তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