একজন সাধারণ মানুষের গল্পঃ দ্য রক

বাইসেপস প্রসারিত করে, মুখে কোটি টাকার হাসি দিয়ে যে লোকটি প্রায় ২৪ বছর ধরে একইসাথে মুভির পর্দায় ও রেসলিংয়ের রিংয়ের ভিতর দিয়ে মানুষকে এন্টারটেইন করে যাচ্ছেন,  তিনি হলেন ‘দ্য রক’ খ্যাত ডোয়াইন জনসন।

রক্তে রেসলিং ?

The Rock in the Ring ; source:https://gmsrp.cachefly.net

তার জন্ম  ১৯৭২ সালের ২ রা মে, ক্যালিফোর্নিয়ায়।
ডোয়াইন জনসন তার শৈশবের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়া ও নিউজল্যান্ডে তাদের বাড়িতে আসা-যাওয়ার  মাধ্যমে ।  যদি বলি, ‘রেসলিং ছিলো তার রক্তে’ তাহলে এটা হবে তার সম্পর্কে সবচেয়ে কম বলা ৷  কারণ,  তার দাদা পিটার মাইভিয়া এবং দাদী লিয়া মাইভিয়া ছিলেন Polynesian Pacific Pro Wrestling  এর প্রতিষ্ঠাতা ।  ডোয়াইন জনসনের বাবা রকি জনসনও ছিলেন একজন প্রফেশনাল রেসলার ।  রকি জনসন তার প্রফেশনাল ক্যারিয়ার কাটিয়েছেন  ১৯৬৪ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত । এদিক থেকে বলা যায় ডোয়াইন জনসন( দ্য রক) হলেন খাঁটি রেসলিং ঘরের সন্তান ।

Roman Reigns & The Rock ; source:wikipedia
Roman Reigns & The Rock ; source:wikipedia

কিন্তু না,  এখানেই শেষ নয় ।  তাদের পরিবারের সাথে পারিবারিকভাবে সম্পর্ক আছে বিখ্যাত Anoa’s ফ্যামিলির ।  এই Anoa’s ফ্যামিলি থেকে রেসলিংয়ে ছিলো WWF এর প্রথম প্রজন্মের জনপ্রিয় রেসলার রিকশি (১৯৮৫-২০০৪) ।  এই রিকশি -র দুই ছেলে হলো জসুয়া এবং জোনাথন যারা রিংয়ে  “The Usos”  নামে খ্যাত ।  এছাড়া বর্তমান প্রজন্মের সবচেয়ে জনপ্রিয় রেসলার ” Roman Reigns” ও এই Anoa’s ফ্যামিলির সন্তান।

তাহলে কি দাঁড়ালো?
রকি জনসন, রিকশি, দ্য ওসুস, রোমান রিংগস, ডোয়াইন জনসন (রক) সবাই একই পরিবারের থেকে উঠে আসা রেসলার ।
এজন্যই বলেছিলাম,  “রেসলিং তার রক্তে” এই কথা বললেও যথার্থ উপমা হয় না ।

কৈশরের সংকট 

যখন ডোয়াইন জনসনের বয়স ১৪ তখন তারা Honolulu তে শিফট করেন।  ঐখানে এসেই তিনি তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তের সম্মুখীন হন ।  তার বাবার রেসলিং জনিত সমস্যার কারণে তাদের গৃহহীন হতে হয় ।  তিনি ও তার মা Honolulu তে থাকেন ।  পরিবারের অবস্থা খারাপ হতে থাকে। কিশোর ডোয়াইন জনসন তখন পারিবারিক অর্থনৈতিক সমস্যার জন্য ধ্বংসাত্মক পথ ধরেন ।

Honolulu -র কাছেই Waikiki সমুদ্র সৈকত ।  প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক এখানে আসে ।  কিশোর ডোয়াইন জনসন তার গ্রুপ নিয়ে এখানকার পর্যটকদের টার্গেট করে ছিনতাই করা শুরু করলো ।  শুধু ডলার নয়, স্বর্ণ, পর্যটকদের করা শপিং যা পেত তাই নিয়ে আসতো।
সে বেশ কয়েকবার পুলিশের কাছে ধরা খায় কিন্তু বের হয়ে আবার সেই আগের কাজেই ফিরে যায় ।  এক্ষেত্রে তার নিজেরও কিছু করার ছিলো না । কারণ, পারিবারিক অবস্থা তখন ছিলো খুবই খারাপ ।

