অ্যান্টিবায়োটিক এর কাজ করে যেসব প্রাকৃতিক উপাদান

অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় ব্যাকটেরিয়ার কারণে হওয়া সংক্রমণ দূর করতে । অ্যান্টিবায়োটিক সংক্রমণের বৃদ্ধি কমিয়ে দেয় বা বন্ধ করে দেয়। ব্যাপক মাত্রায় এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে প্রতিটি ক্ষেত্রেই। ব্যাকটেরিয়া দিয়ে সংক্রমিত হলে চিকিৎসকরা আমাদের অ্যান্টিবায়োটিক দেন। তবে কিছু প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে, যেগুলো অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ করে। এই ভেষজ উপাদানগুলো আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ করে যেসব প্রাকৃতিক উপাদান

অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ করে যেসব প্রাকৃতিক উপাদান

অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে যেসব প্রাকৃতিক উপাদানঃ

১. হলুদের  স্বাস্থ্য উপকারিতা

হলুদ এর সক্রিয় উপাদান হল মধ্যে curcumin  যা একটি প্রাকৃতিক এন্টিসেপ্টিক হিসেবে কাজ করে। তাই কাঁটা, ছিঁড়া এবং পোড়া জায়গায় হলুদ বাটা লাগালে অনেক দ্রুত উপকার পাওয়া যায় ও তাড়াতাড়ি ব্যথা এবং দাগ ভালো হয়ে যায়।  হলুদের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান। এগুলো ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করতে কাজ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি ব্যাকটেরিয়ার কারণে হওয়া সংক্রমণ প্রতিরোধেও কাজ করে।

হলুদের একটি সক্রিয় উপাদান টিউমার সৃষ্টিকারী রেডিয়েশনের বিরুদ্ধে কাজ করে। হলুদ ক্যান্সার কোষকে নষ্ট করে দিতে পারে- যেমন টি-সেল লিউকেমিয়া, কোলন ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সারের কোষ। এটি প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।  হলুদ কেমো ড্রাগ এর প্রভাব এবং তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হ্রাস করার ক্ষমতা রাখে। গবেষণা দেখা গেছে, হলুদ অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার উপশমে খুব ভালো কাজ করে।

হ্লুদে আছে প্রোটিন, খাদ্যআঁশ, নায়াসিন, ভিটামিন সি, ই, কে, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, কপার, ম্যাগনেসিয়াম এবং জিংক। তাই হলুদ খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত কাঁচা হলুদের রস খেলে বাচ্চাদের লিউকমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে । প্রতিদিন দুধ বা পানির সাথে হলুদের গুঁড়ো বা রস মিশিয়ে খাওয়া অভ্যাস করলে অনেকটাই সুস্থ থাকা সম্ভব। আলঝেইমার, ক্যান্সার এবং মস্তিষ্ক সম্পর্কিত রোগ প্রতিরোধে হলুদ খুব ভালো ভুমিকা রাখে।

আর চুল পড়া বন্ধ ও নতুন চুল গজাতে রসুন ভালো কাজ করে।।হলুদের অন্য এক উপাদান ‘পলিফেনল’ চোখের অসুখ ‘ক্রনিক অ্যান্টিরিয়ার ইউভেইটিস’ সারাতে কর্টিকোস্টেরয়ডের কাজ করে। হলুদের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, প্রদাহ বিরোধী, ভাইরাস বিরোধী, ব্যাকটেরিয়া বিরোধী, ফাঙ্গাল বিরোধী, ক্যান্সার প্রতিরোধক গুনাগুন থাকার কারনে আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় একে রাখা উচিত।

২. আদার উপকারিতা

আদা বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার কারণে হওয়া সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা প্রতিরোধে আদা খুব ভালো ঘরোয়া উপাদান। আদা খেলে কোলন ক্যান্সার এবং জরায়ুর ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। আদা প্রাকৃতিক পেইন কিলার যা ব্যথানাশকের কাজ করে।  আদা দেহের ক্ষতস্থান দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে। আদার অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি এজেন্ট যে কোনো কাটাছেঁড়া বা ক্ষতস্থান দ্রুত ভালো করে।

