বিয়ের পর যেভাবে মানিয়ে নেবেন নতুন সংসারে

প্রত্যেক মানুষেই চাই তার জীবনে এমন একজন আসুক যে তার সুখ, দুঃখগুলো ভাগ করে নিবে, সারাটাজীবন তার সাথে পথ চলবে কারণ মানুষ একা বাস করতে পারেনা। একটি নির্দিষ্ট সময় পর প্রায় প্রত্যেকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিয়ে নিয়ে সকলেরই অনেক ভাবনা থাকে। বিয়ে মানে শুধু দুটো মনের মিল নয় এর সাথে জড়িয়ে থাকে অনেক দায়িত্ব, তৈরী হয় আরো অনেক নতুন সম্পর্ক, থাকে অনেক চাওয়া পাওয়া।


সাধারণত, বিয়ের পর মেয়েদের মনে নতুন কিছু শংকার জন্ম নেয়। এক পরিবার থেকে নতুন আরেকটি পরিবারে আসা যেই পরিবারটি তার চেনা পরিবার থেকে অনেক আলাদা। কেমন হবে সে পরিবারের সদস্যরা,  কিভাবে তাদের সাথে মানিয়ে নিতে হবে এই প্রশ্নগুলো মনে বারবার ঘুরপাক খেতে থাকে। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটিতে রয়েছে কিভাবে নতুন সংসারে মানিয়ে নিতে হয় সে সম্পর্কিত কিছু টিপস। চলুন দেখে নেওয়া যাক কিভাবে মানিয়ে নিতে হয় নতুন সংসারে –

how-to-adjust-with-the-new-family-after-marriage

 

নতুন পরিবারটিকে নিজের ভাবুন:

 

যে মানুষটির সাথে সারাজীবন পথ চলার স্বপ্ন নিয়ে নতুন একটি জীবন শুরু করেছেন তার মতো তার পরিবারকেও নিজের ভাবুন। কারণ, বিয়ের আগে আপনি ছিলেন কারোর কন্যা, কারোর বোন। আর বিয়ের পর আপনাকে কেন্দ্র করে তৈরি হবে আরো নতুন সম্পর্ক। আপনি হবেন কারোর স্ত্রী, কারোর বৌমা হয়তো কারোর ভাবী। সম্পর্কগুলোর গুরুত্ব বুঝতে পারলে দেখবেন অচেনা মানুষগুলোকে অনেক বেশী কাছের মনে হচ্ছে।

 

পরিবর্তনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে শিখুন:

 

আপনার বাপের বাড়ি আর শ্বশুরবাড়ি দুটো কিন্তু আলাদা পরিবার। দুটো পরিবারের ধারাটাও আলাদা হবে। নতুন পরিবারের নতুন পরিবেশে আপনাকে অনেক নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হবে। পরিবর্তন গুলোকে বিরক্তির সাথে না দেখে চ্যালেঞ্জ হিসেবে ভাবুন। ধরুন, আপনার সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস নেই কিন্তু শ্বশুরবাড়ির সকলে জলদি ঘুম থেকে উঠে পড়ে। এই ধরনের ছোট ছোট পরিবর্তনগুলোকে বিরক্তির সাথে না দেখে ভাবুন এটা আপনার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। গবেষণায় দেখা গেছে, কোন কাজ যদি টানা ২১ দিন করা হয় তবে সেটি অভ্যাসে পরিণত হয়। তাই পরিবর্তন গুলোকে প্রথম থেকে পজিটিভ ভাবে নেন তবে আপনার জন্য নতুন কিছুর সাথে খাপ খাওয়ানো অনেক সহজ হবে।

 

রাগ নিয়ন্ত্রন করতে শিখুন:

 

ঝড়ের পর কতটা ক্ষতি হয়েছে সেটি যেমন ঝড়ের শেষে বোঝা যায় তেমনি রাগের কারণে ছোট ছোট কিছু বিষয় অনেক জটিল আকার ধারণ করে। সংসারে অনেক কিছুই হয়ে থাকতে পারে যা হয়তো আপনার মন মতো নয় কিন্তু তা বলে যদি আপনি রাগের বশে এমন কিছু করে ফেলেন যার জন্য পরে ভুগতে হবে তাহলে ক্ষতিটা আপনারাই হবে। গুরুজনেরা অনেক সময় অনেক কিছুর আদেশ করতে পারেন। তাদের কথায় বিরূপ মনোভাব না দেখিয়ে শুনুন তারপর নিজের মতামত দিন। কোন কিছু নিয়ে খুব সমস্যা হলে তাদের খুলে বলুন। আলোচনার মাধ্যমে অনেক জটিল বিষয় সহজ হয়ে যায়।

 

বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন:

 

মনে রাখবেন, পরিবারের বড়রা হচ্ছে এমন একটি আশ্রয়স্থল যারা নিজের সবটুকু দিয়ে আপনাকে আগলে রাখবে। তাদের কখনো অপমানজনক কথা বলবেন না। হয়তো তাদের মন মানসিকতা বর্তমান যুগের মতো নয়। তাদের বোঝার চেষ্টা করুন। শ্বাশুড়ি মা শ্বশুরবাড়িতে আপনার প্রথম আশ্রয়স্থল। তাকে যেহেতু মা বলে ডাকছেন তাকে নিজের মা ভাবুন। তারসাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন। তিনি পাশে থাকলে নতুন সংসারে মানিয়ে নেওয়া আপনার জন্য খুব কঠিন কিছু মনে হবেনা।

 

ছোট বড় সবার প্রতি যত্নশীল হোন:

 

বাড়িতে ছোট সদস্য থাকলে তাদের সাথে সময় কাটান, গল্প করুন। দেখবেন নিজের পরিবারকে ফেলে আসার কষ্টটা অনেকখানি লাঘব হয়ে গেছে। তাদের জন্মদিন কখন জেনে নিন, তাদের পছন্দের খাবার গুলো বানিয়ে নিন। তাদের সাথে বাইরে ঘুরতে যান। পরিবারের কেউ বাইরে থাকলে তার সাথে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করুন।

 

স্ত্রীর পাশাপাশি স্বামীরও কিছু দায়িত্ব থাকে। তাকে মানসিকভাবে সাপোর্ট করুন। নিজেদের মধ্যে বিশ্বাস, বোঝাপড়া ও সম্মানবোধ তৈরি করুন। একে অপরের বন্ধু হন, তার কাজগুলোয় সাহায্য করুন। পারবো না বা কষ্ট হবে এরকম মন মানসিকতা দূরে রাখুন। তার পরিবারকে সম্মান করুন। তার পিতামাতার সাথে তার দেখা করিয়ে দিন। দেখবেন সেও আপনার পরিবারকে নিজের করে নেবে। তার ভুলগুলো নিয়ে হাসি ঠাট্ট না করে তাকে বুঝিয়ে বলুন। তবেই সংসার জীবন সুন্দর হয়ে উঠবে। পরিবারের মিলবন্ধন বজায় থাকবে।

Similar Posts

One Comment

Comments are closed.