জাপানীজ মেয়েরা কিভাবে এতো সুন্দর এবং স্লিম থাকে
জাপানী মেয়েদের দেখলে মানবী মনে হয়না। এক একজন এক একটা পুতুল যেন। ফিগার, স্কিন, চুল এতো স্বাস্থ্য উজ্জ্বল ! ভারি কোন মেকআপ ছাড়াই তারা অনন্যা। জাপানী মেয়েদের বয়স কত কেউ অনুমানও করতে পারেনা। এর পেছনে রয়েছে তাদের খাদ্য অভ্যাস থেকে শুরু করে এবং কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলা।
কি সেই সিক্রেট
আজুকি পাউডারঃ
১২০০ বছর ধরে জাপানী মেয়েদের ঐতিহ্যবাহী স্কিন কেয়ারের উপকরণ হলো Adzuki (Red Bean) powder. আজুকির পাউডার ও স্ক্রাব ত্বকের ময়লা ভালোভাবে পরিষ্কার করে ত্বককে ভিতর থেকে পরিষ্কার রাখে। ত্বকের ভিতরে জমা ধুলো ময়লাকে বের করে ত্বককে সতেজ রাখে।
গ্রিন টি সব কিছুতে ব্যাবহারঃ
জাপানী মেয়েদের বিউটি রুটিনের সব কিছুতে গ্রীন টি আছে। তাদের ফেসিয়াল মাস্ক, হেয়ার প্যাক, স্ক্রাব সব কিছুতে গ্রীন টি পাওডার ব্যাবহার করে। গ্রীন টীর পাওডারকে তারা matcha বলে থাকে। আর দিনে কম পক্ষে তিনবার তারা গ্রীন টি পান করে।
যৌবন পেরিয়েও ত্বকের লাবণ্য ধরে রাখতে এ চা বেশ উপকারী। ত্বক ক্যানসার প্রতিরোধেও এটি কার্যকর। গ্রিন টি ত্বকের বলিরেখা দূর করে আরও মসৃণ করে তোলে। পান করার পাশাপাশি গ্রিন টি মাস্ক সরাসরি মুখমন্ডলেও ব্যবহার করা যায়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এতে মুখের মেছতা ও ব্রণসহ দাগ দূর করার ক্ষেত্রে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
সানস্ক্রিন ক্রিম এর বদলে টুপি, ছাতা ব্যাবহারঃ
জাপানী মহিলারা সানস্ক্রিন ক্রিম অপেক্ষা ছাতা ও টুপি বেশি ব্যবহার করেন। সার্ভেতে দেখা গিয়েছে জাপানী মহিলারা ত্বকের যত্নের ক্ষেত্রে বিশেষ করে রোদে বেরলে যতটা সম্ভব ছাতা ও টুপির ব্যবহার করেন। সান্সক্রিম প্রায় এড়িয়ে চলেন। ফলে ত্বক প্রাকৃতিক ভাবে সুন্দর থাকে। কসমেটিকের থেকে ত্বকের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় থাকে না।
প্রতিদিন গোসল করাঃ
গোসলকে জাপানী মেয়েরা শুধু পরিস্কার হওয়া নয় তারা তাদের রুপচর্চার একটা অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ মনে করে। ঝর্না ব্যাবহার না করে বাথ ট্যাবে অনেকক্ষণ ধরে হাল্কা উষ্ণ পানিতে শরীর ডুবিয়ে রাখতে পছন্দ করে। ট্যাবের পানিতে নানান সুগন্ধি ফুল, এসেন্সিয়াল অয়েল, সল্ট ব্যাবহার করে। একে তারা soak, scrub, and relax বলে । এভাবে করার ফলে তাদের মন রিলাক্সড হয়, ব্লাড সার্কুলেশন বাড়ে। রাতে ঘুমানোর আগে এই ধরনের গোসল পেশীকে রেলাক্স করে ফলে খুব ভালো ঘুম হয়। যা তাদের স্কিনে ফুটে উঠে পরদিন।
Tsubaki oil ব্যাবহারঃ
