ঘুম যখন আসে না

ঘুম,এই শব্দটা শুনলে কতই না আরাম লাগে। পৃথিবীর এমন কেউ নেই যে ঘুম পছন্দ করে না। ঘুম হচ্ছে সত্যিকারের ভালোবাসা। তবে এই ভালোবাসা যখন ধোঁকা দেয় তখন কিন্তু সত্যিই বিষয়টা মেনে নেওয়ার মত থাকে না।
সারাদিনের ক্লান্তি, খাটুনি শেষে শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিলেই শান্তির একটা ঘুম আসে। গভীর ঘুম হলে তো কথাই নেই। বড় একটা ঘুম হয়ে গেলে মেজাজটা ফুরফুরে থাকে, শরীরটাও তাজা থাকে। দৈনিক সাত ঘন্টা ঘুম কমপক্ষে জরুরী। পরিমিত ঘুম না হলে অনেক অস্বস্তি লাগে। তবে কারও কোন কারণ ছাড়া অনিদ্রা দেখা দিলে বলা যায় সে ইনসমনিয়ায় আক্রান্ত।

ইনসমনিয়া নিয়ে বলার আগে জেনে নেওয়া যাক ঘুম কি কি কারণে আসে না –

১.যান্ত্রিক যুগের মানসিক চাপ

মন যখন অস্থিরতায় ভুগে তখন ঘুম আসতে চায় না। যেমন কারও চাকুরী চলে গেলে মন খারাপ হবে স্বাভাবিক। এই মন খারাপের কারনে তার ঘুম হারাম হয়ে যাবে। অন্যদিকে আগামীকাল পরীক্ষা,কিন্তু ভয় করছে কি হবে, এই ভয়ের কারণে যতই বইখাতা বন্ধ করে ঘুমাতে যাওয়া হোক না কেন,ঘুম ভুলেও আসবে না। সেই বইখাতা নিয়ে পুনরায় বসতে হবে। এরকম ডিপ্রেশনসহ বিভিন্ন ধরনের মানসিক দুশ্চিন্তাও অনেক সময় না ঘুমের কারণ হয়ে থাকে।

২.শারীরিক অসুস্থতা

শরীরে প্রচুর যন্ত্রনা হচ্ছে, ঘুম আসবে না। এজমায় আক্রান্ত রোগী ধুকে ধুকে মরছে,ঘুম আসবে না। ঠান্ডা কাশি হচ্ছে, কাশতে কাশতে বুকে ব্যাথা হওয়ার উপক্রম এধরণের মানুষের ঘুম সহজে আসে না। সুতরাং শরীর কোন কারণে সুস্থ না থাকাটাও অনিদ্রার কারণ হয়ে থাকে।

ঘুমের ঔষধ কতটুকু যুক্তিসম্মতঃঃ

অনেকে ঠিক মতো ঘুমাতে না পারার জন্য ঘুমের ঔষধ খাওয়াকে বেছে নেয়। এটা মোটেও উচিত নয়। একমাত্র ডাক্তারের সম্মতি ছাড়া ঘুমের ঔষধ কেন,কোনো ঔষধই খাওয়া উচিত নয়। কিন্তু বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যে, ফার্মেসীতে গিয়ে কোন ঔষধ চাইলেই দিয়ে দেয়া হয় এবং মানুষ নিজেরাই নিজেদের মন মতো ঔষধ খেয়ে ফেলে। এরকম হলে তো দেশে ডাক্তারের কোন দরকারই ছিল না। এই কাজটা করা একদম উচিত নয়। ঘুমের ঔষধ সাময়িক ভাবে আমাদের নিদ্রা দিতে পারে ঠিকই,কিন্তু বয়ে আনে নানা রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। ঘুমের ঔষধ যদি কারোও অভ্যাসে পরিনত হয়ে যায়, তবে তো সর্বনাশ। তাই ঘুমের ঔষধ যথা সম্ভব পরিহার করা উচিৎ।

