২১০০ সালের পৃথিবীতে বাসযোগ্য তিনটি স্থান
আমরা কী কখনো ভেবে দেখেছি যে ২১০০ সালে পৃথিবীর কোন অঞ্চলে মানুষ সুস্বাস্থ্য নিয়ে সুন্দর ভাবে বসবাস করতে পারবে? কোন বন্যা, যুদ্ধ কিংবা প্রাকৃতিক ভয়াবহ দূর্যোগ থেকে সুরক্ষিত বসবাস কী সম্ভব হবে আজ থেকে ৮০ বছর পর? বর্তমান জলবায়ুর পরিবর্তনের সূচক দেখলেই ভাবনার বোঝা মাথায় এসে যেতে পারে সবারই যে আসন্ন ২১০০ সালে মানুষেরা বা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কীভাবে তাদের জীবন যাপন করবে। প্রতিনিয়ত যে পরিমাণ পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এতে অনেক অঞ্চল গরমে বাস অযোগ্য হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে বরফ গলিত হয়ে অনেক ভূখন্ডই সমুদ্র গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে। এসব সূচক দেখলেই সবারই প্রশ্ন জাগতে পারে কী হবে আগামী ৮০ কিংবা ১০০ বছর পর? পৃথিবীর কোন কোন দেশ সমুদ্র গর্ভে হারিয়েও যেতে পারে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফির একটি প্রজেক্ট ‘কী হবে যদি পৃথিবীর সমস্ত বরফ গলে গিয়ে সমস্ত জলরাশি সমুদ্রে এসে মিশে যায়।’ সেখানে দেখা যায় জলবায়ুর এইরূপ পরিবর্তনের শিকারে পুরো বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সহ বেশকিছু আস্ত অঞ্চল সমুদ্র তলদেশে চলে যাবে?
এতেই বুঝতে কষ্ট হবার নয় যে জলবায়ুর পরিবর্তন এর ভয়াবহতা কতখানি। জলবায়ুর এই পরিবর্তন দেখে আগামী ৮০/১০০ বছরে পৃথিবীর কোন অঞ্চল হবে বসবাসযোগ্য তা বলা খুবই মুশকিল। বিজ্ঞানের অনুসন্ধান ও সাহায্যে এই নিয়ে কিছুটা ধারনা নেওয়া যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে ভিত্তিক আন্তঃসরকারী প্যানেলের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে কার্বন ডাইঅক্সাইড এর পরিমাণ বৃদ্ধির সূচক অনুসারে ২১০০ সালে গ্রিনল্যান্ড, কানাডা, রাশিয়া, এবং উত্তর আমেরিকার মতো জায়গাগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে গরম হবে এবং আজকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হবে। এসব দেশগুলো নিখরচায় বাসযোগ্য হবে। আজকের জলবায়ু বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে, এখানে ২১০০-এ বাস করার জন্য সেরা তিনটি স্থান রয়েছে।
1. নিউক, গ্রীনল্যান্ড (NUUK, GREENLAND)
উষ্ণ গ্রহের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ও প্রয়োজনীয় উপাদানের মধ্যে একটি হলো মিষ্টি জল। আইপিসিসি এর তথ্য অনুসারে শুকনো উপ-ক্রান্তীয় অঞ্চলে পুনর্নবীকরণযোগ্য জল এবং ভূগর্ভস্থ জল একদমই হ্রাস পাবে। গ্রিনল্যান্ডে আক্ষরিক অর্থেই জল প্রবাহিত হয়। ২০১৬ সালের জিওফিজিকাল রিসার্চ লেটারস জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা পত্রে দেখা যায় ২০১১ থেকে ১৪ সালে গ্রিনল্যান্ডে গড়ে ২৬৯ টন বরফ গলিত হয়, অর্থাৎ ৭১ ট্রিলিয়ন গ্যালন জল বেরিয়ে আসে এখানকার বরফ গলে গিয়ে। এই জলে পুরো গ্রিনল্যান্ড এক বছর কাটিয়ে দিতে পারবে। অন্য ভাষায় বলতে গেলে গ্রিনল্যান্ডের এক বছরের গলিত বরফের জল অর্থ গ্ৰহে তিনজনের মধ্যে একজনের জন্য পর্যাপ্ত জল।
সুতরাং, গ্রিনল্যান্ডে যথেষ্ট পরিমাণে পানযোগ্য জল থাকবে। বর্তমান সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থিত ন্যাশনাল অ্যাডভাইসাল ব্যুরো লিমিটেডের মতো অনেক সংস্থা আইসবার্গের বরফ গলিয়ে পানিয় জল সৃষ্টির কাজ করে যাচ্ছে। গ্রিনল্যান্ডে পাঁচটি জলবিদ্যুৎ এর পাশাপাশি ভারী শিল্পকারখানার জন্যে যথেষ্ট পানি রয়েছে। গ্রিনল্যান্ডে পান করার জন্য জল থাকবে তার সাথে বিক্রি করার জন্য ও জল মজুদ থাকবে।
