Antar Sarkar / মে 28, 2020
যানজট নির্মূল ও সড়কের নানাবিধ জটিলতা কমাতে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের উপর নির্মিত হয়েছে ফ্লাইওভার যেগুলো সত্যিকার অর্থেই কার্যকরী ভূমিকা রাখছে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থায়। তবে ফ্লাইওভারের নিচের খালি জায়গাগুলোর কিছু কিছু স্থানে বাগান, নার্সারী কিংবা ছোট দোকান ব্যাতীত বেশিরভাগ জায়গাই পড়ে রয়েছে অব্যবহৃত। এসব খালি জায়গায় রাত হতেই জমে উঠছে নেশার আড্ডা, গড়ে উঠছে অবৈধ দোকানপাট, ঘটছে ছিনতাইসহ নানান অনৈতিক কার্যকলাপ। কিন্তু এই জায়গাগুলোর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা হলে তা সমাজ, অর্থনীতি ও পরিবেশে সমূহ ভূমিকা রাখতে পারে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফ্লাইওভার এর নিচের খালি জায়গার চমকপ্রদ ব্যবহারের অনেক নজির রয়েছে। দিল্লীতে ফ্লাইওভারের নিচে পথশিশুদের স্কুল, মুম্বাইয়ে ফ্লাইওভার গার্ডেন এমনই কিছু সুন্দর উদাহারণ। লন্ডন, আমেরিকাসহ উন্নত দেশগুলোতে ফ্লাইওভারকে ঘিরেই রয়েছে জগিং লেন, পার্ক, রাইড, থিয়েটার, রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি নাগরিক সুবিধার নানাবিধ স্থাপনা।
আমাদের দেশেও সঠিক উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনা গ্রহণের মাধ্যমে এই জায়গাগুলোর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা উচিত। প্রতিটি ফ্লাইওভারের নিচে নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর রাখা যেতে পারে পোর্টেবল ইমার্জেন্সী মেডিকেল সার্ভিস ইউনিট, ফায়ার সার্ভিস ইউনিট, ইমার্জেন্সী মাইকিং বুথ যেগুলো সড়ক দূর্ঘটনা, অগ্নিকান্ড ও যেকোন দুর্যোগে জানমালের নিরাপত্তা দেবে। রাস্তার ধূলাবালির প্রকোপ কমাতে ফ্লাইওভারের নিচে স্থাপন করা যেতে পারে ওয়াটার স্প্রেয়ার যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময় পর পর পানি স্প্রে করে রাস্তার ধূলাবালি উড়া্র পরিমাণ কমানো যাবে। নাগরিক সুবিধা প্রদানের জন্য স্থাপন করা যেতে পারে পাবলিক টয়লেট, ফুটওয়ে, ছোট পার্ক, জগিং লেন, ফুড ভ্যান এছাড়াও প্রার্থনাকক্ষ, ট্রাফিক শেড, ভ্রাম্যমাণ দোকান, যাত্রীছাউনি, বাচ্চাদের ছোটখাটো রাইড ও গেম কর্ণার ইত্যাদি।
কম জায়গা ব্যবহার করে সবুজায়ন, সাস্থ্যসম্মত খাদ্য উৎপাদন ও সৌন্দর্য বর্ধন এখন বিশ্বব্যাপী সমাদৃত ও আলোচিত বিষয়। ফ্লাইওভারের নিচের খালি জায়গাতে করা যায় উন্নত ও নিবিড় পদ্ধতি, যেমনঃ বায়োফ্লক ও রিসার্কুলেটরি পদ্ধতিতে মাছ চাষ। ছোট ও সরু জায়গায় এসব পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা হলে সাধারণ পদ্ধতির তুলনায় প্রায় ৮ থেকে ১০ গুণ উৎপাদন পাওয়া সম্ভব। উন্নত পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে অ্যাকুয়াপনিক্স ও ভার্টিপনিক্স পদ্ধতি যেগুলো ফ্লাইওভারের নিচে সমন্বিতভাবে মাছ ও শাকসবজি চাষ করার জন্য উপযোগী। ফ্লাইওভারের স্তম্ভগুলোতে করা যেতে পারে ভার্টিক্যাল গার্ডেনিং যেগুলো নগরীর সবুজায়ণ ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে। দৃষ্টিনন্দন রঙিন মাছের চৌবাচ্চা ও অ্যাকুয়ারিয়াম তৈরি করা হলে ফ্লাইওভারে নিচের খালি জায়গা হয়ে উঠতে পারে সাধারণ মানুষের বিনোদনের স্থান।
শিক্ষা ও মনস্তাত্তিক বিকাশের জন্য করা যেতে পারে পথশিশুদের নৈশ বিদ্যালয়, ভ্রাম্যমাণ লেইব্রেরী যেগুলো ইতোমধ্যেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রয়েছে। সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য তৈরি করা যেতে পারে সাপ্তাহিক মঞ্চনাটক কর্মশালা, লোকগানের মঞ্চ যেগুলো আমাদের হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতিতে তরুণ সমাজকে অভ্যস্ত করতে ভূমিকা রাখবে। খালি এই জায়গাগুলোতে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাসের ফটোগ্যালারী, শিক্ষণীয় স্থাপনা ও ভাস্কর্য, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সৃষ্টিশীল কর্মকান্ডের সাপ্তাহিক প্রদর্শনীর জন্য মঞ্চ ইত্যাদি তৈরি করা গেলে তা আমাদের দেশপ্রেম, সৃজনশীলতার বিস্তারে অবদান রাখবে।
দেশের সার্বিক উন্নয়নের সাথে সাথে কমে আসছে চাষযোগ্য ভূমির পরিমাণ, খেলার মাঠ ও বিনোদনের স্থান যেগুলো চাইলেও ফিরিয়ে আনা দুষ্কর। তাই প্রত্যেকটি খালি জায়গার সঠিক ব্যবহার করে আমাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত ভারসাম্য ও উন্নয়ন করাই এখন সময়ের দাবি। ফ্লাইওভারের নিচে খালি জায়গায় উপরোক্ত ব্যবস্থার প্রণয়ন করতে পারলে তা সত্যিই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় বাংলাদেশকে অগ্রগামী করবে।
FILED UNDER :অন্যান্য
Comments are closed.
Comments
Kader says
খুবই চমৎকার এবং তথ্যবহুল আলোচনা। আসলেই আমাদের সেই পড়ে থাকা ফ্লাইওভারের নিচে কোনো কিছু স্থাপন করা যেতে পারে। যেমন ভারতের দিল্লির ফ্লাইওভারের নিচে পথশিশুদের স্কুল স্থাপন করা হয়েছে। এর থেকে উত্তম ব্যবহার আর কি হতে পারে।
তাই লেখকের সাথে আমিও একমত!
– ধন্যবাদ লেখক
Antar Sarkar says
Thanks
tasnim says
ফ্লাইওভারের নিচে কিছু রাস্তার মানুষ (ভিখারি) দের থাকার একটা ব্যাবস্থাও করা যেতে পারে। সরকার মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম একটি বিষয় “বাসস্থান” দিতে প্রায়ই হিমশিম খেয়ে থাকেন জায়গার অভাবে। কিন্তু ফ্লাইওভারের নিচে যদি তাদের থাকার ব্যাবস্থা করে দেন সেক্ষেত্রে তাদের উপকার হবে এবং ফুটপাতও জটলা মুক্ত হবে। তবে পোস্টটি গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। ধন্যবাদ।
Antar Sarkar says
আপনার প্রস্তাবনা প্রশংসনীয় ও মানবিক।