ঐতিহাসিক স্থাপনা- আয়া সোফিয়া
এশিয়া এবং ইউরোপ, দুই মহাদেশ বিস্তৃত শহর ইস্তাম্বুল। ইস্তাম্বুল শহরের বসফরাস প্রণালীর পাড় ঘেষে অবস্থিত ঐতিহাসিক আয়া সোফিয়া। স্থাপত্যকলার এক অনন্য নিদর্শন আয়া সোফিয়া। আয়া সোফিয়া আসলে কি, মসজিদ নাকি গীর্জা নাকি জাদুঘর….. তা জানতে হলে আমাদের জানতে হবে এর ইতিহাস। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক আয়া সোফিয়ার দেড় হাজার বছরের ইতিহাস।
![hagia sophia](https://banglavibe.com/wp-content/uploads/2020/09/hagia-sophia.png)
![](https://banglavibe.com/wp-content/uploads/2020/08/Eck0ZjfXgAAAiJI-300x158.jpg)
রোমান শাসক দ্বিতীয় কনস্টানটিয়াস এর শাসন আমল ছিল ৩৩৭ থেকে ৩৬১ খ্রিস্টাব্দ। তিনি এটি তৈরী করেন এবং ৩৬০ খ্রিস্টাব্দে এর উদ্বোধন করেন এবং নাম দেন “হাজিয়া সোফিয়া”। মূলত খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উপাসনালয় হিসেবে এটি ব্যবহৃত হত।কিন্তু ৪০৪ খ্রিষ্টাব্দে কনস্টান্টিনোপল (বর্তমান ইস্তাম্বুল) এ সৃষ্ট দাঙ্গায় হাজিয়া সোফিয়াতে আগুন লাগানো হলে এর একাংশ ভস্মীভূত হয়। এরপর ৪১৫ খ্রীস্টাব্দে সম্রাট দ্বিতীয় থেওডোসিয়াস তা পুনর্নির্মাণ করেন।
৫৩২ খ্রীস্টাব্দে সম্রাট প্রথম জাস্টিসিয়ান বিরুদ্ধে দাঙ্গা শুরু হয়।১ সপ্তাহ ব্যাপী চলমান এ দাঙ্গায় কনস্টান্টিনোপল এর প্রায় অর্ধেক পুড়িয়ে দেয়া হয়,পুড়িয়ে দেয়া হয় হাজিয়া সোফিয়া কেও। প্রায় ৯৩ দিন পর আবার নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ৫৩৭ খ্রীস্টাব্দে শেষ হয় এবং এ পর্যায়ে হাজিয়া সোফিয়া কে কারুকার্য শোভিত করা হয়।
পরবর্তী সময়ে কম বেশি মাত্রার প্রায় ৬ টি ভূমিকম্পের কারণে হাজিয়া সোফিয়া বারবার ধ্বসে পরেছে এবং পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে।এ ছাড়াও দাঙ্গায় আগুন দেয়া হয়েছে। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অধীনে থাকাকালীন দীর্ঘ প্রায় এক হাজার বছর এটি চার্চ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
এদিকে ১৪৪৪ খ্রীস্টাব্দে ২১ বছর বয়সে অটোমান সাম্রাজ্যের সুলতান হন দ্বিতীয় মুহম্মদ। আশি হাজার এর বেশি সৈন্য এবং ৩২০ টির বেশি জাহাজ নিয়ে সুলতান মুহম্মদ ১৪৫৩ সালে কনস্টান্টিনোপল আক্রমণ করেন এবং জয় লাভ করেন। জয় লাভের পর তিনি কনস্টান্টিনোপল এর নাম পরিবর্তন করে ইস্তাম্বুল এবং হাজিয়া সোফিয়া এর নাম বদলে “আয়া সোফিয়া ” রাখেন এবং তা মসজিদ হিসেবে ঘোষণা দেন। যখন তিনি ক্ষমতা পান তখন আয়া সোফিয়ার অবস্থা ছিল করুণ, দরজা গুলো ছিল ভাঙ্গা।এরপর তার শাসনামলে একে পুনরায় নির্মাণ করা হয় এবং চার পাশে চারটি মিনার নির্মাণ করা হয়।মসজিদে পরিণত করার পর এর ভিতরে থাকা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বিভিন্ন ছবি মুছে দেয়া হয়।
