A turbulent time

Antara Das / নভেম্বর 26, 2020

ছোটগল্প- অস্থির সময় (প্রথম অংশ)

শেয়ার করুন আপনার বন্ধুদের সাথে

(১)

-হ্যালো, পিউ। আমি তো এখন ক্লাসে যাচ্ছি। পরে কথা বলব।

-যখনই ফোন দিই তখনই হয় ক্লাস, নয়তো মিটিং, নয়তো হোমওয়ার্ক। তুমি আসলে ফ্রি থাকো কখন বল তো? পিউ রাগত স্বরে জানতে চায়।

তপু অসহায় কন্ঠে বলে ওঠে – পিউ, প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা করো। আমি ক্লাস শেষ করেই তোমাকে ফোন দিচ্ছি।

পিউ কোন কথা না বলে ফোন কেটে দেয়, তার চোখ ফেটে জল আসে। অভিমানী মনের ভেতরে ঝড় চলতে থাকে। সে দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করে, কিন্তু চোখের জল এতোকিছু না মেনে টপটপ পড়তেই থাকে।

আজ কতোগুলো মাস হয়ে গেল তপুর সাথে তার দেখা নেই। কতো আর মেসেঞ্জার আর হোয়াটসঅ্যাপের ভিডিও কলে কথা বলতে ভালো লাগে! মানুষটার হাতটা ধরতে ইচ্ছা করে, তার পাশে বসে চোখে চোখ রেখে গল্প করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু আজকাল ঠিকমতো কথাও হয় না তার সাথে। এতো ব্যস্ত থাকে তপু! কোন কোনদিন সে নাকি স্নানও করে না! রান্না করতে সময় লাগে তাই প্রায়দিনই নুডুলস খেয়ে থাকে, এতো সময় তার নেই!

আর সময়ের ব্যবধানটাও তো অনেক বেশি-১২ ঘন্টা। বাংলাদেশে যখন রাত দশটা তখন তপুর ওখানে শিকাগোতে সকাল দশটা। প্রায় প্রতিদিন সকালেই তপুর ক্লাস থাকে। আর পিউ রাত জাগতে পারেনা, ঘুম কম হলে ভীষণ মাথা ব্যথা করে তার। সকালে উঠেই স্কুলে যেতে হয়, বাচ্চাদের ক্লাস নেয়ার জন্য। এতো কিছুর ভিড়ে মাঝেমাঝে তপুর সাথে কথা বলা হয়ে ওঠে না। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতেও তপু কতোটাই না ব্যস্ত! রান্না করতে করতে পিউয়ের সাথে কথা বলে। মাঝেমাঝে তার কাছে রেসিপি জানতে চায়। কোন কোনদিন লন্ড্রির ওয়াশিং মেশিনে কাপড় দিয়ে অপেক্ষা করার ফাঁকে তাকে ফোন দেয়। তপু খুব সুন্দর গল্প করে আমেরিকার। তপুর ইউনিভার্সিটির অন্য বাঙালী স্টুডেন্টরা একসাথে কোথাও ঘুরতে গেলেও তপু তাদের সাথে খুব বেশি যায়নি। সে বারবার বলে,- পিউ তুমি আসো, আমরা তারপরে একসাথে ঘুরব। তোমাকে ছেড়ে ঘুরতে কি ভালো লাগে বলো?

পিউ জানে ইউনিভার্সিটির ডক্টরাল প্রোগ্রামের শিক্ষার্থী হিসেবে এটা তপুর প্রথম বছর হওয়ায় চাপ অনেক বেশি। কিন্তু তপুর সাথে একটা দিন কথা না বললে তার এতো খারাপ লাগে! ভাবতে অবাক লাগে একটা দিনও যার সাথে দেখা না করে পিউ থাকতে পারত না, সেই তপুকে ছেড়ে দূরে থাকার প্রায় একটা বছর হয়ে যাচ্ছে।

একথা মনে পড়তেই আবারো পিউয়ের চোখ ছাপিয়ে জল আসে। আবার কবে দেখা হবে তপুর সাথে?

পিউয়ের মা ঘরে এসে ডাক দেন, – কি রে ভাত খাবি না? অনেক রাত হল তো।

পিউ কোনমতে কান্না চেপে স্বাভাবিকভাবে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করে, – হুম আসছি।

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে পিউ দেখল রাত দশটা বাজে। আজও হয়তো আর কথা হবে না।

(২)

ওদিকে তপুও ভীষণ অস্বস্তিবোধ করে, সে ক্লাসে মন দিতে পারছিল না। পিউ এর সাথে মনোমালিন্য হলে তার কোন কিছু ভালো লাগেনা। দোষটা তারই। এই একটা সপ্তাহ ক্লাস, পরীক্ষা, হোমওয়ার্ক জমা দেয়া, প্রফেসরের সাথে মিটিং এইসব কিছু মিলিয়ে এতো চাপ গেছে যে, সে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারেনি। ইউনিভার্সিটিতে এটা তার প্রথম বছর, টিকে থাকার লড়াই। ভালো করার প্রত্যাশা থেকে তাই সে নাওয়া খাওয়া ভুলে এতো চাপ নিয়েছে। আর সেজন্য এ কয়দিন পিউ এর সাথে ঠিকমতো কথা হয়ে ওঠেনি। পিউয়ের ফোনকল গুলো বেশিরভাগ সময়েই মিসডকল হয়ে থেকে গেছে। কাজ শেষে যখন তপু ফোন হাতে নিয়েছে তখন সময়ের হিসেবে বাংলাদেশে গভীর রাত অথবা সকাল। এতোরাত পর্যন্ত পিউ জেগে থাকে না। সকালে ওর স্কুলে ক্লাস থাকে।

আজও ক্লাস শেষে ফোন হাতে নিয়ে পিউয়ের মেসেজ দেখলো- আমি ঘুমিয়ে পড়ছি। ফোন দিও না।

খুব অভিমানী পিউ। এতো দূরে থেকে তার অভিমান ভাঙানোর অক্ষমতায় ছটফট করে তপু। পিউয়ের সাথে কাটানো সুন্দর দিনগুলো খুব মনে পড়ে। বিয়ের পরে চারমাস তারা সংসার করেছিল বোর্ড অফিসের পেছনে দুই রুমের ছোট্ট এক বাসায়। বাসার ছোট্ট বারান্দাটা পিউয়ের লাগানো গাছে ভরে ছিল। আশেপাশের বিল্ডিং ছাপিয়ে খুব কম রোদই পেতো গাছগুলো, তাই খুব বেশি বড় হতো না। কিন্তু তারপরেও পিউয়ের যত্নআত্তির কমতি ছিল না। প্রায়দিনই স্কুল শেষে ফেরার সময় সে বাসা সাজানোর জন্য এটা ওটা কিনে আনত। নতুন সংসার বলে কথা! পিউয়ের সে কি আগ্রহ। কোন কোন শুক্রবারে খুব সকালে উঠে তারা হাঁটতে যেতো রমনা পার্কে, ফেরার সময় কাঁচাবাজার করে ফিরতো। ইঁট পাথরের সেই যান্ত্রিক শহরেও কতোই না রঙিন ছিল দিনগুলো!

(চলবে)

(Visited 99 times, 1 visits today)


শেয়ার করুন আপনার বন্ধুদের সাথে