সম্পর্কের একঘেয়েমী কাটাতে ভ্রমণ কতটা কার্যকরী?
ভ্রমণ শুধুমাত্র রোমাঞ্চকর ও উত্তেজনাপূর্ণ নয়, আপনার মনের মানুষটির সাথে কাটানো সময় উপভোগের দারুণ একটি মাধ্যম। বেশিরভাগ দম্পতি মনে করেন, সম্পর্কের একঘেয়েমি কাটাতে হলে মাঝে মাঝে দম্পতিদের উচিত ট্রিপে বেড়িয়ে পড়া। কিন্তু তাদের বেশিরভাগের চিন্তাভাবনা চিন্তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়।
১০০০ হাজার দম্পতির উপর করা এক গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে ৬৩% এর মতে ভ্রমণ তাদের সম্পর্কের উষ্ণতা আরো বৃদ্ধি করেছে যেটি তাদের সাহায্য করেছে একসাথে থাকতে। ভ্রমণ এমন ছোট ছোট কিছু অনুভূতি উপহার দেয় যা সারাজীবন মনের ক্যানভাসে রঙ্গিন হয়ে থাকে।
প্রত্যেক ভ্রমণ নতুন কিছু অভিজ্ঞতা জন্ম যে অভিজ্ঞতা গুলোর আলোকে সম্পর্ক আরো গভীর হয়। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি সাজানো হয়েছে কেন ভ্রমণ দাম্পত্য জীবনে জরুরী তা নিয়ে। চলুন দেখে নেওয়া যাক তেমন কিছু কারণঃ
পরস্পরকে আরো কাছাকাছি আনায়নঃ
ভ্রমণের সময় উভয়ই কিছু অদ্ভুত, মজার ঘটনার সম্মুখীন হয়। এই বিশেষ মুহূর্ত গুলোই সম্পর্কে নতুন এক বন্ধন তৈরী করে। রোজকার জীবনে সাধারণত রুটিন মাফিক চলতে হয়। নিত্যদিনের গতিপথ থেকে বেরিয়ে হঠাৎ একটি ট্যুর দাম্পত্য জীবনের জন্য হতে পারে নতুন কোন মোড়। বাড়ি থেকে দূরে সম্পুর্ণ এক নতুন পরিবেশে গেলে বোঝা যায় দুটো মানুষের একে অপরকে কতটা প্রয়োজন।
একে অপরের প্রতি কেয়ারিং মনোভাব বেড়ে যাওয়াঃ
ভ্রমণে ভালো অভিজ্ঞতার সাথে কিছু বাজে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। ধরুন, আপনার মানিব্যাগ হারিয়ে গেলো কিংবা আপনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। এই খারাপ অভিজ্ঞতা গুলো আপনাকে বুঝিয়ে দেবে আপনি তার প্রতি কিংবা সে আপনার প্রতি কতটা যত্নশীল। জীবনের খারাপ সময় গুলোতে কিভাবে একে অপরের পাশে থাকতে হয় তা এ ছোট ছোট অভিজ্ঞতাগুলোই থেকেই শিখে নিতে হয়।
আজীবন মনে রাখার মতো কিছু স্মৃতিঃ
যে মানুষটির সাথে সারাজীবন থাকবেন বলে ভেবে নিয়েছেন সে মানুষটির সাথে ভ্রমণে গেলে আপনাকে এক মুহূর্তের জন্যও নিরবিচ্ছিন্নতার অনুভূতি আচ্ছন্ন করতে পারবেনা। জীবনকালের শেষ বেলাতে যখন পৌঁছে যাবেন তখন এই অনুভূতি গুলোকে নিয়েই আরো হাজার বছর এক সাথে বাঁচতে ইচ্ছে হবে।
পারস্পরিক বিশ্বাস দৃঢ় হওয়াঃ
একে অন্যের প্রতি নির্ভর করা এটি মানুষের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য গুলোর মধ্যে একটি। ভ্রমণ এই বিশ্বাসের জায়গাটা আরো দৃঢ় করতে সহায়তা করে। আপনি আপনার বাড়ি থেকে যখন অন্য কোন জায়গায় ঘুরতে যাবেন তখন আপনার ভ্রমণ সঙ্গীটির উপর আপনার আস্থা আপনা আপনি বেড়ে যাবে। কারণ, আপনি জানেন সে আপনার সব প্রয়োজনে পাশে থাকবে, আপনাকে দেখে রাখবে। একে অপরের প্রতি আস্থা যতটা গভীর হবে সম্পর্ক ঠিক ততটাই গভীর হবে।
