চুল কেন পড়ে?
আপনার শরীরে কোন রোগ নেই, আপনি একজন যুবক বা যুবতী। আপনি প্রতিনিয়ত আপনার চুলের যত্ন নিচ্ছেন, ভালো খাবার খাচ্ছেন, তারপরও চুল কেন পড়ে যাচ্ছে?
প্রথমত যে কথাটি শেয়ার করবো সেটা হচ্ছে, কোন একজন ভাইয়ের কথা। যার মাথার চুল এখন একদম নাই বললেই চলে। সামনের দিকে একদমই টাক হয়ে গিয়েছে। তার এই চুল পড়া শুরু হয়, যখন তার বয়স ছিল উনিশ বছর। এখন বর্তমানে সে পুরোপুরি টাক এবং এর জন্য সে নিজেই দায়ী।
যখন সে কলেজে পড়ে, তখন সে চুলে প্রতিনিয়ত জেল দিত, চুলকে স্টাইলিশ করত। এই চুলে প্রতিনিয়ত দীর্ঘসময় জেল ব্যবহার করার ফলে, যা হয়েছে সেটিই তার বর্তমান অবস্থা। কিভাবে তার এই অবস্থাটি হলো?
জেল ব্যবহার কতটা ক্ষতিকর?
আপনি যখন চুলে সফট জেল দিবেন, তখন সেই সফট জেল আপনার চুল থেকে আস্তে আস্তে আপনার চুলের স্ক্রিন পর্যন্ত চলে যাবে। মাথার গোড়া সব সময় নরম থাকে। আমরা জানি, যেমন একটা গাছ যখন নড়বড়ে থাকে, শিকড়টা নড়বড়ে থাকে, তখন আপনি সেটাকে টান দিলে সেটা উঠে যাবে। একইভাবে যখন আপনার চুলের গোড়া নরম থাকবে, তখন এই চুলের গোড়াটা গাছের গোড়ার সাথে চিন্তা করেন। এটা যখন নরম থাকবে তখন আপনি আপনার চুল যখন আঁচড়াবেন, চিরুনির সাথে লেগে আপনার চুল উঠে যাবে। এটাই তো বলে মেকানিজম।
আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আপনি যখন আপনার চুলে হার্ট জেল ব্যবহার করবেন, তখন আপনার চুলগুলো শক্ত এবং ভঙ্গুর হয়ে যাবে। অর্থাৎ আপনি আপনার চুলগুলো ধরলেই ভেঙে ভেঙে আপনার হাতে এসে পড়বে।
কেমিক্যাল সাবস্টেন্স আপনি আপনার চুলে দিচ্ছেন। এটা যখন আপনার চুলের মধ্যে এটাচ হচ্ছে বা লেগে যাচ্ছে তখন কিন্তু এটা একটা এলার্জিক রিএকশন করতে পারে। এর জন্য আপনার চুলের জন্য একটা হিউজ ক্ষতি হতে পারে। আলটিমেটলি, আপনার চুলের যে হেয়ার ফলিকল রয়েছে, সে হেয়ার ফলিকলগুলো একদম সম্পূর্ণভাবে ইন্যাক্টিভ হয়ে যাবে বা কাজ করবে না। যার ফলে, আপনার চুল আর কখনোই হবে না।
এই সমস্ত কারণে বলব, আপনারা জেল দিবেন না। এই বিষয়গুলো থেকে আপনি অনেক দূরে থাকুন।
আমার অনেক ভাই যারা আছেন, তারা হয়ত নিজের চুলকে অনেক ফ্যাশন করে থাকেন। আপনি হয়তো চিন্তা করেন, যে আপনাকে অনেক সুন্দর লাগবে। আপনি প্রতিনিয়ত এই কাজটি করার মাধ্যমে, আপনি আপনার নিজের জন্য একটা বিপদ ডেকে আনছেন। তো এই বিষয়টি থেকে আপনারা নিজেরা সচেতন হন অন্যথায় শুরুতে বলা সে ভাইটির মতো আপনার চুলও একদম টাকে পরিণত হয়ে যাবে।
এতে সচরাচর আপনাকে বলতে পারে, আপনি তো টাক হয়ে গেছেন, আপনি বিয়ে করবেন কিভাবে, কি করবেন কেমনে, পাত্রী পাবেন কোথায়? এই সমস্ত কথাগুলো যদি বলে, এতে আপনার নিজের খারাপ লাগবে। আর দুশ্চিন্তার শেষ থাকবে না। এজন্য বলছি, আপনি এখন থেকে সচেতন হোন।
শ্যাম্পু এবং তেল
