বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ভর্তি জিজ্ঞাসা (২য় পর্ব)
গত পর্বে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি বিষয়ক সাধারণ তিনটি প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। আজকে আমরা বহুল জিজ্ঞাসিত আরো দুটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি সবার আগে উঠে আসে সেটি হচ্ছে – ৫ বছরে মোট কত টাকা খরচ হতে পারে?
এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কিছুটা কষ্টাসাধ্য। কারণ এটি কলেজ, স্থান এবং ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। এছাড়া বছরে বছরে নতুন নীতিমালা হয় এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিরও হিসাব করতে হয়।
বর্তমানে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক নির্ধারিত মোট প্রদেয় হচ্ছে ২২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এটা ভবিষ্যতে সামনের বছরগুলোতে বাড়তেও পারে।
এর মধ্যে মধ্যে ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা এডমিশন ফি। ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা হল ইন্টার্নি ফি যা শিক্ষার্থীকে ইন্টার্নশিপের সময় মাসিক ১৫ হাজার টাকা হারে ফেরত দেওয়া হবে। ১৬,২০,০০০ + ১,৮০,০০০ = ১৮,০০,০০০
মোট ১৮ লাখ টাকা এককালীন দিতে হয় ভর্তির সময়। কোনো কোনো মেডিকেল কলেজে পুরো টাকা একবারে না দিয়ে কিস্তিতে দেওয়ার সুবিধাও আছে। বাকি ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা হল ৫ বছরের টিউশন ফি যা মাসিক ৮ হাজার টাকা হিসেবে নেওয়া হয়।
তারপর আসে থাকা, খাওয়া এবং হাত খরচের হিসাব। মাসিক ন্যূনতম ১০ হাজার টাকা ধরলে ৫ বছরে ৬০ মাসের মোট খরচ ৬ লক্ষ টাকা।
প্রথম বর্ষে কঙ্কাল কিনতে খরচ ৩০-৩৫ হাজার টাকা। এরপর বিভিন্ন সময়ে বই,খাতা, শীট ইত্যাদি কিনতে হয়। মূল বইগুলোর দাম দেড়-দুই হাজার টাকা করে হয়ে থাকে। এছাড়া অন্যান্য ইন্সট্রুমেন্টস আছে। সব মিলিয়ে একজন শিক্ষার্থী কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়া নিয়মিত পাস করে বের হতে মোট খরচ ৩০ লাখ টাকা পেরিয়ে যায়।
তাই, একজন শিক্ষার্থীর পরিবার যদি ৫ বছরে গড়ে ৩০-৩৫ লাখ টাকা খরচ করার সামর্থ্য রাখে তবেই বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
এবারে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা যাক।
সাধারণত সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তির পর একটি নির্দিষ্ট তারিখে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ভর্তির কার্যাবলী সম্পন্ন করার চেষ্টা থাকে। নির্দিষ্ট তারিখে অনলাইনে অথবা কলেজ ক্যম্পাসে গিয়ে ১০০০ টাকার বিনিময়ে আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে হয়। ফরম জমা দেওয়ার সময় সত্যায়িত ছবি, সনদপত্র, প্রশংসাপত্র, নাগরিকত্ব সনদ ইত্যাদি কাগজপত্র দরকার হয় যা বিজ্ঞপ্তিতে বিস্তারিত উল্লেখ করা থাকে।
আবেদন ফরম জমা দেওয়ার পর কিছুদিন সময় নিয়ে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফল অনুযায়ী মেরিট পজিশন অনুসারে ভর্তিরযোগ্য শিক্ষার্থীর তালিকা প্রকাশ করে প্রতিটি মেডিকেল কলেজ আলাদাভাবে। যে যে শিক্ষার্থী ঐ কলেজে আবেদন করবে তাদের মধ্যে মোট আসন সংখ্যার হিসাব করে ভর্তিযোগ্য ও অপেক্ষামান তালিকা দেওয়া হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একজন শিক্ষার্থী একাধিক মেডিকেল কলেজে আবেদন ফরম জমা দিয়ে থাকে। তবে ঐ একজন শিক্ষার্থী ভর্তি হয় শুধু একটি কলেজে। কিন্তু তার মেরিট পজিশনটি প্রথম তালিকায় তার আবেদন করা সব কলেজেই প্রদর্শিত হয়। এজন্য দেখা যায় অপেক্ষামান তালিকা থেকে অনেক শিক্ষার্থীই পরবর্তীতে ভর্তির সুযোগ পায়। তাই অপেক্ষামান তালিকায় থাকলে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
অনেক অসাধু মেডিকেল কলেজ এই সময়টাতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীকে ভর্তি না হতে পারার ভয় দেখিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক নির্ধারিত ফি এর চেয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ভর্তির অফার দেয়। এমন চক্রের হাত থেকে সাবধান থাকতে হবে। নিয়মানুযায়ী অপেক্ষামান তালিকা থেকেই ভর্তি হওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে অবশ্যই নিজের মেরিট পজিশনের অবস্থান বুঝে যে মেডিকেল কলেজগুলোতে তার তালিকায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে সেগুলোতে আবেদন করতে হবে। কলেজে অধ্যয়নরত বর্তমান শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করে বিগত বছরগুলোতে কত মেরিট পজিশন পর্যন্ত ভর্তি নিয়েছে তা জেনে নেওয়া যেতে পারে।
কলেজ থেকে তারিখ বলে দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত দিনে প্রদেয় অর্থ সহকারে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকে।
আগামী পর্বে আমরা আলোচনা করব কলেজ বাছাইয়ে পরামর্শ এবং বেসরকারি মেডিকেল কলেজের দরিদ্র ও মেধাবী কোটা নিয়ে।
লেখক : শিক্ষার্থী, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ,সিলেট।