আমেরিকার থ্যাংকসগিভিং উৎসব এবং ব্ল্যাক ফ্রাইডে (২)

(গত পর্বের পরে)

ধীরে ধীরে নেটিভ আমেরিকানদের সাথে তাদের পরিচয় হল। তারা পিউরিটানদের ফসল চাষ, মাছ ধরা, পাখি এবং বন্য প্রাণী শিকার করতে শিখালো। পিউরিটানরাও সে বছরটায় অনেক পরিশ্রম করলো। অবশেষে শীত শুরুর আগে পর্যাপ্ত ফসল তারা ঘরে তুলতে পারল। সেবার ফসল এতো বেশি ফলল যে পুরো শীতকাল ভালোভাবে চলে যাওয়ার জন্য তা যথেষ্ট ছিল। খাবারের প্রাচুর্যের এই আনন্দে পিউরিটানদের প্রধান উৎসবের ঘোষণা দিলেন। তিন দিন ধরে সেই উৎসব চলল। নেটিভ আমেরিকানদের আমন্ত্রণ জানানো হল, পিউরিটানরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ধন্যবাদ জানাতে ভুললো না। এই উৎসবের পরে নেটিভ আমেরিকানদের সাথে  পিউরিটানদের সম্পর্ক আরো ভালো হল, তবে দুঃখজনকভাবে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।

thanksgiving-day-in-the-united-state

এরপর থেকেই বিছিন্নভাবে আমেরিকায় থ্যাংকসগিভিং পালিত হতে শুরু করে। ফসল তোলার পরে একেক রাজ্যে একেক সময়ে তা পালন করা হত। অধিকাংশ আমেরিকানই থ্যাংকসগিভিং কে জাতীয় ছুটি হিসেবে পেতে চাইতো যেন পরিবারের সকলে এসময় একত্রিত হতে পারে। অবশেষে সারাহ হ্যালি নামের একজন নারী এ ব্যাপারে এগিয়ে আসেন। তিনি ছিলেন এক জনপ্রিয় পত্রিকার সম্পাদিকা। সারাহ ক্রমাগত রাজনীতিবিদ এবং প্রেসিডেন্টের নিকট চিঠি লিখতে থাকেন থ্যাংকসগিভিংকে ন্যাশনাল হলিডে ঘোষণার অনুরোধ জানিয়ে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার অনুরোধ ফিরিয়ে দেয়া হয়। এর মাঝে আমেরিকার রাজনীতির পট পরিবর্তন হয়ে যায়। দাসপ্রথা বিলোপকে কেন্দ্র করে আমেরিকায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। সেসময় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন আব্রাহাম লিংকন। সারাহর অনুরোধে সম্মতি জানিয়ে প্রেসিডেন্ট লিংকন থ্যাংকসগিভিংকে ন্যাশনাল হলিডে হিসেবে ঘোষণা দেন। এরপর থেকে প্রতিবছর নভেম্বর মাসের শেষ বৃহস্পতিবারে পালিত হয়ে আসছে থ্যাংকসগিভিং। আমেরিকানরা এসময়টা তাদের পরিবারের সাথে কাটায় আর সবকিছুর জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানায়। প্রতিবছর তারিখটা ভিন্ন ভিন্ন দিনে পড়ে। এ বছরে থ্যাংকসগিভিং ২৬ নভেম্বরে পালিত হবে।

 

 

কালের বিবর্তনে সেই পিউরিটানদের ফসল উৎসব থেকে বর্তমানের থ্যাংকসগিভিং অনেকটাই আলাদা। আজ তা অনেক বড় আকারে পালিত হয় এবং থ্যাংকসগিভিংকে কেন্দ্র করে বর্ণাঢ্য প্যারেড, ফুটবল গেম, উৎসবের কেনাকাটা, পরিবার এবং বন্ধুবান্ধব সকলকে নিয়ে মহাভোজ এ সবকিছুই হয়। সবচেয়ে বড় ইভেন্ট হচ্ছে ব্ল্যাক ফ্রাইডে যা থ্যাংকসগিভিং এর পরের শুক্রবার দিন। সবকিছুতে ছাড় আর কেনাকাটার মহোৎসব চলে ব্ল্যাক ফ্রাইডেতে। সারাবছরে যা বিক্রি হয় তার অনেকগুণ বেশি বিক্রি হয় এই সময়টায়। মানুষও সারাবছর অপেক্ষায় থাকে এই ব্ল্যাক ফ্রাইডে ছাড়ের জন্য বিশেষত ইলেকট্রনিকস পণ্যের।

থ্যাংকসগিভিং এর পর থেকেই বড়দিনের বা ক্রিসমাসের আমেজ শুরু হয়ে যায় যা ইংরেজি নতুন বর্ষ উদযাপন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। আর ম্য়াসাচুসেটসের যে অংশে পিউরিটানরা প্রথম এসে পৌঁছেছিল, সেই প্লাইমাউথে পরে বেশ বড় একটা মিউজিয়াম তৈরি হয়েছে যা পিউরিটানদের সেই ১৬২৭ সালের বসতির আদলে গড়া। তার ঠিক পাশেই সেসময়ের নেটিভ আমেরিকানদের (ওয়াম্পানোয়াগ) বসতির আদলে তৈরি একটা গ্রামও রয়েছে যেখানে গেলে ওয়াম্পানোয়াগ উত্তরসুরিরা সুন্দরভাবে তাদের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য বর্ণনা করে। মহামারীর কারণে এ বছরের থ্যাংকসগিভিং অন্যান্যবারের চেয়ে আলাদা, অনেক প্রোগ্রাম আর হচ্ছে না বা বাতিল হয়ে গেছে। তারপরেও সকলকে থ্যাংকসগিভিং এর শুভেচ্ছা এবং আমি থ্যাংকসগিভিং থেকে এটাই শিখেছি যে, অল্পে তুষ্ট থাকার মাঝেই জীবনে প্রশান্তি খুঁজে পাওয়া যায়।

(তথ্যসূত্র: বই- What Was The First Thanksgiving? By Joan Holub)

Similar Posts