অটোম্যান সাম্রাজ্যের উত্থান পতন ( পর্ব ৩ )

অটোম্যান সাম্রাজ্যের বিস্তৃতির সর্বোচ্চ পর্যায়:

সুলতান দ্বিতীয় মুরাদের মৃত্যুর পর তার পুত্র সুলতান মুহাম্মদ আল ফাতেহ বা দ্বিতীয় মুহাম্মদ ২১ বছর বয়সে ১৪৫১ খ্রিষ্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণ করেন। সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদের ক্ষমতা লাভের পরপরই বায়েজেন্টাইন সম্রাটের ইন্ধনে পূর্বের মতোই উসমানীয় সাম্রাজ্যে বিশৃঙ্খলা ছড়াতে থাকে। বারংবার উসমানীয় সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে ষড়যন্ত্র ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কারণে এবং কন্সটেন্টিনোপোলের ভৌগোলিক গুরুত্ব বিবেচনা করে তিনি যেকোনো মূল্যে শহরটিকে দখল করে পূর্বসূরিদের অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন। কন্সটেন্টিনোপোল জয়ের লক্ষ্যে সুলতান মুহাম্মদ আল ফাতেহ তৎকালীন বিশ্বের সর্বাধুনিক রণপ্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলেন।

১৪৫৩ সালের ৬ এপ্রিল সকল রণপ্রস্তুতি সম্পন্ন করে সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদ স্থলপথে নিজ সেনাবাহিনী নিয়ে কন্সটেন্টিনোপোলের নগর প্রাচীরের সামনে গিয়ে উপনীত হন। ব্যাপক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও অগণিত প্রাণের বিনিময়ে শেষ পর্যন্ত ১৪৫৩ সালের ২৯ মে তিনি বহু প্রতীক্ষিত এই কন্সটেন্টিনোপোল জয় করেন। কন্সটেন্টিনোপোল জয়ের পরে তিনি সেখানে রাজধানী স্থানান্তর করেন ও অনেকগুলো মসজিদ,মাদ্রাসা ও হাসপাতাল নির্মাণ করেন।

কন্সটেন্টিনোপোল
কন্সটেন্টিনোপোল

তিনি ১৪৬৩ সালে বসনিয়া ও ১৪৬৬ সালে আলবেনিয়া জয় করেন। ১৪৮০ সালে সেনাপতি কায়দুক আহমেদ ইতালির অট্রেন্টো জয় করেন। ফলে ইতালির একাংশ উসমানীয় সাম্রাজ্যের অধীনে আসে। অবশেষে সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদ ইতালিসহ সম্পূর্ণ ইউরোপ জয়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। এমতাবস্থায় তার মৃত্যু হলে এই অভিযান ব্যর্থ হয়। সুলতান মুহাম্মদ আল ফাতেহ এর মৃত্যুর পর তার পুত্র সুলতান বায়েজিদ (২য়) ১৪৮১ সালে সিংহাসনে বসেন। তিনি মোট ৩২ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেন পরবর্তীতে তার পুত্র সেলিম ১৫১২ সালে সিংহাসনে আরোহণ করেন।

১৫শ ও ১৬শ শতাব্দীতে উসমানীয় সাম্রাজ্য বিস্তৃতির যুগে প্রবেশ করে। এসময় ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যকার বাণিজ্য রুটের বিস্তৃত অংশ নিয়ন্ত্রণ করার কারণে সাম্রাজ্য অর্থনৈতিক উন্নতি লাভ করে। ১৫১৪ সালে সুলতান সেলিম পারস্যের সাফাভী সম্রাট প্রথম ইসমাইলকে পরাজিত করে দক্ষিণ এবং পূর্বদিকে সাম্রাজ্য বিস্তার করেন এবং রাজধানী তাবরীয উসমানীয়দের দখলে আসে। ১৫১৬ সালে তিনি সিরিয়া,ফিলিস্তিন ও আরবের বৃহত্তর অঞ্চল জয় করে নেন। ১৫১৭ সালে মিশরকেও উসমানীয় সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করে নেন। সুলতান সেলিম এর পর তার পুত্র সুলতান সুলেমান ১৫২০ সালে সিংহাসন আরোহণ করেন।

তিনি অটোম্যান সাম্রাজ্যের সবচেয়ে পরাক্রমশালী সুলতান হিসেবে পরিচিত। তার শাসনামলে এই সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে। ১৫২১ সালে হাঙ্গেরি রাজা দ্বিতীয় লুই সুলতানের দূতকে হত্যা করলে সুলতান সুলেমান সৈন্যবাহিনী নিয়ে অগ্রসর হয়ে হাঙ্গেরি আক্রমণ করেন ও রাজধানী বেলগ্রেড দখল করেন। ১৫২৬ সালে হাঙ্গেরি রাজা দ্বিতীয় লুই পুনরায় শক্তি সঞ্চয় করে মুসলিমদের উপর আক্রমণ করলে সেনাপতি ইব্রাহিম পাশার নেতৃত্বে অটোম্যান সৈন্যরা তাদেরকে মোহাক্স এর প্রান্তরে পরাজিত করেন এবং রাজধানী বুদাপেস্ট জয় করেন। ১৫২৯ সালে তিনি ভিয়েনা অবরোধ করেন তবে শহরটি জয় করতে ব্যর্থ হন। ১৫৩২ সালে তিনি পুনরায় ভিয়েনা অবরোধ করলেও এ অভিযান ও ব্যর্থ হয়। এ সময় ট্রান্সিলভানিয়া,মোল্ডাভিয়া ও ওলাশিয়া অটোম্যানদের অনুগত রাজ্যে পরিণত হয়। পূর্বদিকে পারস্যের সাফাভী সাম্রাজ্যের নিকট থেকে বাগদাদ সহ মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ অঞ্চল তিনি দখল করে নেন। এছাড়াও তিনি উত্তর আফ্রিকায় আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া ও লিবিয়া জয় করেন। সুলতান সুলেমানের গড়ে তোলা নৌ-বাহিনী আরব সাগর,ভূমধ্যসাগর ও লোহিত সাগরে তাদের কর্তৃত্ব স্থাপন করে।

১ম পর্ব- অটোম্যান সাম্রাজ্যের উত্থান পতন (পর্ব ১)
২য় পর্ব- অটোম্যান সাম্রাজ্যের উত্থান পতন (পর্ব ২)
৪র্থ পর্ব-অটোম্যান সাম্রাজ্যের উত্থান পতন (পর্ব ৪)
৫ম পর্ব- অটোম্যান সাম্রাজ্যের উত্থান পতন (পর্ব ৫)

Similar Posts

2 Comments

Comments are closed.