2. অ্যাগভেকিনোট, সাইবেরিয়া (EGVEKINOT, SIBERIA)
ক্রেস্তা উপসাগর উপকূলে অবস্থিত প্রায় ২৬০০ ফুট উঁচু পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত সাইবেরিয়ার অ্যাগভেকিনোট বা ডিম্বাকিনোট।এই শহরের ৩৭৯০ মাইল দূরে মস্কো শহর ও ১০৪১ মাইল দূরে অবস্থিত ম্যাগাডন। বর্তমান এটি পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্য শীতলতম জনবহুল স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়।
এলেনা পারফেনোভা ও নাদজা চেচেবকোভা এর রিসার্চ অনুযায়ী ২০৮০ সাল নাগাদ এই অঞ্চলের তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি বৃদ্ধি পাবে। ২০১১ সালের নাসার বিজ্ঞানীর একটি তথ্য অনুযায়ী এই শতাব্দীর শেষ দিকে সাইবেরিয়ার ৫০-৫৮ শতাংশ জমি কৃষির জন্য জলবায়ু উপযোগী হয়ে উঠবে। ভবিষ্যৎ পৃথিবীর বড় সমস্যা হবে বাতাসে কার্বনের পরিমাণ। ডব্লিওএমও এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০১৮ সালে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড এর পরিমাণ ছিলো ৪০৭.৮ পিপিএম। এর অর্থ হলো প্রতি দশ লাখ অণুর মধ্যে ৪০৮টি অনুই কার্বন ডাইঅক্সাইডের। বিপদজনক পিপিএম এর পরিমাণ হলো ৪০০ থেকে ১০০০ পিপিএম। ধারনা করা যায় ২১০০ সাল নাগাদ এর পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে ১০০০ পিপিএম। এতো বিপদজনক অবস্থায় খাদ্য সংকট ব্যাপক আকার ধারণ করবে। আর জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজন আবাদি কৃষিজমি। যেখানে ১০০০ পিপিএমে পৃথিবীর বহু অঞ্চলে বনে আগুন, ব্যপক গাছের মৃত্যুহার, সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থান লেগে থাকবে সেখানে সাইবেরিয়ার অ্যাগভেকিনোট অঞ্চল হয়ে উঠবে কৃষির জন্য উপযোগী স্থান। আর নিঃসন্দেহে ২১০০ সালে এই অঞ্চল হবে বাসযোগ্য অঞ্চল গুলোর মধ্যে একটি।
3. বাংগোর, মাইন (BANGOR, MAINE)
বাংগোর, মাইন যুক্তরাষ্ট্রের একটি অঙ্গরাজ্য। আধুনিক বাংগোর শহর উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের সাথে জড়িত হয়। ভবিষ্যতে পৃথিবী থাকবে উষ্ণ, মিষ্টি জলের অভাব আর যুদ্ধ বিধ্বস্ত থাকতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনে ২০১৬ সালে ইউনিয়ন অব কনসার্টেড বিজ্ঞানীর মতে সমুদ্রপৃষ্ঠের তিন ফুট উচ্চতা বৃদ্ধি যুক্তরাষ্ট্র উপকূলের ১২৮-টি উপকূলীয় প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো হুমকির মধ্যে পড়ে যাবে। তার মধ্যে বাংগোর, মাইন আছে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে।
পাথুরে উপকূল হওয়ায় সমুদ্রপৃষ্ঠ উচ্চতা তলিয়ে নিতে পারবেনা তাছাড়া এই অঞ্চলে আক্রমণ করা শক্ত কিন্তু প্রতিরক্ষা করা সহজ। ইনভ্রয়মেন্ট প্রটেকশন এজেন্সি (ইপিএ) এর মতে জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতার পরিবেশগত, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সেবার মূল্যায়নে সর্বোচ্চ সামগ্রিক স্কোর পায় বাংগোর, মাইন অঞ্চলটি। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে এই অঞ্চলের কৌশলগত তাৎপর্য আরো বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং বলা যায় আগামী ১০০ বছরে এই অঞ্চলের গুরুত্ব বৃদ্ধির সাথে হয়ে উঠবে বসবাসযোগ্য একটি স্থান।