নিয়মিত ঘুম আসার জন্য কিছু পদক্ষেপ ব্যাবহার করা যেতে পারেঃ

১.ঘুমের জন্য আশেপাশের পরিবেশ ঠিক করা। যেমন ঘরের পর্দা টেনে দিয়ে ঘর অন্ধকার করা,বাতি নিভানো, আরামদায়ক বালিশে শোয়া (সবক্ষেত্রে না। কেননা এটা ঘাড়ের জন্য ক্ষতিকর)।

২. হালকা গান শোনা যেতে পারে কিংবা বই পড়া যেতে পারে। তবে এমন বই পড়া উচিত নয় যেটার কোনো বিষয় মাথায় গেঁথে গেলে মাথা থেকে তাড়ানো সম্ভব নয়।

৩.অতিরিক্ত মোবাইল চালানো, টিভি দেখা, ল্যাপটপ ব্যাবহার করা থেকে দূরে থাকতে হবে। এগুলো থেকে নির্গত হওয়া নীল আলো চোখের জন্য ক্ষতিকর বিধায় ঘুমেরও সমস্যা করে।

৪.প্রতিদিন একই সময় শুতে যাওয়া উচিত।

৫.রাতের খাবার খেয়েই ঘুমাতে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া উচিত না। বরং ঘুমাতে যাওয়ার ২/২ঃ৩০ ঘন্টা আগেই রাতের খাবার খেয়ে ফেলতে হবে।

৬. ঘুমানোর আগে একদম ব্যায়াম করা যাবে না। অনেকে আছেন ঘুমানোর আগে ব্যায়াম করেন। এটা পরিহার করতে হবে। ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত ৪ ঘন্টা আগে ব্যায়াম করা উচিৎ।

৭.আমাদের মধ্যে অনেকে আছে বিভিন্ন কাজকর্ম যেমন লেখাপড়া, মোবাইল চালানো, টিভি দেখা ইত্যাদি সকল কিছু বিছানায় করে থাকে। এটা করা একদমই উচিত নয়। কেননা বিছানা শুধু ঘুমের জন্য। সব কাজ যদি বিছানাতেই করা হয়ে থাকে তবে ঘুম আসতে দেরি করবে।

৮.নিয়মানুবর্তী হতে হবে এবং জীবন শৃঙখলার মধ্যে আনতে হবে।

৯.প্রতিনিয়ত ভালো ঘুমের অভ্যাস তৈরি করতে হবে।

১০.খাওয়া দাওয়া ও পানি খাওয়ার অভ্যাসটা ঠিক রাখতে হবে। ঘুম না এলে বড় বড় শ্বাস নিলেও অনেক সময় কাজে দেয়।

১১.দিনে ঘুমালে রাতে ঘুম আসবে না। কেননা শরীরের প্রয়োজনীয় ঘুমটুকু হয়ে গিয়েছে। সেক্ষেত্রে রাতে ঘুম না আসাটা অনিদ্রার মধ্যে পড়ে না।

এবার আসি ইনসমনিয়া নিয়ে। উপরোক্ত পদক্ষেপ গুলো অনুসরণ করার পরেও যদি আপনার ঘুমে অসুবিধা হয় তবে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন আপনি ইনসমনিয়ায় আক্রান্ত। এক্ষেত্রে নিজে আগ বাড়িয়ে ঔষধ না খেয়ে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। কেননা ঘুম সত্যি একটি  গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এতে হেলাফেলা করা একদম উচিত না। অনেক সময় অনিদ্রার কারণে মোটা হয়ে যাওয়ার ব্যাপার দেখা গেছে,মেজাজ খিটখিটে হওয়া তো স্বাভাবিক, কাউকে সহ্য পর্যন্ত হবে না। আরও অনেক ধরনের সমস্যা দেখা যায়।
তাই দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে যান।

Similar Posts

One Comment

  1. ইনসমনিয়ার চেয়ে মারাত্মক জিনিস কমই আছে। আমার কিছু ফ্রেন্ডদের দেখে বুঝতে পারি এটা। ইচ্ছানুযায়ী ঘুমাতে পারাটা অনেক বড় নেয়ামত।

Comments are closed.