একের প্রতি অপরের সম্মান বৃদ্ধি পাওয়াঃ
ভ্রমণের সময় যদি কোন চাপের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তখন আপনার পাশে থাকা মানুষটি চেষ্টা করবে সব কিছু ঝামেলাবিহীন ভাবে সামাল দিতে যেন আপনার কোন সমস্যা না হয়। সংসার জীবনে ছোটখাটো অনেক ঝামেলা হয়ে থাকে। এমন কোন কারণে যদি আপনি তার প্রতি বিরক্ত থাকেন তবে ভ্রমণের এই ধরনের অভিজ্ঞতাগুলো আপনার সব মান অভিমান ভোলাতে সাহায্য করবে। আর আপনার মনের মানুষটির প্রতি সম্মানটা আরো বেড়ে যাবে।
নতুনভাবে কাজের উদ্যম ফিরে পাওয়াঃ
আপনি আর আপনার স্ত্রী দুজনে কাজ নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। হয়তো নিজেরাই নিজেদের থেকে অনেকটা দূরে সরে যাচ্ছেন। কাজকে কিছু দিনের জন্য ছোট দিয়ে হঠাৎ বেড়িয়ে পড়ুন কোন ট্রিপে। এই কিছুদিন সময় শুধু নিজেদের জন্য তুলে রাখুন। ফিরে আসার পর দেখবেন নিজেদেরকে আবার নতুন করে খুঁজে পেয়েছেন। কাজের ক্ষেত্রে যে একঘেয়েমি মনোভাব কাজ করতো সেটাও এখন আর অনুভব হচ্ছেনা।
বর্তমান সময়কে উপভোগ করাঃ
দুজন মিলে যখন কোথাও ঘুরতে যাবেন তখন দেখবেন বর্তমান সময়টাকে অনেক বেশি উপভোগ্য মনে হচ্ছে কারণ এই সময়টি আপনি আপনার ভালোবাসার মানুষটির সাথে ভাগ করে নিচ্ছেন। কোন মানুষই নিঁখুত নয়। সবারই কিছুনা কিছু খুঁত থাকে। একসাথে থাকলে দেখবেন সে মানুষটির খুঁত গুলো আপনার খুব একটা খারাপ লাগছেনা। মনে হবে একসাথে পথ চলছি এটাইতো বড় পাওয়া।
ভ্রমণ কালে নিজেদের মতো করে সময়কাটানোর পাশাপাশি ভালো লাগে নিজের কথা বলতে আপনার পাশের মানুষের কথা শুনতে। এমন অনেক পুরনো স্মৃতির কথা শেয়ার করা হয় যা হয়তো আপনি আগে জানতেন না। দাম্পত্য জীবনে যত বেশী একে অন্যের সাথে মন খুলে কথা শেয়ার করবেন ততই নিজেদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠবে।
নতুন পরিকল্পনাঃ
কিছুদিন নিজেদের সময় দেওয়ার পর উভয়ই বুঝতে পারবেন কাজের বাইরেও একটা জগৎ থাকে যেখানে নিজেদের জন্যও কিছুটা সময় রাখতে হয়। এরপর দেখবেন একটা ভ্রমণ শেষ হওয়ার আগে নিজেরাই সময় বের করে নিচ্ছেন পরের ভ্রমণের জন্য।
শুধু একঘেয়েমি দূর করার জন্যে নয়। নিজেদেরকে জানার জন্য, একে অন্যকে বোঝার জন্য প্রত্যেক দম্পতির উচিত মাঝে মাঝে ভ্রমণ করা। হয়তো অনেক সময় আপনার চেনা মানুষটিকে আপনার কাছে অচেনা লাগতে পারে। হয়তোবা মনে হতে পারে সম্পর্কটা আর আগের মতো নেই। তাই, নিজেদের সময় দিতে শিখুন। পুরনো সম্পর্কে নতুন প্রাণ সঞ্চারের জন্য বেড়িয়ে পড়ুন আপনার সঙ্গীর হাত ধরে নতুন কোন জায়গায়।