সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এজ এ ক্যারিয়ারঃ দেশ ও দেশের বাইরের প্রেক্ষাপট
একটি শিশুকে যখন বিল্ডিং সেটের খেলনা কিনে দেয়া হয়, তখন নিজ হাতে একের পর এক খেলনা জোড়া লাগিয়ে নিত্য নতুন সব কাঠামো সৃষ্টিতে তার মাঝে অনাবিল আনন্দ জেগে ওঠে। শৈশবের গণ্ডি পেরিয়ে যখন কৈশোরে প্রবেশ ঘটে, চিন্তাগুলো আরো প্রসারিত হয়, সূচনা ঘটে একজন পুরকৌশলী হয়ে ওঠার এক অদম্য স্বপ্নের।
পুরকৌশল বা ইংরেজিতে যাকে বলা হয় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং। মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এই প্রকৌশল শাস্ত্রের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সভ্যতার ক্রমবিকাশ,মানোন্নয়ন, পরিচয় বহন, নিরবচ্ছিন্ন যাতায়াত ব্যবস্থা, নাগরিকের স্বাচ্ছন্দ্যবোধ নিশ্চিতকরণ সহ অসংখ্য ক্ষেত্রে পুরকৌশলীদের অবদান নিঃসন্দেহে অতুলনীয়। তাই এই সভ্যতা বিনির্মাণের কারিগরদের চাহিদাটাও নেহাত কম নয়, বরং কল্পনার থেকেউ বেশী। দেশে তো বটেই, দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোতেউ এদের চাহিদা অনেক।
কাজের ক্ষেত্রঃ
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ শুধু বাসস্থান কিংবা দালানকোঠা নির্মাণেই সীমাবদ্ধ নয়, এদের ক্ষেত্র অনেক বিস্তৃত। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ
জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
এনভারনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং
ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং
স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং
ওয়াটার রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং
কোস্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং
কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রভৃতি।
দেশের বাইরে ক্যারিয়ারঃ
দেশের বাইরে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য রয়েছে সুবর্ণ সুযোগ। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, আরব আমিরাত সহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোতে এদের কাজের ক্ষেত্র ব্যাপক। এসব দেশগুলোতে বিভিন্ন সময়ে গড়ে ওঠা বিভিন্ন মেগাস্ট্রাকচার, হাইওয়ে, ব্রিজ স্থাপনা থেকে শুরু করে আধুনিক নগরায়ন এর বাস্তবায়ন অনেক পুরকৌশলীদের কাজের ক্ষেত্রের দুয়ার খুলে দিয়েছে। হাইড্রোটেকনিক্যাল স্পেশালিষ্ট, ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম ডেভেলোপার, কন্সট্রাকশন ম্যানেজার, জিও-টেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি পদে নিয়মিত নিয়োগ হচ্ছে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য প্রতিষ্ঠান গুলো হছেঃ একম(AECOM), শেল(Shell), কিওয়েত কর্পোরেশন (Kiewet Corporation) এবং ইম্পেরিয়াল ওয়েল। এছাড়াও প্রতিবছর অসংখ্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বিভিন্ন দেশে গ্রাজুয়েট রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হচ্ছেন যা একই সাথে দেশের ভাবমূর্তি এবং আর্থসামাজিক অবস্থার সমূহ উন্নতি সাধন করে।
দেশের ভিতরে ক্যারিয়ারঃ
দেশের ভিতরেও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য রয়েছে সুবর্ণ সব সুযোগ। সরকারি কিংবা বেসরকারি, দুই খাতেই ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে। সরকারি দিক দিয়ে পি ডব্লিউ ডি, সড়ক ও জনপদ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, এলজিইডি মন্ত্রণালয়, ওয়াসা, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বি ডব্লিউ ডি বি) প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরেও পুরকৌশলীদের যোগদানের সুযোগ রয়েছে। বেসরকারি দিক দিয়ে রিয়েল এস্টেট কোম্পানি গুলোতে প্রচুর সিভিল ইঞ্জিনিয়ার প্রয়োজন হয়। দেশে গড়ে ওঠা বিভিন্ন রড প্রস্তুতকারক কোম্পানি যেমনঃ বিএসআরএম, কেএসআরএম, রহিম স্টিল, বিভিন্ন সিমেন্ট প্রস্তুতকারন প্রতিষ্ঠান যেমনঃ স্ক্যান সিমেন্ট, শাহ সিমেন্ট, সেভেন রিংস সিমেন্ট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান গুলোতে নিয়মিত পুরকৌশলীরা নিয়োগপ্রাপ্ত হচ্ছে। এছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি সব ব্যাংকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগ দেয়া হয়।
“আপনি সেটাই করুন যা আপনি করতে ভালোবাসেন”- উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আর নিজের লালিত স্বপ্ন, সার্বিক দিক বিবেচনায় স্টিভ জবসের এই উক্তিটি হতে পারে ক্যারিয়ার হিসেবে পুরকৌশলী হওয়া বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে এক অনুপ্রেরণা।