মুক্ত স্বদেশে চার সেক্টর কমান্ডার
৩০ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা লাভ করে আমাদের এই বাংলাদেশ। নয়মাসব্যাপী এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন ১১ টি সেক্টরের সেক্টর কমান্ডাররা। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকুরিরত এসব বাঙালি সামরিক অফিসারদের দেশপ্রেম, ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্ব এবং অপূর্ব রণকৌশলের ফলেই যুদ্ধটা সমাপ্ত হয় খুব সহজভাবে। স্বাধীনতার পর দেশপ্রেমের অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ এই বীরদের অনেকেই আবার ফিরে যান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশগঠনের সংগ্রামে তারাও অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু সবার চিন্তাভাবনা, কর্মপদ্ধতি এবং শেষ পরিণতি এক ছিলো না। স্বাধীন বাংলাদেশে এরকম চারজন সেনানায়কের কর্মতৎপরতা এবং পরিণতি নিয়েই আমাদের আজকের এই আয়োজন।
১) জিয়াউর রহমান :
চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে গঠিত ১নং সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন জিয়াউর রহমান। পাশাপাশি তিনি ব্রিগেড ফোর্স ‘জেড ফোর্সের’ও কমান্ডার হিসেবে সম্মুখ সমরে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য তাকে বীরউত্তম খেতাবে ভূষিত করা হয়।
স্বাধীন দেশে তাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৭৫ সালের ২৪ আগস্ট তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। একই বছরের ৭ নভেম্বর এক অভ্যুত্থানের পর তিনি বাংলাদেশের ক্ষমতার একদম কেন্দ্রে চলে আসেন। ১৯৭৬ সালে তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি শপথ গ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৮১ সালের ৩০ মে সেনাবাহিনীর একদল বিপথগামী সদস্যের হাতে নিহত হন।
২) খালেদ মোশাররফ :
নোয়াখালী জেলা, কুমিল্লা, ফরিদপুর ও ঢাকা জেলার অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত ২নং সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন খালেদ মোশাররফ। পাশাপাশি তিনি ব্রিগেড ফোর্স ‘কে ফোর্সের’ কমান্ডার হিসেবেও মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখেন। বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ‘বীরউত্তম’ খেতাব লাভ করেন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর তার নেতৃত্বে এক সেনা অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। তিনি সেনাপ্রধান এবং প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন। কিন্তু ৩ দিনের মাথায় ৭ নভেম্বর পাল্টা অভ্যুত্থান সংঘটিত হলে তিনি বিদ্রোহী সেনাদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন।
৩) কে এম শফিউল্লাহ :
তিনি সিলেট, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা ও ঢাকা জেলার অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত ৩নং সেক্টেরের কমান্ডার ছিলেন। পাশাপাশি তিনি ব্রিগেড ফোর্স ‘এস ফোর্সের’ কমান্ডার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে ব্যাপক অবদানের জন্য তিনি ‘বীরউত্তম’ খেতাবে ভূষিত হন। ১৯৭২ সালে তাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেনাবাহিনী থেকে অবসরের পর বিভিন্ন দেশে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ থেকে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
৪) আবু তাহের :
তিনি সমগ্র ময়মনসিংহ জেলা (কিশোরগঞ্জ মহকুমা বাদে) নিয়ে গঠিত ১১নং সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে লড়াইয়ের এক পর্যায়ে সম্মুখ সমরে তার একটি পা হারান। যুদ্ধের পরে তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘বীরউত্তম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। স্বাধীন দেশে সেনাবাহিনীতে যোগ দিলেও মতবিরোধের কারণে কিছুদিনের মধ্যেই পদত্যাগ করেন। তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) কর্তৃক গঠিত গণবাহিনীর সর্বাধিনায়ক ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সংঘটিত অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান নায়ক তিনি। কিন্তু অভ্যুত্থানের সুফল তিনি ভোগ করতে পারেননি। পরবর্তীতে এক হত্যা মামলায় সামরিক আদালতে তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। যদিও কয়েক বছর আগে হাইকোর্ট এই ফাঁসির রায়কে অবৈধ ঘোষণা করেছে।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
ভালোই লিখসোস
ধন্যবাদ
ভালো!
ধন্যবাদ ভাই।
২ এবং ৩ নং সেক্টর দুটোর আন্ডারেই কুমিল্লা ছিলো ভাই?
সমাজ বইয়ের ইতিহাস অংশে তাদের নাম খুঁজে পেলেও তাদের সম্পর্কে কখনো বিস্তারিত জানার চেষ্টা করিনি। এখন জানা গেল। আর্টিকেলটা ভালো ছিল।