tasnim / মে 11, 2020
আমরা যারা শিক্ষার্থী, প্রতিনিয়ত স্কুল কিংবা কলেজের গেট দিয়ে বের হওয়ার সময় প্রথমেই লক্ষ্য করে থাকি ঝালমুড়ি মামা অথবা ভেলপুরি মামা বসছেন কিনা। ফুচকার কথা তো বাদই দিলাম। এসব মানুষদের দেখলে মনটা খারাপ থাকলেও চট করে খুশি হয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা এমনকি অনেক ক্ষেত্রে বড়রাও এগুলো গপ গপ করে খেয়ে ফেলেন ভালোবাসার টানে। আসলে মজার টানে আরকি। ছুটে গিয়ে দশ টাকা বিশ টাকা বের করে মামাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলি “মামা দশ টাকার মুড়ি দাও” কিংবা “মামা দুটা ভেলপুরি দাও”।
এগুলো না হয় খাওয়ার আলাদা মজা। আরাম করে খেতে খেতে বাড়ি যাওয়া যায়। অভিভাবকরা অবশ্য সর্বক্ষণই বকতে থাকেন রাস্তার হাবিজাবি খেয়ে পেট খারাপ করার ভয়ে। আমরা সেটাকে অত পাত্তা দেই না। কিন্তু আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি যেই প্যাকেটে আমরা খাচ্ছি কিংবা দীর্ঘসময় রেখে খাবার নিয়ে যাচ্ছি সেটা আমাদের জন্য কতটুকু স্বাস্থ্যকর ?
হ্যাঁ আজ না হয় ঝালমুড়ি, ফুচকা, ভেলপুরি এ সকল ভালবাসা নিয়ে পর্যালোচনা না করে এদের বহন করা সামগ্রী নিয়ে আলোচনা করা যাক।
বেশিরভাগ সময় কি করা হয়? ঝালমুড়ি কিংবা ভেলপুরি, আমের আঁঁচার কিংবা যেকোনোই মনোরম খাবার হোক না কেন, সেটা সাধারণত ‘খবরের কাগজের’ বা পত্রিকার জন্য যে আলাদা কাগজ ব্যবহার করা হয় সেটাকেই সাধারণত প্যাকেটে রুপান্তরিত করে ঝালমুড়ির জন্য ব্যাবহার করা হয়। এর কুফলটা নিচে দেখে নেওয়া যাক –
১.
খবরের কাগজে প্রথমত অনেকের হাতের স্পর্শ থাকে। অর্থাৎ প্রচুর জীবানু এতে রয়েছে। এছাড়াও আমরা হয়তো জানি না কিংবা অনুমানও করতে পারি না পুরানো খবরের কাগজ মামাদের কাছে কিভাবে আসে৷ এমনকি হতে পারে না সেই কাগজ কিনে নেওয়া ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে রাস্তায় কোথায় পড়ে গেল। তিনি আবার সেই কাগজটিকে কোনরকম ঝাড়া না দিয়ে সেভাবেই নিয়ে চললেন? কিংবা কতকিছুই তো হতে পারে। মূল কথা হলো কাগজটা পরিষ্কার না তথা স্বাস্থ্যসম্মত না। এর মধ্যে যেই খাবারই রাখা হোক না কেন সেটা জীবাণু দ্বারা আক্রমন হতে বাধ্য।
২.
খবরের কাগজের লেখা বা বিজ্ঞাপনে যেই কালিটা থাকে, সেটা মূলত সিসা। আর এই সীসা হচ্ছে ক্ষয়কারী পদার্থের একটি। মানুষের শরীরে কোনভাবে সীসা প্রবেশ করলে তার শরীর কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা বলে বোঝানো অসম্ভব। মানুষের শরীরে বুলেট প্রবেশ করালে মানুষ কেন মারা যায় জানেন? কারণ প্রথমত বুলেটটা দেহ ছেদ করে ঢুকে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কে আঘাত করে। দ্বিতীয়ত বুলেট সীসার তৈরী। আর এই সীসা শরীরের ভেতরে গিয়ে ফেটে যায়। তাই গুলিবিদ্ধ হলে মানুষ মারা যায়। তাহলে ভেবে দেখুন, কিভাবে নিজের শরীরে নিজেই সীসা প্রবেশ করিয়ে নিজ দেহকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন।
পরিত্রানের উপায়ঃ
এক্ষেত্রে সচেতনতা ও এসকল কাগজের তৈরি ঠোঙাকে পরিহার করা ছাড়া গতি নেই। বিকল্প হিসেবে প্রাকৃতিক বস্তু গুলো ব্যবহারে আনা যায়। যেমন কলাপাতা। এই কলাপাতায় অনেক আগে ভাত খাওয়ার প্রচলন ছিল গ্রামে ৷ এখন অবশ্য খুব একটা দেখা যায় না। নিউজপেপার বা খবরের কাগজকে ঠোঙা বানানো থেকে বিরত রেখে কলাপাতার ঠোঙা বানিয়েও ব্যাবহার করা যায়। এটা অত্যন্ত প্রাকৃতিক, উপরোন্তু ময়লা লাগলে ধুয়ে পরিস্কার করা যায়, ছিড়ে যাবার ভয় নেই।
আর ঠোঙা বানানোরই বা কি দরকার? নির্দিষ্ট একটা পরিমাপে কেটে নিয়ে কাস্টমারদের হাতে তুলে দিবেন। তারপর কাস্টমারদের হাতে রাখা কলাপাতায় অল্প অল্প করে ঝালমুড়ি, ভেলপুরি, আচার কিংবা অন্যান্য খাদ্য তুলে দেবেন। অনেকের কাছে হয়তো পদ্ধতিটা সেকেলে লাগবে। কিন্তু ভেবে দেখুন, নিজের সংস্কৃতিটাই কিন্তু নতুন করে দেখছেন। এতে আনন্দিত হবার কথা। তাছাড়া নিজের ও নিজের সন্তানদের জন্য একটু সেকেলে হলে কি ক্ষতিটাই বা হয়ে যাবে। কিছুই হবে না।
FILED UNDER :স্বাস্থ্য কথন
Comments are closed.
One Comment
Mehedi Hasan Khan says
স্ট্রিটফুড প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হয়। শহরে এত কলাপাতার যোগান অসম্ভব। শহরে তো কলাগাছ নাই। বাইরে থেকে শহরে নিতে নিতেই পাতা শুকিয়ে যাবে। তবে খবরের কাগজের বিকল্প আমাদের খুঁজতেই হবে। সীসা অনেক বিষাক্ত জিনিস।
আসলে এই স্ট্রিটফুড জিনিসটাই অস্বাস্থ্যকর। তবু আমরা খাই। ক্লাস শেষ করে বন্ধুবান্ধব নিয়ে পদ্মার পাড়ে আড্ডা দিতে দিতে চটপটি, পেয়ারামাখা খাওয়ার আনন্দের জন্যই আমরা বেঁচে আছি, থাকি ❤