শতবর্ষ ধরে জাপানী মেয়েরা Tsubaki অথবা ক্যামেলিয়া অয়েল ব্যাবহার করে তাদের ত্বক, চুল অথবা পুরো শরীরের যত্নে। এই প্রোডাক্ট ওমেগা-9 ফ্যাটি এসিড , এসেনশিয়াল প্রোটিন এবং গ্লিসারাইড সমৃদ্ধ। যা তাদের চুলকে ঘন, সিল্কি করে। খাবারে এই তেল ব্যাবহার করলে তা ব্লাড প্রেসার , কোলস্টেরল এবং রক্তে চিনির পরিমান কমায়। এই তেল সরাসরি স্কাল্পে এবং স্কিনে দেয়া যায়। জাপানীরা সালাদে এবং খাবার ফ্রাই করতে Tsubaki oil ব্যাবহার করে
অনেক বেশী ভিটামিন সি গ্রহনঃ
আমরা সবাই কম বেশী জানি ভিটামিন সি আমাদের প্রাকৃতিক কোলাজেন সাপ্লাইকে বৃদ্ধি করে, সর্দি কাশি থেকে দূরে রাখে। এবং আমাদের হাড়ের ঘনত্ত ঠিক রাখে ভিটামিন সি। এছাড়া প্রাকৃতিক ভাবে আমাদের ত্বকে যে মেলানিন তৈরি হয় ভিটামিন সি তার ঘনত্ব কমায়। এই ভিটামিন আমাদের স্কিন কে ঝলমলে করে তুলে। জাপানী মেয়েরা নিয়ম মেপে প্রতিদিন তাদের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন সি রাখে। সেটা ড্রিঙ্কস, খাবার, সাপ্লিমেন্ট, ফল অথবা সবজি হিসেবে গ্রহণ করে।
ত্বকের ম্যাসাজঃ
জাপানী মহিলাদের ধারণা যে ত্বকের যত্ন নিতে বিশেষ করে মুখের ক্ষেত্রে ম্যাসাজ করা খুবই দরকার। এর ফলে মুখে বয়সের ছাপ বা বলিরেখা সহজে পড়ে না। এর জন্য তারা নানান ধরনের মুভমেন্ট এপ্লাই করেন।
কোলাজেন ড্রিঙ্কঃ
তারা নিয়মিত সাপ্লিমেনটারি ডায়েট কোলাজেন নেন। অনেক বৈজ্ঞানিকের মত যে কোলাজেনের ব্যবহার প্রোটিন পাউডার খাবার সমান। আলাদা কিছু না। কিন্তু জাপানীরা ত্বকের যত্নের বিশেষ খেয়াল রাখার জন্য এটা গ্রহন করে। এটি ভিটামিন আর এন্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর। এতে প্রোটিন এবং এমাইনো অ্যাসিড আছে।
খাবার গ্রহণ পদ্ধতিঃ
আমরা যা কিছু খাই সব আমাদের ত্বক এবং চেহেরায় প্রকাশ করে দেয়। Ichijyu sansai নামক একটা প্রিন্সিপাল তারা সব সময় মেনে চলে। এর মানে হল একটা স্যুপ, তার সাথে থাকবে তিনটা সবজি এবং সাথে রাইস এবং মাছ। একদম পারফেক্ট ডায়েট যা খুব সুন্দর পুস্টির ব্যালেন্স রাখে। এই অভ্যাস দ্রুত বুড়ো হয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে। Seaweed (wakame ) এবং kelp (kaiso) তাদের প্রায় সব খাবারে থাকে যা আয়োডিন এবং কেরাটিনে পুর্ন। এই সব গুলো উপাদান সুন্দর স্কিন , চুল, নখের জন্য খুব দরকারী।
অতিরিক্ত বিউটি প্রোডাক্টস ব্যাবহার না করাঃ
জাপানী মেয়েরা এসব থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পছন্দ করে। তারা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য চর্চাকে বেশী গুরুত্ত দেয়। খুব বেশী প্রসাধনী তাদের পছন্দ নয়।
জাপানীরা একটা বিষয় সবসময় মাথায় রাখে তা হোল Mienai Oshare। যার অর্থ অদেখা সৌন্দর্য। এর মাধ্যমে তারা বুঝায় যে সৌন্দর্য বলতে শুধু বাইরের রুপকে বুঝায় না। ভিতরের কনফিডেন্স এবং স্নিগ্ধতা কোন প্রোডাক্ট এনে দিতে পারেনা। মুখে লেগে থাকা সুন্দর একটা হাসি, ঝকঝকে ত্বক অন্যদের কাছে আপনাকে সুখী, কনফিডেন্ট এবং এনার্জেটিক প্রমানিত করবে। তাই প্রতিদিনের বিউটি রুটিনে তারা তা মেনে চলে।