কারো পার্সোনালিটি বোঝার উপায় কি?
কারো পার্সোনালিটি বুঝার জন্য কি অনেক সময় দরকার হয়? তার সাথে ভালোকরে মিশতে হয়? তার সুখ-দুঃখের ঘটনাগুলো শুনতে হয়? কিংবা কার সাথে সে কিভাবে ব্যবহার করে সেগুলো ভালোমতো দেখতে হয়?
আমরা ভাবি, একজন মানুষের পার্সোনালিটি জানার জন্য এসব দরকার হয়।
কিন্তু সাইকোলজিস্টরা বলেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, কিছু বাহ্যিক বা দৃশ্যমান বৈশিষ্ট্য (Visual Clue) দেখেই একজনের পার্সোনালিটি সম্পর্কে ধারনা করা যায়। তারা বলেন, মানুষের হাতের আঙুলের দৈর্ঘ্য, চোখের মুভমেন্ট, হাতের উপর হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাখার ফলে যেরকম দেখায় তার উপর ভিত্তি করেই একজন মানুষের পার্সোনালিটি ধারণা করা সম্ভব।
আঙ্গুলের মাপই বৈশিষ্ট্য বলে
কিছু সাইকোলজিস্ট বলেন যে, হাতের আঙ্গুল গুলোর দৈর্ঘ্যের কমবেশির উপর মানুষের পার্সোনালিটি নির্ভর করে।
যেমনঃ যদি কারো ডান হাতের তর্জনী (Index finger) অনামিকা (Ring Finger) থেকে ছোট হয় তাহলে ঐ লোকটি সম্পর্কে বলা যায়, তিনি শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান, তার মানসিকতা পজেটিভ এবং যেখানে রিস্ক নিতে হয় সেখানে তিনি রিস্ক নেন।
অন্যদিকে, যাদের তর্জনী আঙুল, অনামিকা থেকে বড় তারা কেনো কাজ করলে খুব ভালোভাবে করে, খুব স্পিরিটেড এবং প্যাশনেট থাকে পাশাপাশি তারা মানুষ হিসাবে খুব কেয়ারিং।
সৃষ্টিশীল মানুষ নাকি যুক্তি দিয়ে বিচার করে?
কারো সাথে কথা হলে সে কি যুক্তিবাদী মানুষ নাকি ক্রিয়েটিভ মানুষ তা বের করতে চান?
তাহলে তার দুই হাত আঁকড়ে ধরার পজিশন খেয়াল করেন। অথবা কাউকে আপনি দুই হাত আলিঙ্গন করতে বলেন। এরপর হাতের বিন্যাস দেখে বলে দেয়া যাবে লোকটি আসলে কেমন।
কিভাবে?
যদি বাম হাতের উপরে ডান হাত রাখে তাহলে বলা যায় তার ডান হাত বা দেহের ডান অংশ তার দেহকে প্রতিনিধিত্ব করে। আর দেহের ডান অংশ নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের বাম সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার। আর যাদের বাম সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার অধিক কার্যকর তারা খুব যুক্তি দিয়ে কাজ করে, তাদের মানসিকতা হয় হিসেব করে সব দিক বুঝে কাজ করার। এছাড়া তারা কোনে কাজ করার সময় ঐ কাজটা সম্পর্কে প্রি-প্ল্যান করে, সুন্দর করে ধাপে ধাপে আগায়।
আর, যাদের বাম হাত ডান হাতের উপরে থাকে তাদের দেহের বাম অংশ বেশি কার্যকর। অর্থাৎ তাদের মস্তিষ্কের ডান সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার অধিক কার্যকর। ফলে তাদের আর্টিস্টিক বা ক্রিয়েটিভ মনমানসিকতা থাকে। তারা স্বজ্ঞাত হয় বা তাদের নিজেকে নিজে ভালোভাবে জানে। নিজের স্ট্রং দিক বা উইক দিক সম্পর্কে তারা সচেতন।
এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, তারা ভালো শ্রোতা। কেউ কোনো কথা বলতে চাইলে তারা শোনার চেষ্টা করে।
এছাড়া তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো ভিজুয়ালাইজেশন। অর্থাৎ যেকোনো জিনিস তারা শুনে বা পড়ে তার একটা কাল্পনিক দৃশ্য নিজের মনে ধারন করে ফেলে।
Eye Movements
কথায় আছে না-
চোখ যে মনের কথা বলে!
সত্যিই তাই। আপনি যদি ভালোভাবে খেয়াল করেন তাহলে চোখ দেখেই অনেক কথা বলে দিতে পারবেন যা আগে কখনো কেউ বলে নি। যাকে খেয়াল করছেন বা যার মনের ভাব জানতে চাচ্ছেন তার তাকানো, চোখের মণির মুভমেন্ট দেখে আপনি অনেক না বলা কথা জানতে পারবেন।
কিভাবে?
একটা সহজ উদাহরণ দিয়ে বলি। ধরেন, আপনার স্কুলের বন্ধুর সাথে ৫ বছর পর দেখা হলো।
আপনি বললেন – “আরে বন্ধু, সেই যে গেলি তারপর তো আর কোনো খবর নাই তোর। শুনসিলাম একটা মারাত্মক ঘটনা নাকি হইসিলো। বল তো আমারে কি হইসিলো আসলে।”
এখন যদি দেখেন ঐ বন্ধু এইটা শোনার পর তার দৃষ্টি বাম দিকে বা ডান দিকে নিয়ে কিছু একটা দেখার চেষ্টা করছে বা ভাবছে তাহলে বলা যায় আপনার বন্ধু ঘটনাটি তার মনের মধ্যে তৈরি করে নিচ্ছে।
আবার যদি সে এইটা শোনার পর বারবার নিচে তাকায় বা চোখে চোখ ঠিকমতো না রাখে তাহলে বলা যায় সে আপনার কাছ থেকে কিছু জিনিস লুকানোর চেষ্টা করছে।
এরকম ছোট ছোট জিনিসগুলোই কিন্তু দিনশেষে আমাদের পার্সোনালিটির পার্থক্য গড়ে দেয়।
আসলে পার্সোনালিটি মাপার কোনো সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া নেই যার মধ্যে দিয়ে গেলে আপনি সঠিকভাবে পার্সোনালিটি জানতে পারবেন। তবে অধিকাংশ মানুষ যাকে সঠিক ভাবে তাকেই সঠিক হিসাবে ধরে নেয়া হয়।