তাসনিম নিশাত / মে 10, 2020
একজন মুসলিমের জন্য রোজা একটি ফরজ ইবাদত। তাই আমরা অক্ষরে অক্ষরে সেটা পালন করি। কিন্তু আসলে আমরা অনেকেই জানি না, যে রোজা শুধুমাত্র ইবাদত নয়, এর অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতাও রয়েছে, যেগুলো আসলেই বৈজ্ঞানিক যুক্তি দ্বারা প্রমাণিত। এজন্য শুধু আমাদের ধর্মেই না, বিশ্বের অনেক ধর্মেই নানান নামে, নানান ভাবে এরকম অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকার নিয়ম প্রচলিত আছে। অর্থাৎ এক খাবার থেকে আরেক খাবারের মাঝের সময় টা বাড়িয়ে দেওয়া। এমনকি অনেক ধরনের উপবাস প্রচলিত আছে। যেমন ২৪ ঘন্টা টানা না খেয়ে থাকা, ওয়াটার ফাস্টিং, অর্থাৎ সারাদিন শুধু পানি খেয়ে থাকা, দিনের কিছু অংশ না খেয়ে থাকা, এবং পরবর্তী অংশ ঘন ঘন খাওয়া।
এই উপবাসের স্বাস্থ্য উপকারিতা এত বেশি যে নিউট্রশনিস্ট, জিম ইন্সট্রাক্টর সকলেই এখন সুস্থ থাকার চাবিকাঠি হিসেবে উপবাসকে বেছে নিতে উদ্বুদ্ধ করছেন। তো কথা না বাড়িয়ে চলুন আমরা দেখে নেই, রোজা রাখার মাধ্যমে স্বাস্থ্যগত কোন উপকারগুলো আমরা পেতে পারি।
অনেক গবেষনা থেকেই দেখা গেছে যে নরমাল ডায়েটিং এর চেয়ে যদি খাবার ধরন এমন করা হয় যেখানে এক খাবার থেকে আরেক খাবারের সময়টা বেশি তাহলে ওজন কমানো বেশি কার্যকরী হয়। কারন এই লম্বা সময়ে শরীর এনার্জির উৎস হিসেবে ইন্টারনাল ফ্যাট কে বেছে নিতে পারে এবং এই লম্বা ডিউরেশনের পর যথেষ্ট পরিমান পানি ও শরীরে শক্তি যোগানোর জন্য গ্লুকোজ খাওয়াও জরুরি।
রোজা বা উপবাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হল মেটাবলিজম বৃদ্ধি। খাবারে কিছুক্ষন বিরতি দেওয়ার কারনে আমাদের হজম প্রক্রিয়া একটু বিশ্রাম নিতে পারে। যা পরবর্তীতে, আপনার ক্যালরি বার্নিং কে সহায়তা করতে পারে। আর কারো যদি হজমে সমস্যা থেকে থাকে, এই গ্যাপ টার মাধ্যমে কিন্তু তার হজম প্রক্রিয়া আবার নিয়মতান্ত্রিক হতে পারে। যার ফলে গ্যাস্ট্রিক ধরনের সমস্যা কমতে পারে।
আপনি যদি ডায়েবেটিস আক্রান্ত হন, তাহলে আপনার জন্য সুখবর। রোজা রাখার মাধ্যমে আপনি আপনার ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রনে আনতে পারবেন। দিনের অর্ধেক বেলা না খেয়ে থাকা এবং একদিন অন্তর অন্তর না খেয়ে থাকা, দুটোই ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রনে কার্যকরী। আপনি যদি ডায়েবেটিস রোগী না ও হন, তবুও আপনার ব্লাড সুগার কন্ট্রোলে রাখা আপনার শরীরের জন্য উপকারি।
হ্যা আপনি ঠিকই পড়েছেন, রোজা আপনার ব্রেইনের কার্যক্ষমতা বাড়াতে পারে। গবেষনায় দেখা গেছে উপবাস এর মাধ্যমে ব্রেইনের একটা প্রোটিনের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় যার নাম ব্রেইন ডিরাইভড নিউরোট্রোফিক ফ্যাক্টর(বিডিএনএফ)। এই প্রোটিন টি ব্রেইনের কোষ কে এক্টিভ করে যাতে এই কোষ থেকে নতুন নতুন নিউরন তৈরি হয়, এবং অনেক কেমিক্যাল কম্পাউন্ড কে সু-স্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য উদবুদ্ধ করে। এছাড়াও এই প্রোটিনটি আলজাইমার ও পারকিনসন্স অসুখ প্রতিরোধ করে।
বিশ্বে প্রায় ৩১.৫% মানুষ গড়ে হৃদরোগের কারনে মারা যান। তবে নিজের ডায়েটে একটু পরিবর্তন আনলেই এই ঝুঁকি থেকে বেচে থাকা সম্ভব। আর এই ডায়েটের মধ্যে আনতে হবে উপবাস অর্থাৎ রোজা। এক গবেষনায় দেখা গেছে যে, প্রায় ৮ সপ্তাহ একদিন পর পর উপবাস করার পর তাদের কলেস্টরেল লেভেল প্রায় ২৫% কমে গেছে, আর ট্রাইগ্লিসারাইডস প্রায় ৩২% কমে গেছে।
খুব অবাক হলেও সত্যি, রোজা রাখার মাধ্যমে আপনি পরিষ্কার ত্বক পেতে পারেন ও ব্রন দূর করতে পারেন। কারন একদিন সারাদিন হজম প্রক্রিয়া বন্ধ থাকার কারনে শরীর অন্যান্য প্রক্রিয়া গুলো বেশি কার্যকরী হয়। ফলে শরীর নানান টক্সিক বস্তু দূরীকরন করতে পারে, সেটা মুখের বিভিন্ন দাগ, ব্রন থেকে শুরু করে, আপনার অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কেও সুস্থ রাখতে পারে।
রোজা একটি ধর্মীয় সংস্কৃতি হলেও ইদানিং এই প্রচলন একটি স্বাস্থ্য-বিধি অনেক বেশি খ্যাতি অর্জন করছে। অনেকেই সুসাস্থ্যের জন্য বেছে নিচ্ছেন এমন নিয়ম ৷ এই অল্প সময় না খেয়ে থাকার ফলে আমাদের নিজেদের শরীরে যে আমরা কতটা উপকার করছি তা হয়তো আমরা নিজেরাও জানি না।
FILED UNDER :লাইফস্টাইল , স্বাস্থ্য কথন
Comments are closed.
Comments
tasnim says
আশা করি যারা রোজা রাখায় হেলাফেলা করেন তারা এই লেখাটি দেখে আর রোজাকে অবহেলা করবেন না।
Mehedi Hasan Khan says
রোজা আমাদের উপর ফরজ। শুধু এ জন্যই আমি রোজা রাখবো। ধর্মের সাথে বিজ্ঞানকে মেলাতে গেলে অনেক ঝামেলার সৃষ্টি হয়। প্রতি রমজানেই একটা স্ট্যাটাস খুব শেয়ার হয় ফেসবুকে। জাপানের ডাক্তার ওশিনরি ওসুমি ২০১৬ সালে নোবেল পুরস্কার পান অটোফেজির উপর গবেষণা করে। পোস্টটাতে এই অটোফেজিকেই রোজা দাবী করা হয়। বাস্তবে আসলে তা না। অটোফেজি আর রোজার মধ্যে বেশ কিছু বেসিক পার্থক্য আছে।