রক্তসল্পতা – কিছু জানা দরকার!

রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। আমাদের দেশে দুই তৃতীয়াংশ মানুষ রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত। হিমোগ্লোবিন প্রধানত রক্তের লোহিত রক্ত কণিকার এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ। সার্বিকভাবে শিশুদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বেশি থাকে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারীদের হিমোগ্লোবিনের ব্যাপক ঘাটতি দেখা যায়। যার ফলে আমাদের বাংলাদেশ রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত নারীদের সংখ্যা বেশি।

রক্তসল্পতা

বিভিন্ন কারণে লোহিত রক্ত কণিকায় হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যায় :

খাদ্যের মুখ্য উপাদান যেমন : লৌহ, ফলিক এসিড, ভিটামিন বি ১২ ইত্যাদির ঘাটতি থাকলে দেহে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দেখা যায় এবং রক্তশূন্যতার লক্ষণ গুলো ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে থাকে।আমাদের বাংলাদেশে ১৫থেকে ৪৫ বছরের নারীরা রক্তশূন্যতায় বেশি আক্রান্ত হয়। বিশেষ করে প্রজননের উপযুক্ত বয়সী নারী গর্ভবতী দের এই রোগ বেশি হয়।

দেহে লৌহের ঘাটতি দেখা দিলে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে। তবে সব সময় যে কেবলমাত্র লৌহের ঘাটতি জন্য রক্তস্বল্পতা দেখা দেবে ব্যাপারটা ঠিক তেমন নয়। লৌহের ঘাটতিজনিত রক্তস্বল্পতা ছাড়াও আরো বিভিন্ন কারণে রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। যেমন:

১.অধিক রক্তপাত
২.কৃমির আক্রমণ
৩.লৌহগঠিত খাদ্য উপাদান শরীরে যথাযথভাবে শোষিত না হলে
৫.অন্ত্রে সংক্রমণ ঘটলে

রক্তশূন্যতা হলে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে :

১.যেমন দুর্বলতা অনুভব করা
২.মাথাব্যথা
৩.মনমরা ভাব
৪.চোখে অন্ধকা দেখা৷
৫.খাবারের প্রতি অরুচি
৬. বুক ধড়ফড় করা
৭.ঘুম না হওয়া

সচরাচর পুরুষরা রক্তস্বল্পতায় খুব কমই আক্রান্ত হয়। কারণ পুরুষদের রক্তের লোহিত রক্তকণিকার হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ নারীদের থেকে অনেকাংশে বেশি। তবে এটি যে কেবল নারীদের রক্তশূন্যতার হার বেশি হবার কারণ সেটি নয়।

আমাদের বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে লিঙ্গ বৈষম্য, বিভিন্ন কুসংস্কার এবং সামাজিক রীতিনীতি এর জন্য নারীরা পুরুষদের তুলনায় রক্তস্বল্পতায় বেশি আক্রান্ত হয়।

রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত নারীদের মৃত্যু ঘটার সম্ভাবনা যথেষ্ট বেশি। বিশেষ করে সন্তান জন্মদান কালে নারীদের মৃত্যু ঝুঁকি যথেষ্ট। কিন্তু একটি পজিটিভ সাইড এই যে, বর্তমানে সকল উপজেলায় কমিউনিটি ক্লিনিক এবং নিকটস্থ হাসপাতাল থাকার কারণে নারীদের রক্ত স্বল্পতার কারণে মৃত্যুহার যথেষ্ট কমেছে। পূর্বে নিকটস্থ কমিউনিটি ক্লিনিক অথবা হাসপাতাল না থাকার কারণে আমাদের দেশে মাতৃকালীন মৃত্যুহার বেড়ে যেত একমাত্র রক্তস্বল্পতায় ভোগার কারণে।

দিন বদলেছে। সংস্কার পালটেছে। তার পাশাপাশি নারী-পুরুষের বৈষম্য কমে এসেছে। সুতরাং রক্তস্বল্পতা থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই লৌহ সম্পন্ন খাবার যেমন :যকৃত, মাংস, ডিম, শাকসবজি, বরবটি, খেজুরের গুড়, মসুরের ডাল, চীনাবাদাম ইত্যাদি বেশি করে খেতে হবে।

তবে একটি ব্যাপার বলে রাখা ভালো। যদি কেউ রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত হয় তাহলে পরীক্ষা করে অন্ত্রে কৃমির বা হুকওয়ার্ম এর সংক্রমণ কৃমিনাশক ওষুধ সেবন করতে হবে।

মনে রাখবেন, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে। এবং ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া রক্তস্বল্পতার চিকিৎসা করা বিপদজনক হতে পারে। কেননা রক্তস্বল্পতা কয়েক ধরনের রয়েছে। যেখানে প্রচলিত মাত্রায় লৌহ জনিত খাদ্য অথবা ঔষধ গ্রহন করলে রোগী আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। সুতরাং রক্তস্বল্পতা লৌহ জাতীয় খাবারের ঘাটতির ফলে হয়েছে কিনা সেটি নিশ্চিত করতে হবে এবং তারপর রক্তস্বল্পতার চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

শহর অঞ্চলে রক্তসল্পতায় কেউ আক্রান্ত হলে সাধারণত ডায়েটিশিয়ানের কাছে পুষ্টি ঘাটতি বা লৌহ ঘাটতি সম্পর্কে পরামর্শ গ্রহণ করে। তবে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ডায়েটিশিয়ান অথবা তেমন অভিজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় গ্রাম অঞ্চলের অনেক নারী রক্ত স্বল্পতায় ভুগছেন। তারা তাদের দেহের মধ্যে যে রোগ পোষণ করছে তা সম্পর্কে হয়তোবা অনেকেই অবগত নয়। সুতরাং দেশ থেকে রক্তস্বল্পতা দূর করতে হলে সর্বপ্রথম আমাদের গ্রামের নারীদের রক্তস্বল্পতা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। কারণ রক্তস্বল্পতা বাংলাদেশে বর্তমানে একটি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতি তিনজনের দুই জন রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত হচ্ছে। আসুন আমরা সকলকেই রক্তস্বল্পতা সম্পর্কে অবগত করি। যাতে আমরা রক্তস্বল্পতায় মৃত্যুহার রোধ করতে পারি এবং উন্নত জীবনযাপন করতে পারি। এটি আমাদের সকলের কাম্য।

Similar Posts