অতিরিক্ত ওজন কমাতেও আদা  কার্যকরী ভূমিকা রাখে। প্রতিদিন কাঁচা আদা চিবিয়ে  খেলে সহজে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়বে না কারণ আদার মধ্যে যে অ্যান্টিএইজিং উপাদান ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে তা দেহের টক্সিন দূর করে এবং দেহে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে ত্বকে বয়সের ছাপ প্রতিরোধ করে। বার বার আদার রস খেলে ফুড পয়জনিং ও পেটের সমস্যা খুব সহজেই ভালো হয়।  অপারেশনের পর কাঁচা আদা খান। দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করবে।

৩.রসুনের উপকারিতা

রসুন এক দারুণ শক্তিশালী পেনিসিলিন জাতীয় মসলা। রসুন মানুষের দেহের প্রায় সব রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ ওয়েবসাইট ‘মেডলাইন প্লাস’ জানিয়েছে, বিশ্বের অসংখ্য মানুষ কোলন, রেক্টাল, পাকস্থলী, ব্রেস্ট, প্রোস্টেট, মূত্রথলি ও ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত রসুন ব্যবহার করে থাকেন।

কেউ কেউ একে মিনারেলসের মিনি স্টোর হিসেবে নামকরণ করেন। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফসফরাস, অ্যালুমিনিয়াম, ক্যালসিয়াম, রিবোফ্লাভিন, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, ক্লোরিন, সেলেনিয়াম, জিংক ও ভিটামিন ‘সি’। এটি চমৎকার অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টি-ফাংগাল, অ্যান্টি-ভাইরাল হিসেবে কাজ করে, যা আমাদের বিভিন্ন রোগবালাই থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে।

সকালে খালি পেটে কাঁচা রসুন খাওয়া অনেক ভালো একটি অভ্যাস। রসুনে থাকা ভিটামিন সি  স্কার্ভি রোগের প্রতিরোধক ও প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। একই সঙ্গে তা আমাদের রক্তনালিগুলোকে নমনীয় রাখে। রসুন মেয়েদের স্তন ক্যান্সারের ঝুকি কমায়। এমনকি রেক্টাল ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা করে। রসুন প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং ইস্ট ইনফেকশন দূর করতেও সাহায্য করে। এ ছাড়া নিয়মিত রসুন খেলে শরীরে সব ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হয়।

রসুনে ‘অ্যাজোইন’ নামক এক রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে যা রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করে। একই সঙ্গে রক্তের কোলেস্টরেল কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন ফুড পয়জনিং নিবারণ করে এ মসলা।

রসুনে থাকা ‘অ্যালিসিন’  যে কোন ক্ষত, যক্ষা, আমাশয়, টাইফয়েড প্রভৃতির রোগজীবাণু ধ্বংস করে। ঠান্ডা লাগা, গলা বসে যাওয়া কিংবা গলাব্যথা, মাথাব্যথা, গেঁটে বাত, হাঁপানি, ব্রংকাইটিসের সমস্যায় রসুন খেলে খুব দ্রুত ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন ফুড পয়জনিং প্রতিরোধ করে এ মসলা।

অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ করে যেসব প্রাকৃতিক উপাদান

৪. নিম পাতার উপকারিতা

নিমের ব্যবহার হয়ে আসছে গত ৫ হাজার বছর ধরে।ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসকারী হিসেবে নিম খুবই কার্যকর একটি প্রাকৃতিক উপাদান।। তাই ত্বকের সুরক্ষায় এর জুড়ি নেই। ব্রণের সংক্রমণ হলেই নিমপাতা থেঁতো করে লাগালে ভালো ফল পাওয়া যায়।  নিমের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান। এটি ব্রণ তৈরির ব্যাকটেরিয়াগুলোর সঙ্গে লড়াই করে, মুখগহ্বরের সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করে, ক্ষয় ও মাড়ির রোগ প্রতিরোধ করে।

যে কোনো রকমের ইনফেকশন হোক কিংবা ত্বকের সমস্যা সব কিছুতেই নিম পাতা কাজ করে।  নিম পাতা, নিমের ফল এবং ফুলেও রয়েছে প্রচুর  ঔষধি গুণ। নিমে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ক্ষমতা প্রচুর। শরীরের টক্সিন দূর করে রক্তকে শুদ্ধ রাখে এটি।

অনেকেই টুথপেস্ট ও মাউথওয়াশের উপাদানে নিমকে খোঁজেন। নামী ব্র্যান্ডের টুথপেস্টেও নিমকে প্রধান উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা হয়। দাঁত ও মাড়ির ব্যথা কমায় নিমের ডালে থাকা অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান।