চুল যে কারণে অনেক ফ্রিকুয়েন্টলি পড়ে যায় সেটা হচ্ছে, আপনি চুলে যদি প্রতিনিয়ত শ্যাম্পু সেম্পু দেন এবং প্রতিনিয়ত তেল ইউজ করেন। তখন আপনার চুল আস্তে আস্তে পড়তে থাকবে। এর কারণ হচ্ছে, এগুলো করার কারণে আপনার চুলের গোড়া নরম হয়ে যাবে। আপনি যদি আপনার নিজের হাতটা পানিতে ভিজিয়ে রাখেন, তখন আপনি আপনার হাতের চারপাশে দেখবেন, আস্তে আস্তে সাদা হয়ে গিয়েছে। আর আপনার চামড়াগুলো ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে। যেন ঠান দিলে চামড়া উঠে যাবে। কারণ, আপনার হাতের চামড়া নরম হয়ে গিয়েছে। ঠিক একইভাবে যখন আপনি প্রতিনিয়ত আপনার চুলে তেল দিচ্ছেন, প্রতিনিয়ত চুলে শ্যাম্পু দিচ্ছেন, প্রতিদিন এই কাজটা করে চলেছেন, এতে করে আপনার চুলের যে স্কিন রয়েছে, সেই স্কিনে যে চামড়া রয়েছে, তা আস্তে আস্তে নরম হয়ে দুর্বল হয়ে যাবে। তাই আপনি যখনই টাচ করেছেন তখনই হাতে চুল চলে আসে। তাই কোনো জিনিসই বেশি ভালো না, পর্যাপ্ত পরিমাণই ভালো। আপনার চুলের শ্যাম্পু দেওয়া এবং চুলে তেল দেওয়া এই ব্যবহারগুলোকে সীমিত ব্যবহারে আনতে হবে। বুঝতে হবে, যে আপনি আপনার ভালো করতে গিয়ে, খারাপ করছেন না তো? এই খারাপ যেন আপনার মাধ্যমে না হয়।
তাই এখানে আপনার করণীয় হচ্ছে, যেখানে আপনি সপ্তাহে সাত দিন শ্যাম্পু করেন, সেই জায়গায় শাম্পু করাটা দুই দিনে নিয়ে আসেন বা একদিন করেন। এর পাশাপাশি চুলে জেল দেওয়া, চুলে প্রতিদিন তেল দেওয়া, এই তিনটা জিনিসকে সীমিত ব্যবহারে নিয়ে আসেন। এগুলোই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি টপিক, যার কারণে আমাদের অনেক ভাই-বোনের চুল পড়ে যাচ্ছে আর তারা এটা বুঝতেও পারছে না। দুশ্চিন্তায় এটা মনে করে, যে আমি আমার চুলের এত যত্ন নেই, তারপরও এরকম কেন এমন অবস্থা হচ্ছে?
ভিটামিন B7 বা বায়োটিন
একটা ভিটামিনের কারণে, আপনার চুল পড়ে যাচ্ছে। আর সেই ভিটামিনের নাম হচ্ছে ভিটামিন B7 বা বায়োটিন। যে সমস্ত খাবারে ভিটামিন B7 পাওয়া যায় সে খাবারগুলো হচ্ছে: গাজর, ফুলকপি, কাজুবাদাম, আখরোট, ডিম, দুধ, কলা ইত্যাদি। যখন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাবেন, তখন পাঁচ টাকার বাদাম খান। তাহলে সেই বাদাম আপনার চুলের জন্য উপকারী হবে। চুলের জন্য এখন থেকে খাবারের ডায়েটে ভিটামিন B7 বা বায়োটিন রাখেন।
অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের কারণে চুল পড়ে
বর্তমান সময়ে অনেকে মনে করেন, যে হস্তমৈথুনের কারণে চুল পড়ে যায়। কিন্তু ক্ষুদ্র জ্ঞানে বলতে পারি, সাইয়েন্টিফিক্যালি, হস্তমৈথুনের সাথে চুলের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু একটা থিওরি আছে। যেখানে বলা হয়, যখন আপনি অতিরিক্ত মাত্রায় হস্তমৈথুন করেন, তখন আপনার বডিতে অতিরিক্ত পরিমাণে টেস্টোস্টেরন সৃষ্টি হয়। এর ফলে, আপনার টেস্টোস্টেরনের সাথে আরেকটা হরমোন সৃষ্টি হয়। সেটা হচ্ছে ডাইহাইড্রোটেস্টোস্টেরণ। সেই হরমোন আপনার চুল পড়ার জন্য সহায়ক হতে পারে। অর্থাৎ এর সাথে একটা লিংক আপ রয়েছে। তাই অতিরিক্ত হস্তমৈথুন করার কারণে আপনার চুল পড়তে পারে।
মেডিসিন অনেক সময় চুল পড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়
বিভিন্ন মেডিসিনের কারণে চুল পড়তে পারে। এর জন্য অবশ্যই আপনাকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে এবং প্রয়োজনে ডাক্তার আপনাকে মেডিসিন চেঞ্জ করে দিবেন।
অ্যানিমিয়ার বা রক্তশূন্যতা
অ্যানিমিয়ার কারণে অর্থাৎ রক্তশূন্যতার কারণে চুল পড়ে যায়। এরকম আপনি অনেককে দেখবেন, যে তাদের হাত আপনার হাতের তুলনায় সাদা হয়ে যাচ্ছে, এটাই হচ্ছে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা।