কোলেস্টেরল কি এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রনের উপায়

আপনি কি মনে করেন যে কোলেস্টেরল স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ? আসলে কোলেস্টেরল কিন্তু ক্ষতি কারক নয়, প্রতিটি জীবিত প্রানীর শরীরে রক্তে সাথে মিশে থাকে কোলেস্টেরল। কিন্তু যদি রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা বৃদ্ধি পায় তখনই এটা আমাদের জন্য আতঙ্কের বিষয়ে পরিণত হয়।

কোলেস্টেরল কি?
কোলেস্টেরল এক ধরনের চর্বিজাতীয় স্টেরয়েড যা সেল মেমব্রেনে পাওয়া যায় এবং এটা সকল প্রাণীর রক্তে পরিবাহিত হয়। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সেল মেমব্রেনের একটি অত্যাবশ্যক উপাদান হচ্ছে কোলেস্টেরল।
কোলেস্টেরল মেমেব্রেনের তরল পদার্থের ভেদ্যতা সচল রাখে এবং তারল্য বজায় রাখে।
কোলেস্টেরল এর মাত্রা হ্রাস পেলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন যকৃত বেশি মাত্রায় কোলেস্টেরল তৈরি করে শারীরিক ভারসাম্য বজায় রাখে।

কোলেস্টেরল মাত্রা বৃদ্ধির কারণসমূহ
অনেক সময় এমন হয় যে আমাদের বাইরে থেকে সুস্থ মনে হলেও জোরে হাঁটাহাঁটি বা সিঁড়ি দিয়ে উঠা নামা করলে অল্পতেই হাঁফিয়ে উঠি। সাধারণত আমরা একে তেমন গুরুত্ব দিই না, ভাবি এটা তো কমবেশি সবারই হয়। কিন্তু পরে সমস্যা বাড়লে চিকিৎসকের পরামর্শে পরীক্ষা করলে ধরা পড়ে মাত্রাতিরিক্ত কোলেস্টেরল। কোলেস্টেরল এর কারনে উচ্চ রক্তচাপ, ওবেসিটি সহ হার্টেও বাসা বাঁধতে পারে নানা অসুখ। কোলেস্টেরলকে অবহেলা করলে তার ফলও খুব একটা সুখকর হয় না। খাবারের মাধ্যমে মাত্রাতিরিক্ত কোলেস্টেরল যদি শরীরে প্রবেশ করে তবে ঘটতে পারে বিপদ।

যদি আমরা বেশি পরিমানে শর্করাজাতীয় খাদ্যগ্রহণ করি তবে তা পরিবর্তিত হয় ফ্যাটে। এরফলে দেহকোষগুলোতে তৈরি হয় অধিক পরিমাণে কোলেস্টেরল। এই মাত্রাতিরিক্ত কোলেস্টেরল ধমনীর প্রাচীরে জমা হয় ও রক্তের প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে।
কোলেস্টেরল নিয়ে যদি আমরা প্রথম থেকে সচেতন না হই তবে ভবিষ্যতে নানা জটিল অসুখের শিকার হতে হবে।

তবে আশার ব্যাপার এই যে, রক্তে কোলেস্টেরল মাত্রা খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। শুধুমাত্র আমাদের দৈনন্দিন রুটিনের কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে। একজন সুস্থ সবল মানুষের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা হওয়া উচিত প্রতি ডেসিলিটারে ১৬০ মিলিগ্রামেরও কম। যদি কোলেস্টেরলের মাত্রা ১৬০ মিলিগ্রামের বেশি হয় তবে কিছু অভ্যাস আয়ত্তে আনলে সহজেই মাত্রাতিরিক্ত কোলেস্টেরল থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
আমাদের খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে- চর্বি জাতীয় মাংস, পাম তেল, ডালডা, নারকেল, ডিমের কুসুম, মাখন, ঘি, কাজু বাদাম ইত্যাদি। রান্নায় ব্যবহার করতে হবে কম তেল-মশলা ,এটা হার্টের পক্ষে যেমন ভাল, তেমনই কোলেস্টেরলের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণেও রাখে।প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, ফাইভার ও ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার।
সাথে থাকবে শাক-সবজি, তরিতরকারি, ফল এবং পর্যাপ্ত পরিমান পানি। সর্বদা এমন খাবার খেতে হবে যাতে ২০০ মিলিগ্রামের কম কোলেস্টেরল আছে। খাদ্যতালিকায় স্নেহজাতীয় পদার্থ কম থাকলে রক্তে কলেস্টেরলের মাত্রা সহজেই কমানো যায়।
শুধুমাত্র ডায়েটই নয়, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রনে লক্ষ্য রাখতে হবে আরও কিছু খুঁটিনাটি বিষয়েও।

বাইরে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে বিশেষ করে ফুটপাতের দোকান, রেস্টুরেন্ট এর অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলুন।
যদি অনন্যোপায় হয়ে বাইরের থেকে খাবারের প্যাকেট কিনতেই হয় তবে তার পুষ্টিগুণ দেখে নিন। শুধুমাত্র কতটা ফ্যাট তা দেখলেই হবে না, কতটা ট্রান্স ফ্যাট আছে তা-ও দেখতে হবে। ট্রান্স ফ্যাট থেকেও শরীরে কোলেস্টেরল জমে।
শরীরের টক্সিন পদার্থ অপসারনে পানির বিকল্প নাই। উপযুক্ত পরিমাণ পানি পান সব ধরনের হার্টের অসুখ ৫০-৬০ শতাংশ কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়া ট্রাইগ্লিসারাইড ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে একমুঠো বাদাম হতে পারে আপনার সমস্যার অন্যতম সমাধান। চিপস বা ভাজাভুজি পরিবর্তে বাদাম খেলে তা আপনার শরীরে ভালো কোলেস্টেরলকে বাড়াতে সহায়তা করবে।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
কোলেস্টেরল কমানোর জন্য ব্যবহৃত ওষুধের মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। পেশি ধ্বংস, ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি, যৌন ক্ষমতা হ্রাস- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে অন্যতম।
এজন্য প্রাকৃতিক উপায়ে এবং ডায়েট কন্ট্রোল এর মাধ্যমেই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রন করা উচিত।

আজ এই পর্যন্ত।
সুস্থ থাকুন, ভাল থাকুন।
ধন্যবাদ।
আসসালামু আলাইকুম।

Similar Posts

One Comment

  1. কোলেস্টেরলের ইতিবাচক দিক থাকলেও নেতিবাচকটাই বেশি। সতর্কতামূলক এমন পোস্ট দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। তবে বয়স,উচ্চতা ও লিঙ্গ অনুযায়ী একটি ডায়েট চার্টের ছবি সংযুক্ত করে দিলে ভালো হতো।

Comments are closed.