১৫৫০ থেকে ১৫৫৭ সালে সুলতান সুলেমানের আমলে একে শক্তিশালী করার জন্য অটোম্যান সাম্রাজ্যের বিখ্যাত স্থপতি মিমার সিনান কে নিয়োগ দেয়া হয়। সিনান আগা একে মজবুত করেন এবং পৃথিবীতে প্রথম ভূমিকম্প প্রতিরোধী স্থাপনা হিসেবে নির্মাণ করেন। মিমার সিনান অটোম্যান সাম্রাজ্যের প্রায় তিন শত স্থাপনার স্থপতি এবং সুলতান দ্বিতীয় সেলিমের আমলে তার নেতৃত্বেই আয়া সোফিয়ার বহিরাবরণ সৌন্দর্যমণ্ডিত করা হয়।মসজিদের বৈশিষ্ট্য দেয়ার জন্য পশ্চিম পাশে আরও দুটি মিনার সংযোজন করা হয়,এছাড়াও সুলতানের বসার জায়গা,মিম্বার,মুয়াজ্জিনের জন্য বারান্দা সংযোজন করা হয়।
![](https://banglavibe.com/wp-content/uploads/2020/08/Screenshot-2-300x147.png)
পরবর্তীকালে মসজিদের সাথে মাদ্রাসা সংযোজিত হয় যা এখন লাইব্রেরি তে পরিণত হয়েছে। এ লাইব্রেরিতে প্রায় তিন লক্ষ বই সংগৃহীত আছে। মসজিদে দরিদ্র মানুষের খাবার রান্নার জন্য রান্নঘরও স্থাপন করা হয়েছিল। মসজিদের সৌন্দর্যে সবচেয়ে বেশি কাজ করা ১৮৪৮ ও ১৮৪৯ সালে।মসজিদের ভেতর বিশাল বিশাল গোলাকৃতির ফলক ঝোলানো হয় যাতে শোভা পায় মহানবী (স) এর নাম সহ বিভিন্ন সাহাবিদের নাম। মসজিদের ভেতর আলো প্রবেশের জন্য মূল গম্বুজে ৪০টি জানালা আছে এবং প্রবেশের জন্য রয়েছে ৯টি দরজা। মূল গম্বুজ ভূমি থেকে প্রায় ১৫০ ফুট উপরে। মূল স্তম্ভ ছাড়াও রয়েছে ১০৭ টি স্তম্ভ এবং এর আয়তন প্রায় ছয় হাজার বর্গমিটার।
![](https://banglavibe.com/wp-content/uploads/2020/08/b38ae72076fa23f77c0905d12d8291f8-300x169.jpg)
এ সুদীর্ঘ কালের ইতিহাস সমৃদ্ধ মসজিদ ১৯৩৫ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক জাদুঘরে রূপান্তরিত করেন এবং আযান দেয়া ও নামাজ আদায় নিষিদ্ধ করেন। মসজিদের ভিতরে থাকা ফলক গুলো বের করতে চাইলেও তা দরজার চেয়ে বড় হওয়ায় আর বের করা সম্ভব হয়নি,ফলে মসজিদের এক কোণে তা রেখে দেয়া হয়। ১৯৪৯ সালে তা আবার দেয়ালে ঝুলিয়ে দেয়া হলেও নামাজ আদায় নিষিদ্ধ ছিল। ২০০৬ সালে মুসলমান এবং খ্রিস্টান উভয় সম্প্রদায়ের জন্য এর একাংশ খুলে দেয়া হয়। অবশেষে ২০২০ সালের ১০ জুলাই তুরস্কের আদালত একে মসজিদে রূপান্তরের রায় দিলে ৮৬ বছর পর আবারও আয়া সোফিয়া তে আযান দেয়া হয়। ২৪ জুলাই জুম্মার নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আয়া সোফিয়া ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের পদচারণায় মুখরিত হয়।
সুন্দর লিখছেন আপু। পরবর্তী লেখার জন্য অপেক্ষায় থাকবো।
অনেক অনেক ধন্যবাদ