Al Nayem / মে 31, 2020
অনেকের সাথেই আমাদের দ্বন্দ্ব থাকে। আবার অনেকসময় মনে হয় এই লোকটা ঠিক আমাকে পছন্দ করছে না কিন্তু আমি চাই এই লোকটা আমাকে পছন্দ করুক। এইটা করার জন্য চমৎকার একটি সাইকোলজিক্যাল ট্রিকস হলো ‘ফ্রাঙ্কলিন ইফেক্ট ‘।
ফ্রাঙ্কলিন ইফেক্ট হলো কাউকে গভীরভাবে প্রভাবিত করার একটি উপায় বা কারো আনুকূল্য বা পক্ষপাত পাবার উপায়। বিশেষ করে, কোনো মানুষ যখন আপনাকে অপছন্দ করবে তখন এটি প্রয়োগ করলে আপনাকে আর তারা অপছন্দ করবে না, পছন্দ -অপছন্দের বিষয়টা নিউট্রাল হয়ে যাবে এবং সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে তারা আপনাকে আস্তে আস্তে পছন্দ শুরু করবে।
বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিন তখন নির্বাচনে জিতেছেন এবং পেনিসেলভেনিয়ার গভর্ণর হয়েছেন। স্বভাবতই কেউ নির্বাচনে জয়লাভ করলে তার যে অপোনেন্ট ছিলো তার সাথে বৈরী অবস্থা সৃষ্টি হয়। ফ্রাঙ্কলিনের ক্ষেত্রেও এটাই ঘটেছিলো। কিন্তু তিনি চেয়েছিলেন এই বৈরী সিচুয়েশন দূর করতে এবং অপোনেন্টের সাথে আগের মতো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ফিরিয়ে আনতে।
কিভাবে করা যায় এ সম্পর্কে তিনি অনেক ভাবলেন। ফ্রাঙ্কলিন বই পড়তে অনেক পছন্দ করতেন ৷ তার বাড়ীতে বিশাল লাইব্রেরি ছিলো। তো, তিনি একদিন তার যে অপোনেন্ট তাকে একটা রেয়ার বই ধার দিতে চিঠি লিখলেন। বললেন যে তার এই বইটা খুব দরকার কিন্তু তার সংগ্রহে নেই, পড়ে কয়েকদিন পর ফেরত দিয়ে দিবেন। যদি ধার দিতে পারতেন তাহলে ভালো হতো।
এটা শোনার পর অপোনেন্ট তো ভাবলো, আরে একজন বিশাল পড়ুয়া মানুষ, পুরো ঘরভর্তি বই, আবার লোকটা গভর্নর, তিনি আমার কাছে বই চাইছে! তিনি খুশি হয়ে বইটি দিয়ে দিলেন। কয়েকদিন পর ফ্রাঙ্কলিন তাকে ধন্যবাদ পত্র সহ বইটি দিলেন।পত্রটি পড়ে অপোনেন্ট আরো খুশি হলেন। এরপর যখন তাদের দেখা হলো অপোনেন্ট নিজেই উৎসাহ দেখিয়ে তার সাথে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছিলেন ।
এইটি ফ্রাঙ্কলিনের নিজের করা বলে এর নামও দেয়া হয়েছে ফ্রাঙ্কলিন ইফেক্ট। কে জানতো এটা পড়ার এবং গবেষণার বিষয়বস্তু হতে পারে। বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিনের অটোবায়োগ্রাফি -” The Autobiography of Benjamin Franklin ” তে এই গল্পটি জানার পরই সাইকোলজিস্টদের আগ্রহ জন্মায় ।
এই ইফেক্ট যে শুধু বইয়ের দেয়া নেয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, এমন নয়। যাকে আপনার সম্পর্কে পজিেটিভলি ভাবাতে চান তার এবং আপনার মধ্যে কোন জিনিসটাকে রাখলে ইন্টারেকশন ভালো হবে, আপনার প্রতি আগ্রহ জন্মাবে, এই জিনিসগুলো আপনাকেই খুঁজে বের করতে হবে। যেমনটা ফ্রাঙ্কলিন করেছিলেন বই দিয়ে। এইটা বের করার দায়িত্ব আপনার ।
এই ইফেক্টটি শুধুমাত্র যেসকল লোক আপনার প্রতি নেগেটিভ ধারণা পোষণ করেন তাদেরকে আপনার প্রতি নিউট্রাল ধারনা আনার জন্য বা হালকা পজেটিভ ধারণা আনার জন্য কার্যকর ।
যখন কেউ কারো কাছে সাহায্য চায়, তখন যার কাছে সাহায্য চাইলো তার সাব-কনশাস মাইন্ড বা অবচেতন মন তাকে সাহায্যপ্রার্থীর উপরের স্তরের বলে ধরে নেয়। এতে করে সাহায্যপ্রার্থী আর সাহায্যকারীর মধ্যে একধরনের গ্যাপ সৃষ্টি হয়। এই গ্যাপটা শুধু সাহায্যকারীর মনেই সৃষ্টি হয়।
আর মানুষের একটা বিল্ট-ইন স্বভাব হলো নিচের স্তরের মানুষকে সাহায্য করে গভীর আত্ন-পরিতৃপ্তি লাভ করা। মানুষ নিজের লেভেলের মানুষকে সাহায্য করা থেকে তার নিচের লেভেলের মানুষকে সাহায্য করে বেশি আনন্দ পায়।
আবার, মানুষ গুরুত্ব পেতেও ভালোবাসে।
ফ্রাঙ্কলিন যখন অপোনেন্টের কাছে বই চাইলো, তখন অপোনেন্টের সাব-কনশাস মাইন্ড তাকে ফ্রাঙ্কলিনের চেয়েও অধিক জ্ঞানী বলে ধরে নিলো। এরপর বই দিলো এবং ভাবলো সে তো আমার সমস্তরের না, তার সাথে দ্বন্দ্ব রেখে লাভ কি । আবার এতবড় মানুষ আমাকে গুরুত্ব দিয়েছে এটাও একটা ফ্যাক্ট ছিলো। সব দিক বিবেচনা করেই এটা কাজ করেছে ।
তো, আপনিও যাদের সাথে বৈরী সম্পর্ক রাখতে চান না তাদের সাথে করে ফেলুন এর পরীক্ষা ।
কাজ করে গেলে এখানে এসে ধন্যবাদ লিখে যেতে ভুলবেন না কিন্তু !
FILED UNDER :অন্যান্য , পাঁচ মিশালী
Comments are closed.
Comments
tasnim says
ফাটাফাটি তো! চেষ্টা করে দেখতেই হয় সত্যিই। তবে আরও কিছু উদাহরণ তুলে ধরলে ভালো হতো। যেমনঃ বই না হয়ে অন্য কি দিয়ে কি ভাবে আরেকজনকে প্রভাবিত করা যায়। যাইহোক পোস্টটা দারুণ।
Al Nayem says
যার উপর আপনি এই ইফেক্ট কাজে লাগাবেন তার পারদর্শিতার উপর ভিত্তি করে একটা ট্রাই নিয়ে ফেলেন ।
আর, ধন্যবাদ