শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমানোর উপায়
বর্তমানে আমাদের কাছে পরিচিত শব্দ গুলির মধ্যে একটি হচ্ছে কোলেস্টেরল। কোলেস্টরেল যে সবসময় দেহের জন্য ক্ষতিকর ব্যাপারটা ঠিক তেমন নয় । দুই ধরনের কোলেস্টরেল রয়েছে :
গুড কোলেস্টেরল এবং ব্যাড কোলেস্টেরল । কোলেস্টরেল আমাদের দেহের জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান । কোলেস্টেরল পিত্তরস তৈরিতে সহায়তা করে এবং পিত্তরস আমাদের খাদ্য পরিপাকে অংশগ্রহণ করে। তবে দেহে কোলেস্টেরলের আধিক্য দেখা দিলে উপকারিতার চেয়ে অপকারিতা বেশি । বিশেষ করে ব্যাড কোলেস্টেরলের আধিক্য দেখা দিলে।
যারা সব সময় মানসিক চিন্তায় ভোগেন, অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার খান তারাই সচরাচর কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভোগেন। অর্থাৎ তাদের কোলেস্টেরলের আধিক্য দেখা দেয়। ফলে করোনারি ইনফ্রাকশন অথবা হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
যদিওবা মানবদেহে কোলেস্টরলের আদর্শ একটি মান রয়েছে। লো ডেনসিটি লিপোপ্রোটিনের পরিমাণ ১.৬-১.৮ ডেসিমোল।
কোলেস্টেরলের মাত্রা যদি বৃদ্ধি পায় তাহলে এথরক্লোরোসিস এর সমস্যা দেখা যেতে পারে। কোলেস্টেরল ধমনী পথকে শুরু করে, সুতরাং রক্ত চলাচলে ব্যাপক বাধা প্রদান করে। রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়ার ফলে হৃদযন্ত্রের কোষগুলো নষ্ট হতে থাকে।
তাহলে দেহের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল কমানোর উপায় কি?
রোগব্যাধি অসুখ-বিসুখ সবকিছু নির্ভর করে একজন ব্যক্তির সচেতনতার ওপর। সুতরাং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণও ব্যক্তির সচেতনতা এবং সাবধানতার ওপর নির্ভর করে।
১.ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার একদমই পরিহার করুন। যে সকল খাবারে অতিরিক্ত চর্বি রয়েছে সেই সকল খাবার অবশ্যই পরিহার করতে হবে। চিংড়ি মাছ ও ডিমের কুসুমের মতো উচ্চ কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
২.বিভিন্ন ধরনের আঁশজাতীয় খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। আপনার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় সজনে ডাঁটা, কচুর লতি, ইসবগুলের শরবত ইত্যাদি যোগ করুন। এগুলো আপনার শরীরের লো ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন অর্থাৎ ব্যাড কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করবে।
৩.চিনি বা মিষ্টির প্রতি আমাদের স্বভাবতই বেশি আকর্ষণ থাকে। তবে সব খাবার গ্রহণ করার একটি পরিমিত মাত্র রয়েছে। সুতরাং চিনি অথবা মিষ্টি জাতীয় খাবার কম গ্রহণ করাটাই আপনার জন্য ভালো।
৪.বিশেষ উৎসব উপলক্ষে আমরা উচ্চ কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার গ্রহণ করে থাকি ।আর সেই কারণেই যে সকল দিনে আমরা বেশি পরিমাণে উচ্চ কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার গ্রহণ করব সেদিন আমাদের প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি’ অর্থাৎ টক জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। এটি আপনার শরীরের লো ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন এর পরিমাণ কমাতে সহায়তা করবে।
৫.নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী শারীরিক পরিশ্রম করার চেষ্টা করুন। এটি সাধারণত আলাদাভাবে বলার কোন বিষয় না।
৬.অনেকের ধারনা থাকে যে মাছের তেলে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি। তবে যে কোলেস্টেরল রয়েছে সেটি হচ্ছে হাই ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন। অর্থাৎ গুড কোলেস্টেরল!
এটি স্বভাবতই আপনার শরীরের জন্য উপকারী। মাছের তেল আপনার শরীরের গুড কোলেস্টেরল বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যাড কোলেস্টেরল অর্থাৎ লো ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন কমাতে সহায়তা করবে।
যেমন পাঙ্গাস মাছ অথবা ফালমন মাছের তেল খেলে আপনার শরীরে 42% লো ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন কমে যাবে।
আবার যাদের শরীরে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে, তারা যদি মাছের তেল খায় তাহলে তাদের শরীরের 68% কোলেস্টেরল কমে যাবে।
৭.দেহে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে সবচেয়ে বেশি সহায়তা প্রদান করবে কিছু গাছগাছালি!
যেমন: চিরতা, অর্জুনের ছাল ইত্যাদি। প্রতি রাতে এক গ্লাস পানিতে কিছু পরিমাণ অর্জুনের ছাল ভিজিয়ে রাখুন এবং পরের দিন সকালে খালি পেটে সেই পানি পান করুন। এছাড়া অর্জুনের ছাল আপনাকে মানসিকভাবেও সুস্থ রাখবে।
৮.প্রচুর পরিমানের শসা খাবেন। শসা আপনার দেহে পানির চাহিদা পূরণ করবে তার পাশাপাশি ওজন কমিয়ে আনবে এবং কোলেস্টেরলের পরিমাণ কম হবে।
তবে সব সময় মনে রাখবেন লো ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন আপনার শরীরের শত্রুর মতো কাজ করে। তবে হাই ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন অর্থাৎ গুড কোলেস্টেরল আপনার শরীরের জন্য একান্ত প্রয়োজন।
হাই ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন নিয়ে আরেকদিন কথা হবে! এতক্ষন সাথে থাকার জন্যে ধন্যবাদ!