বাংলাদেশের সেরা ১০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

একটি ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুধু নাম আর গৌরবের বিষয় নয় বরং একটি  সুন্দর ভবিষ্যত গড়ার  ক্ষেত্রেও অনেক প্রভাব বিস্তার করে। ভালো একটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া মানে হলো নিজের স্বপ্নের দিকে অনেকটুকু এগিয়ে যাওয়া। আর ভাল প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে হলে  সেই প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে জানা-শোনা থাকা দরকার। আজকে আমি আপনাদেরকে এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে  বাংলাদেশের সেরা ১০ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলবো যাতে আপনারা  দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পর্কে আগে থেকেই কিছুটা ধারণা নিয়ে রাখতে পারেন।

‌ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯২১  সালে তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনামলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ২৪০ হেক্টর বা ৬০০ একর জায়গার উপর নির্মিত।  এই বিশ্ববিদ্যালয়টি  ঢাকার প্রাণকেন্দ্র শাহবাগে অবস্থিত।

DU
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

এই  বিশ্ববিদ্যালয়ের  উল্লেখযোগ্য শিক্ষার্থী হলেন জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা, ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস, বিখ্যাত কবি বুদ্ধদেব বসু,  রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, লেখক হুমায়ুন আহমেদ ।  ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ  সহ অন্যান্য সকল আন্দোলনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জড়িত।

ঢাকা  বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ টি ফ্যাকাল্টির অধীনে প্রায়  ৩৫ হাজার ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করে।  এখানে ছাত্রছাত্রীদের জন্য  ২৩ টি আবাসিক হল রয়েছে এছাড়া শিক্ষকদের জন্য আলাদা ডরমিটরি রয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

এই বিশ্ববিদ্যালয়টি  ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়।  এটি ১৭৫৪ একর পাহাড়ি এলাকার উপর অবস্থিত।  আয়তনের দিক দিয়ে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়।  বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী এবং গণিতবিদ জামাল নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রফেসর ছিলেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ক্যাম্পাসের বিশালতা নিঃসন্দেহে আপনাকে মুগ্ধ করবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯ টি অনুষদের অধীনে ৫২ টি বিভাগ রয়েছে। এছাড়া এখানে মোট আবাসিক হল রয়েছে ১২ টি।  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট স্টুডেন্ট প্রায় ২৪ হাজার।

‌ বুয়েট বা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়

১৮৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা সার্ভে স্কুল ‌‍ পরে  ১৯১২ সালে আহসানুল্লাহ স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এ পরিবর্তিত হয়।  ১৯৪৭ সালে আবার এটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ।  সবশেষে ১৯৭১ সালে বর্তমান নাম বুয়েট বা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়।  এই বিশ্ববিদ্যালয়টির এরিয়া ৭৬ একর।  এ বিশ্ববিদ্যালয় টি ঢাকার পলাশী এলাকায় অবস্থিত।  এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য  ছাত্র হলেন জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, অভিনেতা আবুল হায়াত, কবি নাট্যকার উপন্যাসিক আনিসুল হক। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি একাডেমিক ও গবেষণামূলক কাজে নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করে দেশ সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে।

বুয়েট
বুয়েট

বুয়েটে ৫ টি অনুষদের অধীনে ১৮ টি বিভাগ রয়েছে।  বুয়েটের মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৫৫০০।  মোট হল সংখ্যা 8 টি।  এটি হলো বাংলাদেশে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য সবচেয়ে ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

‌ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শাখা হিসাবে সাভারে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয় যার তৎকালীন  নাম ছিল জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়।  ১৯৭০  সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও এর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়  ১৯৭২ সালে।  এই বিশ্ববিদ্যালয়টি  ৬৯৭ একর জমির উপর নির্মিত।  প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক দিয়ে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয়।  বাংলাদেশের প্রথম নারী ভাইস চ্যান্সেলর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং এটি হলো বাংলাদেশের প্রথম ও পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি অনুষদের অধীনে পঁয়ত্রিশ টি বিভাগ রয়েছে।  এই  বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার এবং হল সংখ্যা ১৬ টি।  দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত।  এখানকার মনোরম এবং মুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে অতিথি পাখি এখানে আসে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া বিখ্যাত ব্যাক্তিদের মধ্যে নাট্যজন সেলিম আল দীন, অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি,শহীদুজ্জামান সেলিম,সুমাইয়া শিমু,জাকিয়া বারী মম, ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা, মুশফিকুর রহিম, লেখক গবেষক ড.সৌমিত্র শেখর, প্রফেসর আনু মুহাম্মদ, আবদুল্লাহ আল মামুন উল্লেখযোগ্য।