ক্যান্সার প্রতিকারে নিম পাতা ভূমিকা রাখে।  নিম তেল, বাকল ও পাতার রস  ক্যান্সার-টিউমার, স্কীন ক্যান্সার এর বিরুদ্ধে কাজ করে।

৫. মধুর উপকারিতা

 পবিত্র কুরআন এবং হাদীসে মধুর অনেক গুনাগুন সম্পর্কে বলা হয়েছে।

“আপনার পালনকর্তা মৌমাছিকে আদেশ দিলেনঃ পাহাড়ে, গাছে এবং উঁচু চালে গৃহ তৈরী কর, এরপর সর্বপ্রকার ফল থেকে ভক্ষণ কর এবং আপন পালনকর্তার উম্মুক্ত পথ সমূহে চলমান হও। তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙে পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্যে রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।”  – সূরা আন-নাহল(১৬), আয়াতঃ ৬৮-৬৯

প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘মধুতে আরোগ্য নিহিত আছে।’  (সহীহ বুখারি: ৫২৪৮)।

মধুও আরেকটি চমৎকার অ্যান্টিবায়োটিক। এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিসেপটিক ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান। এটি ব্যাকটেরিয়া উৎপন্ন হওয়াকে ব্যাহত করে। মধুর অসাধারণ গুণের কারণে প্রাচীনকাল থেকেই এর ব্যবহার সম্পর্কে মানুষ অবগত ছিল  এবং ব্যবহার করতো। এতে আছে ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৫, বি৬, আয়োডিন, কপার, জিংক সহ আরও অনেক অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা আমাদের দেহের বাহ্যিক, অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারে।

মধুতে আছে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধকারী উপাদান, যা অনাকাঙ্ক্ষিত যে কোন সংক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করে। ২০০৭ সালে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা যায়, সুপারবাগ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধে মধু খুব ভালো কাজ করে। বিভিন্ন ভাইরাসের আক্রমণে বিভিন্ন রোগ প্রায়ই দেহকে দুর্বল করে দেয়। এসব ভাইরাস প্রতিরোধে মধু খুবই কার্যকর।এর  প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমূহ সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে।

জার্মানী ও অস্ট্রেলিয়াতে গবেষণায় জানা যায়, পাকস্থলী ও হাড়ের ক্যান্সার নিরাময়ে মধু ভূমিকা রাখতে পারে । এজন্য এক টেবিল চামচ মধু ও দারুচিনির গুঁড়ো মিশিয়ে খেতে বলা হয়। মধুর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ক্ষত, পোড়া ও কাটা জায়গায় ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে। কোথাও পুড়ে বা কেটে গেলে ক্ষত স্থানে মধুর একটি পাতলা প্রলেপ দিয়ে দিন। এতে ব্যথা কমবে ও দ্রুত ক্ষত শুকাবে। এর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান  ক্ষত পরিষ্কার হতে সাহায্য করে ও ব্যথা, ঘ্রাণ, পূঁজ ইত্যাদি হ্রাস করে দ্রুত ক্ষত নিরাময় করে।

৬. জলপাইয়ের তেল এর উপকারিতা

যায়তুন বা জলপাই একটি বরকতয় ফল।

প্রিয় নবীজী বলেন:

كلوا الزيت وادهنوا به فإنه من شجرة مباركة

‘তোমরা যায়তুনের তেল খাও এবং এর দ্বারা মালিশ কর বা শরীরে মাখ। কেননা, তা বরকতময় গাছ থেকে আসে।’ (তিরমিযী, আহমাদ, ইমাম আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন)

জলপাইয়ের এর খোসায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ। এই আঁশ নিয়মিত খাবার হজমে, পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত, বৃহদান্ত, কোলনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।খাবারে জলপাইয়ের তেল ব্যবহারের করলে শরীরের ব্যাড কোলেস্টরেল (LDL) নিয়ন্ত্রণ হয় এবং গুড কোলেস্টেরল (HDL) জন্ম হয়। জলপাই তেল খেলে কোলন ক্যান্সার (colon cancer) প্রতিরোধ হয়। আরও কিছু গবেষক জানিয়েছেন, ‘এটা ব্যথানাশক (pain killer) হিসেবে ভালো কাজ করে।