পরিবর্তনঃ ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা

১৬ বছর বয়সে তার ওজন ছিলো ২২৫ পাউন্ড এবং উচ্চতা ছিলো ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি।  বেশ কয়েকবার স্কুল পরিবর্তন করার পর সে থিতু হয় বেথেলহামের Freedom High School এ এসে । তখন তার ছিলো ইয়া বড় বড় গোঁফ এবং তার কাঁধে  ছিলো বড় বড় লোম ।
তো, একদিন স্কুলে সে স্টুডেন্টদের ওয়াশরুমে না ঢুকে টিচারদের ওয়াশরুমে ঢুকে গিয়েছিলো।  একজন শক্তপোক্ত, দেহের, টাফ লুক শিক্ষক নাম ছিলো জোডি উইক,  তিনি এসে বললেন,

– হেই, তোমার তো এখানে থাকার কথা না।

সে তখন জনসনের কাঁধের বড় বড় লোমের দিকে তাকিয়ে ছিলো ।

– ঠিকাছে ।  যখন শেষ হবে তখন আমি চলে যাবো৷

এইটা বলে জনসন আবার হাত ধুতে লাগলো ।
ঐ শিক্ষক তার দিকে তাকিয়ে ছিলেন, কিছু বলেন নি, কিন্তু চেহারা দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো তিনি রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে আছেন।

কিন্তু ঐদিন রাতে জনসন মনে মনে তার ঐ ব্যবহারের জন্য অনুতপ্ত হয় ।
পরের দিন সে উইক স্যারকে সরি বলতে আসে । জোডি উইক ছিলেন তার স্কুলের ফুটবলের হেড কোচ ।  তিনি বললেন

– ঠিকাছে ।  কিন্তু তোমার ফুটবল খেলতে হবে ।

ঐখান থেকেই তার ফুটবল খেলার শুরু । জোডি উইক সম্পর্কে ডোয়াইন জনসন বলেছেন –
” তিনি ছিলেন আমার কাছে পিতৃতুল্য মানুষ এবং আমার জীবনে পাওয়া অন্যতম মেন্টর।আমি এইলোকটাকে খুবই ভালোবাসি এবং সম্মান করি ।  আর, আমার জীবনে উনার প্রভাব কখনোই ভুলবার মতো নয়। আসলে আমার আর উনার মধ্যে অদ্ভুত সম্পর্ক হয়েছিলো ।  আমি একটা বাজে ছেলে তারসাথে শুরুর দিন খারাপ ব্যবহার করেছিলাম ।  কিন্তু আমি যখন ডিপ্রেশনে পড়ে যেতাম, ভাবতাম আর কিছুই আমাকে দিয়ে হবে না তখন তিনি বলতেন-‘ আমি তোমাকে বিশ্বাস করি এবং আমি চাই তুমি ঘুরে দাঁড়াও ‘।  আর এই কথাগুলো আমার জীবনে ম্যাজিকের মতো কাজ করতো । ”

When The Rock was football palyer ; source:https://images-na.ssl-images-amazon.com
When The Rock was football palyer ; source:https://images-na.ssl-images-amazon.com

স্কুলের পাঠ চুকিয়ে তিনি University of Miami     -তে ফুটবল খেলার জন্য একটি স্কলারশিপ পান ।  তারপর ঐখানে তিনি একবার ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশীপে জয়লাভ করেন ।  ১৯৯৫ সালে তিনি University of Miami থেকে ক্রিমিনোলজি এবং ফিজিওলজির উপর ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন।  কিন্তু তিনি তার ফুটবল খেলার স্বপ্নকে ছাড়তে চাননি যদিও National Football League ( NFL) এর তার প্রতি আগ্রহ ছিলো না ।

রিংয়ের ঘরের নেতা 

১৯৯৬ সালে ডোয়াইন জনসনের WWF অভিষেক হয় ।   মজার বিষয় হচ্ছে,  তার প্রথম অপোনেন্ট ছিলো Brooklyn Brawler যিনি ডোয়াইন জনসনের বাবার ও প্রথম অপোনেন্ট ছিলেন ।
Brooklyn Brawler- রকের সাথে প্রথম ম্যাচ সম্পর্কে বলেন-
“A skinny little kid with an afro.”