‌ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হাজার  ১৯৬১ সালে ময়মনসিংহে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি আয়তনে দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যা ১২৬১ একর জমির উপর নির্মিত। এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বাংলাদেশের  কৃষির মস্তিষ্ক হিসাবে ধরা হয়।  পুরো এশিয়া তে কৃষি গবেষণার তীর্থস্থান হিসেবে ধরা হয় এই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে। ২০১৭ সালের  WEB-MATRIX  এর প্রতিবেদন অনুযায়ী এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মোট আটটি অনুষদ রয়েছে।  এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার এবং হল সংখ্যা ১৩ টি।  এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গবেষণার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভাবন করেছে এছাড়াও হাঁস মুরগির উন্নত জাত উদ্ভাবন, কৃত্রিম প্রজনন, গবাদিপশুর ভ্রুন-প্রতিস্থাপন সহ  কৃষি ক্ষেত্রে, পশু পালনে এবং মৎস্য ক্ষেত্রে এরা বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে।

 রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দেশের তৃতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়।  প্রাচ্যের ক্যামব্রিজ নামে খ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯৫৩সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।  এই বিশ্ববিদ্যালয়টি রাজশাহীর মতিহার এ অবস্থিত।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস প্রায় ৭৫৩ একর। ৩০ হাজার ছাত্রছাত্রীর জন্য ১৭ টি হল রয়েছে।  জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন,  বিখ্যাত কবি হাসান আজিজুল হক, জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন ৷  এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ টি অনুষদের অধীনে ৫৯ টি বিভাগ চালু আছে।

 শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।  এই বিশ্ববিদ্যালয়টি সিলেট শহরের আখালিয়া তে অবস্থিত।  এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস  ৩২০ একর।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, প্রোগ্রামিং এবং  রোবটিক্স এরিয়ায়  আন্তর্জাতিকভাবে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে।  বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় নয় হাজার ছাত্রছাত্রীর জন্য পাঁচটি আবাসিক হলে এর ব্যবস্থা রয়েছে।  বাংলাদেশের প্রথম সার্চ ইঞ্জিন ‘পিপীলিকা’ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তৈরি করেছে।

 বুটেক্স বা বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়

১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত ওয়েভিং স্কুলকে ২০১০ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পোশাক শিল্পের গুরুত্ব বিবেচনা করে জাতীয় সংসদে একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালে গঠিত হয় বুটেক্স বা বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়।  এই বিশ্ববিদ্যালয়টি তেজগাঁও শিল্প এলাকায় অবস্থিত যার ক্যাম্পাস ১১.৬৭ একর।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায়  ৩০০০ এবং এদের জন্য বরাদ্দকৃত হল সংখ্যা চারটি।  তৈরি পোশাক হল বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানিযোগ্য সামগ্রী।  সেই তৈরি পোশাক শিল্প বা টেক্সটাইল  ইন্ডাস্ট্রি আধুনিকীকরণে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে এই বুটেক্স।  বর্তমানে বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্প পিকে থাকায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের  ছাত্র ছাত্রীরা তুলনামূলক সহজে চাকরি পেয়ে যায়।

 খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।খুলনা শহরে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়তন ১০৬ একর।  এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় 8000  এবং হল সংখ্যা পাঁচটি।

এই বিশ্ববিদ্যালয়টি হলো ছাত্র রাজনীতি মুক্ত বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।  খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে অনুষদের ৬  টি অনুষদের অধীনে ডিসিপ্লিন বা ডিপার্টমেন্ট রয়েছে মোট ২৮ টি।

 জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা সদরঘাট এলাকায় অবস্থিত।  পূর্বের  জগন্নাথ কলেজ থেকে  ২০০৫ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে।  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রায় ২০ হাজার হলেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কোন আবাসিক হল নেই।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় 
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬টি অনুষদের অধীনে মোট ৩৬ টি বিভাগ চালু রয়েছে।  বিদ্যালয় এর উল্লেখযোগ্য ছাত্রদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ,  বিখ্যাত উপন্যাসিক ও পরিচালক জহির রায়হান, জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, জনপ্রিয় অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান, জাহিদ হাসান, মীর সাব্বির, বিখ্যাত লেখক সৈয়দ শামসুল হক।  বর্তমানে কেরানিগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিশাল এবং মনোরম ক্যাম্পাস তৈরি হচ্ছে।

আশাকরি এই  দশটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য আপনার কাজে লাগবে এবং আপনার পদচারণায় মুখর হয়ে উঠবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ।

Similar Posts

3 Comments

  1. “সেরা” ব্যাপারটা কোন কোন ফ্যাক্টরকে বেইস করে বলা হচ্ছে সেটা আর্টিকেলে উল্লেখ করলে ভালো হতো।

  2. যাইহোক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটা আবেগের নাম এতটুকু বলতে পারি❤

Comments are closed.