এতে রয়েছে উচ্চমানের ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-ই। এগুলো দেহের রোগজীবাণু ধ্বংস করে, উচ্চ রক্তচাপ কমায়, রক্তে চর্বি জমে যাওয়ার প্রবণতা কমিয়ে হৃৎপিণ্ডের রক্তপ্রবাহ সক্রিয় রাখে। ফলে হৃৎপিণ্ড থেকে বেশি পরিশোধিত রক্ত মস্তিষ্কে পৌঁছে এর কর্মক্ষমতাও বাড়ায়।

জলপাইয়ের তেলও ব্যাকটেরিয়ার কারণে হওয়া সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিভাইরাল উপাদান। এগুলো ত্বকের সংক্রমণ কমায়। মাথার উকুন তাড়াতে, ত্বকের ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাকজনিত সমস্যা দূর করার জন্য জলপাই পাতার গুঁড়া ব্যবহৃত হয়।

কালো জলপাই ফ্যাটি এসিড এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসে সমৃদ্ধ। এর  আলট্রাভায়োলেট রেডিয়েশন থেকে চামড়াকে রক্ষা করে। যা স্কিন ক্যান্সার থেকে রক্ষা করে।

জলপাইয়ের মনোস্যাটুরেটেড ফ্যাটে থাকে এন্টি ইনফ্লামেটরি ,ভিটামিন ‘ই’ ও পলিফেনাল । যা  অ্যাজমা ও বাতব্যাথা জনিত রোগের হাত থেকে বাঁচায়  এবং বয়স জনিত  হাড়ের ক্ষয় রোধ করে ।

অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ করে যেসব প্রাকৃতিক উপাদান

৭. অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে  ঝাল মরিচ (cayenne)

 কাঁচা মরিচের ভেতর রয়েছে বিশেষ এক উপাদান ক্যাপসাইকিন যা যার কারণে মরিচ ঝাল হয়। এই ক্যাপসাইকিনে আছে ভিটামিন এ, সি, বি-৬, আয়রন, পটাশিয়াম এবং খুবই সামান্য পরিমাণে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট। ত্বক ও স্বাস্থ্যের জন্য  এরা খুবই প্রয়োজনীয়। কাঁচা মরিচে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিটা ক্যারোটিন আছে যা কার্ডোভাস্ক্যুলার সিস্টেম কে কর্মক্ষম রাখে এবং এটি হাড়, দাঁত ও মিউকাস মেমব্রেনকে ভালো রাখতে সহায়তা করে।

৩৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রার বেশি তাপমাত্রায় কাঁচা মরিচ সেদ্ধ করলে কিংবা ভেজে খেলে, তাতে থাকা বিদ্যমান ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায়। তাই এর আসল উপকারিতা পেতে প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে কাঁচা মরিচ কাঁচা খাওয়া ভালো।

এটি অত্যন্ত শক্তিশালী ক্ষত সারাতে কার্যকরী একটি ভেষজ উদ্ভিদ যা রক্ত প্রবাহ বাড়াতেও বেশ উপকারী। ঝাল মরিচের গুঁড়া ভিটামিন B, B কমপ্লেক্স এবং ভিটামিন C তেও সমৃদ্ধ। এতে উচ্চ মাত্রায় ক্যালসিয়াম এবং পটাশিয়াম আছে যা হৃদপিণ্ডের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। এটা বলা হয় যে Arthritis, postherpetic neuropathy, psoriasis এবং ক্যানসার চিকিৎসার জন্য এই ভেষজটি বেশ উপকারি।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট এর তথ্য মতে হিলারি ক্লিনটন প্রতিদিন তাঁর খাবার মেনুতে নাগা মরিচ রাখেন এবং নিয়মিত তা খান। মরিচে থাকা পর্যাপ্ত ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন-এ’ সি’ এবং ‘ই’ থাকার বিষয়ে ইঙ্গিত করে হিলারি বলেন এটি তাঁকে সুস্থ ও প্রাণবন্ত রাখতে সাহায্য করে।

৮.দারুচিনি

আমরা এই ভেষজটি কফিতে দিতে পছন্দ করি এবং কেক, মাফিন এবং অন্যান্য মিষ্টি দ্রব্যতে সুগন্ধ আনার জন্য ব্যবহার করি। রান্না বিষয়ক উপকারিতা ছাড়াও এটি বিভিন্ন ভাবে আমাদের শরীরকে আরও সুস্থ্য রাখতে সহায়তা করে। নতুন গবেষণাতে এটি জানা গেছে যে দারুচিনি প্রদাহের ঝুঁকি কমায়। বেশী মাত্রায় চর্বিযুক্ত খাবার অভ্যন্তরীণ প্রদাহের কারণ হতে পারে যা পরবর্তীতে হৃদরোগের দিকে মোড় নিতে পারে।