আর,
ডোয়াইন জনসন তার প্রথম ম্যাচ সম্পর্কে বলেন,
“For me,  I wasn’t just having ‘a tryout match, because I had never actually had a real match in my life. Ever.
WWE thought that I already had multiple matches under my belt,but little did they know. What they also didn’t know was that I was broke as hell and didn’t actually own wrestling gear – no boots,knee pads or most importantly.. Wrestling trunks.”

The Rock in 1998 ; source:https://qph.fs.quoracdn.net
The Rock in 1998 ; source:https://qph.fs.quoracdn.net

 

তার WWF এ অভিষেক হয় ১৯৯৬ সালের ৪ নভেম্বর Monday Night Raw তে ।  আর, তার প্রথম ম্যাচ ছিলো ১৭ নভেম্বর Survivor Series এ।  ঐ ম্যাচটি ছিলো 8- man elimination tag match ।   ঐ ম্যাচে সে প্রথম হয়েছিলো । তবে সে সবার কাছে জনপ্রিয়তা পায় ১৯৯৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারির Monday Night Raw এর মেইন ইভেন্টের পর থেকে ।  ঐ ম্যাচে সে Triple H কে পরাজিত করে Intercontinental Champion হয় ।  এরপর থেকেই একটা নতুন ব্র্যান্ডের পথচলা শুরু হয়,
“The Rock”  তার নাম ।
রিংয়ের ভিতরে তার প্রতিটা মুভে, প্রতিটা অ্যাকশনে দর্শকরা উচ্ছ্বসিত হতো ।

যখন স্টেডিয়ামে বেজে উঠে-
“Can you smell what The Rock is cooking? “
হাজার মানুষ পাল্টা স্লোগান দেয় –
” I smell it.”

এই কথাগুলো, রিংয়ের কোনায় দাঁড়িয়ে এক হাত উপরে উঠিয়ে দর্শকদের অভিবাদন জানানো, এগুলো শুধু কোনো দৃশ্য নয়,  প্রতিটা রেসলিং ফ্যানের জন্য আবেগের জিনিস ।

 

রকের রেসলিং ক্যারিয়ার কে দুইটি ফেজে ভাগ করা যায় ।  প্রথম ফেজ ছিলো ১৯৯৬-২০০৪ পর্যন্ত ।  এই ফেজে তিনি সবসময় প্রফেশনালি খেলেছেন ।
আর  দ্বিতীয় ফেজ শুরু হয় (২০০৭ -বর্তমান)।  এই ফেজে তিনি খুব কম সময়ে প্রফেশনালি ম্যাচ খেলেছেন ।  বেশিরভাগ সময় ই  তার গেস্ট অ্যাপেয়ারেন্স দর্শকদের চমকে দিয়েছে ।  দ্বিতীয় ফেজে প্রফেশনাল ম্যাচের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিলো “জন সিনা-রক” দ্বৈরথ । ২০১২ সালের WrestleMania -28 এর মেইন ইভেন্টে সিনা-রকের সেই ম্যাচ রেসিলিং ফ্যানদের কাছে অন্যতম সেরা ইভেন্ট ।

বহু বৈচিত্র্যতার মধ্য দিয়ে তার জীবন গিয়েছে ৷ সেই ১৪ বছর বয়সে গৃহহীন হওয়া,টাকার জন্য ছিনতাই পেশায় নেমে যাওয়া লোকটি এখন Worldwide No.01 Box Office Star ।
ফোর্বস অনুযায়ী,  ২০১৮ জুন থেকে ২০১৯ জুন পর্যন্ত তার আয় ৮৯.৪ মিলিয়ন ডলার যা তাকে হলিউডের সবচেয়ে চড়া মূল্যের অভিনেতা বানিয়েছে ।

Source: https://www.highsnobiety.com/p/dwayne-the-rock-johnson-biography/

Similar Posts

4 Comments

Comments are closed.