ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে অন্য পেশায়
আমাদের বাবা-মায়ের স্বপ্ন, অথবা বড় ভাইয়ের সাজেশন নয়তোবা নিজের ইচ্ছাতেই আমরা ইঞ্জিনিয়ারিং এ আসি। এই যাত্রা মোটেও সহজ নয়, তবুও এই চড়াই উতরাই পাড়ি দিয়ে অনেকে পৌঁছায় সাফল্যের স্বর্ণশিখরে।
তবে অনেকে এমন আছেন যারা ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করলেও তবে জীবনকে সাজিয়েছেন অন্য কোন পেশায় এবং সফল হয়েছেন। আজকের আয়োজন এমনই কিছু সুপরিচিত ব্যাক্তিদের নিয়ে। চলুন শুরু করা যাক।
আবুল হায়াত
রুপালি পর্দার এই মানুষটাকে আমরা সবাই চিনি। তিনি পেশায় একজন অভিনেতা হলেও তিনি কিন্তু একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার (পুরকৌশলী)।
১৯৬৭ সালে বুয়েট থেকে পাশ করেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ঢাকা ওয়াসার প্রকৌশলী ছিলেন। ১৯৬৯ সালে ‘ইডিপাস’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে অভিনয় তার জীবনের পেশা হয়ে যায়। বহুবছর ধরে তিনি নাটক, সিনেমা এবং নানান বিজ্ঞাপনে অভিনয় করেন। হুমায়ুন আহমেদ এর বহু নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন, তবে সবচেয়ে আলোড়ন তৈরী করেছিলেন মিসির আলি চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে ।
“পাঠাও” এর উদ্যেক্তা
উবার এর মত দুই চাকায় এখানে সেখানে যাওয়ার সঙ্গী হলো পাঠাও। এর উদ্যেক্তা তিন জনঃ হোসাইন, সিফাত আদনান, হাশমী।সিফাত আদনান ছিলেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের স্নাতকপ্রাপ্ত ছাত্র। তারা উদ্যোগ নিয়েছিলেন ২০১৫ এর মার্চের দিকে, ব্যবসা শুরু করেছিলেন তাদের ৩টি বাইক নিয়ে। পরিশ্রম ও চেষ্টায় আজ তারা ১০০ মিলিয়ন USD বা বাংলাদেশি টাকায় ৮২০ কোটি টাকার মালিক। বর্তমান সময়ে প্রায় ৫ লাখ মানুষ এই পাঠাও অ্যাপস ব্যবহার করে এবং প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় একশোরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
মাসুদুর রহমান খান
মাসুদুর রহমান খান ছিলেন বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের ছাত্র। পাশ করার পর তিনি আমেরিকায় যান স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য। ডিগ্রি লাভের পর তিনি বিভিন্ন চাকরি করার পর হোটেল ব্যবসায় নেমে গেলেন। তার প্রথম হোটেল ছিল মিশিগানে যা তিনি ১৯ লাখ ডলার দিয়ে কিনেছিলেন। তার কিছুদিন পরে একই যায়গায় ২৪ লাখ ডলার দিয়ে আরেকটি হোটেল কিনেন। এভাবে তার ব্যবসা এগিয়ে যেতে থাকে।
বর্তমানে অরিগন রাজ্যে তিনি ১০টি হোটেলের মালিক। এভাবে ইঞ্জিনিয়ার থেকে একজন সফল ব্যবসায়ীতে পরিনত হন।
আনিসুল হক
তিনি একাধারে কবি,লেখক,নাট্যকার ও সাংবাদিক। তবে তিনি পড়াশোনা করেছেন বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগ থেকে। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি বাংলাদেশ রেলওয়ে তে যোগ দেন। কিছুদিন পরেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে যোগ দেন সাংবাদিকতায়। বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করার পর তিনি যুক্ত হন প্রথম আলো পত্রিকার সাথে। বর্তমানে তিনি দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও কিশোর আলোর সম্পাদক পদে কর্মরত আছেন।
অনুপম রায়
গানের জগতে খুব পরিচিত একটি মুখ। তিনি একাধারে গায়ক,সুরকার,গীতিকার। তবে তার জীবনের পথচলা সংগীত দিয়ে শুরু হয় নি। তিনি একজন ইঞ্জিনিয়ার। কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রনিক্স এন্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা করছেন। তিনি সেখান থেকে ২০০৪ সালে গোল্ড মেডেল অর্জন করেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি কলকাতায় এনালগ সার্কিট ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেন। ২০১০ সালে “আমাকে আমার মত থাকতে দাও”ও “বেঁচে থাকার গান” এই দুটি গানের মাধ্যমে আলোড়ন ছড়িয়ে সংগীত জগতে প্রবেশ করেন। এরপর তাকে আর পেছনে তাকাতে হয় নি। অনেক গান আর সংগীত পরিচালনা করেছেন। ২০১৬ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার লাভ করেন।