এইগ্রহের সবচেয়ে বেশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ভেষজ মসলা দারুচিনি এর মিষ্টি স্বাদ এবং সুন্দর সুবাস জন্য শতাব্দীর পর শতাব্দীর ধরে প্রায় প্রত্যেক সংস্কৃতির দ্বারা সম্মানিত হয়ে আসছে।  ঈস্ট ছত্রাক ঘটিত ইফেকশন প্রতিরোধ করতে দারুচিনি চমৎকার ভাবে কাজ করে।

হৃদরোগীদের জন্যেও দারুচিনি খুব উপকারী কারণ এটি রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে। দারুচিনি আমাদের দেহের গ্যাস্ট্রিক, ক্যানসার, টিউমার এবং মেলানমাস রোগ প্রতিরোধ করে। লিউকোমিয়া ও লিমফোমা ক্যান্সারের কোষগুলোর প্রভাব কমাতেও সাহায্য করে এটি। পৃথিবীর শীর্ষ ৭ টি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপদানই আছে দারুচিনির মধ্যে যা  আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে।

এই মসলা আমাদের পাকস্থলির ব্যাক্টেরিয়া ও ফাংগাস দমন করতে সাহায্য করে। এমনকি ঠাণ্ডায় গলা ব্যথা বা খুশখুশে কাশিতে মধু চায়ের সাথে দারুচিনি মিশালে আরাম পাওয়া যায়।

parsley leaf

৯। পার্সলে পাতার গুনাগুনঃ

পার্সলে হলো “মৌরি” বা মিস্টি শজ বা গোয়ামুরি পাতা। পার্সলে পাতা দেখতে ঠিক আমাদের ধনে পাতার মতই। এর পাতা এবং শিকড় দুইটাই উপকারী। ইউরিনাল ইনফেকশনের জন্য এটি খুবই কার্যকর।

সকল প্রদাহ নাশী ভেষজের মধ্যে Parsley ভিটামিন এবং খনিজে বেশ সমৃদ্ধ। এটি ভিটামিন A, B, C এবং K তে একেবারে ভরপুর। দীর্ঘদিন ধরে Parsley কিডনি সমস্যা, ব্যাথাযুক্ত রজঃস্রাব, হজমের গোলমাল ইত্যাদির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই জনপ্রিয় মশলাটি Rheumatoid arthritis এবং নির্দিষ্ট রকমের ক্যানসারের সূত্রপাত প্রতিহত করতেও বেশ কার্যকর মনে করা হয়। এর মধ্যে অবস্থিত পুষ্টি উপাদানের কারণে এই ভেষজটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে প্রদাহ বিরোধী চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।

১০.পুদিনা পাতার 

বিজ্ঞানীদের দাবি, পুদিনা পাতা ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে। পুদিনা পাতার পেরিলেল অ্যালকোহল যা ফাইটো নিউট্রিয়েন্টসের একটি উপাদান তা মানব দেহে ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে।

পুদিনা পাতায় রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস, যা পেটের যে কোন সমস্যার সমাধান করতে পারে। যাঁরা হজমের সমস্যা এবং পেটের ব্যথা কিংবা পেটের নানান সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা খাবার খাওয়ার পর ১ কাপ পুদিনা পাতার চা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। ৬/৭টি তাজা পুদিনা পাতা গরম পানিতে ফুটিয়ে এক চামচ মধু মিশিয়ে এই চা তৈরি করতে পারেন।

পুদিনা পাতার রস চামড়ার ভেতর দিয়ে নার্ভে পৌঁছে নার্ভ শান্ত করতে সহায়তা করে। তাই মাথা ব্যথা বা জয়েন্টে ব্যথা উপশমে পুদিনা পাতা ব্যবহার করা যায়

আমাদের তালিকার শেষ অন্যতম প্রদাহ নাশী ভেষজ উদ্ভিদ হল পুদিনা যদিও এটির উপকারিতা কম নয়। অনেক ডাক্তার arthritis এ আক্রান্ত রোগীদের তাজা পুদিনা খাওয়ার জন্য উপদেশ দিয়ে থাকেন।

 

Similar Posts