স্মার্টফোন আসক্তি! ছোটদের সরলতা নাকি বড়দের অসচেতনতা?

মার্টিন কুপার, বিখ্যাত মার্কিন আবিষ্কারক। যার হাত ধরেই আজকের পৃথিবী প্রথম সেলুলার ফোনের জগতে প্রবেশ করে।হ্যা ঠিকই ধরেছেন,তার বিহীন ফোন বা যে বস্তূটিকে আমরা মোবাইল ফোন হিসেবে চিনি তার জনক বলা হয় এই মার্টিন কুপার কে,তিনিই পৃথিবীতে প্রথম মোবাইল ফোনে কথা বলা ব্যক্তি।

একটা সময় ছিলো যখন এই মোবাইল ফোন শুধু মাত্র মানুষের তথ্য আদান প্রদান কাজেই ব্যবহৃত হতো। ধীরে ধীরে প্রযুক্তির অবিস্মরণীয় উন্নতির বদৌলতে এই মোবাইল ফোন আজ পরিণত হয়েছে স্মার্টফোন নামক যন্ত্রে। এখন তো অ্যান্ড্রয়েড বা আইফোন নাম গুলোর সাথে আমরা সকলেই অতি পরিচিত। কথা বলা,ছবি তোলা,গান শোনা,গেমস খেলা অথবা অফিসের ছোটখাটো কাজেও আজ‌ স্মার্টফোনের জয়জয়কার। অবস্থা এমন যে বর্তমান‌ সময়ে স্মার্টফোন ছাড়া মানুষের দৈনন্দিন জীবন  একেবারেই অকল্পনীয়।

কিন্তু এতো কিছুর পরেও কোথায় যেনো একটু দুশ্চিন্তা থেকেই যায়! আমরা কি একটু বেশিই এই প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকে পড়ছিনা? শিশুদের কথা চিন্তা করলে ব্যাপারটা যেনো আরও ভয়াবহ!

বর্তমান বিশ্বের দিকে তাকালে বোঝা যায় এই স্মার্টফোন গুলোর  দিকে শিশুদের আসক্তি কতটা চরমে। তাদের কাছে পুরো পৃথিবীটাই যেনো এই চারকোনা বাক্সে বন্দী। স্মার্টফোনে আসক্ত এই শিশুরা এখন আর মাঠে ক্রিকেট অথবা ফুটবল নিয়ে মেতে ওঠেনা,তারা মনে হয় জানেইনা কিভাবে সাঁতার কাটতে হয়,কিভাবে ঘুড়ি ওড়াতে হয়।তারা হয়তো ভাবতেই পারেনা তাদের এই ফোন আর ঘরের বাইরেও বিশাল একটা পৃথিবী আছে। স্মার্টফোনের এই নেশা নিয়ে বেড়ে উঠতে উঠতে তারা যেনো তাদের শৈশবের দুরন্তপনা কেই হারিয়ে ফেলছে।এর ফলাফল কিন্তু শারীরিক এবং মানসিক কোনো দিক দিয়েই একটা শিশুর জন্য সুখকর হয়না। এই সহজ সত্যটা অনুধাবন করার জন্য আমাদের কিন্তু জটিল কোন সমীকরণের দরকার পরেনা।

এই যে শিশুদের স্মার্টফোন আসক্তি, এর জন্য কি শুধুমাত্র শিশু মন দায়ী? অবশ্যই না। এর দায়ভার অনেকাংশেই অভিভাবকদের উপরও বর্তায়। আমরা আসলে নিজেরা কতটুকু সচেতন এই ব্যাপারে? আমরা কি এই অবুঝ শিশুদের আকাশের বিশালতা বুঝাই?আমরা কি তাদের গল্পের বইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই?আমরা কি তাদের আঁকাআঁকি তে উৎসাহিত করি?অমরা কি চেষ্টা করি তাদের দুরন্তপনায় মেতে ওঠা শৈশবের অংশিদার হতে? বেশিরভাগ সময়ই হয়তো উত্তর আসবে,না আমরা করিনা!কেনো করবোনা? আমাদের দায়িত্ব বোধ কি বলে এই ব্যাপারে?

আমরা হয়তো মনের অজান্তে নিজেরাই আজ এই প্রযুক্তিতে আসক্ত । আমরা হয়তো বেশিরভাগ সময়ই অবাধ্য শিশু মনকে শান্ত করতে গিয়ে তাদের হাতে এই ফোন ধরায়ে দিচ্ছি। ভিডিও গেম,গান অথবা ইউটিউব নামক এ্যাপসের কোনো বিনোদন মূলক ভিডিওর মাধ্যমে তাদের জেদ অথবা দুরন্তপনা কে সাময়িক ভাবে শান্ত করছি।অথচ আমরা চাইলেই তাদের কাছে কোনো বইয়ের কাল্পনিক চরিত্র গুলো নিজেদের বাচনভঙ্গির মাধ্যমে জীবন্ত করে তুলতে পারতাম,আমরা চাইলেই তাদের কে কাজলা দিদি,আলাদিন,আলিবাবা চল্লিশ চোর,সিনবাদ এই চরিত্র গুলোতে আচ্ছন্ন  করে রাখতে পারতাম। এতে করে অন্ততঃ তাদের মনের উপর চাপ সৃষ্টি না হয়ে জানার আগ্রহ টা বাড়তো।

প্রিয় অভিভাবক উপরের বিষয়গুলো ভেবে দেখুন। কোনো আসক্তিই সুখকর হয়না। আপনার শিশুদের স্মার্টফোনে আসক্ত হওয়া থেকে দুরে রাখুন।তাদের সুস্থ সুন্দর স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করুন।এ ই ক্ষেত্রে যদি নিজেদের পরিবর্তন করতে হয় তাহলে সেটাই আগে করুন।

মনে রাখবেন,আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।

Similar Posts

8 Comments

  1. সময় উপযোগী একটা লেখা, যেখানে আমাদের অভিভাবকদের উচিত বাচ্চাদের সময় দেওয়া সেখানে তাদের দুষ্টামি গুলো আমাদের কাছে হয়ছে বিরক্তির কারণ যেখান থেকে বাচতে আমরা তাদের হাতে দিচছি ফোন যা তাদের শারীরিক মানসিক দুই দিক থেকেই হুমকির কারণ হয়ে দাড়াবে।

  2. যুগান্তকারী একটা লেখা। বর্তমান সময়ের স্থিরচিত্রটাই যেনো ফুটে উঠেছে। এখন স্মার্টফোন প্রয়োজন এর চেয়ে অপ্রয়োজন এবং সময় অপচয়েই বেশি ব্যবহৃত। যেটা শিশুদের কোমল মনেও আঘাত করছে ব্যাপকভাব।

  3. অসাধারন লেখনী। বর্তমান সময়ের জন্য যথেষ্ট উপযোগী আর বাস্তব সত্য কথা গুলো বলেছেন। আসলে আমরা অভিভাবকরা নিজেদের অভাব বুঝতে দিতে চাই না বকেই শিশুদের হাতে ধরিয়ে দেই এ শয়তানের বাক্স। তবে বেশী আসক্তি হলে আমরাই থামানোর ব্যর্থ চেষ্টা করি যা অনেক সময়ই হিতে বিপরীত হয়ে যায়। তাই আসলেই সময় থাকতে আমাদেরই সচেতনতা বৃদ্ধি করা দরকার। সচেতনতার শুরু হোক আমার থেকেই। ধন্যবাদ লেখককে।।

Comments are closed.